Banner Advertiser

Tuesday, July 1, 2014

[mukto-mona] আমাদের আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন



বুধবার, ২ জুলাই ২০১৪, ১৮ আষাঢ় ১৪২১

আমাদের আত্মবিশ্লেষণ প্রয়োজন
ওয়াহিদ নবি
আমরা যেভাবে চলেছি এভাবে চলতে পারে না। অভিজ্ঞ লেখক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সাহেব ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা দিবসে দলটির আত্মসমালোচনার অভাবের কথা উল্লেখ করেছেন। জাতি হিসেবে আমাদের সবার আত্মসমালোচনার জরুরী হয়ে পড়েছে। একটা সমাজের মানুষ বহু ভাগে বিভক্ত যাদের বিভিন্ন রকমের দায়িত্ব পালন করতে হয়। একটি প্রবন্ধের সীমিত পরিসরে সবার কথা আলোচনা করা সম্ভব নয়। তবে শুরু করা উচিত এই আলোচনা।
'জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস'- এই জাতীয় কথা যখন কোন রাজনীতিবিদ বলেন তখন মুহুর্মুহু করতালিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। কিন্তু যিনি কথাটা বলেন তিনি নিজের কথাটা বিশ্বাস করেন কি? কে জানে! এ কথা বললে মিথ্যা বলা হবে না যে জনগণকে পরিচালিত করা যায়। তাদের ভোট অবশ্য স্থির করে যে কে ক্ষমতায় যাবে কিংবা তাদের বিক্ষোভে ভূপাতিত হতে পারে মহাক্ষমতাধররা। কিন্তু কাকে জনগণ ভোট দেবে তা বহু কারণের ওপর নির্ভর করে। এই কারণগুলোর একটি হতে পারে কারা তাদের প্রভাবান্বিত করতে পারে। চলমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা কারা তাদের মনের মতো করতে পারে। সত্যি কথা বা সুন্দর ব্যাখ্যা যে সব সময় তাদের মন জয় করে তা নয়। এর একটা কারণ হচ্ছে যে 'সত্যি কথাটি' কি এ সম্বন্ধে একমত হওয়াটা কদাচিৎ ঘটে থাকে। আর কথাটাকে সত্যি মনে না করলে যত সুন্দরভাবেই কেউ তা ব্যাখ্যা করুন না কেন তা শ্রোতাদের মন মতো হবে না। 
আমাদের ইতিহাসের দিকে তাকানো যাক। মুসলমানদের আবাসভূমি হবে পাকিস্তান এটা ভারত উপমহাদেশের মুসলমানরা আবেগ সহকারে মেনে নিয়েছিলেন। এক-তৃতীয়াংশ মুসলমান ভারতে থেকে যাবেন এই বাস্তবতা কারো মনে দাগ কাটেনি। ১৯০৫ সালের ইতিহাস কারো মনে পড়েনি। এই আবেগের অংশ হিসেবে ঢাকার অধিবাসীদের এক অংশ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রথমদিকে আন্দোলনের অফিস পুড়িয়ে দিয়েছিল আন্দোলনকারীদের 'ভারতের দালাল' আখ্যা দিয়ে। তারপর শহীদের আত্মত্যাগের পর দৃশ্য বদলে গেল। 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' দাবিতে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়। এখানে একটা কথা আমরা ভুলে যাই। সবার মনোভাব বদলায় না। এই না বদলানো লোকগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সুযোগ বুঝে। সক্রেটিস এক ব্যক্তির কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে দেবতা জুস বৃষ্টি দেন বলেই যে বৃষ্টি হয় তা নয়। তারপর বৃষ্টির আসল কারণ তিনি সেই ব্যক্তির কাছে ব্যাখ্যা করেন। মনে হয়েছিল সে বৃষ্টির কারণ বুঝেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সে সক্রেটিসকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে। জীবনকে উন্নত করতে হলে জ্ঞানচর্চার প্রয়োজন। প্রয়োজন অধ্যবসায়ের। আমাদের উন্নত ইহলৌকিক জীবন হবে আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের ভিত্তি। পারলৌকিক বিলাসিতার প্রলোভন আর যান্ত্রিক আচার অনুষ্ঠান কোন উন্নত জীবনের দিক দর্শন হতে পারে না। এতে করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয় শুধু। 
আমাদের ছাত্র জীবনে দেখেছি বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতারা নিজ নিজ শহরে থাকতেন। যার ফলে জনগণের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ছিল গভীর। এখন সবাই ঢাকায়। একজনের ওপর যদি কোন দায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁর উপযুক্ততার জন্য তবে আশা করা যায় যে সে দায়িত্ব পালিত হবে। এই উপযুক্ততার মাপকাঠি হবে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা। তা না হয়ে অন্য উপায়ে পদভার অর্জন যেমন উত্তরাধিকার, তাহলে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত হবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। এই পরিস্থিতির জরুরী বিশ্লেষণ প্রয়োজন। 'বদান্যতা নিজ গৃহে শুরু হয়' কথাটি অত্যন্ত সত্য। দেশে গণতন্ত্র আসবে যদি রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা হয়। আর গণতন্ত্রের বিকাশে সাহায্য করবে আমাদের পারিবারিক জীবনের জীবন যাত্রার মান। পুরুষ শাসিত সমাজে প্রকৃত গণতন্ত্র আসতে পারে না। আমরা সন্তানদের কাছে কিছু ব্যাখ্যা করি না শুধু আদেশ করি। ভৃত্যদের সঙ্গে আমাদের ব্যবহার আমাদের সন্তানরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে। এতে তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে ওঠে না। কার্যস্থলে অধীনস্থদের প্রতি আমাদের আচরণ দৃষ্টান্তমূলক নয়। 'স্যার' 'ম্যাডাম' ইত্যাদি সম্বোধন স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে শ্রুতিকটু হওয়া উচিত। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে এই জাতীয় সম্বোধন ব্যবহৃত হতে থাকলে রাজনীতিতেও তাই হবে। এই জাতীয় আচরণ গণতন্ত্র বিকাশে সাহায্য করবে না। 
রাজনীতির একটা আদর্শিক দিক থাকে। আর একটি থাকে প্রশাসনিক দিক। আমরা 'গণতন্ত্র', 'সমাজতন্ত্র', 'জাতীয়তাবাদ' ও 'ধর্মনিরপেক্ষতা' এই চারটি আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত। এটি একটি বাস্তবতা যে আমরা এসব আদর্শের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না এবং এটাও সত্যি যে আমরা এখনও প্রস্তুত হইনি। 'ধর্ম ও জাতি' যে এক জিনিস নয় এটি আমরা বুঝি না। রেনাঁ, অরওয়েল, সিমর প্রমুখের লেখা আমাদের সাহায্য করে জাতীয়তা কি তা বুঝতে। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ 'নেশন' শব্দের বাংলা অনুবাদ সম্ভব নয় মনে করে 'নেশন' শব্দের বাংলা 'নেশন' রেখে দিয়েছিলেন। এই জটিল বিষয়ের অর্থ একজন ভুঁইফোঁড় রাজনীতিবিদ সহজেই বুঝে গেলেন এবং একটা লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি করলেন। স্বার্থান্বেষীরা এখনও এই অবস্থাকে ব্যবহার করছে। কিন্তু এই ব্যবহারটাও বিভ্রান্তের মতো। কখনও তারা ভারতকে নিন্দা করছে আবার কখনও তোষামোদ করছে। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা আদর্শগুলোকে নিয়ে লিখুন এবং আলোচনা করুন এই আমাদের প্রত্যাশা। 
রাজনীতির যে আর একটি দিক অর্থাৎ রাষ্ট্র পরিচালনা করা সেটি ঠিকমতো না হলে একটি দলের আদর্শ তা যত ভালই হোক না কেন, তা জনগণের দ্বারা অবহেলিত হবে। এলিফ্যান্ট রোড, ফেনী আর নারায়ণগঞ্জের ঘটনা স্থানীয় ঘটনা বলে বিবেচিত হয় না। পদ্মা সেতু আর শেয়ার মার্কেট পরিস্থিতির সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পেলে জনগণ অসন্তুষ্ট থাকে। ছাত্রলীগের কার্যাবলির দায়িত্ব সরকারী দলকে নিতে হয়। 
একজন প্রাক্তন উপাচার্যের লেখা প্রবন্ধ পড়লাম একটি দৈনিকে। তিনি দলীয় ভিত্তিতে জাতির বিভক্তির কথা আলোচনা করেছেন এবং এজন্য সৃষ্ট চাটুকারদের নিন্দা করেছেন। ইনিই বলেছিলেন যে তারেক রহমান দেশ ফিরলে বিমানবন্দরে ২০ লাখ লোক হবে। আমাদের শিক্ষার মান এঁদের মতো মানুষদের হাতে থাকলে সেটা হবে দুশ্চিন্তার বিষয়।
আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের জনগণের সম্পর্ক বেশ মজার। সরকারী অফিসে পয়সা ছাড়া কাজ হয় না এই হচ্ছে সাধারণ মানুষের ধারণা। কিন্তু এজন্য আমলাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার কার্পণ্য নেই। একেকটা জেলার ডিসি সে জেলার সম্রাট। সমস্ত বিভাগ তাঁর অধীনে। এই অবস্থায় আমলাদের দায়িত্বজ্ঞান বাড়বে কি করে? বিদেশেও দেখি একাডেমিক বিষয়সহ সব রকমের অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার প্রধান বক্তা। আমাদের সামন্ততান্ত্রিক মনোভাব পরিত্যাগ করার সময় এসেছে। 
আমাদের বৃহৎ দুটি দলের একটির সৃষ্টি হয়েছে জনগণের মধ্য থেকে। বেড়ে উঠেছে অসংখ্য কর্মীর ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে। আর একটি দলের সৃষ্টি হয়েছে সেনাকুঞ্জে সেনা কর্তার প্রয়োজনে। দল ছুট, পেশা ছুট আর আদর্শ ছুটদের জমায়েত এই দলে। অথচ এই দুই দলের পার্থক্য জনগণের কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচনে পরিষ্কার হয় না দুটি দলের পার্থক্য। এই অবস্থার বিশ্লেষণ জরুরী হয়ে পড়েছে। সক্রেটিসকে প্রাণদণ্ড দেয়া বিচারকদের উদ্দেশ করে তিনি যা বলেছিলেন তা উদ্ধৃত করে আমাদের বক্তব্য শেষ করব, 'মহত্ত্বের পরিচয় অন্যের ক্ষতি সাধন করা নয়, মহত্ত্বে¡র পরিচয় হচ্ছে নিজেকে উন্নত করা।'

লেখক : রয়্যাল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্টের ফেলো
প্রকাশ: বুধবার, ২ জুলাই ২০১৪, ১৮ আষাঢ় ১৪২১


__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___