বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২৬ ভাদ্র ১৪২১ফারুকী হত্যাকাণ্ড তদন্তে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর খোঁজ পেয়েছে গোয়েন্দারা
সুমি খান ॥ উগ্র ধর্মান্ধ গোপন খুনীদের সন্ধানে মাঠে গোয়েন্দা দল। সুপ্রীমকোর্ট জামে মসজিদের খতিব এবং টেলিভিশন উপস্থাপক ফারুকী হত্যাকাণ্ড তদন্তে নেমে উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। মতাদর্শগতভাবে ভিন্ন হবার কারণে সুন্নী মতাবলম্বী বা শান্তিকামী মুসলমানদের 'বেদাত' আখ্যা দিয়ে নির্দ্বিধায় জবাই করে হত্যা করছে এই উগ্র ধর্মান্ধরা। মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) নাসিরউদ্দিন খান জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, কিছুদিন থেকে জবাই করে হত্যার ঘটনা ঘটছে। ঘাতকদের অনুসন্ধানে নেমেছেন আমাদের গোয়েন্দারা। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃতদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন- জামায়াত, জেএমবি, হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহীদ, হেফাজতে ইসলামসহ বেশ কিছু জঙ্গী উগ্রপন্থী সংগঠন তরুণদের বিভ্রান্ত করে ধর্মীয় উন্মাদনায় উন্মত্ত করে তুলছে। এদের ক্ষমতার মূল উৎস আল কায়েদা। এ প্রসঙ্গে আল জাওয়াহিরির সাম্প্রতিক ভিডিওবার্তা তাঁদের সন্দেহের সঙ্গে মিলে যায় বলে মনে করছেন গোয়েন্দা বিভাগের জঙ্গী বিশেষজ্ঞ নাসিরউদ্দিন খান। এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত-বিএনপি শাসনামলে হত্যা ও বোমাবাজিতে অনেক বেশি সক্রিয় ছিল জঙ্গী গোষ্ঠীগুলো। সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে এই উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী তৎপর হয় উল্লেখ করে নাসিরউদ্দিন খান বলেন, গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই উগ্রবাদী ধর্মান্ধ জঙ্গীরা জানায়- 'সরকার ঘুমে থাকলে আমরা জাগি, সরকার জাগলে আমরা ঘুমাই।' সরকারের উদাসীনতাকে ইঙ্গিত করে জঙ্গীরা এ ধরনের মন্তব্য করে বলে জানান নাসিরউদ্দিন খান।
গত ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় ফারুকীকে জবাই করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলাটি তদন্ত করছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সুপ্রীমকোর্ট জামে মসজিদের খতিব ও বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যার ১৩ দিন পরও মূল হত্যাকারী শনাক্ত করতে পারেনি গোয়েন্দারা। ফারুকী হত্যার ঘটনায় জামায়াত নেতা এবং টিভি উপস্থাপক তারেক মনোয়ারসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার সিএমএম আদালতে বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য ফ্রন্টের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হুসাইন তুষার মামলাটি দায়ের করেন। ফারুকী হত্যায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
ফারুকীর পরিবারের দাবি উগ্রবাদীরাই হত্যা করেছে তাকে। নুরুল ইসলাম ফরুকীর ছেলে আহাম্মেদ রেজা ফারুকীর দাবি, তাঁর বাবার ধর্মীয় মতাদর্শের বিরোধী উগ্রবাদীরাই পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। নিজ বাসায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, আমাদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে কারও বিরোধ নেই কিংবা লেনদেন নিয়ে কারও সঙ্গে কোন শত্রুতা ছিল না। 'পারিবারিক কলহ বা ব্যবসায়িক কারণে তিনি খুন হননি, ধর্মীয় মতাদর্শ বিরোধীরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।' ফারুকীর আরেক পুত্র ফয়সাল ফারুকী বলেছেন, শাইখ নুরুল ইসলাম ফারুকী হিযবুত তাওহীদ, জামায়াতে ইসলামী ও হেফাজতে ইসলামের বিরোধিতা করতেন। তিনি হযরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর শানে দাঁড়িয়ে মিলাদ ও মাজারের পক্ষে মতপোষণ করতেন। একই সঙ্গে তিনি সুন্নীভিত্তিক সংগঠন আহ্লে সুন্নাতওয়াল জামাতের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ইসলামিক ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। এ কারণেই তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। ফয়সাল আরও জানান, ২০১৩ সালের শুরুতে নুরুল ইসলাম ফারুকীকে ফোনে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে- 'জুমা পড়ানোর আগে তুই কাফনের কাপড় নিয়ে তৈরি থাকিস।' গত এপ্রিলে টাঙ্গাইলে একটি ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিয়ে ফেরার পথে তাঁর গাড়িতে হামলা হয় বলে জানিয়েছেন ফয়সল ফারুকী।
মামলার প্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেন এবং বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য শেরেবাংলা নগর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বিভিন্ন চ্যানেলের ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপকরা 'এ্যাসোসিয়েশন অব ইসলামী পারসোনালিটি' নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার জন্য গত ২২ আগস্ট ঢাকা ট্রেড সেন্টারে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে নুরুল ইসলাম ফারুকীকে জামায়াত নেতা তারেক মনোয়ারী হুমকি দিয়েছিলেন। অন্য আসামিরাও তারেক মনোয়ারীর সঙ্গে একসঙ্গে ফারুকীকে হুমকি দেন। এ ঘটনা পরিবারের সদস্যরা জানতেন। এ কারণে বাদীর বিশ্বাস, আসামিরা পরিকল্পিতভাবে ফারুকীকে হত্যা করেছে। শেরেবাংলা নগর থানায় ফারুকীর ছেলের দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন- তারেক মনোয়ার, কামাল উদ্দিন জাফরী, কাজী ইব্রাহীম, আরকানুল্লাহ হারুনী, খালেদ সাইফুল্লাহ বখশী, মুখতার আহমদ। আসামিরা সবাই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের উপস্থাপক ও আলোচক। জবানবন্দী শুনে মামলার তদন্তের নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর।
ব্লগার রাজীব হত্যাকা-, বুয়েটছাত্র দীপ হত্যাকা-সহ বেশকিছু হত্যাকা-ের তদন্তে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত হয়েছে জামায়াত, জেএমবি, হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহীদ, হেফাজতে ইসলামসহ বেশকিছু জঙ্গী উগ্রপন্থী সংগঠন বড় ধরনের নাশকতা করার জন্য তৎপর। এদের তৎপরতার নেপথ্য শক্তি হিসেবে কাজ করছে আল কায়েদার উন্মাদনামূলক তাড়না।
বুয়েটছাত্র দীপকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিল আরেক বুয়েটছাত্র মেজবাহ উদ্দিন। বুয়েটের মেধাবীছাত্র মেজবাহ উগ্র ধর্মান্ধতায় উন্মত্ত হয়ে নিজেই চাপাতি কিনে দীপের মতাদর্শগত ভিন্নতাকে 'বেদাত' মনে করে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে আদালতে নির্দ্বিধায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। মেজবাহর বিরুদ্ধে মহানগর গোয়েন্দা শাখা চার্জশীট দিয়েছে বলে জানান মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) নাসিরউদ্দিন খান। একইভাবে রাজীবের ঘাতকরাও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীছাত্র। তিনি বলেন, 'এ ধরনের সব ঘটনা তদন্ত করে জানা গেছে, আল কায়েদা স্টাইলে তারা টার্গেট করে এবং হত্যাকা- ঘটায়। পাশাপাশি কয়েকটি গ্রুপ হত্যাকা-ে নামলেও কেউ কারও কথা জানতে পারে না, তাদের নির্দেশদাতা ছাড়া। একে তারা বলে 'কাট-আউট সিস্টেম'। তবে এ ব্যাপারে গোয়েন্দাদের সমন্বিত এবং পরিকল্পিত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন জঙ্গী বিশেষজ্ঞ এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২৬ ভাদ্র ১৪২১
Related:
বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ২০ ভাদ্র ১৪২১
ফারুকী হত্যাকা-পরিকল্পিত ॥ পরিবারের দাবি
সন্দেহের তীর উগ্রপন্থী দুই সংগঠনের দিকে
সাজ্জাদ মাহমুদ খান
মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকান্ডে ব্যক্তিগত কিংবা ব্যবসায়িক বিরোধ খুঁজে পাননি তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মতাদর্শগত বিরোধকে সামনে রেখে তদন্ত চলছে। যারা ফারুকীর মতাদর্শ নিয়ে অনলাইনে সরব ছিল তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এই তালিকায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও আনসারুস সুন্নাহ নামে দুটি উগ্রপন্থী দলের নাম উঠে এসেছে। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত হত্যাকা-েসরাসরি সংশ্লিষ্ট কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।- See more at:
http://www.alokitobangladesh.com/last-page/2014/09/03/94188 যে কারণে মাওঃ নূরুল ইসলাম ফারুকীকে জীবন দিতে হলো
5 days ago - বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, চ্যানেল আই'র কাফেলা অনুষ্ঠানের উপস্থাপক, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওঃ নুরুল ইসলাম ফারুকীকেগতকাল বুধবার রাতে তার বাসায় ঢুকে একদল দুর্বৃত্ত জবাই করে হত্যা করে। প্রখ্যাত এই আলেমের হত্যাকাণ্ডের খবরে চাঁদপুর জেলার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে ... 1 day ago - বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম, সুপ্রীম কোর্ট জামে মসজিদের খতিব, চ্যানেল আইর জনপ্রিয় ইসলামী অনুষ্ঠান 'কাফেলা' ও 'সত্যের সন্ধানে'সহ আরো বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ও বিজ্ঞ আলোচক, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওঃ শায়খ নূরুল ইসলাম ফারুকীকে ... মাওঃ নূরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যার প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল চাঁদপুর রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল.
|
|