Banner Advertiser

Wednesday, January 29, 2014

[mukto-mona] একজন উস্কানি বেগমের হতাশা, ক্ষোভ, যন্ত্রণা ও ক্রোধ - ২




বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৪, ১৭ মাঘ ১৪২
একজন উস্কানি বেগমের হতাশা, ক্ষোভ, যন্ত্রণা ও ক্রোধ 
মুনতাসীর মামুন
(পূর্ব প্রকাশের পর)
২. জঙ্গীবাদের উত্থান
জঙ্গীবাদ নিয়েও সরাসরি মিথ্যা বলেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, 'জঙ্গীবাদের সূচনা আওয়ামী লীগের সময়েই হয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলেই উদীচী, পহেলা বৈশাখ, সিপিবি, গোপালগঞ্জের গির্জায় হামলা হয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এসে তাদের বিচার করেছি। তারা একজনকে ধরে নাই।' [সংগ্রাম। ঐ] এখানেই শেষ নয় কৌতূকের। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলে জঙ্গীবাদ সম্পূর্ণরূপে দমন হবে। বিএনপি এ দেশকে জঙ্গীবাদের বিচরণ কেন্দ্র হতে দেবে না।' [যায়যায় দিন, ঐ]
রাজনীতির মানে যদি হয় মিথ্যা বলা বার বার তাহলে খালেদা যা বলেছেন তা মেনে নিতে হবে। কিন্তু রাজনীতির মানে যদি হয় সততা, তথ্য পুনর্নির্মাণ না করা ও ব্যক্তিগত সততা তাহলে বলতে হবে খালেদা রাজনীতি করছেন না। মস্তানী করছেন মাত্র।
আওয়ামী লীগের আমলে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল সেগুলো কারা ঘটিয়েছিল? জেএমবি বা গোপন জঙ্গী সংগঠনগুলো। এগুলো যুক্ত ছিল প্রধানত জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে। প্রশ্রয় দিচ্ছিল বিএনপি। ওই সময় প্রায় ১২৫টি জঙ্গীবাদী গোপন সংস্থা গড়ে উঠেছিল। এদের মধ্যে হুজি বা হরকাতুল জেহাদ [মুফতি হান্নান], জামা'তুল মুজাহিদুল বাংলাদেশ বা জেএমবি [শাইখ আবদুর রহমান] এবং জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ [সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই] বা জেএমজেবি। এই ১২৫টি সংগঠন ছিল [আছে] পরস্পরের সহযোগী। এদের উপদ্রব এমন বৃদ্ধি পেয়েছিল বিএনপি-জামায়াত আমলে যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি ক্লিনটন ঢাকায় এসে কোন প্রকাশ্য সভায় যোগদান করেননি।
জেএমবি ১৭ আগস্ট ২০০৪ সালে একযোগে একই সময় সারাদেশে বোমা বিস্ফোরণ করে তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জেএমবি তারেক জিয়ার পরিকল্পনায় গুলিস্তানে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা করেছিল যার সঙ্গে ডিজিএফআই ও এনএসআইও যুক্ত ছিল। শেখ হাসিনা বেঁচে গিয়েছিলেন কিন্তু আইভি রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
এই আমলে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাংলা ভাইয়ের উত্থান। রাজশাহীতে তারা সরকারী ও স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সহায়তায় নিজেদের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এক সাক্ষাতকারে বাংলাভাই সেটি স্বীকার করেন। ওই সময়ের এসপি মাসুদ মিয়া তাদের সর্বতোভাবে সহায়তা করেছিলেন। রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি নূর মোহাম্মদ জানিয়েছিলেন 'তাদের প্রতি আমাদের সায় আছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। পুলিশের সম্মতি না থাকলে তারা মাঠে থাকতে পারে না।' (জনকণ্ঠ ৫.৫.২০০৪)।
তারা কী করছিল সে সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনÑ 'গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে 'মচমইলে' জেএমবির ধর্মসভায় লুৎফর রহমান মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের [আসলে জেএমবি] হামলায় আহত ড. হুমায়ুন আজাদকে 'কুত্তা' আখ্যা দেয়। জোরপূর্বক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের দিয়ে এসব সভা আহ্বান করা হচ্ছে। স্কুল ও কলেজ প্রধানদের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের কালো পর্দার পাটিশন দিয়ে আলাদা বসার ব্যবস্থা করতে। মেয়েদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক। শিক্ষকদের প্রতিদিন ১০ মিনিট করে ইসলামী আলোচনা করতে হবে। সিগারেট বিড়ি খাওয়া বন্ধ রাখতে বলা হচ্ছে। নামাজ আদায় করা হবে নিয়মিত। পুলিশ কোন কিছু করলে আমরা ব্যবস্থা নেব বলে প্রচার করেছে জঙ্গী ক্যাডাররা।' [সংবাদ, ৭.৫.২০০৪]
জঙ্গীরা ভয়ানক হয়ে উঠলে মিডিয়ার চাপে খালেদা জিয়া আগস্ট ২০০৪ সালে সম্পাদকদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেনÑ দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য চারদলীয় জোটে ফাইল ধরানো। ১৫ মার্চ ২০০৫ সালে সঙ্কটে তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন এসব জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের পিছে প্রশ্রয় আছে আওয়ামী লীগের। ২২ জুলাই ২০০৪ সালে মতিউর রহমান নিজামী বলেন, 'বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি।' ২২ জুন তিনি সংসদে বলেন, পুলিশ কাকে গ্রেফতার করবে, বাংলা ভাই বলে তো কেউ নেই। ২৬ জানুয়ারি ২০০৫ সালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও একই ধরনের উক্তি করেন। গ্রেনেড হামলার জন্য জজ মিয়া নামক একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনরোষ চরম হলে শাইখ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইকে বিএনপি-জামায়াত সরকার গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়। পরে বিচারে তাদের মৃত্যুদ- দেয়া হয়। বাংলা ভাই বা জঙ্গীবাদী সংগঠনগুলো না থাকলে এদের কেনই বা গ্রেফতার করে মৃত্যুদ- দেয়া হলো। এ বিষয়ে বিস্তারিত অনেক কিছু আছে। কিন্তু আমি পাঠকদের শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই রাজনীতির নামে ধর্মকে হাতিয়ার করে বিএনপি-জামায়াত বা খালেদা জিয়া কি মিথ্যাচার করে ছিলেন।
৩. দুর্নীতি
আওয়ামী লীগের নেতাদের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করেছেন খালেদা জিয়া। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, 'বিদেশী টাকা পাচার করেছেন আপনারা। কে কোথায় টাকা পাচার করেছেন তার সব তথ্য আমাদের কাছে আছে।' [যাযাদি ঐ] এ বক্তব্য নতুন নয়। তিনি এবং বিএনপি নেতারা বার বার এ কথা বলেছেন, শুধু তাই নয় তিনি ও বিএনপি নেতারা আগে এবং এখনও বলছেন, আওয়ামী লীগ আমলে ডেসটিনি, হলমার্ক প্রভৃতি কেলেঙ্কারি ঘটেছে অর্থাৎ এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা দায়ী।
টাকা পাচার সম্পর্কে তথ্যের কথা দীর্ঘদিন ধরে খালেদা বলছেন, কিন্তু কখনও তথ্য প্রমাণ মিডিয়াকে দিচ্ছেন না। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বা মন্ত্রীরা দুর্নীতি করেনি এ কথা বলা সত্যের অপলাপ, আমি তা বলব না। কিন্তু একটি পার্থক্য আছে। বিএনপি-জামায়াত আমলে একেবারে থানা থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত দুর্নীতির সুযোগ দেয়া হয়েছে এবং প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রথম দুই বছর যেভাবে টেন্ডারবাজি শুরু হয়েছিল শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রীর কারণে তার বিস্তার ঘটেনি। বিএনপি-জামায়াত আমলে যত আর্থিক কেলেঙ্কারি শুরু হয়েছে তার কোন বিচার হয়নি, আওয়ামী লীগ আমলে শেয়ার কেলেঙ্কারির বিচার না করা অন্যায় হয়েছে। কিন্তু ডেসটিনি, হলমার্ক প্রভৃতির কেলেঙ্কারির শুধু বিচার নয়, হোতাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতির তদন্ত দুদক শুরু করেছে সরকারের কেউ তাতে বাধা দেয়নি। পার্থক্যটি এখানেই।
খালেদা জিয়া কী ভাবে ভুলে যান তিনি ও তাঁর পরিবারের সবার দুর্নীতির বিচার হচ্ছে। তারেক ও কোকোর অর্থ আত্মসাতের তদন্ত তো করেছে সিঙ্গাপুর ও মার্কিন সরকার এবং সে মামলায় এফবিআইয়ের পক্ষ থেকে সাক্ষীও দেয়া হয়েছে ঢাকায়। অর্থ আদায়ের জন্য, ব্যবসার জন্য তারেক জিয়া তো আলাদা অফিসই নিয়েছিলেন যা পরিচিত হাওয়া ভবন নামে। খালেদা, তাঁর দুই পুত্র ও সঙ্গী-সাথীদের দুর্নীতির খতিয়ান ও মামলার বিশদ বিবরণ নিয়ে প্রায় ৫০০ পাতার তিনটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। প্রামাণ্য এসব গ্রন্থের মধ্যে দুটির উল্লেখ করছিÑ ২৭৫ পৃষ্ঠার আসলাম সানীর 'বিএনপি জোটের দুর্নীতির খতিয়ান' এবং জয়ন্ত আচার্যের 'খালেদা জিয়া পরিবারের লুটপাট।'
৪. নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন
নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলছেনÑ 'মেরুদ-হীন এই কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।' [সংগ্রাম] এবং 'ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জাতির সঙ্গে প্রহসন করেছে। এ নির্বাচনে মানুষ ভোট দেয়নি।' ইনকিলাব ও প্রথম আলো দেখিয়ে তিনি বলেন, 'এসব পত্রিকায় বলেছে ভোটার নয়, কেন্দ্রে কুকুর শুয়েছিল। নির্বাচনে ভোট পড়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশ। সরকার এ ভোটকে চল্লিশ শতাংশ দেখিয়েছে।' [ঐ]
বাংলাদেশে প্রতিটি নির্বাচন বিতর্কিত সুতরাং, এ নির্বাচনের পরও বিতর্কিত বলা হবে সন্দেহ নেই। দুঃখজনক হলো রাজনীতিবিদরা পাঁচ বছর শাসন করবেন কিন্তু নির্বাচনের সময় সাংবিধানিক নির্বাচন বা কমিশন চাইবেন না তারা বরং সংবিধান বহির্ভূত ও আমলা নিয়ন্ত্রিত সরকার চাইবেন। তবে নির্বাচন নিয়ে বর্তমান দ্বন্দ্বের সূত্রপাত করেছিলেন খালেদা জিয়া সরকার বিশেষ করে মওদুদ আহমেদ যা বিতর্ককালে সবাই ভুলে যান। তত্ত্বাবধায়ক সরকারও বিতর্কিত করেছেন মওদুদ, হঠাৎ বিচারপতিদের অবসরের সময়সীমা বাড়িয়ে। খালেদার সময় নির্বাচন কমিশন এত বিতর্কিত ছিল যে তারাই বাধ্য হয়েছেন তা বদলাতে। সেই বিচারপতি আজিজকে সরিয়ে দেয়ার পর কেউ আর তাকে দেখেনি। খালেদার আমল ও খালেদা প্রভাবান্বিত লতিফুরের আমলের নির্বাচনগুলো পরিচিত মাগুরা নির্বাচন, ফালু নির্বাচন, সাদেকালি নির্বাচন ও সালসা নির্বাচন নামে। এসব কথা শুধু আমরা নই মিডিয়াস্থ যেন ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে গেছে। খালেদার সময় একতরফা নির্বাচনে কত শতাংশ ভোট পড়েছিল? 
সাম্প্রতিক নির্বাচনে কোন কোন কেন্দ্রে ভোট প্রায় পড়েনি। কারণ এত সন্ত্রাস হয়েছিল যে অনেক ক্ষেত্রে মানুষ সাহসও করেনি ভোট কেন্দ্রে যেতে। মিডিয়াও এমন প্রচার করেছিল যাতে ভোটার না আসে। তবুও মানুষ গেছেন ভোট দিতে আদর্শগত কারণে। এমনকি হিন্দুদের হুমকি দেয়ার পরও তারা ভোট দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন ভোটের বাক্সের নিরাপত্তা চেয়েছিল ভোটারের নয়। ভোটারের নিরাপত্তা দিলে ও যৌনবাহিনী ২০০৮ সালে যেভাবে ভোটার সুরক্ষা করেছিল তা করলে ভোট সংখ্যা আরও পড়ত। তার পরও ভোটের হার ছিল চল্লিশ শতাংশের ওপর। ভাইসরয়ের সঙ্গে ব্যবহারকারী যুক্তরাজ্যের দূত গিবসনকে সাংবাদিকরা যদি একটু সাহস করে জিজ্ঞেস করতেন, ক্যামেরন সরকার কত শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত তাহলে খুশি হতাম। ওই হার চল্লিশ শতাংশের কম। নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির বিরোধী দল হওয়া ও সরকারে থাকা নিয়ে অনেক বিজ্ঞজন প্রশ্ন তুলেছেন, এখন ব্রিটেনে যে সরকার তাতে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ ও লিবারেল পার্টি সরকার গঠন করেছে এবং লিবারেল সদস্যরা যথারীতি সরকারের সমালোচনা করছেন। তার পরও বলব বিএনপি নির্বাচনে এলে ভাল হতো। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে না এলে গণতন্ত্র নস্যাৎ হয়ে গেল এ বক্তব্য অনুচিত। কারণ, বিএনপি স্বেচ্ছায় নির্বাচনে আসেনি। বিএনপির শর্তানুযায়ী কিছু না হলে গণতন্ত্র গেল যারা এ কথা বলেন তারা গণতন্ত্রের থেকে বিএনপির বেশি বন্ধু। পাকিস্তানপন্থী, মৌলবাদী, জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরোধী, একটি দল নির্বাচনে না এলে গণতন্ত্রের তেমন ক্ষতি বৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করি না। বরং প্রশ্ন তুলব, যারা স্বাধীনতার ঘোষণা স্বীকার করে না, বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে না, ত্রিশ লাখ শহীদের অবমাননা করে, তাদের রাজনীতি করার অধিকার আছে কিনা তা বিচার্য।
৫. হত্যা, গুম ও যৌথবাহিনী এবং ভারতের ভূমিকা
হত্যা গুম যৌথবাহিনী ও ভারতের ভূমিকা নিয়েও খালেদা জিয়া বক্তব্য রেখেছেন। বলেছেন তিনি যৌথবাহিনীর অভিযান সম্পর্কে বেগম জিয়া বলেন, যৌথ অভিযানের নামে সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছে। যৌথবাহিনীতে সরকারী দলের লোক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুলিশ আজ সরকারের কর্মীবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা সরকারের কথামতো বিরোধী দলের নেতাকর্মীকে গুম, খুন এবং হত্যা করছে। তাই এ সরকার জনগণের নয়। তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় যেভাবে যৌথবাহিনীর নামে বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে, গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, গুম, হত্যা করেছে তাতে এটা বলা অনুচিত হবে না যে, এ অভিযানে বাইরের কেউ জড়িত থাকতে পারে। যে সব অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি বলেন, অভিযানের নামে বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে। [সংগ্রাম]
গর্জন সিং ওরফে মির্জা ফখরুল আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, 'সকাল-বিকাল-দুপুরে যাদের দেখবেন, তাদের চেহারা যদি আপনাদের চেহারার সঙ্গে না মিলে, মনে করবেন এরা ভারতের লোক। আওয়ামী লীগের ভাড়াটে।' {ঐ} এ প্রসঙ্গে খালেদা ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশে 'মৃত্যু'র সংখ্যাও উদাহরণ হিসেবে বলেছেন। 
এ বক্তব্যের প্রথমাংশ নিয়ে প্রথমে আলোচনা করা যাক। ক্রসফায়ার, হত্যা, গুমের পক্ষপাতী আমরা নই; অন্তত ব্যক্তিগতভাবে কখনও আমি তা সমর্থন করিনি। বিএনপি আমলে সেনাবাহিনীর ক্লিনহার্ট অপারেশন, র‌্যাবের ক্রসফায়ার বা গুমের সমালোচনা প্রথম ভাষ্যকার হিসেবে আমি এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে আসক করেছিল। শেখ হাসিনার আমলের প্রথম বছরেও ক্রসফায়ার চলেছিল এবং আমরা তার নিন্দা করেছি। এর পর র‌্যাবের ক্রসফায়ারের কথা আর তেমন শোনা যায়নি।
হত্যা, গুম কি সব সরকারী বাহিনীই করে? বিএনপির নেতা কিন্তু সমাজে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতদের কি ক্রিমিনাল প্রতিদ্বন্দ্বী নেই? দুটি উদাহরণ দেই। চৌধুরী আলম টোকাই থেকে কোটিপতি হয়ে বিএনপির নেতা বলে যান। তারপর তিনি গুম হন। এর আগে তিনি নিজেও অনেক গুম, খুন করেছিলেন। ইলিয়াস আলীর পরিচয়ও ছিল সন্ত্রাসী হিসেবে এবং এক সময় বিএনপিই তাকে বহিষ্কার করেছিল পরে তিনি বিএনপি নেতা হন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী এ্যাকশনের মারাত্মক শত্রুতা ছিল। এদিক থেকে কিন্তু কেউ তেমন বিচার করেন না।
বিএনপি আমলে আমি বা শাহরিয়ারের মতো লেখক ছাড়াও তোফায়েল আহমেদ থেকে সাবের চৌধুরীÑ কে গ্রেফতার হয়নি? মতিয়া চৌধুরী থেকে শুরু করে আসাদুজ্জামান নূরÑ কে পুলিশের লাঠির বাড়ি খাননি? সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে তো বিএনপি জোটের সাফল্য প্রচুর। তারা ঘরে ঘরে সন্ত্রাস পৌঁছে দিতে পেরেছে। 
খালেদার আমলে খুন হয়েছে ১৩,৭১৩ জন, দাঙ্গা ৩০,৮৯০টি, ডাকাতি ৪,৬০৮টি, নারী নির্যাতন ৫,০৬০টি, অপহরণ ৭,৮৩২টি। বিশেষ ক্ষমতা আইনে অন্তরীণ হয় ১৮,০০৪ জন। বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য সংগৃহীত হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত ধর্ষণ, গণধর্ষণের সংখ্যা ৬৫৯টি, এগুলো হচ্ছে সংবাদপত্র প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। এ ছাড়া আরও ধর্ষণ হয়েছে যা প্রতিবেদন আকারে আসেনি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৪১ জনকে। গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪৪ জনকে। এ কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৫০ জন। ধর্ষণের ফলে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। এ হিসাব মহিলা পরিষদের। এর সঙ্গে ২০০৫ ও ২০০৬ এর হিসাব ধরলে এ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। ক্রসফায়ারে মারা গিয়েছিল ১৪০০ জন। খালেদা নিজের আমলের কথা ভুলে যেতে পারেন, আমরা তো পারি না।
বিএনপি-জামায়াত তাদের কর্মকা-ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। গত দু'বছরে তারা পেট্রোলবোমা ছুড়ে কতজন হত্যা করেছে? দোকানপাট ভাংচুর ও লুট করেছে। সাতক্ষীরায় তারা যা করেছে তা যদি সাতক্ষীরায় কেউ না যান তাহলে বুঝতে পারবেন না। আরও আছে। আসলে বিএনপি-জামায়াত আমল সন্ত্রাসে এত ভরপুর ছিল সব মনে রাখাই কঠিন। ১০ ট্রাক অস্ত্রের কথা তোলা যায় কী ভাবে? ২০০৭ সালের ৭ মার্চ দৈনিক সংবাদের শিরোনাম ছিল 'অস্ত্র কিনতে দাউদের সঙ্গে ডিল করেন খালেদা পুত্র [তারেক]।
হেফাজত নিয়ে খালেদা সব সময় মিথ্যাচার করেছেন, এখনও করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি মিডিয়াকেও মিথ্যাবাদী বানিয়েছেন। এদিন রাতে মিডিয়ার কর্মীরা সারাক্ষণ ছিলেন মতিঝিলে, তাঁরা কোন মৃত্যুর সংবাদ দেননি। নির্মূল কমিটি দুই খ-ে যে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে সেখানেও দেখা গেছে ওই রাতে কারও মৃত্যু হয়নি। কিন্তু গায়ের জোর বলে কথা!
আসলে খালেদা জিয়া সব সময় আদেশ দিতে অভ্যস্ত। তাঁকে কখনও আদেশ দেয়া হয়নি। তাঁর যে কোন বক্তব্যই তাঁর ও বিএনপি পার্শ্বচরদের কাছে আদেশ। সে বক্তব্যের কেউ সমালোচনা করলেই তার অভিধা জোটে বেয়াদব। এটি যে এক ধরনের বেয়াদবী এটি তাঁর কখনও মনে হয়নি। কারণ যে পারিবারিক আবহে তিনি বড় হয়েছেন সেখানে সুসংস্কৃতির চর্চা ছিল কিনা সন্দেহ। থাকলে, তিনি অনবরত মিথ্যা বলতে পারতেন না। তাঁর কাছে রাজনীতি মানে গায়ের জোর, মিথ্যাচার, শঠতা। তিনি ন্যায়-অন্যায়ের কথা বলেন। তাঁর আমলে জনাব এবিএম কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়। তাঁর চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারও দেয়া হয়নি। আহসান উল্লাহ মাস্টারের বুক ঝাঁজরা করে দেয়া হয় গুলিতে। কারও বিচার হয়নি। এই মহিলা আমাদের বলেন সন্ত্রাসের কথা যার স্বামী সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিলেন যার পুত্ররা সন্ত্রাস ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, অন্যদের সন্ত্রাসী বলা ঠাট্টার মতোই বটে।
তিনি আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে, সংসদ নিয়ে সবক দেন। তাঁর এ কথা বলার যোগ্যতা নেই। তাঁর দলে কখনও প্রায় নির্বাচন হয় না। নবম সংসদে ৪১৮ কার্যদিবসে তিনি উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০ দিন। বেতন-ভাতা কিন্তু নিয়মিত নিয়েছেন। সপ্তম সংসদে ৩৮২ কার্যদিবসের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ২৮ দিন। নবম সংসদে উপস্থিত না হয়ে তিনি মাসে প্রায় দেড় লাখ টাকা বেতন ও অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেছেন [আমাদের সময়, ২৫.১.২০১৪]
সবশেষে আসি ভারত প্রসঙ্গে। বিএনপি-জামায়াতের পররাষ্ট্র নীতি ও দলের মৌল নীতিই হলো ভারত বিরোধিতা ও ভারতের প্রতি বিদ্বেষ জ্ঞাপন। নির্বাচনকালে মজেনা, গিবসন, হানা তাঁর পক্ষে যে রকম ভূমিকা রেখেছিলেন তা তাঁর স্থায়ী কমিটিরও কেউ রাখতে পারেনি। এতে তিনি আশান্বিত ছিলেন নির্বাচন হবে না। ভারত এককভাবে সংবিধানের পক্ষ নিয়েছিল। খালেদা ভাবেননি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিই জয়ী হবে। এটি তিনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন এবং নানাভাবে ভারতের বিশেষ করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখছেন। হয়ত তাঁর গোপন বাসনা, সেনাবাহিনী ১৯৭৫ সালের মতো, শেখ হাসিনার পরিবারকে হত্যা করুক তারপর তিনি ক্ষমতায় আসবেন যেটি তাঁর স্বামী করেছিলেন। বিডিআরের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার নির্দেশে নিহত হয়েছেন এমন ইঙ্গিতও তিনি করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধেও যথেষ্ট উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছেন। আর গত কয়েক মাসে তাঁর ও তাঁর নেতাদের নির্দেশে তার ও জামায়াতের ক্যাডাররা খুন করেছে ১১ জন পুলিশ, জখম করেছে কতজনকে তার ইয়ত্তা নেই। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি কথাও আজ পর্যন্ত খালেদা বা ফখরুলের মুখ দিয়ে বেরোয়নি। পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁদের কানেকশন যে কত গভীর তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে কয়েকদিন আগে তিনজন তেহরিকী তালেবানের সদস্য গ্রেফতার হওয়ায়। তারা স্বীকার করেছে তাদের একটি বড় দল বাংলাদেশে এসেছে সন্ত্রাস ঘটাবার জন্য। খালেদার পুরো রাজনীতিই উস্কানিমূলক। তাঁর নাম উস্কানি বেগম রাখাই বরং যুক্তিযুক্ত।
তিনি ও ফখরুল বলছেন, সাতক্ষীরায় জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে এ্যাকশনে নেমেছিল ভারতীয় বাহিনী। আমাদের চারপাশেও ভারতীয়রা ঘোরাফেরা করছে। এই উক্তি আমাদের সেনাবাহিনীর জন্যও চরম অবমাননাকর। একজন রাজনীতিবিদ হয়ে এ ধরনের মিথ্যাচার তিনি কী ভাবে করলেন। এই নারী ক্ষমতায় আসা কতটা বিপজ্জনক তাঁর এসব বক্তব্য ও মিথ্যাচারই তা প্রমাণ করে। বার বার মিথ্যাচার কোন বক্তব্যকে সত্য বলে প্রমাণ করে না বরং বক্তাই সমাজে রাষ্ট্রে নির্লজ্জ বলে প্রতিভাত হন। খালেদা জিয়ার বক্তৃতা ও সাম্প্রতিক উক্তিসমূহ একজন উস্কানি বেগমের হতাশা, ক্ষোভ, মানসিক যন্ত্রণা ও ক্রোধের বহির্প্রকাশ মাত্র, শুদ্ধ রাজনীতি দূরে থাকুক, রাজনীতিও নয়। (সমাপ্ত)
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2014-01-30&ni=162063
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৪, ১৭ মাঘ ১৪২


Previous:
বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৪, ১৬ মাঘ ১৪২

একজন উস্কানি বেগমের হতাশা, ক্ষোভ, যন্ত্রণা ও ক্রোধ -
মুনতাসীর মামুন
বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৪, ১৬ মাঘ ১৪২
Also Read:
বাংলাদেশের মাটি থেকে বিদায় -  
খালেদা জিয়া বিএনপি জামায়াত সবাইকে বিদায় বাংলাদেশের মাটি থেকে।
বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০১৪, ১৬ মাঘ ১৪২




__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___