good write up
On Tuesday, January 20, 2015 8:12 AM, Sitangshu Guha <guhasb@gmail.com> wrote:
'সহিংস অবরোধে কাজ হচ্ছেনা; বিএনপি'র উচিত অহিংসার পথে যাওয়া'
সবাই হরতালের বিপক্ষে, আমার কিন্তু হরতাল পছন্দ। কারণ, এবার ডিসেম্বরের শেষে জামায়াতের হরতালের সময় আমি ঢাকা থেকে চাঁদপুর যাই, লঞ্চ একরকম ফাঁকা। রিস্কা করে ঢকার রাস্তা দিয়ে চলার সময়েও কোন অসুবিধা হয়নি, কেননা রাস্তায় বড় গাড়ী বা প্রাইভেট কার ছিলোনা। সুতরাং নো ট্রাফিক জ্যাম। হরতাল অবশ্য ছিলো সারাদেশে, কিন্তু চাঁদপুর গিয়ে আর হরতাল চোখে পড়েনি। ডিসেম্বরেই আর একদিন হরতালে দিব্যি রিস্কা করে সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়িয়েছি। বিদেশ থেকে গিয়ে স্বল্প ক'দিন ঢাকা শহরে থাকার সময় যদি ট্রাফিক জ্যামেই আটকে থাকতে হয়, তারচেয়ে হরতালের মধ্যে ঘুরে বেড়ানোটা কি মজার নয়? আমার ধারণা, প্রবাসীরা যারা ঢাকায় থাকেন তারা সবাই আমার মত হরতাল পছন্দ করবেন!
উভয় হরতালের পরদিন পত্রিকায় হেডিং দেখলাম, 'ঢিলেঢালা হরতাল পালিত'।
সত্তুর এবং
আশি পুরো দুই দশক আমি ঢাকা শহরের বাসিন্দা ছিলাম, এরমধ্যে ছাত্রত্ব ছাড়াও অনেকটা সময় সাংবাদিকতায় ছিলাম, বহু হরতাল দেখার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য আমার হয়েছে, কিন্তু এ কেমন হরতাল? একমাত্র প্রাইভেট গাড়ী-বাস ছাড়া সবকিছু চলবে, অফিস-কাছারী সবকিছু স্বাভাবিক থাকবে এবং হরতালও হবে! হরতালে খুব ভোরে আমরা হাটতে বেড়িয়েছিলাম, কোথাও পিকেটিং চোখে পড়েনি। আমি প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ, রমনা চত্বর বা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কথা বলছি! একদা হরতাল মানে এ এলাকাগুলো থাকতো বারুদের মত উতপ্ত। ভানুর ভাষায়, 'দুনিয়ার নিয়ম বিস্তর পাল্টাইছে' এবং সম্ভবত: হরতালের নিয়মও! এমন হরতাল পছন্দ না করে উপায় আছে?জামাতের হরতালের সময় আমাকে শুভানুধ্যায়ীরা পইপই করে বলেছে বের না হবার জন্যে, কারণ জামাতকে বিশ্বাস নাই; ওরা নাকি সবকিছুই করতে পারে! জামাত সম্পর্কে এই 'জুজুর ভয়' এখন কেটে যাওয়া উচিত। কারণ অতীত পানে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ধর্মের নামে অপকর্ম, মুক্তিযুদ্ভের বিরোধিতা বা রগকাটা ছাড়া জামাতের তেমন কোন অর্জন নেই। আমার তো ধারণা, জামাত এখন স্বপ্নেও 'ফাঁসীর রজ্জু' দেখে! অথবা 'রশি দেখে সাপ মনে করে' ভয় পাচ্ছে। যাহোক, এখন তো হরতালের 'বড়ভাই' অবরোধ চলছে। আবার দেখলাম অবরোধের মধ্যেও হরতাল হচ্ছে! কোনটা অবরোধ, কোনটা হরতাল বোঝা বড় দায়! হরতালই হোক বা অবরোধই হোক, সবকিছুই দেখা যাচ্ছে 'সহিংস'। আমাদের নেতারা প্রায় সবাই এখন ভারতমুখী, ভারত থেকে মহাত্মা গান্ধীর 'অহিংসা নীতি' আমদানী করলে কেমন হয়? সহিংস পদ্ভতি কাজে লাগছেনা, বরং সরকারও 'সহিংস' হচ্ছে! বিজিবি প্রধানের বক্তব্য হেসে উড়িয়ে দেবার কারণ দেখিনা। এখন একমাত্র উপায় 'অহিংসা'! গান্ধীজীকে ফলো করা। এতে লজ্জার কিছু নাই; কারণ একসময় পুরো বাংলাদেশ মোদীর বিপক্ষে থাকলেও এখন সবাই 'মোদীভক্ত'! কাজেই গান্ধীর 'অসহযোগিতা' বা 'সত্যাগ্রহ' ট্রাই করা যেতে পারে। এতে বিদেশীরাও খুশি হবে, এবং সম্ভবত: সরকারও। তবে বেলজিয়ামের এক লেখক ফাদার পল দ্যতিয়েন সত্যাগ্রহকে ঠিক অহিংস বলে মানতে রাজি নন, তার মতে সত্যাগ্রহ হচ্ছে, 'হিংসার এক কপট ছদ্মবেশ'। তা যাই হোক, বিরোধীপক্ষ অনেক কপটতার আশ্রয় নিয়েছেন, অহিংসার নামে 'কপট হিংসার' আশ্রয় নিলেও মানূষ তেমন অখুশি হবেনা। মোদ্দা কথা হচ্ছে, 'সহিংস অবরোধে কাজ হচ্ছেনা; বিএনপি'র উচিত অহিংসার পথে যাওয়া।
অবশ্য সহিংস বা অহিংসা কোন পথেই যে এমুহুর্তে কাজ হবে তা মনে হয়না। কারণ, জনগণ এসবের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এদিকে সরকার বলছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিরোধীদের হুঙ্কার তো থেমে নেই। এর শেষ কোথায়! এরপর কি? কেউ বলছেন, অবরোধ ভেঙ্গে পড়ছে। আবার কেউ বলছেন অস্তিত্বের সংকট কাটাতে বিএনপি-কে এবার সফল হতেই হবে। বলেছেন, বিশ্ব-ইস্তেমার পর নাকি অবরোধ চাঙ্গা হবে। বিএনপি পক্ষ ভাবছে এবার তাদের পালে হওয়া লাগছে। কারণ, ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচনের সময় কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিলো, এখন বিজেপি ক্ষমতায় এবং বিজেপি'র নীতি ততটা আওয়ামী ঘেষা নয়! দ্বিতীয়ত: ইউরোপ-আমেরিকা আওয়ামী লীগকে কিছুটা সময় দিয়েছে, আর সময় দিতে রাজি নয় এবং সর্বোপরি বিএনপি কর্মীদের পিঠ দেয়ালে থেকে গেছে, অস্তিত্বের জন্যেই তাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। প্রশ্ন হলো, বিএনপি দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়ে যাবার ক্ষমতা রাখে কিনা? অবরোধের পর বিএনপি'র 'প্ল্যান-বি' কি? এবার ব্যর্থ হলে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি? ব্যর্থ হলে বিএনপি কি একটি থাকবে? এরমধ্যে মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন হলো, সরকার কি বসে থাকবে? সরকার তো জানে বিএনপি সফল হোক বা নাহোক, ক'দিন আগে বা পরে নির্বাচন দিতে হবে এবং ওই নির্বাচনে জিততে হবে। সরকারেরও নিশ্চয় হিসাব-নিকাশ আছে। একটি পক্ষ অবশ্য বলছেন, সরকার ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগের খবর আছে!
এদিকে সংলাপের কথা আসছে। বিরোধীরা বলছেন, সংলাপ চাই। সরকার বলছেন, কিসের সংলাপ? এটা ঠিক, টেবিলই হওয়া উচিত সকল সমস্যা সমাধানের জায়গা। আমাদের দেশে তা উল্টো। তাই রাজপথে সবাই সমাধান চায়। তাই হরতাল। তাই অবরোধ। সংলাপ হোক, কিন্তু সংলাপের জন্যে পরিবেশ সৃষ্টি হোক। সন্ত্রাস ও সংলাপ তো একসাথে চলতে পারেনা। সন্ত্রাস করে সংলাপের আবদারও যথার্থ নয়। মোদ্দা কথা হলো, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসুক। পেট্রল বোমায় নয়, নির্মলদা'র ভাষায়, স্বাভাবিক মৃত্যু'র গ্যারান্টি ফিরে আসুক। কথায় বলে, 'রাজায় রাজায় যুদ্ভ করে, উলু-খাগড়া--'; পাবলিক হিসাবে এ সময়টায় জনগণ বড় দুই দলের ফাইটে উলু-খাগড়া হতে চায়না।
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
নিউইয়র্ক, ১৮ই জানুয়ারী ২০১৫।
__._,_.___