মতিন- আলাউদ্দিনের গৌরবের(!) দিনগুলো
মতিন-আলাইদ্দিন-টিপু বিশ্বাসের কাহিনী
১৯৭১ সালে আমার বয়স ১৪ বছর। আমার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলা। যার ওপারে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের করিম পুর থানা।অমাঝে একটা ছোট্ট নদী। আমার থানায় এমন বাড়ি আছে যার অর্ধেক বাংলাদেশ আর অর্ধেক ভারতের সীমান্তের ওপারে।আমার বড় ভাই মরহুম আব্দুস সাত্তার তখন জামসেদপুর ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটিঙের কাজ করতেন, কেউ বলতেন ট্রেইনার। যাই হোক আমি ভারতে গিয়েও শারিরিক গঠন আর বয়সের কারণে মুক্তিযোদ্ধা হ'তে পারিনি। আমার থেকে ছোট কিন্তু গা গতরে বড় অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা হতে পারলেও আমি পারলাম না। কিন্তু আমি নাছোড় বান্দা আমাকে মুক্তিযোদ্ধা হতেই হবে, তা যে করেই হোক। এর মাঝে আমার আরেক ভাই (আপন চাচাতো ভাই) আবু সিদ্দিক মুজিব বাহিনীর দৌলতপুরের থানা কমান্ডার হয়ে এলাকায় ঢুকলেন। তাঁর কাছে জোর করেই ট্রেইনিং নিলাম।
কয়েক দিনের মাঝেই কিশোর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার কদর বেড়ে গেল। চানমারী করার পরে আমি মাইন বসানো আর রেকি ম্যানের কাজ পেলাম। দু'টো যুদ্ধেও আমি মেশিনগানের সাথে থেকে যুদ্ধ করেছি। আমি সেটা বলার জন্য কলম ধরিনি আজ। আমার উদ্দেশ্য ১৯৭১ সালে মতিন-আলাইদ্দিন-টিপু বিশ্বাসের কাহিনী বলা।
কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার পূর্ব দিকে ভেড়ামারা উপজেলা। আর ভেড়ামারার পূর্ব দিকে পদ্মা-গড়াই নদীর পূর্বপাড় পাবনা জেলার সীমান্ত। ভারত থেকে আমাদের উপজেলা হয়ে (তখন থানা) ভেড়ামারার পেরিয়ে নৌকায় গড়াই নদী পার হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাবনা হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেতেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের বর্তমান ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এম পি হানিফ সাহেবের মেজ ভাই সাবেক ভারপ্রাপ্ত সংস্থাপন সচিব ও মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার জনাব রাশেদুল সাহেব আমাদের উপজেলার আমার নিজ ইউনিয়েন আড়িয়ার কালিদাসপুরের মোশাররফ চেয়ারম্যনের বাড়িতে শেল্টারে থাকতেন। তাঁর মাধ্যমে আমরা খবর পেলাম যে, পাবানার চরে মুক্তিযোদ্ধাদের মেরে অস্ত্র আর গুলি সংগ্রহ করছে মতিন-আলাইদ্দিন-টিপু বিশ্বাসের লোকেরা। একটা গান (রাইফেল বা অন্য যে কোন অস্ত্র) ১০০(এক শত) টাকা আর ১টা গুলি ১ (এক) টাকা। মতিন-আলাইদ্দিন-টিপু বিশ্বাস কিছু ডাকাত টাইপের লোক নিয়োগ করে এটা করছে। আমারা খবর নিশ্চিত হয়ার পরে আর ভারত থেকে আসা নতুন কোন মুক্তিযোদ্ধা দলকে একা ছাড়িনি। দল বেঁধে গিয়ে ওদের এগিয়ে দিয়ে পাবনার চর পার করে দিয়ে এসেছি। আমরা ভেরামারা পর্যন্ত যেতাম। ভেড়ামারার মুক্তিযোদ্ধারা নদী পার করে পাবনার মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে দিয়ে আসতেন। এই ভাবে আমরা ১৯৭১ সালে বহু মুক্তিযোদ্ধার প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হই। কিন্তু তার আগেই মতিন-আলাইদ্দিন-টিপু বিশ্বাসেরা বহু মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা ক'রে রাইফেলসহ অন্য অস্ত্র আর গুলি সংগ্রহ করে নিয়েছিল।
আমার কৈশোরের সেই স্মৃতি আমি আজো ভুলতে পারিনি, ভুলবেনা আমার বংশ পরম্পরা।
সায়েদুল আরেফিন
__._,_.___