৭ খুন: চাপ উপেক্ষা করে র্যাব সদরে জিজ্ঞাসাবাদ (পর্ব-২)
মেহদী আজাদ মাসুম, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
ঢাকা: প্রচণ্ড চাপ ও হুমকি উপেক্ষা করে র্যাব সদর দফতরে সোয়া চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় র্যাব-১১'র সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম এম রানাকে। '৭ খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে ফাঁসিয়ে দেয়া এবং র্যাব ও সেনাবাহিনী থেকে চাকরি হারানো'র হুমকি দিয়েও জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট সদর দফতরের শীর্ষ এক কর্মকর্তাকে বিরত রাখা যায়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নারায়নগঞ্জ পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২৭ মে দুপুরে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণের ঘটনায় নারায়নগঞ্জ রাজধানী ঢাকায় তোলপাড় শুরু হলে জেলা পুলিশের পাশাপাশি সকল গোয়েন্দ সংস্থা তদন্তে নেমে পড়ে। দুপুর গড়িয়ে বিকেলের মধ্যেই তারা নিশ্চিত হয় অপহরণে র্যা ব-১১'র সংশ্লিষ্টতা। বিষয়টি পুলিশ হেড-কোয়াটার্সে জানিয়েও দেয়। তবে পুলিশ হেড-কোয়াটার্স এ সময় ধীরে চলো নীতি অনুস্মরণ করে।
সূত্র আরো জানায়, অপহরণের সঙ্গে র্যা ব-১১ সংশ্লিষ্টতার কথা পুলিশ হেড-কোয়াটার্স র্যা ব সদর দফতরকে জানায়। র্যা ব সদর দফতরের শীর্ষ কর্মকর্তা তখন রাজধানীর বাইরে ছিলেন। তিনি দ্রুত ঢাকায় ছুটে এসে র্যা ব-১১'র প্রায় সব কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইলে অসংখ্যবার কথা বলেন। তবে কেউই এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। অন্ধকারে রাখা হয়েছিল র্যা ব সদর দফতরকে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, ২৭ মে গভীর রাতে তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এম.এম রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে ক্ষমতাধর একজন মন্ত্রী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন। এর পর তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজজ্জামান খান কামালের সঙ্গে কথা বলেন। এতেও কোনো সুরাহা করতে না পেরে র্যা ব সদর দফতরে যোগাযোগ করেন। তারেক সাঈদকে অপহরণের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এক পর্যায়ে র্যা ব ও সেনাবাহিনী থেকে চাকরি হারানো'র হুমকিও দেয়া হয় মন্ত্রীর পক্ষ থেকে।
এখানেই শেষ নয়, তারেক সাঈদ নিজে র্যা বের শীর্ষ পর্যায়ের এই কর্মকর্তাকে ৭ খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তাকে রক্ষার আহবান জানান। তবে তারেক সাঈদ ও মন্ত্রীর এমন সব হুমকি-ধামকিতে তেমন কোনো কাজ হয়নি।
র্যা ব সদরের জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে অপহরণের পর হত্যার পুরো ঘটনা। অপহরণের ৮ ঘণ্টার মধ্যেই নজরুল ও চন্দন সরকারসহ ৭ জনকেই হত্যা করে শীতালক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয় বলে জানান মেজর (অব.) আরিফ ও লে. কমান্ডার (অব.) রানা। তারা দুজনেই র্যা ব সদরকে জানান, শুধু টাকার জন্যই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দেন সেনাবাহিনী থেকে চাকরি হারানো র্যা ব-১১'র সাবেক সিও তারেক সাঈদ। আর তারা দুজনসহ ১৭ র্যা ব সদস্য স্পটে থেকে কাজ সম্পন্ন করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লিংক রোড থেকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। অপহরণের তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল নারায়নগঞ্জের শীতালক্ষ্যা নদী থেকে নজরুল ও চন্দন সরকারসহ অপহৃত ৬ জনের এবং এর একদিন পর ১ মে বাকি ১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
অপহরণে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় র্যা ব-১১ সিও (অধিনায়ক) লে.কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কারণে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মনোজকান্তি বড়াল ও জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামকে ২৯ এপ্রিল প্রত্যাহার করা হয়। অপহরণের পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ স্পষ্ট হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ৫ মে লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেনকে সেনাবাহিনী থেকে এবং নারায়নগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এম.এম রানাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
তারেক সাঈদ বর্তমানে পুলিশ রিমান্ডে আছে। গতকাল তার আরো চর দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অন্যদিকে আরিফ হোসেন ও এম.এম রানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
(মেহদী/উজ্জল/জুন ১৫, ২০১৪)
Short URL: http://primenews.com.bd/bangla/?p=15541
Related:
র্যাব সদরে জানার আগেই ৭ খুন (পর্ব-১)Short URL: http://primenews.com.bd/bangla/?p=15163
__._,_.___