সংখ্যালঘু নির্যাতনে ফায়দা লোটার প্রতিযোগিতাসাখাওয়াত হোসেন এদেশের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে আমজনতার কোনো বিরোধ নেই। যুগ যুগ ধরে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সব জাতি গোত্রের মানুষ একসঙ্গে বাস করছে। বিভিন্ন সময় ভারতীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঢেউ বাংলাদেশে এসে লাগলে মুসলমান প্রতিবেশীরাই সংখ্যালঘুদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এ দেশেই গত ৬ দিনে ১১ জেলায় সংখ্যালঘুদের অন্তত এক ডজন মন্দিরসহ আড়াই হাজার ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর-অগি্নসংযোগ করা হয়েছে। ধর্ষিত হয়েছেন দুই নারী। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল পরস্পরকে দায়ী করে গরম বক্তব্য দিলেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ হয়নি।
অভিজ্ঞজনরা বলছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন মূলত রাজনৈতিক কূটচালেরই জঘন্য চিত্র। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল এ ইস্যুকে পুঁজি করে বিশেষ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। আর এ কারণেই প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করে এজন্য ঢালাওভাবে জামায়াত-শিবিরকে দুষছে। অন্যদিকে বিরোধী দল অনেকটা আত্মরক্ষার্থেই এজন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে। যদিও কোনো পক্ষই সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং এর দায় কে কার ঘাড়ে চাপিয়ে বেশি রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারে তার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এ ব্যাপারে যায়যায়দিনকে বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মূল কারণ। এটা যে শুধু নির্বাচনকে ঘিরেই হচ্ছে, সেটি বলা যাবে না। বছরের বিভিন্ন সময়েও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। রামুর ঘটনা তার অন্যতম উদাহরণ। তবে সব হামলার পেছনেই একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করেছে।
দেশীয় জঙ্গিবাদ গোষ্ঠী হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতেও পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অতীতের অনেক হামলাতেই জঙ্গিবাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বর্তমানের হামলাগুলোতে যে এর সম্পৃক্ততা নেই- এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। বর্তমানে জামায়াত যেহেতু সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে- সে হিসেবে সন্দেহের তীর প্রথমত তার দিকেই ধাবিত হয়।
ঢাকা পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী এ হামলা পরিচালনা করছে। তবে যারাই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন- সরকারের উচিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা।
সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচনকে ঘিরেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে এবং বিষয়টি সম্পর্কে গোয়েন্দা বিভাগ অবগত। তবে কেন তারা হামলার সময় এগিয়ে আসেনি? এ থেকেই বোঝা যায়, ঘটনার পেছনে ভিন্ন কোনো অপশক্তি কাজ করছে। রামুর সহিংস ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ভয়াবহ ওই হামলাস্থলের পাশে থানা ও বিজিবি'র ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও তারা এগিয়ে আসেনি। এলাকাবাসীর অনুরোধ সত্ত্বেও কেন তারা এগিয়ে এলো না- সেটিই বড় প্রশ্ন।
রাজনৈতিক মহল সহিংস এ হামলা থেকে ফায়দা নিচ্ছে- মন্তব্য করে সুকোমল বড়ুয়া বলেন, নির্বাচনে মূল উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পেরে একটি শক্তি এ হামলার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে একটি অংশ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃৃত স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয়- সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের উচিত উদাসীনতা ও ঢালাও বক্তব্য পরিহার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সহিংস হামলাকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সুবিধা ভোগ করে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এসব ঘটনার সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করে থাকে। এরপর জামায়াত, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তো ক্রমান্বয়ে সুবিধা ভোগ করেই। রামুর ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা নেতৃত্ব দিয়ে রামুর সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার সুবিধা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ভোগ করেছে। নিজেদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চরিত্র রেখে তো সাম্প্রদায়িকতা রোধ করা যাবে না।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ২০১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বৌদ্ধবিহার এবং বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনা স্মরণ করিয়ে বলেন, সে সময় বড় দুই দল একে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, সামাজিক সংস্থা, রাজনৈতিক দল এবং বিশিষ্টজনরা সরেজমিন তদন্ত করে জানতে পারেন ওই সব কর্মকা-ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জড়িত। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন এবং বাম ধারার দলগুলো এ নিয়ে রিপোর্টও প্রকাশ করে। কিন্তু বিষয়টি সেখানেই ধামাচাপা পড়ে যায়।
পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেই এসব ঘটনা 'ইতিহাস' হয়ে যায়। এসব নিয়ে তখন কোনো পক্ষই আর উচ্চবাচ্য করে না। নির্যাতনের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পরিণতিও একই হবে বলে মন্তব্য করেন পর্যবেক্ষকরা।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি-নির্ধারকদের দাবি, বিগত সময় যা-ই ঘটুক না কেন এবারের সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে সরকার। রাজনৈতিক সহিংসতাকারীদের বিচার দ্রুত শেষ করে সাজা নিশ্চিত করতে এ-সংক্রান্ত সব মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতন চালিয়ে কোনো গোষ্ঠী যাতে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে না পারে এজন্য রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, দিনাজপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, বাগেরহাট ও ময়মনসিংহসহ যে ১৩ জেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ওইসব এলাকায় একযোগে 'কম্বিং অপারেশন' চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া আন্দোলনের নামে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা বন্ধে দেশের অন্যান্য জেলায়ও সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। এজন্য র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্য বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের আগাম প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নতুন সরকার গঠনের পরপরই এ অভিযান শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
র্যাব-পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত এ অভিযানে প্রয়োজনে বিজিবিকেও যুক্ত করা হতে পারে। এ কার্যক্রম কোন জেলায় কতটা কঠোর ও দীর্ঘমেয়াদি হবে তা সংশ্লিষ্ট এলাকায় চলমান সহিংস পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদের মতামতকে প্রশাসন গুরুত্ব দেবে।
প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন থেকে বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতনের ঘটনা সরকারকে গভীর উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। দ্রুত এ পরিস্থিতি সামাল দেয়া না গেলে তা দেশের বিভিন্ন জেলায় আরো ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। যার পরিণতি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দিকে মোড় নিতে পারে। এতে আন্তর্জাতিকমহলে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করা কঠিন হবে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে চলমান আন্দোলন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশ অচল হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে অর্থনৈতিক কাঠামো। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, শিক্ষার্থী ও শ্রমিকসহ সর্বস্তরের পেশাজীবী মানুষ এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় নতুন সরকার গঠনের পরও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কম্বিং অপারেশন পরিচালনা ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনো পথ খোলা নেই।
ওই সূত্র জানায়, বিএনপি জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় কম্বিং অপারেশন দীর্ঘমেয়াদি ও জোরালো হবে। অভিযান শুরুর আগে স্থানীয় থানা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সহিংস তা-বকারীদের তালিকা তৈরি করবে গোয়েন্দারা। পরে তা তুলে দেয়া হবে যৌথ বাহিনীর হাতে।
জানা গেছে, সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ ও সন্ত্রাস দমনের নামে এ অভিযান চালানোর প্রস্তুতির কথা বলা হলেও এর মূল লক্ষ্য হবে বিরোধী দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের ধরপাকড়। একই সঙ্গে তাদের অস্ত্র গোলাবারুদের ঘাঁটিতেও হানা দেবে যৌথ বাহিনী। মাঠকর্মীদের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হবে নাশকতার মদদদাতা, অর্থের জোগানদাতা বা পরিকল্পনাকারীদের। নির্বাচন পূর্ব ও নির্বাচনোত্তর সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের আসামি করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন পুরনো মামলায় পলাতক বিরোধী দলের রাজনৈতিক ক্যাডারদের গ্রেপ্তারের টার্গেটও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কম্বিং অপারেশনের ছক চূড়ান্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় উত্তাল ১৯টি জেলার জামায়াত-বিএনপির সশস্ত্র ক্যাডারদের তালিকা ইতোমধ্যেই তাদের হাতে পেঁৗছেছে। চলছে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালের একতরফা ভোটারবিহীন জালিয়াতির নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যে ধরনের সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না। এমন আশঙ্কা মাথায় রেখেই আগেভাগেই তা দমনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ঢালাও সমর্থন পাওয়ার পরও আওয়ামী লীগ সরকার সংখ্যালুঘু নির্যাতন দমন করতে ব্যর্থ হলে এ ইস্যুতে দিলি্লর সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব বাড়তে পারে এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দ্রুত দেশব্যাপী কম্বিং অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কত সদস্য অংশ নেবে তা চূড়ান্ত না হলেও এ সংখ্যা ৫০ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যাবে বলে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরমধ্যে র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য থাকছে প্রায় ৮ হাজার। পুলিশ ও আনসারের ৪০ হাজার সদস্য অভিযানে অংশ নেবে। চাহিদা অনুযায়ী বিজিবির ফোর্স দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করবে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় থানা পুলিশই মূলত অভিযান পরিচালনা করবে। অন্যান্য সংস্থাগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। তবে এতে গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত ও নিয়মিত টহলসহ থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। অভিযান চলাকালে এক এলাকার সন্ত্রাসীরা যাতে অন্য এলাকায় আত্মগোপন করতে না পারে এ জন্য সারাদেশে একযোগে কম্বিং অপারেশন চালানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেশের যেসব স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে, সেসব এলাকার দ্রুত বিচারযোগ্য মামলাগুলোকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে এ জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপও দ্রুততার সঙ্গে গ্রহণ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে হামলা হওয়া সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ জোরদার করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নতুন করে কোনো এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি ও থানার ওসিসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুশিয়ার করেছে মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এসব নির্যাতনের ঘটনার নেপথ্যে কাদের ইন্ধন ছিল তা খুঁজে বের করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও বুধবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর কচুবুনিয়া গ্রামের উত্তর কচুবুনিয়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী রাধা-গোবিন্দ এবং কামলা জিলবুনিয়া সার্বজনীন কালি মন্দিরে আগুন দিয়েছে। একই দিন রাতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঋষিপল্লীর দু'ই গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ অবস্থায় সরকার মনে করছে, দেশকে অশান্ত করার অপতৎপরতায় লিপ্ত সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেপ্তারে সারাদেশে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই।http://www.jjdin.com/?view=details&type=single&pub_no=715&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=3&archiev=yes&arch_date=12-01-2014
অভিজ্ঞজনরা বলছেন, সংখ্যালঘু নির্যাতন মূলত রাজনৈতিক কূটচালেরই জঘন্য চিত্র। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দল এ ইস্যুকে পুঁজি করে বিশেষ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। আর এ কারণেই প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করে এজন্য ঢালাওভাবে জামায়াত-শিবিরকে দুষছে। অন্যদিকে বিরোধী দল অনেকটা আত্মরক্ষার্থেই এজন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করছে। যদিও কোনো পক্ষই সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং এর দায় কে কার ঘাড়ে চাপিয়ে বেশি রাজনৈতিক সুবিধা নিতে পারে তার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এ ব্যাপারে যায়যায়দিনকে বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মূল কারণ। এটা যে শুধু নির্বাচনকে ঘিরেই হচ্ছে, সেটি বলা যাবে না। বছরের বিভিন্ন সময়েও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। রামুর ঘটনা তার অন্যতম উদাহরণ। তবে সব হামলার পেছনেই একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করেছে।
দেশীয় জঙ্গিবাদ গোষ্ঠী হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতেও পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অতীতের অনেক হামলাতেই জঙ্গিবাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। বর্তমানের হামলাগুলোতে যে এর সম্পৃক্ততা নেই- এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। বর্তমানে জামায়াত যেহেতু সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে- সে হিসেবে সন্দেহের তীর প্রথমত তার দিকেই ধাবিত হয়।
ঢাকা পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী এ হামলা পরিচালনা করছে। তবে যারাই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন- সরকারের উচিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা।
সরকারের ব্যর্থতার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু নির্বাচনকে ঘিরেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে এবং বিষয়টি সম্পর্কে গোয়েন্দা বিভাগ অবগত। তবে কেন তারা হামলার সময় এগিয়ে আসেনি? এ থেকেই বোঝা যায়, ঘটনার পেছনে ভিন্ন কোনো অপশক্তি কাজ করছে। রামুর সহিংস ঘটনার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ভয়াবহ ওই হামলাস্থলের পাশে থানা ও বিজিবি'র ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও তারা এগিয়ে আসেনি। এলাকাবাসীর অনুরোধ সত্ত্বেও কেন তারা এগিয়ে এলো না- সেটিই বড় প্রশ্ন।
রাজনৈতিক মহল সহিংস এ হামলা থেকে ফায়দা নিচ্ছে- মন্তব্য করে সুকোমল বড়ুয়া বলেন, নির্বাচনে মূল উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পেরে একটি শক্তি এ হামলার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এর মধ্যে একটি অংশ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃৃত স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয়- সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের উচিত উদাসীনতা ও ঢালাও বক্তব্য পরিহার করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সহিংস হামলাকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাসহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সুবিধা ভোগ করে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এসব ঘটনার সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করে থাকে। এরপর জামায়াত, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি তো ক্রমান্বয়ে সুবিধা ভোগ করেই। রামুর ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মীরা নেতৃত্ব দিয়ে রামুর সহিংসতার ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার সুবিধা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ভোগ করেছে। নিজেদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চরিত্র রেখে তো সাম্প্রদায়িকতা রোধ করা যাবে না।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ২০১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বৌদ্ধবিহার এবং বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনা স্মরণ করিয়ে বলেন, সে সময় বড় দুই দল একে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, সামাজিক সংস্থা, রাজনৈতিক দল এবং বিশিষ্টজনরা সরেজমিন তদন্ত করে জানতে পারেন ওই সব কর্মকা-ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাকর্মীরা জড়িত। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন এবং বাম ধারার দলগুলো এ নিয়ে রিপোর্টও প্রকাশ করে। কিন্তু বিষয়টি সেখানেই ধামাচাপা পড়ে যায়।
পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেই এসব ঘটনা 'ইতিহাস' হয়ে যায়। এসব নিয়ে তখন কোনো পক্ষই আর উচ্চবাচ্য করে না। নির্যাতনের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর পরিণতিও একই হবে বলে মন্তব্য করেন পর্যবেক্ষকরা।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের নীতি-নির্ধারকদের দাবি, বিগত সময় যা-ই ঘটুক না কেন এবারের সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করবে সরকার। রাজনৈতিক সহিংসতাকারীদের বিচার দ্রুত শেষ করে সাজা নিশ্চিত করতে এ-সংক্রান্ত সব মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতন চালিয়ে কোনো গোষ্ঠী যাতে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে না পারে এজন্য রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, দিনাজপুর, যশোর, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, বাগেরহাট ও ময়মনসিংহসহ যে ১৩ জেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ওইসব এলাকায় একযোগে 'কম্বিং অপারেশন' চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া আন্দোলনের নামে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা বন্ধে দেশের অন্যান্য জেলায়ও সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। এজন্য র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্য বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের আগাম প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নতুন সরকার গঠনের পরপরই এ অভিযান শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
র্যাব-পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত এ অভিযানে প্রয়োজনে বিজিবিকেও যুক্ত করা হতে পারে। এ কার্যক্রম কোন জেলায় কতটা কঠোর ও দীর্ঘমেয়াদি হবে তা সংশ্লিষ্ট এলাকায় চলমান সহিংস পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদের মতামতকে প্রশাসন গুরুত্ব দেবে।
প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নির্বাচনের দিন থেকে বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর নির্যাতনের ঘটনা সরকারকে গভীর উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। দ্রুত এ পরিস্থিতি সামাল দেয়া না গেলে তা দেশের বিভিন্ন জেলায় আরো ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। যার পরিণতি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার দিকে মোড় নিতে পারে। এতে আন্তর্জাতিকমহলে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করা কঠিন হবে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে চলমান আন্দোলন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশ অচল হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে অর্থনৈতিক কাঠামো। ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, শিক্ষার্থী ও শ্রমিকসহ সর্বস্তরের পেশাজীবী মানুষ এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় নতুন সরকার গঠনের পরও পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কম্বিং অপারেশন পরিচালনা ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনো পথ খোলা নেই।
ওই সূত্র জানায়, বিএনপি জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় কম্বিং অপারেশন দীর্ঘমেয়াদি ও জোরালো হবে। অভিযান শুরুর আগে স্থানীয় থানা পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় সহিংস তা-বকারীদের তালিকা তৈরি করবে গোয়েন্দারা। পরে তা তুলে দেয়া হবে যৌথ বাহিনীর হাতে।
জানা গেছে, সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ ও সন্ত্রাস দমনের নামে এ অভিযান চালানোর প্রস্তুতির কথা বলা হলেও এর মূল লক্ষ্য হবে বিরোধী দলের সশস্ত্র ক্যাডারদের ধরপাকড়। একই সঙ্গে তাদের অস্ত্র গোলাবারুদের ঘাঁটিতেও হানা দেবে যৌথ বাহিনী। মাঠকর্মীদের পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হবে নাশকতার মদদদাতা, অর্থের জোগানদাতা বা পরিকল্পনাকারীদের। নির্বাচন পূর্ব ও নির্বাচনোত্তর সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের আসামি করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন পুরনো মামলায় পলাতক বিরোধী দলের রাজনৈতিক ক্যাডারদের গ্রেপ্তারের টার্গেটও চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কম্বিং অপারেশনের ছক চূড়ান্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় উত্তাল ১৯টি জেলার জামায়াত-বিএনপির সশস্ত্র ক্যাডারদের তালিকা ইতোমধ্যেই তাদের হাতে পেঁৗছেছে। চলছে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বশীল একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬ ও ১৯৯৬ সালের একতরফা ভোটারবিহীন জালিয়াতির নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যে ধরনের সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না। এমন আশঙ্কা মাথায় রেখেই আগেভাগেই তা দমনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ঢালাও সমর্থন পাওয়ার পরও আওয়ামী লীগ সরকার সংখ্যালুঘু নির্যাতন দমন করতে ব্যর্থ হলে এ ইস্যুতে দিলি্লর সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব বাড়তে পারে এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দ্রুত দেশব্যাপী কম্বিং অপারেশন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কত সদস্য অংশ নেবে তা চূড়ান্ত না হলেও এ সংখ্যা ৫০ হাজারের ঘর ছাড়িয়ে যাবে বলে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এরমধ্যে র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য থাকছে প্রায় ৮ হাজার। পুলিশ ও আনসারের ৪০ হাজার সদস্য অভিযানে অংশ নেবে। চাহিদা অনুযায়ী বিজিবির ফোর্স দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজারের মধ্যে ওঠানামা করবে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় থানা পুলিশই মূলত অভিযান পরিচালনা করবে। অন্যান্য সংস্থাগুলো তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে। তবে এতে গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত ও নিয়মিত টহলসহ থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম যাতে কোনোভাবেই ব্যাহত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। অভিযান চলাকালে এক এলাকার সন্ত্রাসীরা যাতে অন্য এলাকায় আত্মগোপন করতে না পারে এ জন্য সারাদেশে একযোগে কম্বিং অপারেশন চালানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দেশের যেসব স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে, সেসব এলাকার দ্রুত বিচারযোগ্য মামলাগুলোকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে এ জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পদক্ষেপও দ্রুততার সঙ্গে গ্রহণ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে হামলা হওয়া সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ জোরদার করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নতুন করে কোনো এলাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি ও থানার ওসিসহ দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুশিয়ার করেছে মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এসব নির্যাতনের ঘটনার নেপথ্যে কাদের ইন্ধন ছিল তা খুঁজে বের করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেও বুধবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর কচুবুনিয়া গ্রামের উত্তর কচুবুনিয়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী রাধা-গোবিন্দ এবং কামলা জিলবুনিয়া সার্বজনীন কালি মন্দিরে আগুন দিয়েছে। একই দিন রাতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঋষিপল্লীর দু'ই গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ অবস্থায় সরকার মনে করছে, দেশকে অশান্ত করার অপতৎপরতায় লিপ্ত সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রকারীদের গ্রেপ্তারে সারাদেশে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই।http://www.jjdin.com/?view=details&type=single&pub_no=715&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=3&archiev=yes&arch_date=12-01-2014
__._,_.___