http://www.bhorerkagoj5.net/new/blog/2014/06/11/180113.php
ÔRb¥ †_‡K R¡jwQÕ wkZvsï ¸n
'জন্ম থেকে জ্বলছি'
'বুক ফাঁটে তো মুখ ফুটে না' -এ প্রবাদ বাক্য খনার বচন কিনা জানিনা, তবে এটা আমাদের মহিলাদের নিয়ে বলা হয়েছিলো। অধুনা সময় পাল্টেছে, এটা ঘোর কলিযুগ। কলিতে সবই উল্টো। এখন মুখ বন্ধ তো দুরের কথা, কারো কারো মুখে রীতিমত খই ফুটছে। আগের পার্লামেন্টেও আমরা কথার খই ফুটতে দেখেছি। বাংলায় আরো একটি কথা আছে, তা হলো: 'ভালো বউ নাকি বোবা বউ'।
মাত্র ক'দিন আগে আমরা ফরমালিন নিয়ে কথার খই ফুটালাম। পত্রিকায়ও দেখলাম মাছের বাজারে ফরমালিনের বিরুদ্বে অভিযান চালানো হচ্ছে। ভালো কথা, কিন্তু ফরমালিন নিয়ে আমরা মুখে যে কথার মালা বানালাম এর কি হবে? ফরমালিনের কারণে নিউইয়র্কে এখন বাংলাদেশের মাছের বাজার খারাপ, ক্রেতারা সন্ধিহান। ২০১২-তে দেশে গেলে আমি ও আমার বন্ধু সেলিম বাজারে যাই। সেলিম মাছ কিনছিলো, ওকে বললাম, 'মাছ খামু না, ফরমালিন দেয়া'। দোস্ত আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়ে দিলো কোন মাছটা ফরমালিন দেয়া, কোনটা নয়। সেলিম দূর থেকে দেখালো, ওই যে মাছগুলো, দেখ ওপরে একটা মাছিও নেই। বললো: যেই মাছের ওপর মাছি থাকে না ওটা ফরমালিন দেয়া। মনে পড়লো, ছেলেবেলায় বাজারে গেলে সব মাছের ওপরই মাছি ভনভন করতে দেখতাম। বুঝলাম, আমি কি রকম আহান্মক! ফরমালিন জিনিষটা খারাপ, এমনকি মাছিও ধাঁরেকাঁছে যায়না; অথচ ফরমালিন নিয়ে আমরা কত কান্ডই না করলাম।
তবে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে গোলাগুলিতে আমরা একজন জওয়ান হারিয়ে বুক ফাটলেও কিন্তু মুখ খুলিনি। হাজার হোক, সীমান্ত বিরোধ, বেশি কথা বলতে মানা। এ বিষয়ে খনার বচন মেনে কেউ মুখ খুলেননি, কিন্তু ফেইসবুকে একজন প্রশ্ন তুলেছেন, 'এই মারামারিটা ভারত সীমান্তে হলে কি আমরা মুখ বুজে থাকতাম?' কঠিন প্রশ্ন। কিন্তু মুখ বুজে থাকার উপকারিতা হচ্ছে, সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতাসীন বেশ ক'দিন, কিন্তু তার কোন কথাবার্তা শোনা যাচ্ছেনা। তিনি কি আমদের জন্মনিয়ন্ত্রনের সেই বিখ্যাত শ্লোগান, 'ছিলাম বোকা হলাম বুদ্বিমান'-এর মত বুদ্বিমান হয়ে গেলেন! শ্লোগানের কথায় আশির দশকের একটি চমত্কার শ্লোগানের কথা মনে পড়লো। ট্রাকের গায়ে লেখা ওই শ্লোগানটি হলো: 'জন্ম থেকে জ্বলছি'। আসলেই তো, আমরা তো জন্ম থেকেই জ্বলছি! ওই শ্লোগানটি কি ট্রাকের জন্যে না আমাদের জন্যে তা ঐসময় মাথায় আসেনি। তবে ট্রাকের জন্যে ওটা যেমন হান্ড্রেড পারসেন্ট সত্য, আমাদের দেশের জন্যে কি খুউব অসত্য? স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি যেমন দেশে নেই; তেমনি স্বাভাবিক নিয়মে দেশ চলার গ্যারান্টি কোথায়? মানুষের জীবনের যেখানে গ্যারান্টি নেই, তো দেশের গ্যারান্টি আসবে কোত্থেকে? 'আল্লার মাল আল্লায় নিয়ে গেছে যেমনি সত্য; তেমনি আল্লার দেশ আল্লায় চালাচ্ছেও সত্যি।
একটি গল্প দিয়ে লেখাটা শেষ করবো। এক বিদেশী আল্লায় বিশ্বাস করেনা। তিনি এলেন বাংলাদেশ সফরে। বেশ কিছুদিন থাকলেন। অনেক ঘোরাঘুরি করলেন। দেশের হাজারো সমস্যা, গুম, খুন-জখম, উন্নতি, ঘুষ-দুর্নীতি সবই দেখলেন। তিনি খুবই সচেষ্টভাবে জানার চেষ্টা করছিলেন যে, দেশটা কিভাবে চলছে! শেষমেষ আশা ছেড়ে দিলেন। ক'দিন পর তিনি ঢাকা থেকে বিদায় নিচ্ছেন। বিমানবন্দরে সাংবাদিকরা তাকে নানান প্রশ্নবানে জর্জরিত করলেন। শেষে এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, শুনেছি আপনি নাস্তিক, এটা সত্য? বিদেশী তখন উত্তর দিলেন, আমি যখন বাংলাদেশে আসি তখন নাস্তিক ছিলাম, তবে এখন আমি আস্তিক, সর্বশক্তিমান আল্লাহ'র ওপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। এবার চমকের পালা সাংবাদিকের, পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কি এমন ঘটলো যে আপনি আস্তিক হয়ে গেলেন? ভদ্রলোক বললেন, 'আল্লাহ না থাকলে এদেশ চলার কথা নয়'।
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
নিউইয়র্ক, ৯ জুন ২০১৪।
__._,_.___