Banner Advertiser

Sunday, January 26, 2014

[mukto-mona] সিরাজ শিকদার : ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা ৬ (শেষ পর্ব)



সিরাজ শিকদার : ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা (শেষ পর্ব)

ব্লগারের প্রোফাইল ছবি
লিখেছেনঃ অমি রহমান পিয়াল (তারিখঃ রবিবার, ০২/০৮/২০০৯ - ২০:০৬)

পেয়ারা বাগানের যুদ্ধ বিষয়ে ৭ জুন ১৯৭১ একটি প্রচারপত্র ছাড়ে পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি। এতে বলা হয় : পূর্ববাংলা শ্রমিক আন্দোলন (সর্বহারা পার্টির অঙ্গ শ্রমিক সংগঠন) প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীসহ সকল দেশপ্রেমিক পার্টি ও জনসাধারণের প্রতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক পথে সংগ্রাম পরিচালনা করতে আহবান জানায়। বরিশাল জেলার ঝালকাঠির মুক্তিবাহিনী ও আওয়ামী লীগের দেশপ্রেমিকরা এতে সাড়া দেয়। তাদের অংশগ্রহনসহ অন্যান্য দেশপ্রেমিকদের নিয়ে স্থানীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠন করা হয়। ঐক্যবদ্ধ মুক্তিবাহিনী তপশিলী হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত পূর্ব বাংলার বৃহত্তম পেয়ারাবাগান, কুরিয়ানা, ডুমুরিয়া, ভীমরুলী এলাকায় গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করে।" এরপর সর্বহারারা কেনো পেয়ারা বাগান থেকে অবস্থান গুটিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লো এর কোনো ব্যাখ্যা সেখানে ছিলো না। তবে সেই মুহূর্তে সত্যিকার অর্থেই মিত্র খুজছিলেন সিরাজ। স্হানীয় পর্যায়ের মুক্তিবাহিনী কমান্ডারের সঙ্গে ফ্রন্ট গঠনের চেয়ে বৃহত্তর পরিসরের নেতৃত্বে আসার ইচ্ছেটা তীব্র হয়ে উঠেছিলো তার। কিন্তু আগের পর্বেই বলা হয়েছে, সাড়া মেলেনি। উল্টো মুজিব বাহিনীর হাতে নিহত হন তার ডানহাত সাইফুল্লাহ আজমী। 
সত্যিটা হচ্ছে সে সময় মুক্তিবাহিনীর বিশ্বস্ততা অর্জনে আসলেই ব্যর্থ হয়েছিলো মাওপন্থী দলগুলো। এমনিতেই তারা তখন বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। পাকিস্তানের প্রতি চীনের পক্ষপাতে বিভ্রান্তও। যদিও সিরাজ '৬৮ সালের প্রথম থিসিসেই নিজেদের আলাদা বলে দাবি করে হক-তোয়াহা-মতিনদের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টিকে সংশোধনবাদী বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। এবং পাল্টা বিবৃতিতে তাদের সিআইএর দালাল বলে অভিহীত করা হয়। এর মধ্যে চারু মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নকশালবাদীদের সঙ্গে হক-তোয়াহা গ্রুপের ঐক্য গড়ে ওঠার পর মুক্তিবাহিনী তাদের আক্রমণের শিকার হয়। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেরোলী গ্রামে আবদুল হকের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টির শ্রেণীশত্রু খতমের নামে কয়েকশ স্বাধীনতাকামী বাঙালী হত্যার খবরও মুক্তিবাহিনীর সদর দপ্তরে পৌছে গেছে। জুনে পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে তার চতুর্থ থিসিসে চারু স্পষ্টই সমর্থন দিয়েছেন হক-তোয়াহাদের। তাই মাওপন্থী হিসেবে সিরাজকে মিত্র ভাবার আলাদা কোনো কারণ ছিলো না মুক্তি বাহিনীর। এই পর্যায়ে এসে সিরাজও পূর্ব পাকিস্তান কম্যুনিস্ট পার্টির লাইন গ্রহণ করেন এবং অক্টোবরের থিসিসে মুক্তিবাহিনীকেও প্রতিপক্ষ হিসেবে ঘোষণা দেন। এই হঠকারিতার জের সিরাজকে শেষ পর্যন্ত দিতে হয়েছে যে কারণে স্বাধীনতার পর দলের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি শক্তি এবং ভিত্তি তৈরিতে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। চেয়ারম্যান মাওর থিওরীতে বিপ্লব হবে দীর্ঘস্থায়ী, তাই তারা তখন জোর দিলেন ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সংগ্রহে। এবং তা ছলে বলে কৌশলে।
দেশ স্বাধীন হলেও তা আসলে রুশ-ভারতের সম্প্রসারণবাদের শিকার, মুজিব সরকার পুতুল সরকার এবং তাদের উৎখাতের জন্য বিপ্লব চলবে- এই লাইনে এগোতে থাকে সর্বহারা। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালেই ঢাকায় যখন বিজয় উৎসব চলছে তখন তারা লিফলেট বিতরণ করে এটি উল্লেখ করে। '৭৪ সালে এসে এই ব্যাপারে খুব সরল এক নীতি গ্রহণ করেন সিরাজ। এক থিসিসে বলেন- মুজিব সরকারের উপর ক্রমাগত আঘাতে একে টলিয়ে দিতে হবে যাতে ভারতীয় বাহিনী নাক গলাতে বাধ্য হয়। আর তারপর শুরু হবে সত্যিকারের বিপ্লব। সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক লিফলেটে লেখা হয়: Even though our enemies have increased pressure on us through army, BDR and Rokkhi Bahini, they have not been able to harm us and our rainy season attacks continue. Our guerillas are killing national enemies and grabbing hold of thanas and police faris. Eventually we will form a regular army and create liberated areas. This is the right answer to smash the teeth of the puppet government of Bangladesh. Eventually these puppets will be forced to call in the Indian army to save them. When the colonialist Indian army enters East Bengal, all the masses will join our national liberation struggle.

সে লক্ষ্যেই ২০ এপ্রিল ১৯৭৩ গঠন করেন পূর্ব বাংলা জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট। লক্ষ্য দ্বিতীয় বিপ্লব। আর তা করতে একের পর এক বোমা হামলা, পুলিশ ফাড়ি দখল, পুলিশ ও রাজনীতিবিদ হত্যা চলতেই থাকে। সঙ্গে শ্রেণীশত্রু খতম।
কিন্তু এই শ্রেণীশত্রুরা তার দলেও ছিলো বৈকি। ১৯৭২ সালের ১২ থেকে ১৬ জানুয়ারি প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে নতুন রাজনৈতিক লাইনের ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা দেন সিরাজ। এতে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ, রুশ সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তব্যবাদ এবং রুশ ভারতের দালালদের পূর্ব বাংলার জনগনের মূল শত্রু হিসেবে গণ্য করা হয়। এই থিসিস সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। একই সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্রও ঘোষণা করা হয় যা কিছু সংশোধনীর পর কার্যকর হয়। এতে সিরাজ শিকদারকে চেয়ারম্যান করে ৭ সদস্যের প্রেসিডিয়াম গঠিত হয় যা দায়িত্ব নেয় কংগ্রেস পরিচালনার। এরপর গোপন ভোটে সিরাজ শিকদারকে চেয়ারম্যান করে ৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার ছাত্র মাহবুবুর রহমান ওরফে শহীদ (কমরেড রোকন) ও মুক্তিযোদ্ধা সেলিম শাহওনেওয়াজ ওরফে ফজলু নির্বাচিত হন সদস্য। বিকল্প সদস্যপদ পান বুয়েট ছাত্র ফজলুল হক ওরফে রানা, বিএর ছাত্র মাহবুব রহমান ওরফে সুলতান এবং টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ইনস্ট্রাকটর নাসিরউদ্দিন ওরফে মজিদ। 
জাহানারার সঙ্গে সিরাজের অনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে পার্টিতে শুরু হয় কলহ। এইসময় অভিযোগ ওঠে আজম, রিজভী ও মোহসিনসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে সঙ্গী করে সিরাজকে বহিষ্কার করার উদ্যোগ নেন ফজলু ও সুলতান। এদের কুচক্রী হিসেবে চিহ্নিত করে ১৯৭২ সালের মে মাসে বহিস্কার করেন সিরাজ। জুনের প্রথম সপ্তাহে কাজী জাফর গ্রুপের কিলার খসরুকে দিয়ে সেলিম শাহনেওয়াজ ওরফে ফজলু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হুমায়ুন কবিরকে হত্যা করা হয়। হুমায়ুন কবির হ্ত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে সিআইডি জেরা করে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফরহাদ মাজহারকে। এর মধ্যে মাহবুবুর রহমান ওরফে শহীদ গ্রেপ্তার হন পুলিশের হাতে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করেছেন এই সন্দেহে তাকে সেন্ট্রাল কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয় '৭৩ সালের শুরুতে। এর মধ্যে পার্টি বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে সংশোধনের শিকার হতে হয় আরো অনেককে। এর মধ্যে বহিষ্কার এবং মৃত্যু দুটোই বরণ করতে হয় তাদের। '৭৪ সালে গ্রেপ্তার হন মজিদও। এবং রানা সিরাজ শিকদারের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। নেতৃত্ব সংকটে পড়া কেন্দ্রীয় কমিটি ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বর একটি জরুরী বৈঠকে রানার সদস্যপদ স্থগিত করেন। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন, জ্যোতি, মতিন, মাহবুব, রফিক ও রানাকে দিয়ে দুটো সহযোগী ও সমন্বয়কারী দল গঠন করা হয়। এভাবে সিরাজের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব অক্ষুন্ন থাকে। 
'৭৩ সালকেই ধরা হয় সিরাজ শিকদারের স্বর্ণ সময়। এ সময়ই সরকারের প্রশাসনিক দূর্বলতা এবং বাংলাদেশে দূর্ভিক্ষের আসন্ন ছায়াকে কাজে লাগিয়ে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন তিনি। ভাবমূর্তি বলতে এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে লড়িয়ে এক রবিনহুডের। এর মধ্যে ঢাকার অদূরে বৈদ্যেরবাজারসহ বেশ কটি ব্যাঙ্ক লুট করে সর্বহারা। গল্প ছড়িয়ে পড়ে সিরাজ ব্যাঙ্ক লুট করে অভাবী মানুষকে খাবার দিচ্ছেন। দখল করা হয় ময়মনসিং মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা ও টাঙ্গাইলের পাথরাইল পুলিশ ফাড়ি। মাদারিপুরের এএসপি সামাদ মাতবর, মগবাজারের রক্ষীবাহিনীর কর্মকর্তা ফজলুল হক, বরিশালে সাংসদ মুকিম, শেখ মুজিবর রহমানের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী মহিউদ্দিন, টেকেরহাতের নেতা শাহজাহান সরদার, ভোলার রতন চৌধুরী, মাদারিপুরের নিরুসহ অনেকেই খতম তালিকায় নাম লেখান। এরপর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে আবার হরতাল ডাকেন সিরাজ। বিজয় দিবসকে ঘোষণা করেন কালো দিবস হিসেবে। এবার নড়েচড়ে বসে মুজিব সরকার। প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদউল্লাহ মাওবাদী চরমপন্থীদের অরাজকতার দোহাই দিয়ে সারা দেশে জরুরী অবস্থা জারি করেন। 
বাংলাদেশে মাওবাদীদের বিপ্লবের স্বর্ণক্ষেত্র হিসেবে ১৯৭৪ সাল উপস্থিত হলেও সিরাজ তার সুযোগ নিতে পারেননি। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার ক্রমাগত তাড়া খেয়ে তখন কোথাও কয়েকঘণ্টার বেশী থাকার উপায় নেই তার এবং জাহানারার। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে এক হাইডআউটেই জন্ম নেয় দুজনের সন্তান অরুণ। আর দলের মধ্যে কলহ লেগেই আছে। পার্টির অনেক ক্যাডারই দলীয় নীতি ভুলে যা ইচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছেন। সেবছর ভারতীয় রাষ্ট্রপতি গিরির সফরের সময় হরতাল ডাকেন সিরাজ এবং বোমায় কাঁপে সারা দেশ। এ সময়টাতেই ভারতের মার্কসবাদীদের মুখপাত্র বলে কথিত সাপ্তাহিক ফ্রন্টিয়ারে (২০ জুলাই, ১৯৭৪) সিরাজ শিকদারের দলের তীব্র সমালোচনা করে লেখা হয় যে চারু মজুমদার যা ভুলভ্রান্তি করেছেন তা সিরাজের নখের সমানও নয়। চীনা বিপ্লবের ভুল পাঠ নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি লুটপাটের মাধ্যমে সদস্যদের পকেটভর্তি এবং ব্ল্যাক মেইলের অভিযোগও ওঠে। এবং অন্য মাওবাদীরা তাকে সিআইএর এজেন্ট বলছেন এমন কথাও লেখা হয়। সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে গোটা সময়টায় সিরাজ শিকদারের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেছেন শিল্পপতি জহুরুল ইসলাম। ফেরারী অবস্থায় তার নাভানা মটরসই ছিলো সিরাজ ও জাহানারার নিরাপদ আশ্রয়। 
আগেই বলেছি সঙ্গীদের মধ্যে রুশ পন্থী কমিউনিস্টরা থাকলেও স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে মাওবাদীদের কোনো তফাত দেখতেন না মুজিব। ১৯৭১ সালের ১১ জানুয়ারি পটুয়াখালী সফরে এক বক্তৃতায় মাওবাদীদের হাতে পাবনার এক সাংসদ এবং খুলনার এক নেতার মৃত্যু প্রসঙ্গে বলেছিলেন : রাতের আধারে চোর-ডাকাতের মতো মানুষ হত্যা করে এরা যদি মনে করে জনগনের উপকার করছে, তাহলে ভুল ভাবছে। এসব বিপ্লবী আর চরমপন্থীদের আমার চেনা আছে। এরা মানুষের মতামতের যেমন মূল্য দেয় না তেমনি জনগনের উপর আস্থাও রাখে না। এর ফল তারা ঠিকই পাবে। (দ্য ডন, ১২ জানুয়ারি, ১৯৭১) 
১৯৭৪ সালে ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ গ্রেপ্তার হন সিরাজ শিকদার। এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। বলা হয় তার ঘনিষ্ঠ কোনো কমরেডই বিশ্বাসঘাতকতা করে ধরিয়ে দিয়েছেন তাকে। পাশাপাশি এও বলা হয় যে জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা সফলভাবেই সর্বহারা গ্রুপে ইনফিলট্রেট করে এবং তারই ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার হন সিরাজ। এরপর তাকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়। নাইম মোহাইমেন তারগেরিলাজ ইন দ্য মিস্ট নামে সিরাজকে নিয়ে লেখা আর্টিকেলে প্রাক্তন সর্বহারা সদস্যদের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন কেউ বলে তাকে প্রাইভেট বিমানে করে উড়িয়ে আনা হয়েছে, কেউ বলেছেন হেলিকপ্টারে। বিমানের গল্পে সিরাজের চোখ বাধা, এটা দেখে পাইলটদের বিমান চালাতে অস্বীকৃতির অধ্যায় আছে। এয়ারপোর্টে সিরাজের পানি খেতে চাওয়া এবং তাকে কষে লাথি মারার গল্প আছে। এবং সবচেয়ে নাটকীয়টি হচ্ছে মুজিবের মুখোমুখি রক্তাক্ত সিরাজের উক্তি :বি কেয়ারফুল মুজিব, ইউ আর টকিং টু সিরাজ শিকদার। এরপর মুজিবের তাকে লাথি মারা। কিন্তু কোনটারই সত্যিকার অর্থে প্রমাণ দিতে পারেননি কেউই। 
তবে সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছে মুজিবের উক্তি : কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? ২ জানুয়ারী সাভারে নিহত হন সিরাজ শিকদার। সরকারী ভাষ্য গাড়ি থেকে পালানোর সময় গুলিতে নিহত হন তিনি। বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের (এটাও ভারত থেকে আমদানী যা নকশালদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে খ্যাতিমান হয়ে গিয়েছিলেন সাবইনন্সপেক্টর রুনুগুহ নিয়োগী) প্রথম উদাহরণ। তবেকমরেড রোকনের স্মৃতিকথায় একটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনার উল্লেখ আছে। ১৯৭৩ সালে মাদারিপুরে একবার ধরা পড়েছিলেন সিরাজ শিকদার। কিন্তু দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তা মোহসিন তাকে পালানোর সুযোগ দেন। কারণ ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ক্ষিপ্ত ছিলেন। ২ জানুয়ারি সাভারে সেই একই টোপ হয়তো তাকে দিয়েছিলেন এসপি মাহবুব (মুজিবনগর সরকারের গার্ড অব অনারের দায়িত্বে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুন্সিগঞ্জের সাংসদ), কে বলতে পারে। 
শেষ করবো মুজিবের বিখ্যাত উক্তিটির ঘটনাটি দিয়ে। প্রচলিত গল্প হচ্ছে সিরাজ শিকদার মারা যাওয়ার পরদিন সংসদে দাড়িয়ে মুজিব সদম্ভে ঘোষণাটা দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সে বছর সংসদ অধিবেশন বসে ২৫ জানুয়ারি। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করানোর পর তার দ্বিতীয় বিপ্লবের (বাকশাল) বিশ্লেষণ করার এক পর্যায়ে (বক্তৃতার মাঝামাঝি) মুজিব বলেন :স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হওয়ার পর যারা এর বিরোধীতা করেছে, যারা শত্রুর দালালী করেছে, কোনো দেশেই তাদের ক্ষমা করা হয় নাই। কিন্তু আমরা করেছি। আমরা তাদের ক্ষমা করে দিয়ে বলেছি দেশকে ভালোবাসো। দেশের স্বাধীনতা মেনে নাও। দেশের কাজ করো। কিন্তু তারপরও এদের অনেকে শোধরায়নি। এরা এমনকি বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে বিদেশ থেকে টাকা নিচ্ছে। ওরা ভেবেছে আমি ওদের কথা জানি না! একজন রাতের আঁধারে মানুষ মেরে যাচ্ছে আর ভাবছে তাকে কেউ ধরতে পারবে না। কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? তাকে যখন ধরা গেছে, তখন তার সহযোগীরাও ধরা পড়বে। আপনারা কি ভেবেছেন ঘুষখোর কর্মকর্তাদের আমরা ধরবো না? যারা বিদেশীদের থেকে টাকা নেয় তাদের আমরা ধরবো না? মজুতদার, কালোবাজারী আর চোরাকারবারীদের ধরবো না? অবশ্যই ধরবো। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। তারা কিছুই হজম করতে পারবে না। ইনশাল্লাহ, পাপী একদিন ধরা পড়বেই...'
মোটামুটি এই হলো সিরাজ শিকদারের মিথ। এ ব্যাপারে যারা আরো বিস্তারিত জানতে চান, লিংকগুলোতে গুতোবেন। আরো জানতে পারবেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সিরাজ শিকদার ভুল বিপ্লবের মোহে হেঁটেছেন। আর তার বাঁশীর সুরে মোহগ্রস্থ হয়ে আত্মাহুতি দিয়েছে প্রতিভাবান অনেক যুবক। সে সময় জনযুদ্ধের যে চীনা থিওরি প্রচলিত ছিলো তার লেখক লিন বিয়াও এবং মাওর মতবাদের প্রচারণায় থাকা চার কুচক্রী- দু পক্ষই চীনে প্রতিবিপ্লবী হিসেবে কলঙ্কিত হয়েছেন। তাহলে তাদের অনুকরণে কি বিপ্লব ঘটাতেন সিরাজ শিকদার! আরেকজনপলপট হতেন হয়তো। আর সর্বহারারা খেমারুজদের মতো শ্রেণীশত্রু খতমের নামে আরো ৩০ লাখ মানুষ মারতেন হয়তো। এসব ভূল স্বপ্নকেই হয়তো ইউটোপিয়া বলে, বিপ্লব না। 

ব্যবহৃত সূত্র :
রুহুল ও রাহেলা
কমরেড রোকনের স্মৃতিকথা 
গেরিলাজ ইন দ্য মিস্ট
মাওইজম ইন বাংলাদেশ : দ্য কেস অব পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি

১ম পর্ব

২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব

Also Read:

সিরাজ শিকদার : ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা!

http://www.somewhereinblog.net/blog/omipialblog/28983672

সিরাজ শিকদার : ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা! ২

সিরাজ শিকদার : ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা! 

সিরাজ শিকদার : ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা! ৪

http://www.somewhereinblog.net/blog/omipialblog/28985196
সিরাজ শিকদার : ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা! ৫

https://www.amarblog.com/index.php?q=omipial/posts/72459

সিরাজ শিকদার : ভুল বিপ্লবের বাঁশীওয়ালা (শেষ পর্ব)        https://www.amarblog.com/index.php?q=omipial/posts/73771




__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190




Your email settings: Individual Email|Traditional
Change settings via the Web (Yahoo! ID required)
Change settings via email: Switch delivery to Daily Digest | Switch to Fully Featured
Visit Your Group | Yahoo! Groups Terms of Use | Unsubscribe

__,_._,___