Banner Advertiser

Sunday, January 26, 2014

[mukto-mona] হেরেমের ইতিকথা



প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০:০০আপডেট : ২৫ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০৪:১০
অ-অ+
printer
হেরেমের ইতিকথা
রণক ইকরাম

ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়ে আগের দিনের রাজা-বাদশাদের নানা কীর্তিকলাপ আধুনিক মানুষের মুখে মুখে ঘুরে ফিরছে। আর রাজা-বাদশাদের বিচিত্র সব কীর্তিকলাপের বাইরে 'হেরেম' সব সময়ই ছিল রহস্যময় এবং মানুষের চিরন্তন আগ্রহের কারণ। তুর্কি সাম্রাজ্যের আমলে শুরু হওয়া নারীকেন্দ্রিক এ বিষয়টিকে ভারতীয় উপমহাদেশের মোগল সম্রাটরা রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ প্রতিদিন-এ প্রকাশিত 'মোগল হেরেমের দুনিয়া কাঁপানো প্রেম' পড়ে অনেক পাঠকই হেরেম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। তাদের জন্যই আমাদের এ আয়োজন

হেরেম আসলে কী

'হেরেম' শব্দটিকে কখনো কখনো 'হারেম'ও বলা হয়। হেরেম শব্দটি ১৬৩৪ সালে ইংরেজি ভাষার অন্তর্ভুক্ত হয়। এ শব্দটি তুর্কি হলেও হিব্রু হেরেম এবং গ্রিক হারেমিও এর সমগোত্রীয় শব্দ। আবার তুর্কি শব্দটির উৎপত্তি আরবি শব্দ থেকে। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে নিষিদ্ধ বা গোপনীয় স্থান। আর আরেকটি অর্থ হচ্ছে রক্ষিতাদের আবাসস্থল কিংবা পরিবারের নারী সদস্যদের আবাস কিংবা কোনো কিছু নিরাপদে সংরক্ষণ করে রাখা। তবে সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হেরেমের ধারণাটিরও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আবার তুুর্কর্ি সাম্রাজ্য হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত পেঁৗছতে গিয়েও বিবর্তিত হয়েছে। আগের দিনের রাজা-বাদশাদের হেরেম থাকত। কারও কারও দরবারে এই হেরেম ছিল পরিবারের নারী সদস্যদের আবাসস্থল। আবার কোনো কেনো দরবারে থাকত নিষিদ্ধ সুবাস গ্রহণের সুযোগ। সেখানে রাজার বিনোদনের জন্য প্রায় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হতো। আর মদ আর নৃত্যগীতের আসর জমত। অসংখ্য রমণীদের মাঝ থেকে রাজা যখন ইচ্ছা তাকে ভোগ করতে পারতেন। এ নারীদের বাইরেও ক্ষেত্র বিশেষে রাজার অনেক উপপত্দী আর দাসী থাকত। থাকত সংগীতশিল্পী এবং নৃত্যশিল্পীরাও। আর এদের সবার সমন্বিত আবাসস্থল ছিল একটি হেরেম। তবে হেরেমের ধারণাটি মুসলমান রাজা এবং অন্য ধর্মের রাজাদের ক্ষেত্রে স্বকীয় পার্থক্য বহন করে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে হেরেম শব্দের অর্থ হলো নিষিদ্ধ। মুসলিম রীতি অনুযায়ী মহিলাদের বাসস্থানে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। মহিলাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হারাম। তাই মোগল রাজদরবারের মহিলাদের বাসস্থান হেরেম হিসেবে পরিচিতি অর্জন করে। হেরেমকে মহল, জেনানা, হেরেম-সারা, হেরেম-গাঁ, মহল-সারা, রানীবাস ইত্যাদি নামেও আখ্যায়িত করা হতো। হেরেমের উদাহরণস্বরূপ বাদশা আকবরের কথা বলা যেতে পারে। তার প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি বেগম ও সেবিকা বা দাসী ছিল। এক এক দলের বেগমের ওপর এক এক কাজের ভার দেওয়া ছিল। আবার এক এক দল বেগমের কাজ দেখার জন্য স্ত্রী দারোগা নিযুক্ত ছিল। প্রত্যেক বেগমের জন্য মাসিক পারিশ্রমিকেরও ব্যবস্থাও ছিল। বেগমের সর্বশ্রেষ্ঠ দলের বয়স এবং রূপ ও গুণ অনুসারে এক হাজার ৬১০ টাকা হতে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হতো। সেবিকাদের ৫০ এবং যারা ধাত্রী তাদের ৪০ থেকে ২০০ পর্যন্ত পারিশ্রমিক প্রদান করা হতো। বৃদ্ধ হয়ে গেলে তাদের হেরেম থেকে নিয়ে আলাদা বাসস্থান দেওয়া হতো। বেগমদের কারও কোনো সামগ্রী লাগলে তারা হেরেমের কোষাধ্যক্ষের কাছে আবেদন করত। হেরেমে ব্যবহারের জন্য আলাদা রকমের মুদ্রা ছিল যা বাইরে পাওয়া যেত না। এ রকম করেই একেক রাজবংশ ও একেক রাজার রাজত্বে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ও রং নিয়ে পরিচালিত হয়েছে হেরেম।

 ইসলামের আবির্ভাব এবং ভারতীয় উপমহাদেশে এর প্রত্যাগমনের পর পরই ভারতীয় মহিলাদের মর্যাদা তাৎপর্য পূর্ণভাবে পাল্টে যায়। পর্দা প্রথার কারণে মুসলিম মহিলারা ঘরের ভেতরেই অবস্থান শুরু করেন। তাদের পৃথিবী আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসে। তখনকার নারীদের শিক্ষার সুযোগ ছিল সীমিত। কন্যাশিশুর জন্মকে অশুভ বিবেচনা করা হতো। তবে অভিজাত ও রাজপরিবারের মহিলারা অন্তঃপুরে অবস্থান করলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর তুলনায় তারা উন্নত জীবনযাপন করতেন। মহিলারা সুশিক্ষা লাভ করতেন এবং তারা তাদের মেধা বিকশিত করার পর্যাপ্ত সুযোগ পেতেন। কখনো কখনো তারা সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতেন। দিলি্ল সালতানাতে সম্রাট ইলতুৎমিশের বুদ্ধিমতী কন্যা রাজিয়া সুলতানা ছিলেন ইলবারি সালতানাতের ইতিহাসে একমাত্র মহিলা শাসক। তার শাসনকাল সংক্ষিপ্ত হলেও ছিল ঘটনাবহুল। মূলত এর পরিপ্রেক্ষিতেই তুর্কি সাম্রাজ্যের অনুরূপ হেরেমের প্রচলন ঘটে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে।

ষোড়শ শতাব্দীতে মধ্য এশিয়া থেকে মোগলরা ভারতে পদার্পণ করে। মোগলদের আগমনের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সমাজে নতুন নতুন উপাদান যুক্ত হয়। এসব উপাদান বিদ্যমান সংস্কৃতির সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। মোগলরা শুধু দেশের রাজনৈতিক ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন তাই নয়, তারা হিন্দুস্তানের গোটা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শৈল্পিক জগৎকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন।

কারা থাকতেন?

আগেই বলা হয়েছে হেরেমের মূল ধারণাটা এক হলেও রাজবংশ বা রাজাভেদে এর পার্থক্য ছিল। মোগল হেরেমের প্রসঙ্গে বলতে গেলে যেটি আসে সেটি হলো মোগলদের হেরেমে অনেক মহিলার বসবাস ছিল। এদের সবই উচ্চবংশীয় অথবা রাজরক্তের ছিল এমন নয়। এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাজার পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী মেয়েদের এনে রাখা হতো। বিভিন্ন প্রদেশ, বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন বর্ণের মেয়েদের রাখা হতো। মোগল হেরেমে মেয়েদের সংখ্যা কখনো কখনো ৭-৮ হাজার ছাড়িয়ে যেত। হেরেমে কোনো মেয়ের ঠাঁই পাওয়া বিষয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম ছিল। কখনো কখনো বিয়ে কিংবা উপঢৌকনের বদৌলতে কাউকে নিয়ে আসা হতো। আবার কাউকে কাউকে দাসীরূপে ক্রয় করা হতো।

মোগল আমলে হেরেমের ঐতিহ্য ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে ইতিহাস বিবেচনায় আনলে বলা চলে এই আমল কেবল সম্রাটদেরই ছিল তা নয়, সেই সঙ্গে এই আমল শাহজাদী, রানী ও হেরেমের সভ্রান্ত মহিলাদের অধ্যায়ও। মোগল পুরুষেরা যেমন বিশ্বব্যাপী নিজেদের দোর্দণ্ড প্রতাপের উত্তাপ ছড়িয়েছিলেন, ঠিক তেমনি হেরেমের নারীরাও ছিলেন খ্যাতনামা। অনুপ্রেরণা এবং চিত্তবিনোদনের পাত্র তো বটেই, কেউ কেউ এসব পরিচয় ছাপিয়ে হয়ে উঠেছিলেন রাজার বিকল্প নীতিনির্ধারকও। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মহিলারা ছিলেন পুরুষদের চেয়ে বেশি অগ্রসর। এসব সুন্দরী, শিক্ষিতা ও অসম্ভব মেধাবী মহিলা শুধু সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তা নয়, তারা সমসাময়িক রাজনীতিতে বিরাট প্রভাব রেখেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

বাবর ও হুমায়ুনের হেরেম ছিল আকারে ছোট। তবে সম্রাট আকবরের আমল থেকে হেরেমের আয়তন বৃদ্ধি পায়। তার হেরেমে মহিলা ছিলেন ৫ হাজার। জাহাঙ্গীর, শাহজাহান ও আওরঙ্গজেবের হেরেমও ছিল বেশ বড়। ঐতিহাসিক হকিন্সের মতে, সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর সংখ্যা ছিল তিনশ। তাদের মধ্যে চারজন ছিলেন প্রধান। ঐতিহাসিক টেরির মতে, জাহাঙ্গীরের হেরেমে চারজন স্ত্রী ছাড়াও ছিলেন উপপত্নী এবং আরও এক হাজার মহিলা।


প্রচলিত ধানণা বনাম ভ্রান্তি

হেরেম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। আর সেই অনুসারে হেরেমের কথা কল্পনা করলেই আমাদের মনে রানী, উপপত্নী, নর্তকী, গায়িকা ও দাসীর ছবি ভেসে উঠে। আর সেই সঙ্গে নিষিদ্ধ সব কীর্তিকলাপের রগরগে চিত্র ফুটে ওঠে। কিন্তু বাস্তবের ব্যাপারটি ছিল আরও সংযত এবং স্বাভাবিক। স্বাভাবিক এই অর্থে যে তখনকার সময়ে একজন রাজার অনেক পত্নী আর উপপত্নী থাকবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। নিজের দাস-দাসী কিংবা পছন্দের পাত্রীদের রাজা যেমন ইচ্ছা তেমন করেই ব্যবহার করবেন এতেও অস্বাভাবিক কিছুই ছিল না। তবে যে বিষয়টি অনেকেই জানেন না সেটি হলো হেরেমে রানী-দাসী আর উপপত্নী ছাড়াও আরও অনেক মহিলাদের বসবাস ছিল। এর মধ্যে সম্রাটের মা, সৎ মা, কন্যা, তার মহিলা আত্দীয়-স্বজনরা উল্লেখযোগ্য। আরেকটি ব্যাপার হলো বড় হওয়া নাগাদ ছেলেরাও হেরেমে অবস্থান করত। তাছাড়া ছিল সঙ্গিনী, দাসী, বাঁদি, মহিলা কর্মচারী ও প্রহরী। সম্রাট হেরেম দেখাশোনা করার জন্য তাদের নিয়োগ দিতেন। খোজা প্রহরীরা হেরেমের চারদিকে পাহারা দিতেন। শুধু তাই নয়, পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কয়েকজন মহিলা ও খোজা প্রহরী গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতেন। তারা হেরেমে অবস্থানকারী মহিলাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে সম্রাটকে অবহিত করতেন।

মোটকথা হেরেম কেবল রাজাদের চিত্তবিনোদনের কেন্দ্রস্থলই ছিল এমন ধারণা একদমই ঠিক নয়। বরং বলা চলে হেরেম ছিল রাজার কাছের সব মহিলাদের নিরাপদে রাখার জন্য একটি সুরক্ষিত স্থান।

জীবন - প্রণালি

কোটি টাকার প্রশ্ন হচ্ছে কেমন ছিল হেরেমে বসবাসকারী নারীদের জীবন-প্রণালি। অনেকের অনেক রকমের মতামত থাকলেও বাস্তবতা বলছে, হেরেমে বসবাসকারী মহিলাদের সাধারণত মানতে হতো কঠিন পর্দা। শুধু তাই নয়, তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে কিছুই ছিল না। মোগল হেরেমের মহিলারা নিজেদের ইচ্ছামতো বাইরে বের হতে পারতেন না। নেহায়েতই কোনো প্রয়োজনে বাইরে গেলে মুখমণ্ডল আপাদমস্তক ঢেকে যেতে হতো। তবে উল্টো চিত্র ছিল হেরেমের অভ্যন্তরে। এখানে মহিলারা নিজেদের মতো করে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করত। সবচেয়ে বড় কথা হেরেমের ভেতর আভিজাত্যের কোনো কমতি থাকত না। এখানকার মহিলারা উৎসব ও আনন্দে সময় কাটাতেন। বিশাল বিশাল এপার্টমেন্টে তারা বসবাস করতেন। হেরেমে ছিল বিশাল বাগান, ঝরনা, পুকুর ও পানির ফোয়ারা। মহিলারা চোখধাঁধানো পোশাক পরতেন। মাথা থেকে পা পর্যন্ত অলঙ্কার পরতেন। হাতির পিঠে হাওদা অথবা পালকিতে চড়ে বাইরে যেতেন। রাজকীয় বিভাগগুলো সম্রাট ও হেরেমের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতেন। মাতবাথ নামে পরিচিত পাকশালা থেকে তাদের খাবার পরিবেশন করা হতো। গ্রীষ্মকালে প্রাসাদে বরফ শীতল পানি পেঁৗছে দেওয়া হতো। মেওয়াখানা থেকে ফলমূল সরবরাহ করা হতো। রাজকীয় কারখানা থেকে মহিলাদের জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক, অলঙ্কার, সাধারণ ব্যবহার্য-সামগ্রী ও বিনোদনমূলক দ্রবাদি প্রদান করা হতো।


হেরেমেই মোগল ললনাদের জীবন

এখানে সবচেয়ে মজার বিষয়টি হলো মোগল ললনাদের গোটা জীবনই পার হয়ে যেত হেরেমে অবস্থান করে। যদিও হেরেমের বিষয়টি নিয়ে সবসময়ই কঠোর গোপনীয়তা আর রহস্যময়তার আশ্রয় নেওয়া হতো। এরপরও বলা চলে মোগল রমণীরা সাধারণ ছিলেন না। রাজকীয় মহিলা হিসেবে তাদের সামাজিক জীবন ছিল সাধারণ মহিলাদের চেয়ে আলাদা। ইতিহাসে মোগল হেরেম সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে, তার অধিকাংশই ইউরোপীয় পর্যটকদের বদৌলতে। তবে প্রাচ্য বিশেষ করে ইসলামের কঠোর পর্দা প্রথা এবং ইসলামী রীতিনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় তারা মোগল হেরেমকে কখনো তুলনা করেছেন কারাগারের সঙ্গে কখনো বা আস্তাবলের সঙ্গে। কখনো বা দেখা হয়েছে সম্রাটের যৌন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে। কিন্তু তাদের ধারণা মোটেই ঠিক নয়। মোগল হেরেম সম্পর্কে সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দিয়েছেন হুমায়ুনের বোন গুলবদন বেগম। তিনি তার লেখা জীবনীমূলক গ্রন্থ হুমায়ুন নামায় এ বর্ণনা দিয়েছেন। সম্রাট বা শাহজাদাদের পুত্র সন্তানের মা হওয়াই তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল না। হেরেমের মহিলারা বাইরের পৃথিবীর রাজনৈতিক পরির্বতন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতেন। মোগল হেরেমের মহিলারা হজে যেতেন। তারা পার্টি বা রাজসভায় যোগদান করতেন। ফলে বলা যায় মোগল সাম্রাজ্যের অভিজাত মহিলাদের আবাসস্থল ছিল হেরেম।

পোশাক- আশাক

মোগল হেরেমে বসবাসকারী নারীদের পোশাক-আশাক নিয়েও অনেকের আগ্রহ রয়েছে। নানা বর্ণনা ও পুরনো পেইন্টিং থেকে এ সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। মোগল মহিলারা ভারতে এসে পেঁৗছানোর সময় লম্বা গাউন, তুর্কি টুপি ও ট্রাউজার পরতেন। গাউনের নিচে খাটো বডিস হিসেবে থাকত কাতিজী। এক্ষেত্রে তারা ভারতীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করার আগে নিজস্ব রীতিতেই অভ্যস্ত ছিলেন। আকবরের আমলের আগ পর্যন্ত মোগল মহিলারা পার্সি পোশাক পরতেন। তবে তার সময় রাজপুত পোশাক গ্রহণ করে। পোশাকের বিভিন্ন ডিজাইনে মহিলারা তাদের রূপ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে যৌনাবেদনময়ী কৌশল গ্রহণ করতেন। সম্ভ্রান্ত মহিলারা অভিজাত্যপূর্ণ ও দামি পোশাক পরতেন। ইউরোপীয় পর্যটক ফঁ্রাসোয়া বার্নিয়ারের বর্ণনা থেকে জানা যায়, মোগল মহিলাদের পোশাকের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারা এক পোশাক দুবার পরতেন না। ব্যবহৃত পোশাক বাঁদিদের পরতে দেওয়া হতো। এসব পোশাকের দাম ছিল সাধারণত ১০ থেকে ১২ রুপি। তবে জমকালো পোশাকের দাম ছিল আরও বেশি। তবে হেরেমের মহিলাদের প্রতিটি পোশাকের দাম ছিল অন্তত ৪০ থেকে ৫০ রুপি কিংবা তার চেয়ে অধিক। পোশাকে ব্যবহার করা হতো সিল্ক, ডোরিয়া, জারবাফট (সোনালি সুতার কারুকাজ করা পোশাক) তিলাদোজ, মুক্কেশকর, কামখাওয়াব (সোনালি পোশাক), কালাবাত্ত, মসলিন বিশেষ করে মালবের মসলিন। মোগল হেরেম, অভিজাত ও অমার্ত্যদের জন্য কেবলমাত্র মসলিন কাপড় পাঠানোর জন্য বণিকদের নির্দেশ দেওয়া হতো। বাবর ও হুমায়ুনের আমলে মহিলাদের পোশাকে খোরাসান ও মধ্য এশিয়ার ফ্যাশন অনুসরণ করা হতো। হেরেমের মহিলারা প্রশস্ত, ঢিলা ও রঙিন অন্তর্বাস পরতেন। নিমতেনা হিসেবে পরিচিত আরেকটি জ্যাকেট ব্যবহার করা হতো। হিন্দু মহিলারা লাল পোশাক পরতে পছন্দ করতেন। তাদের পরিধেয় পোশাকের নাম ছিল চোলি। চোলির নিচে হিন্দু মহিলারা পরতেন শাড়ি। হুমায়ুনের সময় কুমারী মেয়েরা তাকি নামে ঝুটিদার একটি টুপি পরতেন। বিবাহিত মহিলারা তাকির সঙ্গে কাসাবা নামে পরিচিত একটি মস্ককাবরণ পরতেন। মহিলাদের মূল পোশাকের নাম ছিল আঙ্গা। আঙ্গা ছিল পুরো বা অর্ধেক আস্তিনের বডিস বা জ্যাকেট।

খাবার- দাবার

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, মোগলরা বরাবরই ভোজনরসিক ছিলেন। স্বভাবতই বলা যেতে পারে হেরেমের ভেতরও এর ছোঁয়া থাকবে এটাই স্বাভাবিক। রাজার নির্দেশে রাজপ্রাসাদের মতোই উন্নতমানের মোগলাই খাবারের ব্যবস্থা ছিল হেরেমের ভেতর। আর সে জন্য হেরেমের পাকশালায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ থাকত। পাকশালায় বিভিন্ন দেশের খাবার রান্না করা হতো। প্রতিদিন বহু লোভনীয় খাবার রান্না করা হতো। মোগলরা দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। দস্তরখানায় মাংস ছিল অপরিহার্য। কালিয়া ও কোরমা ছিল জনপ্রিয় খাবার। সম্রাট হেরেমে আহার করতেন। বিষ মেশানো আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য দাস-দাসীদের দিয়ে খাবার পরীক্ষা করিয়ে খেতেন। সম্রাটরা বিশেষ ধরনের একটি প্লেটে খাবার খেতেন। খাদ্যে বিষ থাকলে প্লেটটি নীল রং ধারণ করত। প্রতিবেলার সাধারণ আহারে থাকত ৫০ থেকে ১০০ পদ। রাজকীয় ভোজে পদ থাকত কয়েকশ। ঐতিহাসিক আবুল ফজলের মতে, হেরেমের মহিলাদের সকাল থেকে খাবার গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হতো। রাত অবধি চলত খাবার গ্রহণের পালা। মোগল মহিলাদের খাবারের মধ্যে থাকত তাজা ও শুকনো ফলমূল। তারা বাদাম ও পান খেতেন। পান খেলে তাদের ঠোঁট ও দাঁত লাল হতো। তাকে সৌন্দর্যের অংশ বলে গণ্য করা হতো।

চিত্তবিনোদন

পাঠক আগেই জেনেছেন মোগল হেরেমের মহিলারা বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ পেতেন না। তাদের অধিকাংশ সময় কাটত হেরেমের অভ্যন্তরে। হেরেমের স্টাফকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করতে হতো। হেরেমে চিত্তবিনোদনের নানা আয়োজন করা হতো। গান ও নাচের জন্য মহিলা তত্ত্বাবধায়ক থাকত। হেরেমে প্রচুর মহিলা গায়িকা ও নর্তকী ছিল। মহিলারা লুডু ও দাবার মতো নির্দোষ ঘরোয়া খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন। হেরেমের মহিলারা শিকারে যেতেন। হরিণ শিকার করা ছিল তাদের জন্য সহজ। একবার সম্রাট জাহাঙ্গীর স্ত্রীদের নিয়ে সামানগাঁয় হরিণ শিকারে যান। জঙ্গলের ৬৪১টি হরিণের মধ্যে ৮৪টির নাকে রুপার আংটি পরিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কয়েকটি হরিণ শিকার করা হয়। জাহাঙ্গীর এসব হরিণের মাংস তার বেগমদের মধ্যে বিতরণ করেন। সাহিত্যের প্রতি হেরেমের মহিলাদের ঝোঁক ছিল। কোনো কোনো মহিলা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে যেতেন এবং স্মৃতিস্তম্ভ ও বাগান নির্মাণের মতো ভারী কাজে যোগ দিতেন। তারা মানসম্পন্ন বই লিখতেন।

পর্যটকের বর্ণনায়

ইউরোপীয় পর্যটক ডি লয়েন্ট আগ্রা দুর্গের অভ্যন্তরে হেরেমে বসবাসকারী মহিলাদের স্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, দুর্গের সব গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ভবনগুলোর মধ্যে মহিলাদের মহল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্রাট জাহাঙ্গীরের মা মরিয়মুজ্জমানি এমন একটি মহলে বাস করেন। আরও তিনটি প্রাসাদে সম্রাটের উপপত্নীরা বাস করেন। একটি প্রাসাদের নাম লিথাবার [রোববার], দ্বিতীয়টির নাম মঙ্গল [মঙ্গলবার] এবং তৃতীয়টির নাম জেনিসার [শনিবার]। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সম্রাট এসব প্রাসাদে খুব একটা আসেন না। মহিলাদের জন্য পঞ্চম একটি প্রাসাদ রয়েছে। এ প্রাসাদে সম্রাটের বিদেশি উপপত্নীরা বসবাস করেন। এ প্রাসাদকে বলা হয় বাঙালি মহল। মোগল হেরেমের মহলগুলো শুধু বিশাল ছিল তাই নয়, সেগুলো ছিল অত্যন্ত সুসজ্জিত। মহলগুলো ছিল সূক্ষ্ম মার্বেল পাথরে তৈরি। মার্বেল পাথরগুলো ছিল স্বর্ণ ও মূল্যবান রত্নে খোদাই করা। মহলের মেঝেগুলো ছিল কারুকাজ করা পুরু ও মসৃণ পার্সি কার্পেটে মোড়ানো। মহলের কলামের ভিত্তিগুলো ছিল রৌপ্যের ফাঁপা স্তম্ভমূলে প্রোথিত। আরও ছিল আভিজাত্যপূর্ণ পর্দা, দুর্লভ আসবাবপত্র, সুদৃশ্য আয়না, প্রসাধনী, ফুলদানি ও সোনালি বাতি। দেয়ালগুলোতে ছিল অনুপম কারুকাজ। মহলগুলোর পাশে ছিল মোহনীয় বাগান। বাগানে ছিল বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছ, উদ্ভিদ, চারাগাছ, ঝরনা, ক্ষুদ্র জলাশয়, নহর, কৃত্রিম জলপ্রপাত ও পুকুর। পুকুর ও ক্ষুদ্র জলাশয়গুলোকে সাজসজ্জা এবং মহিলাদের গোসলের জন্য ব্যবহার করা হতো।

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/25/39873

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/25/39874

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/25/39875

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/25/39876

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/25/39877

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/25/39878

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/25/39879

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/25/39880

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/25/39881

http://www.bd-pratidin.com/2014/01/25/39882



__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___