পদ্মা সেতুর মূল কাজের চুক্তি সই এবং
আমাদের একশ্রেণীর সুশীল সমাজ, কিছু বাম এবং জামায়াত-বিএনপি রাজনীতিকগন!
http://104.130.7.179/news/printer/33515
প্রকৌশলী সফিকুর রহমান অনু,
আই,ই,বি, ফেলো, অকলেন্ড, নিউজিলেন্ড, E-mail: srbanunz@gmail.com
ইদানিং অনেক কারণে আমাদের দেশের একশ্রেণীর সুশীল সমাজ, কিছু বাম রাজনীতিক এবং পুরা জামায়াত-বিএনপির রাজনীতিকদের মন খুবই খারাপ!
তার অন্যতম ও প্রধান কারন, চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশের "বহুমুখী পদ্মা সেতু প্রকল্পের" 'মূল সেতু' নির্মাণের চুক্তি হয়েছে, গত মঙ্গলবার (১৭/৬/২০১৪)! যদিও "বহুমুখী পদ্মা সেতু প্রকল্পের" ৫ টি প্যকেজের ৩ টি প্যকেজের কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং পুরো প্রকল্পের প্রায় ১৫% কাজ হয়ে গেছে।
প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকায় ৪ বছরের মধ্যে ৬.১৫ কিলো মিটার দীর্ঘ 'মূল পদ্মা সেতু' নির্মাণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, বিশ্বব্যাংক কর্তৃক মনোনীত এবং তালিকা্ ভুক্ত চীনা কোম্পানি, "চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড"এর। কিন্তু এই চুক্তি হওয়ার কথা ছিল গত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে!
পদ্মা সেতুটি যাতে, গত সরকার, এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের এই আমলেও নির্মাণ না হয় - তার জন্য বিএনপি-জামাত এবং দেশের কিছু বাম এবং সুশীল সমাজের অত্যন্ত শক্তিশালী একটি অংশ, বিশ্বব্যাংকের কাছে লবি এবং দেন দরবার করেছিল! প্রচুর অর্থও ব্যয় করেছিল সেই বিএনপি-জামাত শক্তি এবং কয়েকজন মহাসুশীল!
সেই কারনে, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করার আগেই, বিশ্বব্যাংক অত্যান্ত অনৈতিক এবং অপেশাদারী ভাবে বলল, পদ্মা সেতু নির্মানের কাজ শুরু করার পূর্বেই তারা পদ্মা সেতুতে 'দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের' 'গন্ধ' পাচ্ছে!
বিশ্বব্যাংক অপেশাদারী ভাবে আরও জানালো তারা এই বিশাল পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করার আগেই, পুরো বিষয়টা ('দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের' 'গন্ধ') তদন্ত করবে!
বিশ্বব্যাংক সেই দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্ত দেয় কানাডার 'রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ' (আরসিএমপি)কে!
পরবর্তীতে, ২০১২ সালে এই ব্যপারে ১টি মামলাও করা হয় কানাডার আদালতে!
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিশ্বব্যাংকের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিল এবং সাথে সাথে সেতুর কাজও চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তা মানল না!
বিশ্বব্যাংক কিছু শর্ত দিল, তাও মানা হল! তারপরেও বিশ্বব্যাংক নানা অজুহাতে কাজ শুরু করতে দেরী করতে লাগল। বেশ সময় নিয়ে তারা ওই তদন্ত করলো!
কিন্তু দুর্নীতির নির্দিষ্ট কোন প্রমান ও চূড়ান্ত কিছুই তারা, এখন পর্যন্ত পাই নাই এবং প্রকাশও করে নাই!
২০১২ সালে কানাডার আদালতে মামলা উঠল!
কিন্তু দুই বছরেও সেই মামলার কোন সুরাহা হলো না। কানাডার আদলতের এক আদেশে এই মামালার কোন 'খবর' মামলা শেষ না হওয়ার আগে, তাঁদের অনুমতি ছাড়া কোন মিডিয়াতেও ছাপানো এবং তা প্রকাশে 'আইনী' 'বার' দেওয়া হল!
হায়, কানাডার কি বাক ও মিডিয়া স্বাধিনতা!
কানাডার আদলতে বার বার, সময় নেওয়া হচ্ছে! এই পর্যন্ত বোধ হয় ৭ বার, শুনানী পেছানো হল!
কিন্তু কোন তথ্য এবং সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগও পাওয়া গেল না।
এ যেন সেই, 'লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতারে, কিন্তু গনিয়া দেখে মাত্র গোটা কয়েক' - এর মত!
যে কানাডীয় কোম্পানিটি এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল বলে বিশ্বব্যাংকের ধারণা, সেই 'এসএনসি-লাভলিনের' দু'জন নিম্ন ও মাঝারি পর্যায়ের কমকর্তাকে সেদেশে গ্রেফতার করা হলো।
কিন্তু, প্রথমেই, গত বছরের (২০১৩) সেপ্টেম্বরে, কানাডার তদন্ত কারী সংস্থা, রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি) বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির কথিত অভিযোগে সন্দেহভাজন মূল দুই বাঙ্গালী অভিযুক্তকে 'কল্পিত' অভিযোগ থেকে অব্যহতি দিল!
তাঁরা হলেন,
(১) সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং
(২) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ডক্টর মশিউর রহমান
মাত্র কিছুদিন আগে, আবার, কানাডার সেই আদালত, রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ কর্তৃক বাংলাদেশের যে অন্য একজন সন্দেহভাজন অভিযুক্তকে, হাসিনা বিরোধী সংস্কার বাদী আওয়ামী লীগ নেতা ও ১/১১ এর পর 'কিং পার্টি'র নেতা আবুল হাসান চৌধুরীকে, অভিযুক্ত করেছিল, তাকেও সেই মামলা থেকে অব্যাহতি দিল!
কানাডার আদালত বলল, যেহেতু সেই ব্যক্তি (আবুল হাসান চৌধুরী) কানাডার নাগরিক নন, সেহেতু তাকে সে দেশে বিচার করা যাবে না এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তেমন কোন প্রমানও মিলে নেই।
এটি বুঝতে, জানতে ও 'আবিষ্কার' করতে কানাডার আদালতের এবং পুলিশের এত দীর্ঘ সময় লাগল?
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন বললেন,
"চাই না তোমাদের (বিশ্বব্যাংকের) অর্থ, আমরা আমাদের নিজস্ব অর্থেই এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করব।"
তখন আবার কিছু বাম, কিছু সাবেক আমলা (বিশ্বব্যাংকের দালাল) এবং কিছু সুশীলদের চোখ কপালে উঠল। তারা বলল,
"শেখ হাসিনা বলে কি? তার সরকার এই বিশাল পদ্মা সেতু বানাবে! তিনি কী বুঝতে পারছেন না এটি কোন বাঁশের সাঁকো নয়?"
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অত্যন্ত সিনিয়র (মিথ্যুক) অধ্যাপক, আরেক জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যকে বললেন, "ভাই, শেখ হাসিনা দেশের এমন সর্বনাশ না করলেই, কী হতো না?"
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য জবাবে বললেন, "কী সর্বনাশ করলেন প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা?"
সিনিয়র অধ্যাপকঃ বললেন, "কেন শুনেননি, তিনি ও তার সরকার ও দল - পদ্মা সেতুর সকল অর্থ তুলে মেরে দিয়েছে?"
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তাকে বললেন, "কোথায় আপনি এই খবর পেলেন? এখন পর্যন্ত তো বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে কোন অর্থই তো ছাড় করেনি?"
তখন, জেনেশুনে এবং ইচ্ছে করে মিথ্যা বলা, ওই সিনিয়র অধ্যাপক মাথা নিচু করে চলে গেলেন।
এদিকে আবার টিভির রাতের টকশোগুলো বেশ সরগরম। সেই মিথ্যুক, লোভী, জ্ঞ্যান পাপী টকশো জীবীরা জামাত-বিএনপির সাথে গলা মিলিয়ে বলতে শুরু করল,
"শেখ হাসিনা দেশের এমন একটা সর্বনাশ না করলেই তো পারতেন।"
জামায়াত-বিএনপি জোট বলল, এই মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। তাদের সঙ্গে আবারো সুর মেলালেন সুশীল ও কিছু বাম রাজনিতিক ভাইয়েরাও।
তবে অনেকটা শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে গত মঙ্গলবার (১৭/৬/২০১৪) চীনা কোম্পানির সঙ্গে মূল সেতু নির্মাণের চুক্তি সই করলো সরকার। সব ঠিকঠাক থাকলে ২০১৮ সাল নাগাদ পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলবে ইনশাল্লাহ!
বিএনপি-জামাত আর সুশীল শিবিরে আবার চাপা উত্তেজনা। সুশীলরা প্রকাশ্যে এখনও তেমন একটা প্রতিক্রিয়া না দেখালেও দু'একজনকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে শুনেছি,
"আওয়ামী লীগ তো মনে হয় পাঁচ বছরের জন্য টিকেই গেল!"
বিএনপির ভারাক্রান্ত ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বৃহস্পতিবার বললেন, "জনগণের অর্থ চুরি করার জন্য চীনের সঙ্গে এই সেতু নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। সেতুই যদি নির্মাণ করবে তাহলে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কেন এই চুক্তি হলো না? সেখানে চুরি করা যাবে না বলে?"
এই স্বল্প ও হাল্কা বুদ্ধি নিয়ে মির্জা ফখরুল দীর্ঘদিন একটি বড় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব!
তিনি না আবার কলেজের একজন সাবেক প্রভাষক!
বিশ্বব্যাংকের অর্থ চুরি করা যায় না, এমন বিশ্বাস মির্জা ফখরুলের কেন হলো?
বিশ্বব্যাংকের 'লোনের' বড় অংশই লুট-পাট বা চুরি বা আত্মসাত করে ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজন ও কিছু প্রতিষ্ঠান!
বিভিন্ন নামে তাঁরা এই কাজতি করে!
যার কয়েকটি হলো, নানা কিসিমের 'কনসালটেন্সি ফী', নানা ধরনের 'ফান্ড মেনেজম্যেন্ট' ইত্যাদি নামে! এসব অর্থের একটি বড় অংশ আবার ফেরত যায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ অথবা তাদের নির্বাচিত অন্য কোন রাষ্ট্রে, ভিন্ন উপায়ে। বিশ্বব্যাংক আর আইএমএফের এসব অনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচুর গবেষণা আর লেখালেখি হয়েছে।
তাই অবশেষে যখন শেষ হলো বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, তখন বিএনপি-জামাত আর সুশীল শিবিরের অনেকেরই মন্তব্য, 'তা হলে কী আওয়ামী লীগ পাঁচ বছর টিকে গেল?'
কৃতজ্ঞতাঃ আবদুল মান্নান, সাবেক উপাচার্য, গবেষক ও বিশ্লেষক
দেশে বিদেশে বাঙ্গালীরা এবং বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ গুনুমুগ্ধ ভক্ত গন
সুখে থাকুন, ভালো থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন
জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু
শুভেচ্ছান্তে
Engr. Shafiqur Rahman Anu
দেশে বিদেশে বাঙ্গালীরা এবং বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ গুনুমুগ্ধ ভক্ত গন
সুখে থাকুন, ভালো থাকুন এবং নিরাপদে থাকুন
জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু
শুভেচ্ছান্তে
Engr. Shafiqur Rahman Anu
__._,_.___