Banner Advertiser

Monday, November 24, 2014

[mukto-mona] ৭ নভেম্বরের সিপাহি বিপ্লব: সত্য ও কল্পনা : হাসান ফেরদৌস



খোলাচোখে

৭ নভেম্বরের সিপাহি বিপ্লব: সত্য ও কল্পনা

হাসান ফেরদৌস | আপডেট:  | প্রিন্ট সংস্করণ

জিয়াউর রহমান, tকর্নেল তাহেরআপনারা হয়তো লক্ষ করেছেন ৭ নভেম্বরের 'সিপাহি বিপ্লব'-এর স্মরণে এ বছর দেশে ও বিদেশে যত অনুষ্ঠান হয়েছে, তার প্রায় প্রতিটির পেছনে ছিল দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এই নিউইয়র্কেই আধা ডজনের মতো অনুষ্ঠান হয়েছে, যার সবগুলোর আয়োজক বিএনপি বা তার কোনো অঙ্গসংগঠন। 'নন-পার্টিজান' নাম দিয়ে একটি সুধী সমাবেশের আয়োজন হয়, তার পেছনেও বিএনপি-পছন্দ সুধীরা।
উদ্যাপনের ঘটা দেখে মনে হতে পারে সিপাহি বিপ্লব নামের ঘটনাটির পেছনে আসল শক্তি ছিল এই রাজনৈতিক দল, যদিও তখন পর্যন্ত সে কাগজে-কলমে আত্মপ্রকাশ করেনি। রাজনৈতিক বক্তব্যের ডামাডোলে এ কথাও চাপা পড়ে যায় যে ৭ নভেম্বরের ঘটনাক্রমে একমাত্র লাভ যাঁর হয়েছিল, তিনি জেনারেল জিয়াউর রহমান, যাঁর হাত দিয়েই পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠা। আর এই তথাকথিত সিপাহি বিপ্লবের মন্ত্রদাতা, তার প্রাণপুরুষ কর্নেল তাহের খুন হয়েছিলেন সেই জিয়ার হাতেই। আমার মাথায় ঢোকে না, ঠিক কী কারণে বিএনপি ৭ নভেম্বরকে ঘটা করে উদ্যাপনে এত সময় ও অর্থ ব্যয় করে। বক্তৃতা করে কি রক্তাক্ত খুনের সেই ঘটনা চাপা দেওয়া সম্ভব?


৭ নভেম্বরের ঘটনাকে যাঁরা বিপ্লব বলেন, তাঁরা সম্ভবত বিপ্লব কথাটার অর্থ সম্যক উপলব্ধি করেন না। যদি অভিধান অনুসরণ করে তার অর্থ খুঁজি, তো ওয়েবস্টার অনুসারে বিপ্লবের দুই অর্থ: সহিংস উপায়ে এক সরকার উৎখাত করে অন্য সরকার গঠন এবং এমন এক পরিস্থিতির সূচনা, যার ফলে দেশের মানুষের জীবন ও কর্মক্ষেত্রে আকস্মিক কিন্তু চূড়ান্ত পরিবর্তন ঘটে। বস্তুত উনিশ ও বিশ শতকের যে কটি সফল বিপ্লবের কথা আমরা জানি, তাতে এ দুই উপাদানই বর্তমান। অন্য কথায়, বিপ্লবের ফলে এক পুরোনো ধাঁচের সরকারের পতন হয়ে সম্পূর্ণ নতুন এক সরকারের পত্তন এবং এর ফলে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়, তার প্রভাবে সে দেশের মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি সাংস্কৃতিক জীবনে আমূল পরিবর্তন প্রতিষ্ঠা। রাতারাতি হয়তো পরিবর্তন অর্জিত হয় না, কিন্তু যে বিপ্লবী সরকার ক্ষমতায় আসীন হয়, সমাজের আগাপাছতলা বদলে ফেলার এক নিরন্তর সংগ্রামের সূচনা হয় তারই হাতে। তর্কে না গিয়ে শুধু উদাহরণ হিসেবে বিবেচনার জন্য আমরা ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লব ও ১৯৪৯ সালের চীনা বিপ্লবের কথা মাথায় রাখতে পারি।
বলা বাহুল্য, ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের ফলে এ দুই উদ্দেশ্যের কোনোটাই অর্জিত হয়নি। বরং উল্টো এর ফলে বাংলাদেশ দীর্ঘকালের জন্য এক সামরিক আমলাতন্ত্রের শিকার হয় এবং দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রায় স্থায়ীভাবে সমাজের সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল অংশের হাতে ন্যস্ত হয়। মার্কসবাদীরা, যাঁরা ৭ নভেম্বরের 'বিপ্লবের' পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরা সম্ভবত এই শ্রেণিকে 'কম্প্রাদোর বুর্জোয়া' নামে অভিহিত করবেন। এই পর্তুগিজ শব্দটির অর্থ বণিকশ্রেণি, যারা একজনের কাছ থেকে কম দামে জিনিস কিনে বেশি দামে অন্যের কাছে বেচে তা থেকে মুনাফা বানায়। বাংলায় কেউ কেউ কম্প্রাদোরকে মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি বলেও অভিহিত করে থাকেন। মোটের ওপর, ৭ নভেম্বরের ঘটনার ফলে ক্ষমতার কেন্দ্রে যাঁরা নিজেদের অবস্থান সুসংহত করেন, তাঁদের চরিত্রটি মাথায় রাখলেই কারা এই কম্প্রাদোর, তা বোঝা কঠিন হবে না।


৭ নভেম্বরের ঘটনাকে আমি বিপ্লব বলতে নারাজ। বিপ্লবের প্রথম শর্তই হলো ব্যাপক নাগরিক অংশগ্রহণ। একটি বিপ্লবী দল ও বৈপ্লবিক তত্ত্বের ভিত্তিতে, ব্যাপক নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সফল যে গণ-অভ্যুত্থান, কেবল তাকেই বিপ্লব নামে অভিহিত করা যায়। এই বৈপ্লবিক বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেকে রুশ বিপ্লবকে 'বিপ্লব' না বলে তাকে পেত্রোগাদভিত্তিক একটি সফল সামরিক অভ্যুথান (বা 'পুচ') হিসেবে প্রমাণে আগ্রহী। এ কথা ঠিক, পেদ্রোগাদে সেনাসদস্যদের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অস্থায়ী রুশ সরকারের পতন ও জার দ্বিতীয় নিকোলাসের সপরিবারে নৃশংস হত্যার মাধ্যমে বলশেভিক দল ক্ষমতা দখল করে এবং রুশ বিপ্লবের সূচনা হয়। কিন্তু বলশেভিক পার্টির হাতে এই বিপ্লবের ভিত্তি অনেক আগে থেকেই রচিত হয়েছিল—শুধু নগরে নয়, সারা দেশে। পেত্রোগাদ পতনের প্রায় একই সময়ে আগুনের মতো সেই বিপ্লব সারা রাশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে।
৭ নভেম্বরে বাংলাদেশে তেমন কিছুই ঘটেনি। বস্তুত এই বিপ্লবের পেছনে যাঁরা ছিলেন—অর্থাৎ কর্নেল তাহের ও তৎকালীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)—দেশব্যাপী গণবিদ্রোহের বদলে শুধু ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান শহরে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেছিলেন। ডাচ সাংবাদিক পিটার কাস্টার্স, যিনি ১৯৭৫-এ ঢাকায় কর্নেল তাহেরের নিকটবর্তী একজন ছিলেন, তাঁর ব্যাখ্যায়, বিপ্লব নয়, তাহের ও তাঁর সতীর্থরা 'সশস্ত্র বিদ্রোহের রণকৌশল' (কাস্টার্সের ভাষায়, 'ইন্সারেকশনারি মিলিটারি স্ট্র্যাটেজি') অনুসরণের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করেন। 

গণবিপ্লবের লক্ষ্যে জাসদ একটি 'গণবাহিনী' গঠন করেছিল বটে, কিন্তু সেটি বরাবরই ছিল একটি গুপ্ত সংগঠন, ৭ নভেম্বরের বিদ্রোহে তার ভূমিকা বড়জোর পরোক্ষ। অনেক বেশি প্রত্যক্ষ ভূমিকায় ছিল বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা, সেনা সদস্যদের নিয়ে গঠিত এই 'বিপ্লবী পরিষদ' ছিল তাহেরের জন্য ক্ষমতা দখলের চাবিকাঠি। কাস্টার্স লিখেছেন, তাহের বিভিন্ন গোপন বৈঠকে—যে বৈঠকে কাস্টার্স উপস্থিত ছিলেন—দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষয়ী কোনো আন্দোলন বা সংঘর্ষের বিপক্ষে মত রাখেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, শুধু সেনাসদস্যদের সমর্থনেই ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যাঁরা ক্ষমতা দখল করেছিলেন, তাঁদের উৎখাত ও ক্ষমতা দখল করা সম্ভব। তাহেরের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় কাস্টার্স লিখেছেন, 'দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী কোনো বিপ্লবের আদৌ প্রয়োজন ছিল না, কারণ (সিপাহি বিদ্রোহের মাধ্যমে) রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পথ সংক্ষিপ্ত করা সম্ভব ছিল।'


এই ব্যাখ্যা থেকে স্পষ্ট, ৭ নভেম্বরের যাঁরা পরিকল্পনাকারী, তাঁদের লক্ষ্য কোনো বিপ্লব ছিল না, ছিল ক্ষমতা দখল। সিপাহি বিদ্রোহ ছিল ক্ষমতা দখলের 'শর্টকাট'। বস্তুত ১৫ আগস্ট যে খুনে কর্নেল ও মেজররা ক্ষমতা দখল করেন, তাঁরাও নিজেদের ক্ষমতা দখলকে বিপ্লব নামে অভিহিত করেছিলেন—গুণগত অর্থে তার সঙ্গে ৭ নভেম্বরের ক্ষমতা দখল পরিকল্পনার কোনো মৌলিক প্রভেদ ছিল না।


এ কথা আমরা জানি, কর্নেল তাহেরকে নিঃস্বার্থ বিপ্লবী হিসেবে দেখার একটি প্রবণতা আমাদের দেশে রয়েছে। কেউ কেউ তাঁর ভূমিকা চে গুয়েভারার সঙ্গে তুলনা করতেও দ্বিধা করেন না। নাগরিক কল্পনায় এই চিত্রটি এখন এত পোক্ত যে আমরা তাহেরকে নিয়ে কল্পকাহিনি লেখার উদাহরণও দেখেছি। এই 'রোমান্টিক' সাহিত্যচর্চাকে আমি এককথায় বাতিল করতে চাই না। তাহের বস্তুতই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, দেশপ্রেমিক, মাওবাদী চেতনায় উজ্জীবিত একজন শহুরে ('আরবান') বিপ্লবী। কিন্তু এ কথাও ভোলা উচিত নয়, নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের লেক্ষ্য তিনি যে রণকৌশল অনুসরণ করেন, তা ছিল ষড়যন্ত্রমূলক ও সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। সাম্প্রতিক সময়ে উন্মোচিত বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে আমরা জানি, খালেদ মোশাররফের ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর তাহের জাসদের নীতিমালার বিরুদ্ধে গিয়ে দেশব্যাপী সামরিক শাসন জারির পক্ষে মত রাখেন। আমরা এখন এ-ও জানি, তাহের ও তাঁর বন্ধুরা ১৫ আগস্টের সামরিক অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। সেই অভ্যুত্থানে তিনি অংশ নেননি, কারণ তাঁর বিবেচনায় এটি ছিল সাম্রাজ্যবাদ-অনুপ্রাণিত। কিন্তু সেই অভ্যুত্থানের কোনো বাহ্যিক প্রতিবাদ তিনি করেননি। মহিউদ্দিন আহমদ তাঁর সম্প্রতি প্রকাশিত গ্রন্থ জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতিতে যে তথ্য দিয়েছেন, তা যদি সত্য হয়, তাহলে আমরা অনায়াসে বলতে পারি, তাহের ও জাসদের অনুসারীরা বঙ্গবন্ধু হত্যায় খুশিই হয়েছিলেন। ১৫ আগস্টের ভোরে, যখন মেজর (অব.) ডালিম বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘোষণার জন্য ঢাকার রেডিও অফিসে যান, সেখানে তাহের ছিলেন। পিটার কাস্টার্সও ১৫ আগস্ট ঢাকা রেডিও অফিসে তাহেরকে খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে বচসায় লিপ্ত হতে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।
৭ নভেম্বরের যে দুঃখজনক ইতিহাস, তার শুরু অভ্যুথানচেষ্টার মধ্যে সীমিত হলেও, এর শেষটি ছিল গভীর বেদনার ও বিশ্বাসঘাতকতার। তাহের ভেবেছিলেন, জেনারেল জিয়ার মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা দখল করবেন এবং তাঁর বৈপ্লবিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। ভাগ্যের পরিহাস, সেই জিয়ার হাতেই তিনি নিহত হন। ঘাতক গুলিটি জিয়া নিজ হাতে নিক্ষেপ করেননি বটে, কিন্তু এই খুনের যে ইতিহাস আমরা এখন জানি, তা থেকে স্পষ্ট, এই জেনারেলের হাত এখনো এক-পা হারানো সেই ক্রাচের কর্নেলের রক্তে রঞ্জিত।
হাসান ফেরদৌস: প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।

http://www.prothom-alo.com/opinion/article/379852/





__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___