Banner Advertiser

Saturday, April 26, 2014

[mukto-mona] শেরেবাংলা



শেরেবাংলা

সৈয়দ আশরাফ আলী
২৭ এপ্রিল ২০১৪, রবিবার, ৮:৫৬
মন কোনো মন্দ ভাগ্য বাংলাদেশে তথা বৃহত্তর বাংলায় রয়েছে শেরেবাংলার পূর্ণ নামটি যার কাছে পরিচিত নয়? কে শোনেনি এই লোকোত্তর চরিত্রের মাহাত্ম্য কথা? কী তার পৌরুষ, কী তার তেজ, কী তার দুর্জয় সঙ্কল্প, কী অগাধ আত্মপ্রত্যয়, কী অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, কী বহ্নিমান তার মনুষ্যত্বের সাধনা। জড়তাগ্রস্ত, কর্মোদ্যমরহিত, বাকসর্বস্ব, কুসংস্কারে নিমজ্জিত বাঙালি জাতির মধ্যে মহত্ত্বের অত্যুজ্জ্বল বিগ্রহ শেরেবাংলার আবির্ভাব সত্যিই এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার বলে মনে হয়। এহেন জ্যোতির্ময় তেজস্বিতা, অপরাজেয় সংগ্রাম শক্তি, প্রদীপ্ত ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য, আত্মমর্যাদাÑ বাঙালি জাতির কাছে নিঃসন্দেহে চিরবিস্ময়!
এ কথা সর্বজনবিদিত যে, তার ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ, প্রতিভা ছিল বহুমুখী, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ছিল অপরিসীম। রূপকথার মতো স্নিগ্ধ ও চমকপ্রদ, প্রজাপতির পাখার মতো বর্ণাঢ্য ছিল তার ঘটনাবহুল বর্ণিল জীবন। বহুবর্ণবিভূষিত তার বঙ্কিম জীবনে বহু ঘটনারই আবর্তন ঘটেছিল। এসব ঘটনায় তার ঔদার্য, মহত্ত্ব, সাহসিকতা, দূরদর্শিতা ও তেজস্বিতা প্রকাশমান।
অসামান্য ও মহৎ ব্যক্তিদের জীবনে শুধু অসাধারণ ঘটনারই অবতারণা হয় না, ছোট্ট সাধারণ ঘটনাও বৃহত্তর ও সার্থক পরিবেশ রচনা করে থাকে। এমনই একটি আকস্মিক ঘটনা ঘটে কলকাতা হাইকোর্টে আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে। হাইকোর্টে এক জরুরি ও জটিল মোকাদ্দমা পরিচালনাকালে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এক আইনজীবী আকস্মিক উত্তেজিত হয়ে তার অধস্তন অন্য এক আইনজীবীকে এজলাসের মধ্যেই চপেটাঘাত করে বসেন। নি¤œতম সহকর্মীর একমাত্র অপরাধ ছিল সময়মতো প্রয়োজনানুযায়ী সে দিন নথিপত্রাদি তিনি উপস্থাপন করতে সক্ষম হননি।
প্রায় ২০ বছর পর উভয় আইনজ্ঞের অকস্মাৎ পারস্পরিক সাক্ষাৎ ঘটে। ইতিহাসে তখন বহুল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, পটপরিবর্তন ঘটেছে। চপেটাঘাতপ্রাপ্ত সাধারণ ওই আইনজ্ঞ তখন নিজেই ভারতবিখ্যাত এক ব্যক্তিত্ব। ২০ বছর আগের স্মৃতি রোমন্থন করে সে দিন সেই প্রখ্যাত, বিনয়ী ও সহজ-সরল ব্যক্তিটি সবিনয়ে উল্লেখ করেন : 'স্যার, ম্যায় খুশ নসিব হু যো আপনে মুঝে সবক দিয়ে : থেঁÑ' 'আমি সৌভাগ্যবান যে, আপনি সে দিন আমাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন।'
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, উপরিউক্ত দুই ব্যক্তি কারা ছিলেন এবং এ ঘটনার মাধ্যমে কী করেই বা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হতে পারে। কিন্তু মহান এই ব্যক্তিদ্বয়ের পরিচয় উদঘাটিত হলে অতি সহজেই তাদের মহানুভবতা সম্পর্কে ধ্যান-ধারণা স্পষ্টতর বা পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠবে।
যে ব্যক্তিটি সে দিন কলকাতা হাইকোর্টে এজলাসের মধ্যে তার সহকর্মীকে চপেটাঘাত করেছিলেন তিনি হচ্ছেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবী, জনদরদি প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। আর যে ব্যক্তিটি সুদীর্ঘ ২০ বছর পরেও চপেটাঘাতের কথা স্মরণ করে নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে বিবেচনা করেন, তিনিও সাধারণ ও নগণ্য ব্যক্তি নন। ওই বিনম্রচিত্র উদার ব্যক্তিটি হচ্ছেন স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ, যার হস্তে চপেটাঘাতপ্রাপ্তিও সৌভাগ্যের বিষয় বলে রাজেন্দ্র প্রসাদের মতো অসাধারণ একজন মনীষী বিবেচনা করেন, তার হৃদয়ের অনুপম ঐশ্চর্য ও অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না।
শেরেবাংলার ঐতিহ্যময় আদর্শ, মহান কৃতিত্ব ও অবদান, অসাধারণ মেধা ও প্রতিভা, তুলনারহিত বাগ্মিতা, হৃদয়ের সীমাহীন বিশালতা এবং গণমানুষের প্রতি অকৃত্রিম প্রেম-ভালোবাসা জাতি নিঃসন্দেহে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। পৃথিবীতে যখনই কোনো অসাধারণ ব্যক্তিত্বের তিরোধান ঘটে তখনই তা অপূরণীয় ক্ষতি বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। এরূপ মহামানবের এ দেশে আর উদ্ভব হবে না, এমন সব কথাও অহরহ প্রচারিত হয়ে থাকে। মরহুম ব্যক্তির অতুলনীয় ও অভূতপূর্ব অবদান আর কারো দ্বারা সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়ে থাকে। কোনো বিখ্যাত নেতার মৃত্যুর পর শ্রদ্ধা নিবেদনের সাধারণত এটিই হচ্ছে চিরাচরিত রীতি ও অনুসৃত ভাষা। এ ভাষা ও রীতি যদিও শেরেবাংলার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য, তবুও একটি ব্যতিক্রমধর্মী বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যের জন্য জাতি তাকে স্বতন্ত্রভাবে স্মরণ করে। সেটি হচ্ছে মানুষের প্রতি এই সিংহ-হৃদয় পুুরুষের অকৃপণ দ্বিধাহীন ভালোবাসা।
মানুষকে সত্যিই তিনি নিবিড়ভাবে ভালোবাসতেন। অপরকে আপন করে নেয়ার তার ছিল এক ঐন্দ্রজালিক ক্ষমতা। অন্যের দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, বিপদ-আপদ, বাধা-বিপত্তিকে তিনি নিজেরই দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা-বেদনা, বাধা-বিপত্তি বলে মেনে নিতেন। ইসলাম দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করে 'খাইরুন্নাসি মাই-ইয়ান ফাউন্নাস', 'সেই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যে মানুষের সর্বোত্তম কল্যাণ সাধন করে'। প্রাণপ্রিয় নেতা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান হিসেবেÑ একজন প্রকৃত মোমেন হিসেবেÑ প্রতিটি ক্ষেত্রে সুসৃষ্ট বৈচিত্র্যময়, ঘটনাবহুল রূপকথার অঙ্গনে অঙ্গনে আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়েছেন ইসলামের এই মহান আদর্শ সর্বতোভাবে প্রতিফলনের। তাই তিনি মানুষের অন্তর-অনুভূতিকে সম্মানিত করেছেন, যন্ত্রণাকিষ্ট মানুষের অব্যক্ত ব্যথা-বেদনা সঠক ভাষায় রূপায়িত করেছেন। তার রাজনীতির, পেশার তথা জীবনের একমাত্র আদর্শ ও লক্ষ্যই ছিল মানুষের জীবনের দুঃখ-দারিদ্র্য, ব্যথা-বেদনা, আর্তনাদ-হাহাকারকে অপনোদন করে দেয়া।
মানুষকে হৃদয়ের গভীরে ভালোবাসতে গিয়ে জনদরদী এই নেতা বেছে নিয়েছিলেন পবিত্র কুরআনের প্রথম সেই অমূল্য নির্দেশ ইকরা, 'পড়'। আজীবন এই সাধনায় তিনি ছিলেন ব্যাপৃত, কোথাও কোনো ব্যত্যয় তিনি ঘটাননি। অন্য কোনো ক্ষেত্রে আদৌ যদি তার কোনো অবদান নাও থাকত, তাহলেও শিক্ষাঙ্গনে তার মহামূল্য ও অপরিসীম অবদান সহজেই তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখত।
এ দেশে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে তার অবদানের কথা কোনোক্রমেই অস্বীকার করার উপায় নেই। তাকে প্রাথমিক শিক্ষার জনক বললেও অত্যুক্তি হবে না।
রাখা অবান্তর হবে না যে, শুধু প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, সামগ্রিকভাবে শিক্ষা উন্নয়নে তার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ তাকে অমরত্ব দান করেছে। এ ক্ষেত্রে তার অবিস্মরণীয় অবদানের মধ্যে রয়েছে শাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল, ইসলামিয়া কলেজ, লেডি ব্র্যাবোন কলেজ, বেথুন কলেজ, চাখার কলেজ প্রভৃতি শিক্ষায়তনের প্রতিষ্ঠা। তৎকালে ব্রিটিশ-ভারতের প্রাণকেন্দ্র কলকাতায় মুসলমান ছাত্রদের থাকার কোনো বন্দোবস্ত ছিল না। এ বিষয়টি উপলব্ধি করে শেরেবাংলা কলকাতায় ইলিয়ট হোস্টেল ও বেকার হোস্টেলের গোড়াপত্তন করেন। এসব হোস্টেলে অধিবাস করে সাধারণ-অসাধারণ বহু ছাত্রই শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করে পরে উন্নততর জীবনের অধিকারী হয়েছেন। আজো তার প্রতিষ্ঠিত এই হোস্টেল ও শিক্ষায়তন উপমহাদেশের অসংখ্য ছাত্রছাত্রী বিশেষ করে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমান ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণে সক্রিয় সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে।
শিক্ষা উন্নয়নে তার গঠিত মওলা বকশ কমিশন এক অনন্য অবদান হিসেবে আজো পরিগণিত। সাধারণ মেধার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দরিদ্র, মধ্যবিত্ত মুসলমান ছাত্রদের পক্ষে যেখানে উচ্চশিক্ষার অঙ্গনে প্রবেশ করা প্রায় দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল, সে ক্ষেত্রে অসামান্য দূরদর্শিতা স্বাক্ষর রেখে শেরেবাংলা মুসলমান ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সুব্যবস্থা করেন। এতে করে ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমান ছাত্রদের পক্ষে উচ্চতর শিক্ষা লাভের সুবর্ণ সুযোগ ঘটে। ঢাকা শহরের সুরম্য ফজলুল হক হল এই কিংবদন্তির নায়কের শ্রদ্ধেয় নাম আজো বহন করে বহু ছাত্রের বাসস্থানের সঙ্কুলান ঘটাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এ কথা উল্লেখ করা বোধ হয় অসঙ্গত হবে না যে, শুধু দু-একটি কলেজ বা হলের নামকরণের মাধ্যমেই এই বিশাল, ক্ষণজন্মা মনীষীর স্মৃতি ও অবদানের স্বীকৃতি পর্যাপ্ত হবে না। তার অসাধারণ কৃতিত্ব ও শিক্ষা কর্মকাণ্ডের যথাযোগ্য স্বীকৃতি এবং স্মরণের জন্য ন্যূনতম একটি বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় তার নামে নামাঙ্কিত করা অপরিহার্য বলে অনুভূত হয়।
অত্যন্ত সুপরিচিত ও সুখ্যাত এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। বোধ হয় এ দেশে এমন কোনো হতভাগ্য ব্যক্তি নেই যে, শেরেবাংলার এই জনপ্রিয় নামের সাথে পরিচিত নয়। শুধু কথাতেই এই মহান নেতা বিশ্বাস করতেন না, কর্মকাণ্ডের সুফল লাভেই তার আগ্রহ ও কাজই ছিল তার জীবন। তার অপরাজেয় সংগ্রাম শক্তি, প্রদীপ্ত ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য, আত্মমর্যাদা দেশ ও জাতির জন্য নিঃসন্দেহে স্বাতন্ত্র্যবাহী, অখণ্ড ও অুণœ মর্যাদাময়।
শুধু সাধারণ্যেই নয়, অসাধারণের মধ্যেও তিনি ছিলেন অসামান্য। তার কর্মবহুল জীবনে পূর্ণতম বিকাশকাল ছিল উপমহাদেশের এক স্বর্ণোজ্জ্বল যুগ। বহু প্রতিভাধর মনীষীর আবির্ভাব ঘটেছে এই সময়ে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের বহুমুখী প্রতিভার স্পর্শে জীবন সৌন্দর্যময়, কল্যাণকর ও সুধামণ্ডিত হয়ে ওঠে। ভারতের আকাশ তখন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কে পরিপূর্ণ। এই জ্যোতির্মণ্ডলে শেরেবাংলা ছিলেন এক প্রোজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক।
তার বর্ণচ্ছটায় অনেক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কেরও আলোকচ্ছটা ম্লান ও নিষ্প্রভ হয়ে ওঠে।
জ্যোতির্মণ্ডলের এই অত্যুজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক সম্পর্কে অনবদ্য ও মনোজ্ঞ বিবরণী রেখেছেন অবিভক্ত ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্য এক দিকপাল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ইংরেজি ভাষায় লিপিবদ্ধ তার শ্রদ্ধার্ঘ্যটি (শেরেবাংলার জীবদ্দশায় রচিত) অন্য ভাষায় রূপান্তরে সৌন্দর্য ও ব্যঞ্জনায় ব্যাঘাত সৃষ্টির আশঙ্কায় মৌলিক বিবরণীটি নি¤েœ শ্রদ্ধাসহ বিধৃত হলো : 
Alone among the dazzling galaxy in the political firmament of Bengal was he capable of rising to the occasion in the hours of crises, rising higher and higher till he attained his full stature, while others in the meantime looked smaller and smaller till they sank behind his great personality. 

লেখক : সাবেক মহাপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।


__._,_.___


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___