আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। বাংলাদেশীদের জন্য বিশেষ গৌরবের দিন। একাত্তরের এই দিনেই বাংলাদেশী নিজস্ব পরিচয়ে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পায় বাংলাদেশ নামের নতুন একটি দেশ। স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে যুদ্ধের শুরু হয়েছিল, সেই যুদ্ধের সমাপ্তিতে আজকের এই দিনে পাকিস্তানের শৃঙ্খল ভেঙে বাংলাদেশ নতুন পরিচয়ে পরিচিত হয় বিশ্বের দরবারে। এই বিজয় অর্জনের পেছনে রয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ। এই অর্জনের জন্য সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে চার লাখ মা-বোনকে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের পবিত্র আরওয়াহ মুবারকে আমরা বকশাই লক্ষ কোটি ছওয়াব।
স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে চার দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ এক নতুন যুগপর্বের সামনে দাঁড়িয়ে। আর এই নতুন যুগের সূচনা করছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কালে দেশটির অস্তিত্বের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল, মুক্তিসংগ্রামের পথে পথে কাঁটা বিছিয়েছিল- তাদের বিচারের দাবি স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে এ পর্যন্ত বহুবার বহুভাবে উচ্চারিত ও পুনরুচ্চারিত হয়েছে; কিন্তু বিচারের বাণী বরাবরই নিভৃতে কেঁদেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি, উল্টো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা বিএনপি-জাতীয় পার্টির সহযোগী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছে; যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে উড়েছে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত লাল-সবুজ পতাকা।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২০০৮-এর নির্বাচনী প্রচারে। আশার কথা, ক্ষমতাসীন হয়ে মহাজোট সরকার সর্বাগ্রে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে চলছে বিচার প্রক্রিয়া। কিন্তু তা আজো শেষ হয়নি। তাই আজ সারাদেশ অধীর আগ্রহে সব যুদ্ধপরাধীদের বিচারের চুড়ান্ত রায় জানতে ও বাস্তবায়ন দেখতে আগ্রহী।
প্রসঙ্গত, যতদিন দিন পর্যন্ত বাংলার মাটি থেকে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার আল-বাদর, মানবতাবিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত শহীদের আত্মা শান্তি পাবেনা। তাই বর্তমান সরকারের আমলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করা হবে বলে গতকাল ইয়াওমুল আহাদি অর্থাৎ রবিবার মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের এই দিনে এক রাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। প্রায় চার দশক সময় পাড়ি দেয়ার পর এ স্বপ্ন কতটা পূরণ হয়েছে আজ সেই হিসাব নেয়ার দিন।
স্মর্তব্য ৪৩ বছর একটি রাষ্ট্রের পরিপূর্ণতার বছর। বাংলাদেশকে এখন কোনোক্রমেই আর শিশু রাষ্ট্র বলা যায়না।
অতএব, আজ আমাদের অনুভবে অন্তরের অন্তঃস্থিত প্রগাঢ় প্রশ্নের জোরদার বহিঃপ্রকাশ দরকার যে, আমাদের রক্তের, গর্বের মাতৃভূমি-
কেন এখনো বিশ্বের অনুন্নতশীল দেশের সারিতে?
কেন স্বাধীনতার ৪৩ বছরেও হয়নি মুক্তিযোদ্ধা শনাক্ত?
কেন আজও মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করে খায়?
কেন আজো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের জন্য হন্যে হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে?
কেন এখনো অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরও দেশের অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষের দিনে দু'বেলা পেট ভরে খাওয়া জোটে না?
কেন হাজার হাজার কোটি টাকার সাহায্যের পরও সিডরে, আইলা ক্ষতিগ্রস্তদের এখনো ঘরবাড়ি হয় হলো না?
কেন খোদ রাজধানীর ফুটপাতে শুয়ে থাকে লাখ লাখ লোক। কেন কেবল রাজধানীতেই ৬০ লাখ লাঞ্ছিত বস্তিবাসীর বাস?
কেন স্বাধীনতা উত্তর 'তলাবিহীন ঝুড়ির' তকমার পর আজও
চাল সিন্ডিকেট, তেল সিন্ডিকেট
চিনি সিন্ডিকেট, বহাল তবিয়তে থাকে?
কেন এদেশে ক্ষমতাসীনরা হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে?
কীভাবে স্বাধীন দেশে রাজাকাররা মন্ত্রীর পতাকা গাড়িতে উড়িয়ে ঘুরতে পারে?
কেন বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে বিবৃত 'দেশকে স্বাধীন করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ' বলার পরও 'মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি ও চেতনা ছিলো পবিত্র দ্বীন ইসলাম' সে কথা প্রতিফলিত হয় না?
কেন আজ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে ঘৃণিত রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের কেনার হাট বসাতে পারে?
কেন আজ রাজাকার জামাতীরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন প্রলোভনে প্ররোচিত করতে পারে?
একথা আজ সর্বত্র বিস্তার করা দরকার যে, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকাররা স্বাধীনতার বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতার কোনো সুফল পেতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট কোন সমাবেশই কেবল নয় বরং কোনো ধরনের কোনো সমাবেশের অনুমোদন তারা পেতে পারে না।
পাশাপাশি আমরা বলব পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আঙ্গিকেই স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের সমাধান হওয়া দরকার। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ ইরশাদ মুবারক হয়েছে, "পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে যে কেউ একটা বদ কাজ করলো পশ্চিম প্রাপ্ত থেকে যে কেউ তা সমর্থন করলো তার সমান গুনাহ তার হবে।" আমরা তাই শুধু কথিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সন্তুষ্ট নই। পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনকারী সব রাজাকার তথা গোটা জামাতে মওদুদী এবং তাদের আদর্শে বিশ্বাসী ও সমর্থনকারী সব শিবির কর্মী এবং তাবত ধর্মব্যবসায়ীদেরও যথাযোগ্য বিচার চাই।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, আমেরিকার মত একটি খ্রিস্টান দেশ থেকে যদি তাদের রাজাকারদের উৎখাত করা হতে পারে তবে তা ৯৭ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত বাংলাদেশে তা হতে পারবে না কেন? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৭৮২ সালে যেসব আমেরিকাবাসী ব্রিটেনের পক্ষ নিয়েছিলো স্বাধীনতার পর তাদের প্রত্যেককে আমেরিকা থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো।
আমাদের দেশের রাজাকারদের মত ওদেরকে বলা হত 'লয়েলিস্ট'। আমেরিকায় যদি কোন 'লয়েলিস্ট' না থাকতে পারে তবে আমাদের দেশে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে কোন মতেই কোন রাজাকার থাকতে পারে না। সঙ্গতকারণেই আমরা স্পষ্ট ও বুলন্দ আওয়াজ এবং তীব্র উচ্চারণ করছি, 'রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ চাই; পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে রাজাকারের ঠাঁই নেই।'
বলাবাহুল্য, এসব অনুভূতি জাগরুক ও জোরদারের জন্য প্রয়োজন নেক ছোহবত মুবারক, নেক সংস্পর্শ মুবারক তথা রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক।
__._,_.___