শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৩ ফাল্গুন ১৪২০
এক রাজাকারের আত্মজীবনী
মুনতাসীর মামুন
(পূর্ব প্রকাশের পর)
তিনি সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন। মাসে যা বেতন পেতেন তা স্ত্রী নার্গিসের হাতে তুলে দিতেন। তিনি নিজেকে ভাবতেন আল্লাহর সৈনিক হিসেবে, যিনি নিজেকে রসুলের (সঃ) যোদ্ধা সাহাবা হিসেবে ভাবতেন। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৬৩ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দলের জন্য এমন ব্যস্ত থেকেছেন যে ঋতু পরিবর্তন বুঝতে পরেননি। এমন কী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ঘুরে দেখারও সুযোগ পাননি। একবার শুধু রমনা পার্কে গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী মাত্র তিন মাস তাঁর সঙ্গে একত্রে কাটিয়েছেন। জামায়াত গড়ার জন্য তিনি হাতিয়া, সোনাগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী, কোম্পানীগঞ্জ, রায়পুর, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর অন্যান্য অঞ্চল সফর করেছেন।
মহি উদ্দিন জানাচ্ছেন, ১৯৬৯ সালে জামায়াত ব্যস্ত ছিল আওয়ামী লীগের ছয় দফা, ছাত্রদের ১১ দফার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আরও লিখেছেন, আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো একটি বড় দলই ছিল। তাহলো জামায়াতে ইসলামী। সে কারণে আওয়ামী লীগের টার্গেট হয়ে দাঁড়ায় জামায়াত। মহি উদ্দিন নিজে দাঁড়িয়েছিলেন প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে। তিনি লেখেছেন, পল্টনে যেমন আওয়ামী লীগ মওদুদীর সভা আক্রমণ করে ভেঙ্গে দিয়েছিল, তেমনি নির্বাচনের আগে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সব সভায়ই হামলা চালিয়েছে।
১৯৭০ সালেই প্রয়ংকরী ঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের একটি অংশ ল-ভ- হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় শাসক, রাজনীতিবিদ, এমনকি প্রেসিডেন্ট গভর্নরও দুর্যোগময় এলাকা পরিদর্শনে সুযোগ পাননি। ফলে, তার মতে, শেখ মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বলার জন্য আরেকটি অজুহাত পেলেন। অথচ তিনি নিজে কোন এলাকা পরিদর্শনে যাননি। জামায়াত নেতা গোলাম আযম একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি গোলাম আযমের সঙ্গে গিয়েছিলেন হাতিয়া। দু'দিন পর ঈদ। তাদের ফেরার কথা ছিল ঢাকা। কিন্তু নোয়াখালীতেই আত্মীয়-পরিজন ছাড়া তাদের দু'জনকে ঈদ করতে হলো। এটিকে তিনি জনগণের খেদমতের এক বিরল দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেছেন।
এই ঘটনাটিকে তিনি বিশদভাবে দেখেছেন ও বর্ণনা করেছেন। নোয়াখালী ছিল আওয়ামী লীগের দুর্গ। এর বিপরীতে জামায়াতের নিয়মিত কর্মী ছিলেন ছয়জন। একজন সামান্য কাপড় ব্যবসায়ী, একজন দর্জি, প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষক, নোয়াখালী পৌরসভার একজন কেরানি ও দু'জন বেকার। কোন কোন কমিটিতে কলেজের দু'একজন শিক্ষককে পাওয়া যেত। মহি উদ্দিনের মতে, তার সদস্যরা গরিব ছিলেন কিন্তু জনগণের বিশাল সমর্থন ছিল তাদের পিছে। যদি জানমালের ভয় না থাকত তাহলে সাধারণ মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ জামায়াতকে ভোট দিত। আসলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তো জামায়াতেরই জেতার কথা কিন্তু নির্বাচন তো সুষ্ঠু হয়নি। জামায়াত জিতবে কীভাবে? ফ্যান্টাসি আর কাকে বলে।
সেই ঈদের দিন গোলাম আযম ও তিনি ক্যান্টিন থেকে দু'প্লেট মাংস আর দুটি পরাটা এনে নাস্তা সারলেন। মহি উদ্দিন এ পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন, যাদের আছে তারা কখনও জামায়াতকে সমর্থন করেনি। গোলাম আযম বা আবদুর রহিম অনেকদিন নোয়াখালী এসেছেন কিন্তু কোথায়ও আশ্রয় পাননি। তাদের পার্টি অফিসে থাকতে হয়েছে।
মহি উদ্দিনের আফসোস, আওয়ামী লীগের অনেকে জানতেন যে গোলাম আযম নোয়াখালীতে আছেন। কিন্তু, কারও নৈতিক সাহস হলো না, তাকে এসে বলা ঈদ মোবারক। তিনি আর গোলাম আযম কয়েক টুকরো গরুর মাংস, ভাত আর মসুরের ডাল দিয়ে দুপুরের খাওয়া সারলেন। আরও দু'বার কোরবানির ঈদের সময় মহিউদ্দিন নোয়াখালী শহরে ছিলেন। তখন তিনি বা তার গরিব কর্মীরা কোরবানি দিতে পারেনি। শহরের কেউ তাকে ঈদে আমন্ত্রণ জানিয়ে খাওয়ায়নি। প্রায় না খেয়ে থেকেছেন।
নিজেই প্রশ্ন রেখেছেন, তা হলে লক্ষ্মীপুরে বৌ-ছেলেমেয়ে রেখে তাকে কে বাধ্য করেছিল নোয়াখালী থাকতে। এর উত্তর তিনি নিজেই দিয়েছেন- কেউই নয়, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্যই শহরে থেকেছেন। ঈদ জামায়াতে বক্তৃতা দিয়ে কোরবানির ফযিলত বুঝিয়েছেন। কিন্তু, প্রশ্ন ওঠে নোয়াখালীতে ছয়জন নিয়মিত কর্মী ছাড়া জামায়াতের তেমন সংগঠন ছিল না। সেখানে ঈদের জামায়াতে তাদের বক্তৃতা দিতে কে আমন্ত্রণ করবে? কেনই বা আমন্ত্রণ জানাবে?
॥ ৮ ॥
আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হবার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের কিছু নেতা পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে থাকে। আরেকটি গ্রুপও একই ধরনের কাজ করতে থাকে। আর দু'টি গ্রুপকে সহায়তা করছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র অর্থাৎ ভারত। কারণ, ভারত পাকিস্তানকে ভাঙতে চাচ্ছিল। মহিউদ্দিনের মতে, আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো ইসলামী রেনেসাঁয় ভীত হয়ে পাকিস্তানের শত্রুকে সহায়তা করছিল।
মহিউদ্দিন এরপর মুসলমান চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন। তার মতে, ভারতীয় মুসলমানরা ছিল 'পারভারটেড' তাদের বলা হয়েছিল পাকিস্তানে ভোট দেওয়ার জন্য। কিন্তু "আমাদের চরিত্র তো ইসলামিক নয়।" খেদ জানিয়েছেন তিনি। তিনি লিখেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তানীরা মিথ্যাচার করেননি, পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরা সত্যিকারের মুসলমান নয়, তারা হিন্দুদের ছেলেপিলে, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষালয়ে হিন্দু শিক্ষকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। স্কুল-কলেজে পড়ানো হয় হিন্দু দর্শন। হিন্দু গবেষক শিক্ষকরাই বই লেখেন। বাংলা [পূর্ব পাকিস্তান] হচ্ছে একটি জাদুর দেশ..., প্রত্যেক মুসলমান মেয়ে গায়িকা এবং নর্তকী, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের ভারস্বরূপ। দেশটি হচ্ছে, সাইক্লোন আর বন্যার দেশ। একটি অভিশপ্ত প্রদেশ। আল্লাহ পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে খুশি নয়। খুশি হলে ঐ এলাকায় এত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন হবে?
এ প্রসঙ্গে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। সাধারণ নির্বাচনের [১৯৭০] নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে টাউন হলে তিনি বজ্র কঠিন গলায় বলেছিলেন- "করাচি হয়ে গেছে একটি সোনালী শহর; মরুভূমি রূপান্তরিত হয়েছে সোনালী মরূদ্যানে; ইসলামাবাদ নির্মিত হচ্ছে সোনা দিয়ে। এ সবই করা সম্ভব হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদের কারণে। তারা মংলাবাঁধ নির্মাণ করেছে, নির্মাণ করেছে তারবেলা বাঁধ, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কিছুই না; আমি যখন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য দাবি তুললাম, তখন তারা মানুষকে ইসলামের নামে ভোলাবার জন্য মওদুদীকে পাঠালো।
(চলবে)
তিনি সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন। মাসে যা বেতন পেতেন তা স্ত্রী নার্গিসের হাতে তুলে দিতেন। তিনি নিজেকে ভাবতেন আল্লাহর সৈনিক হিসেবে, যিনি নিজেকে রসুলের (সঃ) যোদ্ধা সাহাবা হিসেবে ভাবতেন। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৬৩ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত দলের জন্য এমন ব্যস্ত থেকেছেন যে ঋতু পরিবর্তন বুঝতে পরেননি। এমন কী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ঘুরে দেখারও সুযোগ পাননি। একবার শুধু রমনা পার্কে গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী মাত্র তিন মাস তাঁর সঙ্গে একত্রে কাটিয়েছেন। জামায়াত গড়ার জন্য তিনি হাতিয়া, সোনাগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী, কোম্পানীগঞ্জ, রায়পুর, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর অন্যান্য অঞ্চল সফর করেছেন।
মহি উদ্দিন জানাচ্ছেন, ১৯৬৯ সালে জামায়াত ব্যস্ত ছিল আওয়ামী লীগের ছয় দফা, ছাত্রদের ১১ দফার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি আরও লিখেছেন, আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ করার মতো একটি বড় দলই ছিল। তাহলো জামায়াতে ইসলামী। সে কারণে আওয়ামী লীগের টার্গেট হয়ে দাঁড়ায় জামায়াত। মহি উদ্দিন নিজে দাঁড়িয়েছিলেন প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে। তিনি লেখেছেন, পল্টনে যেমন আওয়ামী লীগ মওদুদীর সভা আক্রমণ করে ভেঙ্গে দিয়েছিল, তেমনি নির্বাচনের আগে নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগ জামায়াতের সব সভায়ই হামলা চালিয়েছে।
১৯৭০ সালেই প্রয়ংকরী ঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের একটি অংশ ল-ভ- হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় শাসক, রাজনীতিবিদ, এমনকি প্রেসিডেন্ট গভর্নরও দুর্যোগময় এলাকা পরিদর্শনে সুযোগ পাননি। ফলে, তার মতে, শেখ মুজিব পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বলার জন্য আরেকটি অজুহাত পেলেন। অথচ তিনি নিজে কোন এলাকা পরিদর্শনে যাননি। জামায়াত নেতা গোলাম আযম একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি গোলাম আযমের সঙ্গে গিয়েছিলেন হাতিয়া। দু'দিন পর ঈদ। তাদের ফেরার কথা ছিল ঢাকা। কিন্তু নোয়াখালীতেই আত্মীয়-পরিজন ছাড়া তাদের দু'জনকে ঈদ করতে হলো। এটিকে তিনি জনগণের খেদমতের এক বিরল দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করেছেন।
এই ঘটনাটিকে তিনি বিশদভাবে দেখেছেন ও বর্ণনা করেছেন। নোয়াখালী ছিল আওয়ামী লীগের দুর্গ। এর বিপরীতে জামায়াতের নিয়মিত কর্মী ছিলেন ছয়জন। একজন সামান্য কাপড় ব্যবসায়ী, একজন দর্জি, প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষক, নোয়াখালী পৌরসভার একজন কেরানি ও দু'জন বেকার। কোন কোন কমিটিতে কলেজের দু'একজন শিক্ষককে পাওয়া যেত। মহি উদ্দিনের মতে, তার সদস্যরা গরিব ছিলেন কিন্তু জনগণের বিশাল সমর্থন ছিল তাদের পিছে। যদি জানমালের ভয় না থাকত তাহলে সাধারণ মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ জামায়াতকে ভোট দিত। আসলে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তো জামায়াতেরই জেতার কথা কিন্তু নির্বাচন তো সুষ্ঠু হয়নি। জামায়াত জিতবে কীভাবে? ফ্যান্টাসি আর কাকে বলে।
সেই ঈদের দিন গোলাম আযম ও তিনি ক্যান্টিন থেকে দু'প্লেট মাংস আর দুটি পরাটা এনে নাস্তা সারলেন। মহি উদ্দিন এ পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন, যাদের আছে তারা কখনও জামায়াতকে সমর্থন করেনি। গোলাম আযম বা আবদুর রহিম অনেকদিন নোয়াখালী এসেছেন কিন্তু কোথায়ও আশ্রয় পাননি। তাদের পার্টি অফিসে থাকতে হয়েছে।
মহি উদ্দিনের আফসোস, আওয়ামী লীগের অনেকে জানতেন যে গোলাম আযম নোয়াখালীতে আছেন। কিন্তু, কারও নৈতিক সাহস হলো না, তাকে এসে বলা ঈদ মোবারক। তিনি আর গোলাম আযম কয়েক টুকরো গরুর মাংস, ভাত আর মসুরের ডাল দিয়ে দুপুরের খাওয়া সারলেন। আরও দু'বার কোরবানির ঈদের সময় মহিউদ্দিন নোয়াখালী শহরে ছিলেন। তখন তিনি বা তার গরিব কর্মীরা কোরবানি দিতে পারেনি। শহরের কেউ তাকে ঈদে আমন্ত্রণ জানিয়ে খাওয়ায়নি। প্রায় না খেয়ে থেকেছেন।
নিজেই প্রশ্ন রেখেছেন, তা হলে লক্ষ্মীপুরে বৌ-ছেলেমেয়ে রেখে তাকে কে বাধ্য করেছিল নোয়াখালী থাকতে। এর উত্তর তিনি নিজেই দিয়েছেন- কেউই নয়, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার জন্যই শহরে থেকেছেন। ঈদ জামায়াতে বক্তৃতা দিয়ে কোরবানির ফযিলত বুঝিয়েছেন। কিন্তু, প্রশ্ন ওঠে নোয়াখালীতে ছয়জন নিয়মিত কর্মী ছাড়া জামায়াতের তেমন সংগঠন ছিল না। সেখানে ঈদের জামায়াতে তাদের বক্তৃতা দিতে কে আমন্ত্রণ করবে? কেনই বা আমন্ত্রণ জানাবে?
॥ ৮ ॥
আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হবার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের কিছু নেতা পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাতে থাকে। আরেকটি গ্রুপও একই ধরনের কাজ করতে থাকে। আর দু'টি গ্রুপকে সহায়তা করছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র অর্থাৎ ভারত। কারণ, ভারত পাকিস্তানকে ভাঙতে চাচ্ছিল। মহিউদ্দিনের মতে, আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো ইসলামী রেনেসাঁয় ভীত হয়ে পাকিস্তানের শত্রুকে সহায়তা করছিল।
মহিউদ্দিন এরপর মুসলমান চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন। তার মতে, ভারতীয় মুসলমানরা ছিল 'পারভারটেড' তাদের বলা হয়েছিল পাকিস্তানে ভোট দেওয়ার জন্য। কিন্তু "আমাদের চরিত্র তো ইসলামিক নয়।" খেদ জানিয়েছেন তিনি। তিনি লিখেছিলেন, পশ্চিম পাকিস্তানীরা মিথ্যাচার করেননি, পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরা সত্যিকারের মুসলমান নয়, তারা হিন্দুদের ছেলেপিলে, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষালয়ে হিন্দু শিক্ষকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। স্কুল-কলেজে পড়ানো হয় হিন্দু দর্শন। হিন্দু গবেষক শিক্ষকরাই বই লেখেন। বাংলা [পূর্ব পাকিস্তান] হচ্ছে একটি জাদুর দেশ..., প্রত্যেক মুসলমান মেয়ে গায়িকা এবং নর্তকী, পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের ভারস্বরূপ। দেশটি হচ্ছে, সাইক্লোন আর বন্যার দেশ। একটি অভিশপ্ত প্রদেশ। আল্লাহ পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে খুশি নয়। খুশি হলে ঐ এলাকায় এত প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন হবে?
এ প্রসঙ্গে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। সাধারণ নির্বাচনের [১৯৭০] নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে টাউন হলে তিনি বজ্র কঠিন গলায় বলেছিলেন- "করাচি হয়ে গেছে একটি সোনালী শহর; মরুভূমি রূপান্তরিত হয়েছে সোনালী মরূদ্যানে; ইসলামাবাদ নির্মিত হচ্ছে সোনা দিয়ে। এ সবই করা সম্ভব হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদের কারণে। তারা মংলাবাঁধ নির্মাণ করেছে, নির্মাণ করেছে তারবেলা বাঁধ, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কিছুই না; আমি যখন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য দাবি তুললাম, তখন তারা মানুষকে ইসলামের নামে ভোলাবার জন্য মওদুদীকে পাঠালো।
(চলবে)
প্রকাশ : শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৩ ফাল্গুন ১৪২০
এক রাজাকারের আত্মজীবনী (১-২)
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ৩০ মাঘ ১৪২০
এক রাজাকারের আত্মজীবনী (৩ - ৪ )
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ১ ফাল্গুন ১৪২০
এক রাজাকারের আত্মজীবনী (৫ - ৭)
মুনতাসীর মামুন
প্রকাশ : শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, ২ ফাল্গুন ১৪২০
__._,_.___