১৫ আগস্ট '৭৫-এর যে তথ্যটি গত ৩৯ বছরে আবিষ্কৃৃত হয়নি
আওয়ামী লীগ ইতিহাসের অনেক কিছুকেই পরিবর্তিত বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে। এরা সাধারণত '৭৫-এর ১৫ আগস্টের জন্য 'একদল সামরিক অফিসার' অথবা 'গুটিকয়েক সামরিক অফিসার'-এর কর্মকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করেন। ১৫ আগস্ট '৭৫-
এর পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগের আচরণের প্রতি এবং ১৫ আগস্ট '৭৫-এর পরবর্তী আওয়ামী লীগের আচরণের প্রতি সাধারণত ইঙ্গিত করেন না। আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে কোনো দিন আলোচনা করেনি একটি কথা। কথাটি হলো, সেই আমলের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দু'টি ব্যাটালিয়ন বা রেজিমেন্ট ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে কী নিয়মে বের হয়ে ধানমন্ডি ও বঙ্গভবন এলাকায় মোতায়েন হয়েছিল? যেসব পাঠক ঢাকা মহানগরের উত্তর অংশের সাথে পরিচিত, তারা অবশ্যই জানেন ঢাকা সেনানিবাস কোথায় এবং জাহাঙ্গীর গেট বা থার্ড গেট নামে গেটটি কোন জায়গায়? যারা জানেন না বা চেনেন না তাদের জন্য ইশারা হলো এরূপ। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের দণি অংশে যে প্রধান গেট, সেটাকেই বলা হয় জাহাঙ্গীর গেট, তথা পুরনো এয়ারপোর্টের কাছে শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর গেট। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হওয়ার জন্য আরো কয়েকটি গেট আছে উত্তর, পূর্ব এবং পশ্চিমে। ক্রমিক নম্বর অনুসরণ করলে জাহাঙ্গীর গেট হচ্ছে তৃতীয় বা থার্ড গেট, তাই এটাকে বলা হয় সাধারণ থার্ড গেট। ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট রাতে এবং ১৫ আগস্ট শুরু হওয়ার পর ভোররাত ৩টার কিছু আগে বা কিছু পরে ট্যাঙ্ক রেজিমেন্টের সৈন্যরা এবং আর্টিলারি রেজিমেন্টের সৈন্যরা বের হয়ে যান। যখন বের হয়ে যান, তখন গেটে পাহারা অবশ্যই ছিল। যারা পাহারা দেন, তারা দুই ধরনের লোক। এক ধরনের হচ্ছেন পোশাকধারী মিলিটারি পুলিশ, আরেক ধরনের হচ্ছেন বেসামরিক পোশাকে সাধারণ মানুষের মতো বসে থাকা গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা। গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে এমন একটি গোয়েন্দা ইউনিট বা প্রতিষ্ঠান ছিল, যে ইউনিটটির সদস্যরা প্রত্যেকেই যে যেখানেই ডিউটি করুন না কেন, প্রয়োজন হলেই তার উপরস্থ অফিসার কমান্ডিং বা ওসি তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত মেজরকে ফোন করতে পারতেন সরাসরি অথবা বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে কথা বলতে পারতেন সরাসরি। ওই বিশেষ গোয়েন্দা ইউনিটটির অধিনায়ক বা ওসিকে মতা দেয়া হয়েছিল যে, তিনি নিজের প্রয়োজন মোতাবেক যেকোনো সময় কারো মাধ্যমে না গিয়ে সরাসরি সেনাপ্রধানকে ফোনে বা বেতারযন্ত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারতেন। ওই আমলের সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন একজন দুই তারকা জেনারেল বা মেজর জেনারেল র্যাঙ্কের অফিসার, অপর দিকে গোয়েন্দা ইউনিটটির অধিনায়ক বা ওসি ছিলেন মেজর র্যাঙ্কের। র্যাঙ্ক এবং অবস্থানের বিশাল গ্যাপ থাকা সত্ত্বেও মেজর সাহেবকে, মেজর জেনারেলের সাথে প্রত্য যোগাযোগের মতা দেয়া হয়েছিল একটি মাত্র উদ্দেশ্য সামনে রেখে। সেই উদ্দেশ্যটি হলো, যেন কোনো সময় নষ্ট না হয়, কোনো ঘটনা রিপোর্ট করতে গিয়ে। উদাহরণস্বরূপ ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ ভোররাত আড়াইটা, ৩টা বা সাড়ে ৩টা এ রকম সময়ে থার্ড গেট দিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে সেনাবাহিনীর একটি দল ঢাকা শহরের দিকে চলে যাচ্ছে, এই অস্বাভাবিক ঘটনাটি যেন থার্ড গেট থেকে সরাসরি মেজরকে জানানো যায় এবং মেজর যেন সরাসরি সেনাপ্রধানকে জানাতে পারেন। এত সব বন্দোবস্ত থাকা সত্ত্বেও সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের প্রথম প্রহরে যখন থার্ড গেট দিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ট্যাঙ্ক এবং সৈন্য ঢাকা শহরের দিকে চলে গেল, সেই কথাটি গেটে অবস্থানরত গোয়েন্দারা মেজরকে জানিয়েছিলেন নাকি জানাননিÑ এই তথ্যটি গত ৩৯ বছরে আবিষ্কৃৃত হয়নি। অপর প,ে ওই গোয়েন্দা ইউনিটটির অধিনায়ক বা অফিসার কমান্ডিং সংেেপ ওসি, মেজর যে ওই আমলের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীপ্রধান মেজর জেনারেল সফিউল্লাহকে জানাননি সেটা স্বীকৃত। ওই সম্মানিত মেজর জেনারেল আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ছিলেন সাম্প্রতিক অতীতে এবং সেই '৭৫ সালের মেজর সাম্প্রতিক সময়ে বা বর্তমানে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ আছেন।
__._,_.___