বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে বেগম মুজিব
শাহজাহান আকন্দ শুভ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যামামলার ২ নম্বর সাক্ষি ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের গৃহকর্মী আবদুর রহমান (রমা শেখ)। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারকালে তিনি আদালতে দীর্ঘ জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তার সেই জবানবন্দিতে উঠে আসে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের মর্মস্পর্শী তথ্য। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে বেগম মুুজিব বিপথগামী সেনাসদস্যদের বলেছিলেন, 'আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেল।'
জবানবন্দিতে আবদুর রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে আমি ও সেলিম দোতলায় বঙ্গবন্ধুর বেডরুমের সামনে বারান্দায় ঘুমিয়েছিলাম। আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে হঠাৎ বেগম মুজিব দরজা খুলে বাইরে আসেন এবং বলেন, সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করেছে। ওইদিন তিনতলায় শেখ কামাল এবং তার স্ত্রী সুলতানা ঘুমিয়েছিলেন। শেখ জামাল ও তার স্ত্রী রোজী এবং ভাই শেখ নাসের দোতলায় ঘুমিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও তার স্ত্রী এবং শেখ রাসেল দোতলায় একই রুমে ঘুমিয়েছিলেন। নিচতলায় ছিলেন পিএ মহিতুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মচারী। বেগম মুজিবের কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি লেকের পাড়ে গিয়ে দেখি কিছু আর্মি গুলি করতে করতে আমাদের বাড়ির দিকে আসছে। তখন আমি আবার বাসায় ঢুকি এবং দেখি পিএ রিসেপশনের রুমে, বঙ্গবন্ধু তার সঙ্গে কথা বলছেন। আমি পেছনের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় এসে দেখি বেগম মুজিব দোতলায় ছোটাছুটি করছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ৩তলায় যাই এবং আমাদের বাসা আর্মিরা আক্রমণ করেছে বলে কামাল ভাইকে ওঠাই। কামাল ভাই তাড়াতাড়ি একটা প্যান্ট ও শার্ট পরে নিচের দিকে যান। আমি তার স্ত্রী সুলতানাকে নিয়ে দোতলায় আসি। দোতলায় গিয়ে একইভাবে আমাদের বাসা আর্মিরা আক্রমণ করেছে বলে জামাল ভাইকে ওঠাই। তিনি তাড়াতাড়ি প্যান্ট-শার্ট পরে তার মায়ের রুমে যান। সঙ্গে তার স্ত্রীও যান। এ সময় খুব গোলাগুলি হচ্ছিল। এক পর্যায়ে কামাল ভাইয়ের আর্তচিৎকার শুনতে পাই। একই সময় বঙ্গবন্ধু দোতলায় এসে রুমে ঢোকেন এবং দরজা বন্ধ করে দেন। প্রচ- গোলাগুলি এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বঙ্গবন্ধু দরজা খুলে আবার বাইরে এলে আর্মিরা তার বেডরুমের সামনে চারপাশে তাকে ঘিরে ফেলে। আমি আর্মিদের পেছনে ছিলাম। আর্মিদের ল্য করে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'তোরা কী চাস, কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে।' তারা বঙ্গবন্ধুকে তখন সিঁড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। সিঁড়ির ২-৩ ধাপ নামার পর নিচের দিক থেকে অনেক আর্মি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। গুলি খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েন। আমি তখন আর্মিদের পেছনে ছিলাম। তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে, 'তুমি কী কর?' উত্তরে আমি বলি কাজ করি। তখন তারা আমাকে ভেতরে যেতে বলে। আমি বেগম মুজিবের বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নিই। সেখানে বেগম মুজিবকে বলি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করেছে। ওই বাথরুমে শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা, শেখ জামাল ও তার স্ত্রী রোজী, শেখ রাসেল, বেগম মুজিব ও বঙ্গবন্ধুর ভাই নাসের এবং আমি আশ্রয় নিই। শেখ নাসের বাথরুমে আসার আগে তার হাতে গুলি লাগে। তার হাত থেকে তখন রক্ত ঝরছে। বেগম মুজিব শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে তার রক্ত মোছেন। এর পর আর্মিরা আবার দোতলায় আসে এবং দরজা পেটাতে থাকলে বেগম মুজিব দরজা খুলতে যান। তিনি বলেন, 'মরলে সবাই একই সঙ্গে মরব।' এই বলে বেগম মুজিব দরজা খুললে আর্মিরা রুমের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং শেখ নাসের, শেখ রাসেল, বেগম মুজিব এবং আমাকে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন সিঁড়িতে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে বলেন, 'আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেল।' এই কথার পর আর্মিরা তাকে দোতলায় তার রুমের দিকে নিয়ে যায়। একটু পরেই ওই রুমে গুলির শব্দসহ মেয়েদের আর্তচিৎকার শুনতে পাই।
আর্মিরা নাসের, রাসেল ও আমাকে নিচতলায় এনে লাইনে দাঁড় করায়। সেখানে সাদা পোশাকের একজন পুলিশের লাশ দেখি।
নিচে নাসেরকে ল্য করে জিজ্ঞাসা করে, 'তুমি কে?' তিনি শেখ নাসের বলে পরিচয় দিলে তাকে নিচতলায় বাথরুমে নিয়ে যায়। একটু পরেই গুলির শব্দ ও তার মাগো বলে আর্তচিৎকার শুনতে পাই। শেখ রাসেল 'মার কাছে যাব' বলে তখন কান্নাকাটি করছিল। পিএ মহিতুল ইসলামকে ধরে বলছিল, 'ভাই আমাকে মারবে না তো?' এমন সময় একজন আর্মি তাকে বলল 'চল তোমার মায়ের কাছে নিয়ে যাই।' এই বলে তাকে দোতলায় নিয়ে যায়। একটু পরেই কয়েকটি গুলির শব্দ ও আর্তচিৎকার শুনতে পাই।
এর পর-পরই দেখলাম কালো পোশাক পরা আর্মিরা আমাদের বাসার সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।'
- See more at: http://www.dainikamadershomoy.com/details_news.php?id=161966&&%20page_id=%2011#sthash.h8PfAKqS.dpufশাহজাহান আকন্দ শুভ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যামামলার ২ নম্বর সাক্ষি ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের গৃহকর্মী আবদুর রহমান (রমা শেখ)। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচারকালে তিনি আদালতে দীর্ঘ জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তার সেই জবানবন্দিতে উঠে আসে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের মর্মস্পর্শী তথ্য। বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে বেগম মুুজিব বিপথগামী সেনাসদস্যদের বলেছিলেন, 'আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেল।'
জবানবন্দিতে আবদুর রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে আমি ও সেলিম দোতলায় বঙ্গবন্ধুর বেডরুমের সামনে বারান্দায় ঘুমিয়েছিলাম। আনুমানিক ভোর ৫টার দিকে হঠাৎ বেগম মুজিব দরজা খুলে বাইরে আসেন এবং বলেন, সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করেছে। ওইদিন তিনতলায় শেখ কামাল এবং তার স্ত্রী সুলতানা ঘুমিয়েছিলেন। শেখ জামাল ও তার স্ত্রী রোজী এবং ভাই শেখ নাসের দোতলায় ঘুমিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু ও তার স্ত্রী এবং শেখ রাসেল দোতলায় একই রুমে ঘুমিয়েছিলেন। নিচতলায় ছিলেন পিএ মহিতুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মচারী। বেগম মুজিবের কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি লেকের পাড়ে গিয়ে দেখি কিছু আর্মি গুলি করতে করতে আমাদের বাড়ির দিকে আসছে। তখন আমি আবার বাসায় ঢুকি এবং দেখি পিএ রিসেপশনের রুমে, বঙ্গবন্ধু তার সঙ্গে কথা বলছেন। আমি পেছনের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় এসে দেখি বেগম মুজিব দোতলায় ছোটাছুটি করছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ৩তলায় যাই এবং আমাদের বাসা আর্মিরা আক্রমণ করেছে বলে কামাল ভাইকে ওঠাই। কামাল ভাই তাড়াতাড়ি একটা প্যান্ট ও শার্ট পরে নিচের দিকে যান। আমি তার স্ত্রী সুলতানাকে নিয়ে দোতলায় আসি। দোতলায় গিয়ে একইভাবে আমাদের বাসা আর্মিরা আক্রমণ করেছে বলে জামাল ভাইকে ওঠাই। তিনি তাড়াতাড়ি প্যান্ট-শার্ট পরে তার মায়ের রুমে যান। সঙ্গে তার স্ত্রীও যান। এ সময় খুব গোলাগুলি হচ্ছিল। এক পর্যায়ে কামাল ভাইয়ের আর্তচিৎকার শুনতে পাই। একই সময় বঙ্গবন্ধু দোতলায় এসে রুমে ঢোকেন এবং দরজা বন্ধ করে দেন। প্রচ- গোলাগুলি এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। তারপর বঙ্গবন্ধু দরজা খুলে আবার বাইরে এলে আর্মিরা তার বেডরুমের সামনে চারপাশে তাকে ঘিরে ফেলে। আমি আর্মিদের পেছনে ছিলাম। আর্মিদের ল্য করে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'তোরা কী চাস, কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে।' তারা বঙ্গবন্ধুকে তখন সিঁড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। সিঁড়ির ২-৩ ধাপ নামার পর নিচের দিক থেকে অনেক আর্মি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। গুলি খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েন। আমি তখন আর্মিদের পেছনে ছিলাম। তারা আমাকে জিজ্ঞাসা করে, 'তুমি কী কর?' উত্তরে আমি বলি কাজ করি। তখন তারা আমাকে ভেতরে যেতে বলে। আমি বেগম মুজিবের বাথরুমে গিয়ে আশ্রয় নিই। সেখানে বেগম মুজিবকে বলি বঙ্গবন্ধুকে গুলি করেছে। ওই বাথরুমে শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা, শেখ জামাল ও তার স্ত্রী রোজী, শেখ রাসেল, বেগম মুজিব ও বঙ্গবন্ধুর ভাই নাসের এবং আমি আশ্রয় নিই। শেখ নাসের বাথরুমে আসার আগে তার হাতে গুলি লাগে। তার হাত থেকে তখন রক্ত ঝরছে। বেগম মুজিব শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে তার রক্ত মোছেন। এর পর আর্মিরা আবার দোতলায় আসে এবং দরজা পেটাতে থাকলে বেগম মুজিব দরজা খুলতে যান। তিনি বলেন, 'মরলে সবাই একই সঙ্গে মরব।' এই বলে বেগম মুজিব দরজা খুললে আর্মিরা রুমের ভেতর ঢুকে পড়ে এবং শেখ নাসের, শেখ রাসেল, বেগম মুজিব এবং আমাকে নিচের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন সিঁড়িতে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখে বলেন, 'আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেল।' এই কথার পর আর্মিরা তাকে দোতলায় তার রুমের দিকে নিয়ে যায়। একটু পরেই ওই রুমে গুলির শব্দসহ মেয়েদের আর্তচিৎকার শুনতে পাই।
আর্মিরা নাসের, রাসেল ও আমাকে নিচতলায় এনে লাইনে দাঁড় করায়। সেখানে সাদা পোশাকের একজন পুলিশের লাশ দেখি।
নিচে নাসেরকে ল্য করে জিজ্ঞাসা করে, 'তুমি কে?' তিনি শেখ নাসের বলে পরিচয় দিলে তাকে নিচতলায় বাথরুমে নিয়ে যায়। একটু পরেই গুলির শব্দ ও তার মাগো বলে আর্তচিৎকার শুনতে পাই। শেখ রাসেল 'মার কাছে যাব' বলে তখন কান্নাকাটি করছিল। পিএ মহিতুল ইসলামকে ধরে বলছিল, 'ভাই আমাকে মারবে না তো?' এমন সময় একজন আর্মি তাকে বলল 'চল তোমার মায়ের কাছে নিয়ে যাই।' এই বলে তাকে দোতলায় নিয়ে যায়। একটু পরেই কয়েকটি গুলির শব্দ ও আর্তচিৎকার শুনতে পাই।
এর পর-পরই দেখলাম কালো পোশাক পরা আর্মিরা আমাদের বাসার সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।'
__._,_.___