Banner Advertiser

Friday, August 22, 2014

[mukto-mona] কালের পুরাণ : খালেদা জিয়া দায় এড়াবেন কীভাবে?



কালের পুরাণ

খালেদা জিয়া দায় এড়াবেন কীভাবে?

সোহরাব হাসান | আপডেট: প্রিন্ট সংস্করণ

অলংকরন: মাসুক হেলাল১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নিহত হন জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির চেয়ারম্যান। এটি ঐতিহাসিক সত্য।
পরবর্তী দৃশ্যগুলো আমরা যদি এভাবে কল্পনা করি। সে সময়ে বিএনপির স্থলে অন্য কোনো দল ক্ষমতায় ছিল। আর বিএনপি
বিরোধী দলে। বিরোধী দলের নেতা থাকা অবস্থাতেই জিয়াকে আততায়ীরা খুন করে।
পরদিন ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হলো, জিয়াউর রহমানকে খুন করেছেন তাঁরই দলের লোকেরা। কেননা, সেদিন সার্কিট হাউসে বিএনপির বাইরের কেউ ছিলেন না। চট্টগ্রাম বিএনপিতে বিরোধ ছিল এবং সেই বিরোধ মেটাতেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তদুপরি সার্কিট হাউসে ছিল সশস্ত্র প্রহরা। তাই বাইরের কারও পক্ষে সেখানে গিয়ে তাঁকে খুন করা সম্ভব নয়। সেদিন সার্কিট হাউসে কর্তব্যরত নিরাপত্তা প্রহরীদের একজনকে দিয়ে এই মর্মে স্বীকারোক্তি আদায় করা হলো যে বাইরের কেউ জিয়াকে খুন করেননি। দলের কোনো নেতার হাতে তিনি জীবন দিয়েছেন। এরপর তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিচার বিভাগীয় কমিশন হলো। বিদেশি তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারাও এলেন। কিন্তু তদন্ত কমিটি ও কমিশনের নেতারা সার্কিট হাউসে যাওয়ার আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের আলামত যথা গুলির খোসা, রক্তের দাগ মুছে ফেলা হলো। রক্তমাখা চাদর ও জামাকাপড় পুড়িয়ে ফেলা হলো।
কিছুদিন পর বিচার বিভাগীয় কমিশনের প্রধান সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে জানিয়ে দিলেন, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য জিয়াউর রহমানকে হত্যা করতে পারেন না। এই হত্যার সঙ্গে সেই বিদেশি রাষ্ট্র জড়িত, যারা একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল। আর সেই বিদেশি শক্তির সহায়তায় বিএনপিরই একাংশ জিয়াকে হত্যা করেছে। সরকার আসল ঘটনা আড়াল করতে
আরও কিছু পদক্ষেপ নিল, যার মধ্যে ছিল আসামিদের ধরতে পুরস্কার ঘোষণা, জিয়াউর রহমান ও তাঁর দল বিএনপির বিরুদ্ধে লাগাতার অপপ্রচার।
পাঠক, এতক্ষণ যে কল্পচিত্রের কথা বললাম, সেটি সর্বৈব মিথ্যা। জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপিই ক্ষমতায় ছিল এবং সেই মামলা চলতে কেউ বাধা দেয়নি; বরং সরকার জিয়াউর রহমানকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে যা যা করণীয় সবই করেছে। দ্রুততম সময়ে তারা জিয়া হত্যার সঙ্গে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের সামরিক আদালতে বিচার করেছে। ১৩ জন সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। সেনা আইনে হত্যার বিচার হয়নি, হয়েছে বিদ্রোহের। '৮১ সালের সেনা-বিদ্রোহের কুশীলবদের যদি বিচার হতে পারে, পঁচাত্তরের সেনা-বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কেন নয়?
ওপরে '৮১ সালের যে কল্পকাহিনি তুলে ধরলাম, ২৩ বছর পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তা-ই বাস্তবায়িত হতে দেখি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। সিলেটে বোমা হামলা ও দেশব্যাপী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ওই দিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে প্রতিবাদ সভার অায়োজন করে, সরকারের অনুমতি নিয়েই। দলে দলে নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান। দলের অন্যান্য নেতাকে
নিয়ে একটি ট্রাকে এসে দাঁড়ান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বক্তৃতা শেষ করতেই মুহুর্মুহু
গ্রেনেডের আওয়াজ। গোটা এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন৷ চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শত শত মানুষের চিৎকার ও আর্তনাদ শোনা যায়। রক্তের স্রোতে রাজপথ ভেসে যায়। কারও পা নেই, কারও হাত নেই; কারও শরীর ঝাঁঝরা হয়ে গেছে স্প্লিন্টারের আঘাতে। কর্মীরা কেউ রিকশায়, কেউ হেঁটে মুমূর্ষু ব্যক্তিদের কাছাকাছি কোনো ক্লিনিক ও হাসপাতালে নিয়ে ছুটেছেন। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অল্পের জন্য রেহাই পেলেও আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত এবং কয়েক শ আহত হন। কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের সদস্যরা নির্বিকার। কারও গায়ে একটি আঁচড়ও লাগেনি।
এই নৃশংস ঘটনার পর থেকেই বিএনপি নেতারা বলতে লাগলেন, এটি আওয়ামী লীগের কাজ। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দাবি করলেন যে সরকারের সাফল্যে নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভীত হয়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরানোর উদ্দেশ্যেই এই গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতারা সংসদের ভেতরে ও বাইরে বক্তৃতা-বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের ওপরই দায় চাপাতে থাকলেন।
অথচ গ্রেনেড হামলার প্রধান টার্গেট শেখ হাসিনা, তিনি তখন বিরোধী দলের নেতা। সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরই তাঁর অবস্থান। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। প্রথমত, সরকার সেই দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তদন্তের নামে সরকার যা করেছে, তা কেবল কল্পকাহিনি নয়, আজগুবি গল্প। তদন্ত কর্মকর্তারা জজ মিয়া নামে এক যুবকের মুখ দিয়ে মনগড়া জবানবন্দি দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন। জজ মিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ, মুকুল প্রমুখের সঙ্গে তিনি সেদিনের গ্রেনেড হামলায় অংশ নিয়েছেন। কিন্তু গ্রেনেড কী বস্তু, তা তিনি জানেন না।
এই জবানবন্দির বিনিময়ে সিআইডি পুলিশ জজ মিয়ার মাকে প্রতি মাসে ভরণপোষণের টাকা দিত। মামলার তদন্তে ছিলেন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন ও মুন্সী আতিকুর রহমান। তাঁরা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পৃষ্ঠপোষকতাতেই এই কাজ করেছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, এই পৃষ্ঠপোষকের পৃষ্ঠপোষক কে ছিলেন? বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তদন্তকাজ এভাবেই মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার মামলাটি পুনঃ তদন্ত করলে এই তথ্য বেরিয়ে আসে যে বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সহায়তায় হরকাতুল জিহাদের জঙ্গিরা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যেই এই গ্রেনেড হামলা চালায় এবং সেই হামলায় নেতৃত্ব দেন উপমন্ত্রীর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন। তিনিই পাকিস্তান থেকে গ্রেনেডগুলো নিয়ে আসেন। আর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ঘটনার পর তাজউদ্দিন ও অন্য জঙ্গিদের বিদেশে পার করে দিতে সহায়তা করেছেন।

ঘাতক বা হামলাকারীদের সব সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। এ অক্ষমতা ক্ষমা করা যায়। কিন্তু জেনেশুনে যদি কোনো সরকার প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে ভুয়া ঘাতক ও ভুয়া হামলাকারী আবিষ্কার করে, তাদের দিয়ে মুখস্থ জবানবন্দি দেওয়ায়, সেটি অমার্জনীয়। ২০০৪ সালে ক্ষমতাসীন খালেদা জিয়ার সরকার সেই কাজটিই করেছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বিএনপির কোন কোন নেতা জড়িত ছিলেন, সেটি হয়তো প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু তৎকালীন সরকার যে ঘাতকদের বাঁচাতে নানা ফন্দিফিকির করেছে, মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করেছে, সেসব মোটেই মিথ্যা নয়। মিথ্যাচারের এই প্রকল্পের দায় সরকারের প্রধান খালেদা জিয়া এড়াতে পারেন না।
বিএনপি নেতাদের দাবি, এই মামলায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, বর্তমান সরকারের দাবি,
তিনিই ছিলেন মাস্টারমাইন্ড। হাওয়া ভবনে ঘাতকদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়েছে। হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতে প্রমাণিত হবে, কার দাবি সঠিক।
বিএনপি নেতারা তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করলেও নিশ্চয়ই এ কথা বলতে পারবেন না যে এই মামলার অন্যতম আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনকে তাঁরা পার করে দেননি। তাঁরা এ কথাও বলতে পারবেন না যে সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় তাজউদ্দিন একাধিকবার সহযোগীকে নিয়ে বৈঠক করেননি। তাঁরা এ কথা বলতে পারবেন না, ঘটনার পরপরই আলামত নষ্ট
করা হয়নি। তাঁরা বলতে পারবেন না যে সরকারের অধীনে কোনো সংস্থার কর্মকর্তারা হত্যাকারীদের সাহায্য করেননি। অন্যরা কী
করেছেন, কী করেননি, সেটি প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকারের কোনো মন্ত্রী বা কর্মকর্তা যদি সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করে থাকেন, দায় এড়াতে পারেন না।
বিএনপি নেতারা একটা কথা বেশ জোর দিয়ে বলেন, জঙ্গিবাদের উত্থান আওয়ামী লীগের আমলেই হয়েছে। এর মাধ্যমে তাঁরা বোঝাতে চান যে শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের সময়েই জঙ্গিরা বিভিন্ন স্থানে বোমা মেরে মানুষ হত্যা শুরু করেছে। তাঁদের এই যুক্তি মেনে নিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি—যে আমলেই বোমা হামলা হোক না কেন, তার টার্গেট কারা ছিলেন? টার্গেট হলো উদীচী, টার্গেট হলো কমিউনিস্ট পার্টি, টার্গেট হলো রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান, টার্গেট হলো বিভিন্ন গির্জা, মন্দির ও যাত্রা প্যান্ডেল। বিএনপির কোনো নেতা কোনো বোমা বা গ্রেনেড হামলার লক্ষ্যবস্তু হননি। ইতিহাসের এই সত্য কী প্রমাণ দেয়?
এখন বেগম খালেদা জিয়াকে বলতে হবে, ২১ আগস্টের হামলাকারীদের বাঁচাতে সরকারের কারা সক্রিয় ছিলেন। যাঁরা ছিলেন, তাঁর উচিত হবে সাংগঠনিকভাবে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তাঁর দলের বা সরকারের ভেতরে যদি কেউ তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে থাকে, তা-ও পরিষ্কার করা। খালেদা জিয়া একজন ব্যক্তিমাত্র নন। তিনি দেশের অন্যতম বৃহৎ দলের প্রধান। তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ভবিষ্যতেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। অতএব, তাঁকে এসব প্রশ্নের জবাব দিতেই হবে।
খালেদা জিয়াও স্বজন হারিয়েছেন। ৩০ মে জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের বিচার ও তদন্ত নিয়ে যদি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ রকম কাজ করত, তাহলে সেই ঘটনায় তাঁর হৃদয় যেমন আহত ও রক্তাক্ত হত, তেমনি আজ শেখ হাসিনার হৃদয়ও আহত ও রক্তাক্ত।
নিজের এবং বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য খালেদা জিয়াকে অবশ্যই সত্যের মুখোমুখি হতে হবে। দলের বা সরকারের যাঁরা ২১ আগস্টের হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যাঁরা অপরাধীদের বাঁচাতে চেয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে, দল থেকে বের করে দিয়েই সেটি সম্ভব। তাঁকে মনে রাখতে হবে, ১৫ আগস্টের মতো ২১ আগস্টের ঘটনা রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrabo3@dhaka.net


প্রসঙ্গ:

ফিরে দেখা পঁচাত্তর: মুজিব হত্যা, খুনি মেজররা ও আমাদের দ্বিচারিতা

সোহরাব হাসান | আপডেট: প্রিন্ট সংস্করণ

সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrabo3@dhaka.net
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান






__._,_.___

Posted by: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___