মো. শামীম রিজভী, দ্য রিপোর্ট : ওয়াসার পরিত্যক্ত পানির পাম্পের পাইপে পড়ে যাওয়ার সাড়ে ২৩ ঘণ্টা পর শিশু
জিহাদকে মৃত উদ্ধার করার ঘটনায় কর্তৃপক্ষের 'অদক্ষতা' আর 'অবহেলা'কে দায়ী করছেন স্থানীয়রা। বিলম্বে জিহাদকে
উদ্ধারের প্রতিবাদে শাহজাহানপুরে জুতা মিছিল ও ওয়াসার স্থাপনা ভাঙচুর এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।
জিহাদের বাবা নাসির উদ্দিনের অভিযোগ একই। তিনি বলেন, 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বিষয়টি গুজব বলার পরেই উদ্ধার কাজে
ধীরগতি দেখা দেয়। আমরা বারবার বলার পরও উদ্ধারকারী ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসন আমাদের কথা বিশ্বাস করেনি।
তারা মনোযোগী হলে অনেক আগেই জিহাদকে উদ্ধার করা সম্ভব হতো।'
শাহজাহানপুরের স্থানীয় বাসিন্দা মো. হাফিজুদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, 'শুধু লোকবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকলেই
হয় না, সেগুলো পরিচালনা করার জন্য অভিজ্ঞ লোক প্রয়োজন। মাস্টার্স পাশ করলেই কেউ কোনো কিছু শিখতে পারে না,
প্রয়োজন ট্রেনিং। আমাদের কোনো সেক্টরেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং তা চালানোর জন্য উপযুক্ত লোকবল নেই। দুর্ঘটনা
মোকাবিলার জন্য এদেশে প্রয়োজনীয় তেমন কিছু নেই।'
প্রশাসনিক কর্মকর্তারা হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন এমন অভিযোগ করে গৃহিনী রোকেয়া বেগম দ্য রিপোর্টকে বলেন, 'এখন
কীভাবে বাচ্চাটির মৃতদেহ পাওয়া গেল? অথচ তারা অনেক আগে থেকেই বলছিল পাইপটির ভেতর কোনো বাচ্চা নেই।
কেন তারা এ ভুল তথ্য দিল?'
শিশু জিহাদ যখন পাইপে পড়ে যাওয়ার পরপরই তাকে উদ্ধার করতে যান মো. জাহাঙ্গীর।
তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, 'প্রথমে জিহাদ যখন আমাদের সঙ্গে কথা বলে তখন সে ময়লার স্তরটির উপরে ছিল।
ফায়ার সার্ভিস যখন দড়ি ফেলে তখন জিহাদ তা ধরে ১০০ থেকে ১৫০ ফুট উপরে ওঠে আবার নিচে পড়ে যায়।
এই ঠাণ্ডার মধ্যে আমরাই তো খালি হাতে বেশিক্ষণ দড়ি ধরে রাখতে পারব না। আর ওই বাচ্চা কীভাবে তা ধরে
রাখবে? এভাবে চার বার সে দড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে পড়ে যায়। মনে হয় প্রথম তিনবারে ময়লার স্তরটি ভেঙে যায়
এবং চার বারের সময় সে স্তরটি ভেদ করে নিচে চলে যায়। তাই পরে ক্যামেরায় তাকে দেখা যায়নি।'
জিহাদের মৃতদেহ উদ্ধারকারীর একজন শাহ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুন। দ্য রিপোর্টকে তিনি বলেন, 'ভেতরের
চিকন পাইপটি উঠানোর আগে বড় পাইপটির ভেতর ক্যামেরা ঢুকিয়ে জিহাদের অবস্থান আগে নিশ্চিত করা উচিৎ
ছিল। কারণ জিহাদ সরাসরি ২৪৫ ফুট নিচে গিয়ে পড়েনি। সে পাইপের মাঝে বেঁধে ছিল। যখন পাইপটি উঠানো
হয় তখন সে তা আঁকরে ছিল। কিন্তু পাইপ ধরে রাখতে না পারায় সে স্লিপ কেটে একেবারে নিচে চলে যায়।'
সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্ধারের পর জিহাদের হাত ও পায়ের চামড়া ছিলে গেছে। পাইপে ঘষায় যে তার হাত-পা
ছিলেছে তা স্পষ্ট। তার পিঠে পুরানো ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। জিয়াদকে উদ্ধারের আগে প্রশাসনিক তৎপরতা কমে
গিয়েছিল।
স্থানীয় অন্য এক বাসিন্দা জাহিদ মিয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, 'গতকাল রাতে কেন বশির আহমেদকে নামতে দেওয়া
হল না। সে অনায়াসে ২৪৫ ফুট নিচে যেতে পারত। তখন যদি সে নিচে যেত তাহলে জিহাদকে বাঁচানো সম্ভব হত।
জুস ও বিস্কুট খেয়েছে এমন কথা বলার পর কেন ফায়ার সার্ভিস আজ বলল পাইপের ভেতর কোনো শিশু নেই?'
এ সব প্রশ্নে উত্তর ফায়ার সার্ভিসের কাছেও নেই। উদ্ধারের সময় ফায়ার সার্ভিস, র্যাব, পুলিশ সবাই সহযোগিতা
করলেও তাদের 'অদক্ষতা' ও 'অবহেলা'র জন্য জিয়াদের মৃত্যু হয়েছে এ অভিযোগ সকলের।
এমন অভিযোগের উত্তরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হালিম দ্য রিপোর্টকে বলেন,
'উৎসুক জনতা তো অনেক ধরনের কথাই বলেন। প্রথমে জিয়াদের অবস্থান জানা গেলেও পড়ে শনাক্ত করা যাচ্ছিল না যে
সে কোথায় আছে? বুয়েট, ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিসের অভিযানেও বাচ্চাটির অবস্থান সে সময় নিশ্চিত করা যায়নি।'
উল্লেখ্য, ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করার আধঘণ্টার মাথায় স্থানীয়রা উদ্ধার করেন শিশু
জিহাদের লাশ। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির পরিত্যক্ত পাইপ থেকেই নিজেদের
তৈরি করা বর্শার মতো এ্যাঙ্গেল দিয়ে জিহাদকে টেনে তোলেন স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা। এর পর পরই তাকে এ্যাম্বুলেন্সে
করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াজ মোর্শেদ পরীক্ষা-নিরীক্ষার
ও ইসিজি করার পর জিহাদকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ডা. রিয়াজ মোর্শেদ সাংবাদিকদের জানান, উদ্ধারের বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই মারা যায় জিহাদ। তার শরীরে সামান্য
জখমের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে বলে তিনি জানান।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে পরিত্যক্ত ওই পাইপের মধ্যে পড়ে যায় সাড়ে তিন
বছর বয়েসী শিশু জিহাদ। এর ২৩ ঘণ্টা পর পরিত্যক্ত পাইপ থেকেই উদ্ধার করা হয় জিহাদের লাশ।
(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/একে/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪)
সাধারণের চেষ্টায় মৃত জিহাদ উদ্ধার
সেই পাইপেই পাওয়া
গেল মৃত জিহাদকে
পরিত্যক্ত যে পাইপে জিহাদের থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি দাবি করে উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস, তার ভেতর থেকেই স্থানীয়দের তৎপরতায় বের করে আনা হল চার বছরের শিশুটিকে।
http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article901645.bdnews
'জিহাদকে না পেলে বিপদ ছিল'
উদ্ধার তৎপরতার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত সাড়া দিয়েছিল শিশু জিহাদ। কথা বলেছে বেশ কয়বার, চারবার টেনে ধরেছিল রশি।
- শিশু পড়ে যাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ 'গুজব'
- জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশু জিয়াদের বাবা আটক
- উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা দিয়েও পাইপের ভিতরে দেখা যায়নি জিয়াদকে
- জিহাদকে উদ্ধারে বশিরকে অনুমতি দেয়নি ফায়ার সার্ভিস
- 'আমি রশি ঠিকমতো ধরতে পারছি না'
- জিহাদকে উদ্ধার করেছে আইকনের কর্মীরা
- শিশু জিহাদের বাবা নিখোঁজ!নিজস্ব প্রতিবেদক, সংবাদ২৪.নেট, ঢাকা | আপডেট: ২০১৪-১২-২৭ ১৮:২৮:৩৬
__._,_.___