Banner Advertiser

Sunday, June 22, 2014

[mukto-mona] মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দখলে বিএনপির অব্যাহত অভিযান




রবিবার, ২২ জুন ২০১৪, ৮ আষাঢ় ১৪২১

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দখলে বিএনপির অব্যাহত অভিযান
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
কোন সভ্য দেশে নিজের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের মতো রণাঙ্গন, ন্যায় যুদ্ধ, বিপ্লবাত্মক ইতিহাসের অধ্যায় নিয়ে কোন ধরনের অশ্রদ্ধার প্রকাশ ঘটতে পারে এমন কাজ কেউ করার কথা সাধারণত ভাবেন না। এটিকে জাতীয় অনুভূতির প্রতি চরম আঘাত হিসেবেই গণ্য করা হয়। একই সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রাম বা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধে যাঁরা সফল নেতৃত্ব প্রদান করেছেন নাম জানা অজানা সেই সব মানুষ যাঁরা অকাতরে আত্মাহুতি দিয়েছেন দেশ ও জনগণের জন্যে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে ছোট বড় সবাইকে সচেষ্ট থাকতে দেখা যায়। দেশ ও জাতির জন্য আত্মত্যাগের এমন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে সব জাতিই তার জাতীয় গর্ব শৌর্য বীর্য, আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম এবং প্রেরণা সৃষ্টির মহান উৎস হিসেবে একবাক্যে গ্রহণ করে থাকে। ফলে নতুন প্রজন্ম জাতীয় ইতিহাসের অমরাত্মার প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে চলার সুযোগ পায়। আমাদের দেশের যাঁরা বিদেশ সফর করেছেন বা বিদেশে কর্মরত আছেন তাঁরা অনেক দেশেই উল্লিখিত বিষয়গুলো দেখেছেন বা দেখছেন।
এ সবের ব্যত্যয় পৃথিবীর কতটা দেশে ঘটেছে তা জানি না, তবে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে গর্ব করার, শৌর্য-বীর্যের অহঙ্কার করার মতো যে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তাকে রাজনৈতিকভাবে দখল করার আপাত নিরীহ যে প্রক্রিয়া ১৯৭৫ সালে শুরু হয়েছে তা এখন দলবল নিয়ে দেশ দখলের দুর্দমনীয় অভিযানে পরিণত হয়েছে। এটি আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চৌর্যবৃত্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, রীতিমতো একাত্তরের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে হটিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণরূপে একজন সামরিক অফিসারের একক নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযান এবং বীরত্বগাথার কল্পিত বিষয়ে পরিণত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে দল আছে, দলীয় অনুগত 'বুদ্ধিজীবী' আছেন যাঁরা ইতিহাস দখলের সৈন্য-সামন্ত, জেনারেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন আয়োজিত তারেক রহমান সম্পাদিত 'জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক' শিরোনামের একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠান দেখেই আমি এটিকে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দখলের অভিযান হিসেবে তুলনা করেছি তা কিন্তু নয়। এই অভিযানটি কিন্তু দৃশ্যমান হয়েছে ২০০১ সালে, এর আগে অভিযান প্রস্তুতি কয়েক পর্বে ছিল। আমি যেহেতু আমার গবেষণার স্বার্থে ১৯৭৮-পরবর্তী সময় থেকে বিষয়টিকে নিরবছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি, সময়ে সময়ে এর প্রবণতাটি কোথায় কখন কোন্ শক্তি ও রূপে মোড় নিচ্ছিল তা নিশ্চিত হয়েই বলছি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দখলের দ্বিতীয় পর্বে এসে বিএনপি, জামায়াত, অতি ডান, অতি বাম, সুবিধাবাদী এবং সাম্প্রদায়িক বিভিন্ন শক্তির ব্যাপক সমাবেশ ঘটেছে। সৈন্য-সামন্ত, জেনারেল, পারিষদ নিয়েই দখলের উদ্দেশ্যে কোন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সেটি ২০০১ সালে ব্যাপলভাবে ঘটেছিল বলে ছাপাখানায় প্রস্তুতকৃত বই আটকে রেখে মাত্র ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত অন্তত ২০টি পাঠ্যপুস্তকে দলবাজ ২ জন সাংবাদিক এবং একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঝাঁটা দিয়ে বিদায় করে তদস্থলে মীর জাফরীয় বয়ানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখানো হয়েছিল, ২০০৪ সালে ১৬ খ-ের দলিলপত্রের তৃতীয় খ-ে জিয়াউর রহমানের নামে একটি জাল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংযুক্ত করা হয়েছিল, এর ভিত্তিতে ২০০৫ সালে একেবারে মূলসুদ্ধ তুলে দিয়ে দখলীকৃত রাজত্বে মনের মাধুরী মিশিয়ে যে ইতিহাস 'লেখা' হয়েছে তা কেবলই জিয়াউর রহমানের 'মুক্তিযুদ্ধ', জনগণের নয়। কেউ আমার কথা বিশ্বাস না করলে একটু দয়া করে ২০০২ সাল এবং ২০০৬ সালে প্রকাশিত (সংশোধিত সংস্করণ) পাঠ্য বইগুলো দেখে নিন।
প্রসঙ্গের শুরুতে আবার ফিরে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যবই নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী লেখানোর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তখন পূর্ব পাকিস্তান আমলের কারিকুলাম অনুযায়ী লিখিত সমাজ পাঠ ও ইতিহাস বই-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অংশটি খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে সংযোজন করা হয়েছিল। প্রথম কারিকুলাম প্রণয়নের উদ্যোগ ১৯৭৬-৭৭ সালে নেয়া হয়। সেই অনুযায়ী সমাজ পাঠ ও ইতিহাস লিখিত হয়। তাতে মুক্তিযুদ্ধের পাঠ বিশেষ কোনো গুরুত্ব পায়নি। খুব সাদামাটাভাবেই পাঠ্যপুস্তকে সংক্ষিপ্ত আকারে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের একটা বিবরণ উপস্থাপন করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম এবং কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে রাজনৈতিক নেতা এমএ হান্নানের পর ২৭ মার্চ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের পঠিত ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয় ঐ সময়ের পাঠ্য পুস্তকে। যেহেতু তিনি তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন তাই ১৯৭১-সালে তার ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিতেই বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে এক দুই লাইনে উল্লেখ করা হয়েছিল। ১৯৭৮-৭৯ সালের আগে কোনো পাঠ্যপুস্তকে চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ঘোষণার বিষয়টি অতটা গুরুত্ব পায়নি। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার সুবাদেই তখন পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃপক্ষ হয়ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে এমএ হান্নান এবং জিয়াউর রহমানের ঘোষণার কথা উল্লেখ করছে। সেক্ষেত্রে এম এ হান্নানের ২৬ মার্চ এবং জিয়াউর রহমানের ২৭ মার্চের ঘোষণার কথাই উল্লেখ করা হয়েছে। একজন রাজনীতিবিদ এবং অন্যজন সামরিক অফিসারের আহ্বানে তখন সাধারণ মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেরণা হিসেবে বিষয়টিকে দেখা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর অসংখ্য ঘটনা এবং উদ্যোগের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ফলে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, এর বেশি কিছু ভাবার প্রয়োজন নেই। আগেই বলেছি, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৮-৭৯ সাল পর্যন্ত সংশোধিত পাঠ্যপুস্তকের কোথাও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কৃতিত্ব কেউ দাবি করেনি, উল্লেখও করা হয় নি।
জিয়াউর রহমানের জীবদ্দশায় পাঠ্যপুস্তকে এম এ হান্নানের পর ২৭ মার্চ তার ভূমিকার কথা এক লাইনেই স্থান করে নিয়েছিল। তবে এটিই যে পরবর্তীকালে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বলে দাবি করা হবে, মুক্তিযুদ্ধে তার একক নেতৃত্বের কৃতিত্ব দাবির বিষয় হয়ে উঠবে তা জিয়াউর রহমান নিজেও হয়ত স্বপ্নেও কল্পনা করেননি। তাঁর মৃত্যুর এক দশক পর্যন্ত বিষয়টি নীরবই ছিল। ১৯৯১ সালে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর অবস্থা পাল্টে যায়। বিএনপির পেছনে জড়ো হতে থাকে এককালের ভাসানীপন্থী বলে পরিচিত রাজনীতিবিদ এবং সমর্থকদের বড় অংশ, দক্ষিণ পন্থায় বিশ্বাসী গোষ্ঠী জামায়াতের সমর্থন, সুবিধাবাদী গোষ্ঠী- যারা বিএনপিকে সম্মুখে রেখে আওয়ামী লীগেরই নয়, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশীদার হওয়ার স্বপ্ন দেখেনি তারাই এখন মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের অবদানকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করার বিদ্যাচর্চায় ব্যস্ত হয়। তারা দেখেছে বঙ্গবন্ধু এবং তার অনুসারীরা মুক্তিযুদ্ধের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জিয়ার জন্য তেমন একটি পদ সৃষ্টি করা তাদের দরকার হয়ে পড়ে। সেখান থেকেই স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া কথাটি মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কখনও জিয়াউর রহমানের নামের সঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষকের কথা উচ্চারণ করতে শোনো যায় নি। কেননা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার আইনগত এবং রাজনৈতিক বৈধতা থাকে মূল নেতারই। ১৯৭১ সালের কোন দলিলেই বঙ্গবন্ধুর বাইরে অন্য কারও নামের চিহ্ন খুঁজে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ইতিহাস তো ১৯৭১ সালেই সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৭১ সালে যার নাম সেক্টর কমান্ডারে ছিল তাঁর নাম স্বাধীনতার ঘোষণায় তুলে আনার মতো অপরাধ দ্বিতীয়টি হতে পারে না। যা হোক ১৯৯১ থেকে রাজনীতির মাঠে বিএনপি এবং উগ্র ডান ও উগ্র বাম শক্তি জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে প্রচার করতে থাকে। একটি বিশেষ মিশন নিয়েই মহলটি মাঠে নেমেছিল। তখন ছিল প্রচার-প্রচারণার অভিযান। এর পক্ষে রাজনৈতিক শক্তির সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা হরা হলো। ১৯৯৪-৯৫ সালে দ্বিতীয়বার পাঠ্যপুস্তকের কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়। পাঠ্যপুস্তকও প্রণীত হয়। ১৯৯৬ সালে সেই পাঠ্যপুস্তক প্রথম প্রকাশিত হয়। তাতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক পদে অধিষ্ঠিত করা না হলেও ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তার ঘোষণার প্রভাবেই নাকি বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল- এমনটি দাবি করা হয়। তখন থেকে বিদায় দিয়ে দেয়া হয় এম এ হান্নানকে। বঙ্গবন্ধু উপাধিটি পাঠ্যপুস্তকে স্থান পায়নি। তিনি একজন নিষ্প্রভ নেতা এমন অবস্থানেই তাকে উপস্থাপন করা হয়। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিব স্বাধীনতার কথা বললেও ৪ দফা প্রস্তাব দিয়ে পাকিস্তানীদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ করে দেন। সুখের বিষয় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ৭ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে ১৮টি বইতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়। ফলে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ মহল বিশেষের আর হয় নি। তবে ২০০১-এর নির্বাচনের পর ১০ অক্টোবর ক্ষমতা গ্রহণের আগেই জোট সরকারের একনিষ্ঠ সমর্থক দু'জন সাংবাদিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের জনৈক শিক্ষক ১৮টি পাঠ্যপুস্তকে দা-কুড়াল নিয়ে কাঠ কাটার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ছাপাখানা থেকে পান্ডুলিপি ফিরিয়ে আনা হয়। লেখা হয় জিয়াউর রহমানের বন্দনার জীবনী, শেখ মুজিবকে ব্যর্থ শাসক, জিয়াউর রহমানকে সময়ের ত্রাতা হিসেবে আবিভূর্ত হওয়া ক্ষণজন্মা মহাপুরুষরূপে। মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঢাকায় নয়, চট্টগ্রাম সেনানিবাসে মেজর জিয়ার বিদ্রোহের মাধ্যমে শুরু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ মুজিব পাকিস্তানীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। জিয়াউর রহমান রণঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, আওয়ামী লীগের নেতারা ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। এমন ইতিহাস কোন গাঁজাখোর, বিকৃত মানুষই লিখতে পারে। কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ তা পারার কারণ নেই! বলে রাখি, পাঠ্যপুস্তক লিখতে কিছু পেডাগোগিক্যাল (শিক্ষা বিজ্ঞান) জ্ঞানের প্রয়োজন অবশ্যই থাকতে হয়। বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরাই কেবল জানেন কোন শ্রেণীর শিক্ষার্থীকে কী পাঠ দিতে হয়, কেন দিতে হয়, তাতে শিখন ফল কী অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু ২০০১ সালে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে জোট সরকারের ধর্মযুদ্ধের আচরণ বিস্ময়কর বললেও কম বলা হবে। পুস্তকের এ সব পাঠের লেখালেখিতে তখন ভাসানীর আদর্শে উজ্জীবিত সাংবাদিক, শিক্ষক এবং দক্ষিণ পন্থায় বিশ্বাসী আর একজন সাংবাদিকই দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দখলের লক্ষে সূচিত ধর্মযুদ্ধের সেই উন্মাদনায় পাঠ্যপুস্তক, প্রচার মাধ্যম, রাজনৈতিক মাঠ, সর্বত্রই জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের কা-ারী করা হয়, বঙ্গববন্ধুকে উচ্ছেদ করা হয় তার ইতিহাস নির্ধারিত স্থান থেকে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহম্দসহ প্রবাসী সরকার বলে কিছই তাতে ছিল না। 'জিয়া'ই একা দেশ স্বাধীন করার অনেক কল্পকাহিনী তৈরি করা হলো। এটিকে দালিলিকভাবে প্রমাণিত বলে দেখানোর জন্যে জিয়াউর রহমানের নামে একটি নতুন ঘোষণাপত্র তৈরি করা হলো (২০০৪ সালে), এখানে বঙ্গবন্ধুর প্রেরিত তারবার্তার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নিÑ এমন কথা বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা লিখেছিলেন। এ সব বুদ্ধিজীবী একাত্তর সালে কোথায় ছিলেন জানিনা, তবে তাদের দলিলপত্র প্রমাণ করার জ্ঞান যে উদ্ভট তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত তা ইতিহাসের একজন ছাত্র হিসেবে আমি বলতে মোটেও দ্বিধা করব না।
পরিসরের অভাবে আমি এই লেখায় সেই সব লেখার উদ্ধৃতি দিতে পারছি না। তবে বিএনপি এবং তার সঙ্গে থাকা একদল জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবী শিল্পী-সাহিত্যিক ২০০১ সালে সূচিত অভিযানের থিম থেকে মোটেও সরেনি। তাদের সরার কোন লক্ষণ মোটেও নেই। কেননা ইতিহাস তত্ত্বের মৌলিক কোনো জ্ঞান না রেখেও এদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যখন মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, প্রথম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান বলে বক্তৃতা করেন, লেখালেখি করেন তখন বিএনপি কেন ইতিহাস দখলের অভিযান বন্ধ করবে।
তারেক রহমান সুদূর লন্ডনে বসে 'জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক' শিরোনামে ১৪৩ পৃষ্ঠার একটি বই সম্পাদনা করেছেন। সেটির প্রকাশনা উৎসব ঢাকায় হয়ে গেল। তাতে বিএনপির কিছু বাম নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, অধ্যাপক, শিল্পী- সংস্কৃতিসেবী, আইনজীবী সাংবাদিকসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমাজউদ্দীন, ডা. জাফরুল্লাহ, গাজী মাযহারুল আনোয়ারসহ ডজনখানেক আলোচক বইটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ৪টি পত্রিকা উক্ত অনুষ্ঠানের বিশেষ প্রচার দিয়েছে। দৈনিক দিনকাল প্রধান শীর্ষ খবর করে দুই পৃষ্ঠায় সভার বিস্তারিত বিবরণ ছাপিয়েছে। দৈনিক ইনকিলাব, সংগ্রাম এবং নয়া দিগন্ত প্রথম পাতায় গুরুত্ব দিয়ে অনুষ্ঠানের সংবাদ পরিবেশন করেছে। তবে অন্য পত্রিকাগুলো এমন একটি অনুষ্ঠানকে ততটা গুরুত্ব দেয় নি। যারা দিয়েছে তাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অঙ্গীকার, বিশ্বাস এবং অবস্থান কারও অজানা থাকার কথা নয়। বক্তাদের আলোচনা থেকেই বোঝা যায় তারা তারেক রহমানের দেয়া শিরোনামকে সর্মথন করেন। সভাপতির ভাষণে এমাজউদ্দিন বলেছেন, বাঙালী জাতির সাড়ে চারহাজার বছরের ইতিহাসে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান। মুক্তিযোদ্ধা আর কেউ হতে চাননি। হতে চেয়েছেন জিয়াউর রহমান। একাত্তর সালের ২৫ কী ২৬ মার্চ প্রথম বিদ্রোহ করেন জিয়াউর রহমান। এ বিরল সম্মান পাওয়ার যোগ্য তিনি।' (নয়া দিগন্ত, ১৭.৬.২০১৪) এবার পাঠক বলুন এমাজউদ্দীন সাহেবের কাছে কী আমাদের জানতে চাওয়া উচিত নয় যে, তিনি বাঙালী জাতির প্রথম মুক্তিযোদ্ধা, প্রথম বিদ্রোহী হিসেবে জিয়াউর রহমানকে কীভাবে শনাক্ত করলেন? ঢাকা শহরে পিলখানা, রাজারবাগে যারা প্রথম অস্ত্র হাতে ২৫ মার্চ রাতে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন তাদের কি মুক্তিযোদ্ধা বলা হবে না? আরও যারা চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সেই রাতে যুদ্ধে নেমেছিলেন তাদের কী বলা হবে? জিয়াউর রহমান একাই এ দেশে মুক্তিযুদ্ধ করেনি, অসংখ্য সামরিক, বেসামরিক মানুষ শুরু করেছেন, মুক্তিযুদ্ধ একটি গণযুদ্ধে রূপান্তরিত হওয়াসহ এর রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনবদ্য ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতে মহান মুুক্তিযুদ্ধের বাস্তব চিত্র। সেখানে জিয়াউর রহমানও অন্যতম একজন ছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানকে এককভাবে 'সিংহাসনের' আসনে প্রতিষ্ঠিত করার মানসিকতাই পরশ্রীকারতার প্রকাশ ঘটায়, ষড়যন্ত্রমূলক, হীনস্বার্থ চরিতার্থকারীর আচরণ বলে চিহ্নিত করা যায়। এতে কোনো বিদ্যাবুদ্ধির ছোঁয়া নেই, জিঘাংসার হিংস্রতা ছড়ায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দখলের প্রবৃত্তি দেখা যায়। আলোচকদের বেশির ভাগই মুক্তিযুদ্ধের নাম করে যে সব কথা বলেছে তাতে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ করণীয় এর কোনোটিই প্রকাশ পায় না। জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রাষ্ট্রপতির পদে বসাতে চান ক্রুসেড তথা ধর্মযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে, ১৯৭১-এর বাস্তবতা দিয়ে নয়, ইতিহাসজ্ঞান দিয়েও সম্ভব নয়। একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন কীভাবে তাতো আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও জানেন। এমাজউদ্দীন সাহেব দাবি করেছেন, ২৬ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত জিয়াই নাকি অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন। কে তাকে তখন রাষ্ট্রপতি বানালেন, তার সরকারে কে কে মন্ত্রী ছিলেন, কী আইন তিনি প্রণয়ন করেছেন এর জবাব এমাজউদ্দীন সাহেব তার নবআবিষ্কৃত দলিলপত্র দিয়ে আমাদের জানালে জাতি উপকৃত হতো। প্রশ্ন করতে পারি কী, ১০ এপ্রিল কী জিয়াউর রহমানের হাত থেকে তাজউদ্দীন আহমদগণ ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাকে সেক্টর কমান্ডে পাঠিয়ে দিলেন? এর জবাব এমাজুদ্দীন আহমেদ কী দেবেন জানিনা তবে উন্নত কোন দেশে হলে এর জন্য তাকে কী পুরস্কার দেয়া হতো তা তিনি হয়ত বুঝতে পারেন। এ ধরনের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে যারা সেদিন জিয়াউর রহমানের ভূমিকাকে আকাশে তুলতে চেষ্টা করেছেন তারা তাকে আসলেই বিতর্কিত করতেই ভূমিকা রেখেছেন।
তবে বইটি সম্পাদনার মাধ্যমে এবং এর প্রকাশনা উৎসব করে আয়োজক এবং আলোচকগণ যে বিষয়টি বোঝাতে চেয়েছেন তা হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তারা দখল করবেনই। একই সঙ্গে ১৯৭১ সালকে আদি ও অকৃত্রিমভাবে থাকতে দেয়া হবে না। কেননা, সেই ইতিহাসে জিয়াউর রহমানের অবস্থান অনেক পেছনে। জিয়াউর রহমান যে ইতিহাসে প্রধান নয়- সেই ইতিহাস তারা মানবে কেন? তারা যেটি মানবে তা হবে জিয়া মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রাষ্ট্রপতি, প্রথম ঘোষক, প্রথম মুক্তিযোদ্ধা। নতুন এই মিশনের অভিযানে শুধু বিএনপি একা নয়, আরও কারা কারা আছে তাদের অংশ বিশেষকে তো সেদিন দেখা গেছেই। বেতার ঘোষণা থেকে স্বাধীনতার ঘোষক, স্বাধীনতার ঘোষক থেকে প্রথম রাষ্ট্রপতি, প্রথম মুক্তিযোদ্ধা সব আসনেই জিয়াউর রহমানকে বসানোর অভিযানে এবার নেমেছেন তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি বিশেষণ গোষ্ঠী। আগামীতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া গেলে সেভাবেই 'ইতিহাস' লেখা হবে, প্রচার করা হবে। গেলানো হবে। ১৯৭১-এর বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাসকে মুছে ফেলা হলে এমন অভিযানের বোধহয় দরকার রয়েছে। সেটির দ্বিতীয় পর্বের নমুনা দেখা গেল। এর প্রকৃত রূপ দেখা যাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর। কেউ কেউ বলবেন এ সব সম্ভব হবে না। আমি বলব, সব সম্ভবের বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের জন্য ১৯৭১ সালের আসল পদ ছুঁড়ে ফেলে দিতে যখন স্বাধীনতার ঘোষক পদে অধিষ্ঠিত করা সম্ভব করা গেছে (এদেশের অনেকেই তাই বিশ্বাস করে। এদের ইতিহাস জ্ঞান এমনই গভীর যে বাস্তবে না থাকলেও কল্পনায় ইতিহাস লেখা যায়, সেটিই তাদের ইতিহাস!) ভবিষ্যতে তারেক রহমানের সম্পাদিত ইতিহাস হবে বাংলাদেশে সকল দেশপ্রেমিকের পঠন পাঠনের ইতিহাস। সেই অভিযান তারা সফল করবেই, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ তাদের কাছে অতীতের বিষয়। এখন নয়া জামানা। নয়া ইতিহাস রচনা করতে হবে। সেই ডাক সুদূর লন্ডন থেকে এসেছে, ঢাকায় প্রকাশনা উৎসব হয়েছে। ক্ষমতায় আসলে বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত হবে। অতএব, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস দখলের অভিযান বহু আগে শুরু হয়েছে, এখন চলছে, আগামীতে অব্যাহত থাকবে- এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। একাত্তরে ছিলাম বীর বাঙালী, এখন বাংলাদেশী হয়েছি। সুতরাং বাংলাদেশী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চাই, সে জন্যেই এই অভিযান।
লেখক ঃ শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রকাশ : রবিবার, ২২ জুন ২০১৪, ৮ আষাঢ় ১৪২১

Also Read:
 'হিটলার থেকে জিয়া': বিএনপি একটি পাকিস্তানপন্থী দল  - মিনা ফারাহ

স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তি
মিনা ফারাহ         বুধবার, ৩০ জুন ২০১০, ১৬ আষাঢ় ১৪১

"   বিএনপি যে স্বাধীনতাবিরোধী দল একথা তারা দলের জন্মের আগেই প্রমাণ করেছে। এর প্রতিষ্ঠাতা একজন গুপ্তচর মুক্তিযোদ্ধা যে কথা আমি বহু তথ্যপ্রমাণ ঘেঁটে 'হিটলার থেকে জিয়া' বইটিতে প্রমাণ করেছি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা একজন পাকিস্তানপন্থী এবং এর দলও পাকিস্তানপন্থী।  ..........২০০১ সালের সংসদে খালেদা জিয়ার পাশে মতিউর রহমান নিজামী, সাঈদী, আল মুজাহিদ এবং জিয়াউর রহমানের সংসদে শাহ্ আজিজুর রহমান ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এখন বলেন, অণুবীক্ষণ যন্ত্রের কি সত্যিই দরকার আছে? স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহ্ আজিজুর রহমান এবং নিজামীর ভূমিকা একটি শিশুও জানে। ........জিয়াউর রহমান শাহ্ আজিজকে তার প্রধানমন্ত্রী করেছিল। বেগম জিয়া বড় যুদ্ধাপরাধীদের সংসদে বসিয়েছিল। জিয়াউর রহমান এদের জেল থেকে বের করে এনে রাজনীতিতে ঢুকিয়েছে। ......." মিনা ফারাহ
বুধবার, ৩০ জুন ২০১০, ১৬ আষাঢ় ১৪১৭ প্রকাশিত 

প্রশ্নবোধক এক জিয়াউর রহমান

"জিয়া থেকে হিটলার"
এই বইটির তিনটি অংশ। 
প্রথম অংশটি-"জিয়া কেন মুক্তিযোদ্ধা নয়-১৭৮টি কারণ"। 
দ্বিতীয় অংশটি-"সংবিধান সন্ত্রাসী জিয়া"। 
তৃ্তীয় অংশটি-"বইয়ের কাঠগোড়ায় জিয়া"


wRqv‡K †jLv K‡b©j †e‡Mi wPwV:

ˆmq` †evinvb Kexi : GKwU `yj©f wPwV Avgv‡`i nv‡Z G‡m‡Q| wPwVwU 1971-Gi 29 †g †jLv| wPwV wj‡L‡Qb ZrKvjxb K‡b©j †eM, wj‡L‡Qb, †gRi wRqvDi ingvb‡K| cÖ_‡gB cvVK‡`i Rb¨ wPwVwU ûeû Dc¯'vcb KiwQ:-
Major Zia Ur Rahman, Pak Army, Dacca
We all happy with your job. We must say good job! You will get new job soon.
DonÕt worrie about your family. Your wife and kids are fine. You have to be more carefull about major Jalil.
Col. Baig Pak Army, May 29. 1971

(†gRi wRqvDi ingvb, cvK Avwg©, XvKv †Zvgvi Kv‡R Avgiv mevB Lywk| Avgv‡`i Aek¨B ej‡Z n‡e Zzwg fv‡jv KvR Ki‡Qv| Lye wkMwMiB Zzwg bZzb KvR cv‡e|†Zvgvi cwievi wb‡q DwØMœ n‡qvbv| †Zvgvi ¯¿x I ev"Pviv fv‡jv Av‡Q| †Zvgv‡K †gRi Rwjj m¤ú‡K© Av‡iv mZK© _vK‡Z n‡e| K‡b©j †eM, cvK Avwg© †g 29, 1971)....
Details at:
According to Pro-BNP writer এবনে গোলাম সামাদ
in মুজিবনগরের বাখানি- আত্মপক্ষ published in

নয়াদিগন্ত, তারিখ২২ এপ্রিল২০১৩

"জিয়াউর রহমান  দেশ ছেড়ে ভারতে যান, কিন্তু 
ভরতে যেয়ে তিনি ছিলেন গৃহবন্দী ....http://www.dailynayadiganta.com/?p=169150

This is because General Osmani became very suspicious about Ziaur Rahman's deceptive activities... 

জিয়াউর রহমান ছিলেন প্রকৃত পাকিস্তান প্রেমিক 

He is the hero of Khemkaran sector !!!!!
In Pakistan Army he received commando training specializing in infiltration and  won the Hilal-e-Jurat for his performance in 1965-war. His transfer to East in  October 1970 was a part of Paki Military's
grand plan ....! Later on during his regime, he started the process of Pakistanization of Bangladesh. ......!!!!!!





__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___