Banner Advertiser

Friday, December 26, 2014

[mukto-mona] খোলা চোখে :ধন্যবাদ, ড্যান মজীনা



খোলা চোখে

ধন্যবাদ, ড্যান মজীনা

হাসান ফেরদৌস | আপডেট:  | প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকার রিকশাকেও পছন্দ করেছিলেন ড্যান মজীনা l ছবি: ডেইলি স্টারের সৌজন্যেবাংলাদেশের এক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ঠাট্টা করে তাঁকে নাম দিলেন 'কাজের মেয়ে মর্জিনা'। জবাবে তিনি বললেন, 'ধন্যবাদ, বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে।' এ দেশের মানুষকে তিনি বললেন পরিশ্রমী, সৃজনশীল, উদার ও উদ্যোগী।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমেরিকাকে আমাদের প্রয়োজন নেই। জবাবে মজীনা বললেন, আমেরিকার কাছে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এটা পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র। সন্ত্রাসবাদ দমনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
এক কলাম লেখক বললেন, 'এখন মানে মানে সরে পড়ো, তাহলে আপদ বিদেয় হয়।' জবাবে তিনি বললেন, 'যাওয়ার আগে আমার চোখ জলে ভরে আসছে। আমি আবার ফিরে আসব।'
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা এভাবেই আমাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার শিক্ষা দিলেন। কোথাও কারও নাম উচ্চারণ করেননি, কারও দিকে আঙুল তুলে দেখাননি। কিন্তু আমাদের বুঝতে বাকি রইল না তাঁর শ্রদ্ধামিশ্রিত এই বিনম্র বক্তব্যের মধ্যে কতটা শ্লেষ আছে।
কূটনীতি বরাবরই আচারনির্ভর। ডেল কার্নেগির একটা খুব বিখ্যাত উদ্ধৃতি হলো, কথা বলতে গিয়ে কোনো কথা না বলার নাম কূটনীতি। যেকোনো পেশাদার কূটনীতিকই এই নিয়মের সঙ্গে পরিচিত। আমাদের পেশাদার কূটনীতিকেরাও এই আচারসর্বস্বতার সঙ্গে সম্যক পরিচিত। সমস্যা হলো, কূটনীতির অ-আ-ক-খ এর সঙ্গে পরিচিত নয়, বাংলাদেশে এমন কর্তাব্যক্তিরা কূটনৈতিক বিষয়ে নাক গলাতে ভালোবাসেন। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের একজন উচ্চপদস্থ কূটনীতিক আমাকে দুঃখ করে বলেছেন, 'আমরা দিনের পর দিন পরিশ্রমের পর সব যখন গুছিয়ে আনি, দেশের এক কর্তা তখন এমন কিছু বলে বসেন যে মনে হয়, দুগ্ধপাত্রে এক ফোঁটা চনা ছড়িয়ে দেওয়া হলো। এর ফলে সব যে বিফলে গেল তা হয়তো নয়, কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায়, স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে এসব বক্তব্যের ব্যাখ্যা যখন জানতে চাওয়া হয়, আমাদের বলার কিছু থাকে না।'
আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বরাবরই কিছুটা গোলমেলে। তাতে অবশ্য এই দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ সহযোগিতা সমস্যার সৃষ্টি করেনি। বস্তুত, আমেরিকা এখন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। সামরিক ও কৌশলগত প্রশ্নেও আমাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা রয়েছে। সন্ত্রাস আমাদের দুই দেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভারত, যার সঙ্গে আমেরিকার নিকট সম্পর্ক রয়েছে, সে-ও সন্ত্রাস প্রশ্নে আমাদের দুই দেশের নিকট সমন্বয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। ফলে নিজের স্বার্থেই আমেরিকার সঙ্গে আমাদের মিত্রতা বজায় রাখা প্রয়োজন। প্রায় আড়াই লাখ বাঙালি এখন আমেরিকায়। তঁাদের স্বার্থরক্ষায়ও আমাদের প্রয়োজন আমেরিকার বন্ধুত্ব।
তার মানে এই নয়, ড্যান মজীনা অথবা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে আমাদের অসন্তোষ থাকতে পারে না। একাত্তরের কথা আমরা ভুলে যাইনি, ভুলে যাইনি চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের সময় আমেরিকার বৈরী মনোভাব। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর পুরোনো অভ্যাস আমেরিকা এখনো ত্যাগ করেনি। বিশ্বজুড়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বোম্বেটেপনার সঙ্গেও আমরা পরিচিত। এসব বিষয়ে আমরা সমালোচনা করি, করব। কিন্তু এর সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে অশালীন ভাষায় কটাক্ষ করা বস্তুত শুধু আমাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অভাবের কথা মনে করিয়ে দেয় তা–ই নয়, আমাদের গ্রাম্যতারও প্রমাণ রাখে।
দেশের কর্তাব্যক্তিরা মুখে যা-ই বলুন, আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে তাদের চেয়ে বেশি আগ্রহ অন্য কারোর নয়। তা না হলে দেশের দুই প্রধান দলই নিজেদের পক্ষে আমেরিকায় লবি করার জন্য কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালতেন না। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলার আরজি নিয়ে কূটনীতিকদেরও দেনদরবার করতে হতো না। এই আরজির ফলে কোনোরকমে তিন মিনিটের জন্য তাঁদের কারও সঙ্গে দেখা হলো, তো সে ছবি চৌদ্দবার দেখানো হয় শুধু এ কথা বোঝাতে যে আমেরিকার কর্তাব্যক্তিদের তাঁরা চেনেন।
শুধু আমেরিকা নয়, পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গেই আমাদের সুসম্পর্ক রাখা দরকার। মতবিরোধ যদি থাকে, তো কূটনীতিকের কাজই হলো পর্দার অন্তরালে থেকে সে মতবিরোধ মিটিয়ে ফেলা বা নিদেনপক্ষে দূরত্ব কমানো। দূরত্ব আছে জেনেই আমরা সার্ক সম্মেলনে যাই, যৌথভাবে আলোচনায় বসি, তার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করি। সমস্যা থাকলে তা যাতে বিস্ফোরণের আকার না নেয়, সে
জন্য দেনদরবার করি পর্দার অন্তরালে থেকে। এই পর্দার অন্তরাল থেকে কাজ করেই আমরা আন্তর্জাতিক কূটনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঈর্ষাজনক সাফল্য অর্জন করেছি। তার সাম্প্রতিক প্রমাণ আন্তপার্লামেন্টারি পরিষদে আমাদের প্রার্থীর সভাপতির মর্যাদা লাভ অথবা জাতিসংঘের ৪০টির মতো ফোরামে আমাদের সদস্যপদ অর্জন। এসব প্রতিটি কূটনৈতিক সাফল্যের পেছনে থাকে দীর্ঘদিনের পরিশ্রম। এই কাজটা শুধু পেশাদার কূটনীতিকদের একার নয়। দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বও তাতে নানাভাবে সাহায্য করতে পারে। নিদেনপক্ষে তারা যা করতে পারে তা হলো, মুখের ওপর একটু লাগাম বেঁধে রাখা।
মুখের ওপর এই লাগাম সাঁটার ব্যাপার শুধু কূটনৈতিক কারণেই প্রয়োজন নয়। সাধারণ শিষ্টাচারের জন্যও দরকার। জাতি হিসেবে আমাদের সম্মিলিত ব্যবহারের মাত্রা বেঁধে দেন দেশের নেতা-নেত্রীরা। তাঁরা যে ভাষায় কথা বলেন, সেটাকে 'স্ট্যান্ডার্ড' ভেবে অন্যরা তা অনুকরণ করে। সাংবাদিক বা টক শোর বাচাল বিশেষজ্ঞরা তো আছেনই। আমাদের ছেলেমেয়েরাও তাঁদের দেখেই শেখে কোন ভাষায় কথা বলা বোধ হয় বিধিসম্মত। এখন বলুন, আইন পরিষদে সাংসদেরা অথবা রাজনৈতিক সভায় নেতা-নেত্রীরা যে ভাষায় একে অন্যকে সম্বোধন করেন, আপনার সুপুত্রটি যদি সে ভাষায় আপনার মুখের ওপর কথা বলে, তাহলে আপনার কেমন লাগবে?
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান নিজে যদিও কূটনীতির ব্যাপারে সাফল্যের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ নন, কূটনীতি বিষয়ে তাঁর একটি কথা অমর হয়ে আছে। নিজ দেশের কূটনীতিকদের তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, অন্যের পা মাড়াবে, কিন্তু সে লোকের জুতায় তোমার পায়ের দাগটুকুও লাগবে না, তাহলেই বুঝব, তুমি কূটনীতি বুঝেছ।
ড্যান মজীনা ঠিক সে পরামর্শ অনুসারে আমাদের দুই কান মলে দিলেন, কিন্তু আমাদের কানে তাঁর হাতের স্পর্শটুকুও পড়ল না।
হাসান ফেরদৌস: যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি।

http://www.prothom-alo.com/opinion/article/408028/





__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___