নমনীয় হচ্ছে পশ্চিমা সুর
শাহাব উদ্দিন সাগর
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার সাত মাসের মাথায় অনেকটা 'নমনীয়' 'পশ্চিমা সুর'। গত ৫ জানুয়ারির পর পশ্চিমা দেশগুলো নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করা নিয়ে এক ধরনের নীরবতা বা মন্তব্যহীন থাকলেও ধীরে ধীরে তার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বক্তব্য থেকে এ 'নমনীয়তা' পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের গেল সাত মাসের কর্মকাণ্ড এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর এ নমনীয় সুর। এ ছাড়া গেল কয়েক মাসে পূর্বের দেশগুলো সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এগিয়ে আসার বিষয়টিও 'নিয়ামক' হিসেবে কাজ করছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গেল কয়েক বছর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব দেখা দিয়ে তা পরে সংকটে পরিণত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ জানুয়ারি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় দেশে অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু রাজনৈতিক মহল থেকে বলা হয় 'এ সরকার একঘরে হয়ে যাবে, বিশ্বের কোনো দেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না।' এ বক্তব্যের পর সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর। এরই অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব অনুবিভাগ সরকারের এ সিদ্ধান্তে গভীর মনোনিবেশ করে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে ২১ আগস্ট সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন দেশটিতে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন। ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরে সাক্ষাতে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়নসহ নিকট প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। জবাবে বিসওয়াল ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
সূত্র মতে, এর আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসেও নিশা দেশাই বলেছিলেন, ওয়াশিংটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে। বিশেষ করে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবকে বলেছিলেন, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কম ভোট পড়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
এদিকে ১১ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত আলোচনায় কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সাত মাস পর সুশাসন, সরকারের কাজের মূল্যায়ন ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে বলেছেন, সহিংসতার অবসান হওয়ায় হাঁপ ছেড়ে বাঁচা গেছে।
হাইকমিশনার বলেন, এখন থেকে আমাদের প্রত্যাশা, কোনো একপর্যায়ে গিয়ে দুই দল আলোচনায় বসবে। তবে এই আলোচনা শুধু আগামী নির্বাচন নয়, পাঁচ বছর পর কোনো প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে, সেই ফ্রেমওয়ার্কও ঠিক করতে হবে।
বাংলাদেশ ও তার অর্থনীতির জন্য ঘন ঘন নির্বাচন অনুষ্ঠানকে প্রতিবন্ধক উল্লেখ করে ক্রুডেন বলেন, নির্বাচনের আয়োজন শুরু হলে প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়, লোকজন হতাহত হয়, লোকজন বাড়ির বাইরে বের হতে পারেন না আর সহিংসতা হয়। তাই আমরা চাই এ চক্র বন্ধ হোক।
কানাডার হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মাঝে আমরা আস্থার সংকট দেখতে পাই। আমরা চাই রাজনৈতিক এ সংস্কৃতির অবসান হোক এবং বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাক।
১৮ আগস্ট ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা অর্থনৈতিক খাতে বাংলাদেশের নজরকাড়া সাফল্যের প্রশংসা করে বলেছেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠবে।
এছাড়া ২২ আগস্ট চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বেশ উন্নতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে মজিনা আগামীতেও বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে আমেরিকা সরকার সাহায্য ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে জানান।
এর আগে ৫ আগস্ট সফররত যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশংসা করে গেছেন।
মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে তিনি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড যুক্তরাষ্ট্রেও আছে, বাংলাদেশেও আছে। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশই মৃত্যুদণ্ড তুলে দিয়েছে।
র্যাপ বলেন, আমি পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশে আসলাম। যুদ্ধাপরাধের বিচার যেন আন্তর্জাতিক মানে হয় সে বিষয়টিকে লক্ষ্য রেখেই আমি সরকারের কাছে কিছু পরামর্শ রেখেছি।
৫ জুন ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন প্রেসক্লাবে ডিকাব আয়োজিত আলোচনা সভায় বলেন, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা জোরদার করার জন্য একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি পরবর্তী নির্বাচনে যাওয়ার আগে আস্থা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপরও জোর দেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনী সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয় তা নিরসনের জন্য সব দলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্র্তারা বলেন, গেল মাসে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয় লন্ডনে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারী জাগরণে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে তাতে ব্রিটেন বিস্মিত। বিস্ময়কর এ অগ্রযাত্রার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাকে ব্রিটেন সম্মান এবং মর্যাদার চোখে দেখে। এ জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে সিলেটেও ভ্রমণের ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছেন।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ব্রিটিশ সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ডেভিড ক্যামেরন জানিয়েছেন ওই নির্বাচন এখন অতীত। ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। তারা ঢাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করতে আগ্রহী বলে জানান তিনি।
সাবেক কয়েক কূটনীতিক দায়িত্ব নিয়ে বলেন, আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর বক্তব্য থেকে বুঝে নিচ্ছি তাদের সুর নরম হচ্ছে। তাদের অনেকে বছরের শুরুতে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে এক প্রকার 'ইতিবাচক' মনোভাব দৃশ্যমান করলেও তা এখন ভিন্ন। তারা এখন বলছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে দুই দলকে একমত হতে হবে।
কেন এ নমনীয়তা জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, মনে রাখতে হবে পূর্বের দেশ বিশেষ করে জাপান ও চীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসছে। ফলে পশ্চিমারা বিষয়টি বুঝছে। আর মজিনা, ক্রুডেন, গিবসন তো সব সময় বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথাই বলছেন।
জানতে চাইলে সাবেক কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ চলবে নিজস্ব আইন বা নীতি নিয়ে। বিদেশিরা তা চাপিয়ে দিতে পারেন না। গেল ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কেউ বলতে পারে না কতদিন পর নির্বাচন হবে। আর গ্লোবাল যুগে কোনো দেশ গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না তা ভাবাও যায় না।
- See more at: http://www.manobkantha.com/2014/08/26/187844.html#sthash.bmWpDimT.dpufআওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার সাত মাসের মাথায় অনেকটা 'নমনীয়' 'পশ্চিমা সুর'। গত ৫ জানুয়ারির পর পশ্চিমা দেশগুলো নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করা নিয়ে এক ধরনের নীরবতা বা মন্তব্যহীন থাকলেও ধীরে ধীরে তার পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বক্তব্য থেকে এ 'নমনীয়তা' পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের গেল সাত মাসের কর্মকাণ্ড এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির কারণে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর এ নমনীয় সুর। এ ছাড়া গেল কয়েক মাসে পূর্বের দেশগুলো সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে এগিয়ে আসার বিষয়টিও 'নিয়ামক' হিসেবে কাজ করছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গেল কয়েক বছর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব দেখা দিয়ে তা পরে সংকটে পরিণত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ জানুয়ারি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় দেশে অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু রাজনৈতিক মহল থেকে বলা হয় 'এ সরকার একঘরে হয়ে যাবে, বিশ্বের কোনো দেশ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না।' এ বক্তব্যের পর সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর। এরই অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সব অনুবিভাগ সরকারের এ সিদ্ধান্তে গভীর মনোনিবেশ করে।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সঙ্গে ২১ আগস্ট সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন দেশটিতে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন। ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরে সাক্ষাতে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়নসহ নিকট প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। জবাবে বিসওয়াল ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
সূত্র মতে, এর আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসেও নিশা দেশাই বলেছিলেন, ওয়াশিংটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে। বিশেষ করে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবকে বলেছিলেন, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কম ভোট পড়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
এদিকে ১১ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত আলোচনায় কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সাত মাস পর সুশাসন, সরকারের কাজের মূল্যায়ন ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে বলেছেন, সহিংসতার অবসান হওয়ায় হাঁপ ছেড়ে বাঁচা গেছে।
হাইকমিশনার বলেন, এখন থেকে আমাদের প্রত্যাশা, কোনো একপর্যায়ে গিয়ে দুই দল আলোচনায় বসবে। তবে এই আলোচনা শুধু আগামী নির্বাচন নয়, পাঁচ বছর পর কোনো প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে, সেই ফ্রেমওয়ার্কও ঠিক করতে হবে।
বাংলাদেশ ও তার অর্থনীতির জন্য ঘন ঘন নির্বাচন অনুষ্ঠানকে প্রতিবন্ধক উল্লেখ করে ক্রুডেন বলেন, নির্বাচনের আয়োজন শুরু হলে প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়, লোকজন হতাহত হয়, লোকজন বাড়ির বাইরে বের হতে পারেন না আর সহিংসতা হয়। তাই আমরা চাই এ চক্র বন্ধ হোক।
কানাডার হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মাঝে আমরা আস্থার সংকট দেখতে পাই। আমরা চাই রাজনৈতিক এ সংস্কৃতির অবসান হোক এবং বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাক।
১৮ আগস্ট ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা অর্থনৈতিক খাতে বাংলাদেশের নজরকাড়া সাফল্যের প্রশংসা করে বলেছেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠবে।
এছাড়া ২২ আগস্ট চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বেশ উন্নতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে মজিনা আগামীতেও বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে আমেরিকা সরকার সাহায্য ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে জানান।
এর আগে ৫ আগস্ট সফররত যুদ্ধাপরাধবিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত স্টিফেন জে র্যাপ বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশংসা করে গেছেন।
মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে তিনি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড যুক্তরাষ্ট্রেও আছে, বাংলাদেশেও আছে। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশই মৃত্যুদণ্ড তুলে দিয়েছে।
র্যাপ বলেন, আমি পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশে আসলাম। যুদ্ধাপরাধের বিচার যেন আন্তর্জাতিক মানে হয় সে বিষয়টিকে লক্ষ্য রেখেই আমি সরকারের কাছে কিছু পরামর্শ রেখেছি।
৫ জুন ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন প্রেসক্লাবে ডিকাব আয়োজিত আলোচনা সভায় বলেন, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা জোরদার করার জন্য একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি পরবর্তী নির্বাচনে যাওয়ার আগে আস্থা সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ওপরও জোর দেন।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনী সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতার যে পরিবেশ সৃষ্টি হয় তা নিরসনের জন্য সব দলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্র্তারা বলেন, গেল মাসে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হয় লন্ডনে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে নারী জাগরণে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে তাতে ব্রিটেন বিস্মিত। বিস্ময়কর এ অগ্রযাত্রার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাকে ব্রিটেন সম্মান এবং মর্যাদার চোখে দেখে। এ জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে সিলেটেও ভ্রমণের ব্যাপারে উৎসাহ দেখিয়েছেন।
৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ব্রিটিশ সরকার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে ডেভিড ক্যামেরন জানিয়েছেন ওই নির্বাচন এখন অতীত। ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়। তারা ঢাকার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করতে আগ্রহী বলে জানান তিনি।
সাবেক কয়েক কূটনীতিক দায়িত্ব নিয়ে বলেন, আমরা পশ্চিমা দেশগুলোর বক্তব্য থেকে বুঝে নিচ্ছি তাদের সুর নরম হচ্ছে। তাদের অনেকে বছরের শুরুতে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে এক প্রকার 'ইতিবাচক' মনোভাব দৃশ্যমান করলেও তা এখন ভিন্ন। তারা এখন বলছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে দুই দলকে একমত হতে হবে।
কেন এ নমনীয়তা জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক এক কূটনীতিক বলেন, মনে রাখতে হবে পূর্বের দেশ বিশেষ করে জাপান ও চীন সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসছে। ফলে পশ্চিমারা বিষয়টি বুঝছে। আর মজিনা, ক্রুডেন, গিবসন তো সব সময় বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথাই বলছেন।
জানতে চাইলে সাবেক কূটনীতিক ওয়ালিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ চলবে নিজস্ব আইন বা নীতি নিয়ে। বিদেশিরা তা চাপিয়ে দিতে পারেন না। গেল ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কেউ বলতে পারে না কতদিন পর নির্বাচন হবে। আর গ্লোবাল যুগে কোনো দেশ গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না তা ভাবাও যায় না।
__._,_.___