বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৪, ১৬ মাঘ ১৪২০
বাংলাদেশের মাটি থেকে বিদায়
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
মুক্তিযুদ্ধের অর্থ : বাংলাদেশে সেক্যুলার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, সেক্যুলার সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, সেক্যুলার জীবন দর্শন প্রতিষ্ঠা করা। কলোনি কালে, পাকিস্তান আমলে, পাকিস্তান রাষ্ট্র, পাকিস্তান রাষ্ট্রের পরিচালক রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং মুসলিম লীগ ও সেনাবাহিনীর সহযোগী জামায়াতে ইসলাম সেক্যুলার রাজনীতির বিরোধিতা করেছে। তাদের বক্তব্য : যারা সেক্যুলার রাজনীতি করে তারা হিন্দু, আর যারা নন সেক্যুলার রাজনীতি করে তারা মুসলমান। মুসলমানের শত্রু : হিন্দু এবং হিন্দুদের বাসভূমি ভারত। বিএনপি রাজনীতির দিক থেকে মুসলিম লীগের উত্তরসূরি এবং সশস্ত্র জঙ্গী রাজনীতির দিক থেকে একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামের উত্তরসূরি।
মুসলিম লীগ মরে গেছে কিন্তু মুসলিম লীগের মতাদর্শ বিএনপি ধারণ করে আছে। এই মতাদর্শের অর্থ : নন সেক্যুলার রাজনীতিকে দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তিশালী করে রাখা এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদ ব্যবহার করা। সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনীতি হচ্ছে মুসলমানদের রাজনীতি, মুসলমানদের রাজনীতির ক্ষেত্র বাংলাদেশ এবং সংখ্যালঘিষ্টের অর্থ হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের রাজনীতির মধ্যে অধস্তন হয়ে থাকা। বিএনপির মধ্যে দু'ধরনের রাজনীতি যুক্ত। প্রথমটি হচ্ছে মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে উত্থিত সন্ত্রাসী রাজনীতি।
এই দুই রাজনীতি বিএনপির রাজনীতির বাস্তবতা তৈরি করেছে। এই রাজনীতির বাস্তবতার একদিকে আছে মনোলিথিক জাতিক ভৌগোলকিতা তৈরি করা; মিয়ানমারের যে অংশ মুসলিমপ্রধান, বাংলাদেশে একটি একক জাতির প্রাধান্য তৈরি করা, ভারতে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতীয়তা তৈরি করা, পাকিস্তানে একটি একক জাতীয়তা তৈরি হয়ে আছে, এই সব অঞ্চল নিয়ে একটি একক মুসলিম জাতি নির্মাণ করা।
খালেদা জিয়া ভোটের সময় এবং ভোটপরবর্তী সময়ে বলতে থাকেন, যেমন বলেছেন পূর্ববর্তী একটি নির্বাচন সময়ে, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে ফেনী থেকে সব অঞ্চল ভারতের অঙ্গরাজ্যে পর্যবসিত হবে এবং মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে জামায়াত-বিএনপি একত্রে দেশের বিভিন্ন অংশে সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী সমর্থকদের, বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে, সংখ্যালঘু জনসমর্থের নারীদের ওপর তাদের উদ্যোগে নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতাবেন করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া, সাতক্ষীরা গিয়ে বলেছেন যৌথবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে এমন সব চেহারার মানুষ, যারা এদেশের বাসিন্দা নয়।
খালেদা জিয়ার বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা আছে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে বহুজাতির দেশ বলে বিশ্বাস করেন না। তাঁর বিশ্বাস মোতাবেক বাংলাদেশে একটি একক জাতি বাস করে, তারা মুসলমান, বাকি সব জাতি; হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান পাহাড়ী এবং তারণ্যক জনসমষ্টি মুসলমান জাতির কাছে অর্ধস্তন, সেদিক থেকে অধস্তন জনসমষ্টির মৌলিক অধিকার নেই।
যারা অধস্তন তারা নাগরিক নয়। যারা নাগরিক নয়, তাদের ভিন্ন ধর্ম পালনের অধিকার নেই, তাদের জমিজমা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর অধিকার নেই। একটি একক জাতির আধিপত্য বিস্তার করতে হবে এবং একক জাতির আধিপত্য শক্তিশালী করতে হবে সন্ত্রাস ও সশস্ত্র শক্তির মাধ্যমে। তাহলেই মুসলমান জাতির রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তিশালী করা সম্ভব হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমান জাতির রাজনীতির সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম উম্মার রাজনীতির মেলবন্ধন সম্ভব হবে। মুসলিম উম্মার রাজনীতি মধ্যপ্রাচ্যে মুখথুবড়ে পড়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমাগত সন্ত্রাসী রাজনীতিতে পর্যবসিত হচ্ছে : এ সম্বন্ধে খালেদা জিয়ার ধারণা অস্পষ্ট। মুসলিম উম্মার কনসেপ্ট এখন খ-বিখ- : মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম উম্মার কনসেপ্টের মধ্যে এখন আল কায়দার অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম উম্মার কনসেপ্টের মধ্যে জামায়াতে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
যে কোন সমাজ ব্যবস্থায় আত্মঘাতের পথ তৈরি হয় সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে। খালেদা জিয়া, বাংলাদেশে, এই আত্মঘাতের পথ তৈরি করেছেন বিএনপি-জামায়াতের মেলবন্ধনের মধ্যে দিয়ে। খালেদা জিয়া তাঁর কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গুডবাই জানাচ্ছেন। তাঁকে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। যারা বাংলাদেশে অনবরত আল কায়েদা (আল কায়েদার অপর নাম জামায়াত) তৈরি করে তাদের রাজনীতিকে বিদায় জানাবার সময় এসেছে। খালেদা জিয়া বিএনপি জামায়াত সবাইকে বিদায় বাংলাদেশের মাটি থেকে।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
মুসলিম লীগ মরে গেছে কিন্তু মুসলিম লীগের মতাদর্শ বিএনপি ধারণ করে আছে। এই মতাদর্শের অর্থ : নন সেক্যুলার রাজনীতিকে দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তিশালী করে রাখা এবং দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক জঙ্গীবাদ ব্যবহার করা। সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনীতি হচ্ছে মুসলমানদের রাজনীতি, মুসলমানদের রাজনীতির ক্ষেত্র বাংলাদেশ এবং সংখ্যালঘিষ্টের অর্থ হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের রাজনীতির মধ্যে অধস্তন হয়ে থাকা। বিএনপির মধ্যে দু'ধরনের রাজনীতি যুক্ত। প্রথমটি হচ্ছে মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে উত্থিত সন্ত্রাসী রাজনীতি।
এই দুই রাজনীতি বিএনপির রাজনীতির বাস্তবতা তৈরি করেছে। এই রাজনীতির বাস্তবতার একদিকে আছে মনোলিথিক জাতিক ভৌগোলকিতা তৈরি করা; মিয়ানমারের যে অংশ মুসলিমপ্রধান, বাংলাদেশে একটি একক জাতির প্রাধান্য তৈরি করা, ভারতে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জাতীয়তা তৈরি করা, পাকিস্তানে একটি একক জাতীয়তা তৈরি হয়ে আছে, এই সব অঞ্চল নিয়ে একটি একক মুসলিম জাতি নির্মাণ করা।
খালেদা জিয়া ভোটের সময় এবং ভোটপরবর্তী সময়ে বলতে থাকেন, যেমন বলেছেন পূর্ববর্তী একটি নির্বাচন সময়ে, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে ফেনী থেকে সব অঞ্চল ভারতের অঙ্গরাজ্যে পর্যবসিত হবে এবং মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে জামায়াত-বিএনপি একত্রে দেশের বিভিন্ন অংশে সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী সমর্থকদের, বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে, সংখ্যালঘু জনসমর্থের নারীদের ওপর তাদের উদ্যোগে নির্যাতন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতাবেন করে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া, সাতক্ষীরা গিয়ে বলেছেন যৌথবাহিনীর সঙ্গে কাজ করছে এমন সব চেহারার মানুষ, যারা এদেশের বাসিন্দা নয়।
খালেদা জিয়ার বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা আছে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে বহুজাতির দেশ বলে বিশ্বাস করেন না। তাঁর বিশ্বাস মোতাবেক বাংলাদেশে একটি একক জাতি বাস করে, তারা মুসলমান, বাকি সব জাতি; হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান পাহাড়ী এবং তারণ্যক জনসমষ্টি মুসলমান জাতির কাছে অর্ধস্তন, সেদিক থেকে অধস্তন জনসমষ্টির মৌলিক অধিকার নেই।
যারা অধস্তন তারা নাগরিক নয়। যারা নাগরিক নয়, তাদের ভিন্ন ধর্ম পালনের অধিকার নেই, তাদের জমিজমা ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর অধিকার নেই। একটি একক জাতির আধিপত্য বিস্তার করতে হবে এবং একক জাতির আধিপত্য শক্তিশালী করতে হবে সন্ত্রাস ও সশস্ত্র শক্তির মাধ্যমে। তাহলেই মুসলমান জাতির রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তিশালী করা সম্ভব হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমান জাতির রাজনীতির সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম উম্মার রাজনীতির মেলবন্ধন সম্ভব হবে। মুসলিম উম্মার রাজনীতি মধ্যপ্রাচ্যে মুখথুবড়ে পড়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমাগত সন্ত্রাসী রাজনীতিতে পর্যবসিত হচ্ছে : এ সম্বন্ধে খালেদা জিয়ার ধারণা অস্পষ্ট। মুসলিম উম্মার কনসেপ্ট এখন খ-বিখ- : মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম উম্মার কনসেপ্টের মধ্যে এখন আল কায়দার অনুপ্রবেশ ঘটেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম উম্মার কনসেপ্টের মধ্যে জামায়াতে ইসলামের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
যে কোন সমাজ ব্যবস্থায় আত্মঘাতের পথ তৈরি হয় সন্ত্রাসের মধ্যে দিয়ে। খালেদা জিয়া, বাংলাদেশে, এই আত্মঘাতের পথ তৈরি করেছেন বিএনপি-জামায়াতের মেলবন্ধনের মধ্যে দিয়ে। খালেদা জিয়া তাঁর কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গুডবাই জানাচ্ছেন। তাঁকে বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। যারা বাংলাদেশে অনবরত আল কায়েদা (আল কায়েদার অপর নাম জামায়াত) তৈরি করে তাদের রাজনীতিকে বিদায় জানাবার সময় এসেছে। খালেদা জিয়া বিএনপি জামায়াত সবাইকে বিদায় বাংলাদেশের মাটি থেকে।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক
বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৪, ১৬ মাঘ ১৪২০
__._,_.___