অবরোধের বিভীষিকা : ফুলের মতো শিশুর সুন্দর মুখটি ঝলসে দিল ওরা
নাহিদ তন্ময় : আড়াই বছরের ফুটফুটে শিশু সাফির আহমেদ। চিকিৎসক দম্পতির আদরের নিধি। গরম পানি গায়ে পড়ে চঞ্চল এই শিশুটির ডান পা পুড়ে গিয়েছিল। ব্যাকুল মা-বাবা সন্তানকে সুস্থ করতে ছুটে আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর রোববার বিকেলে সাফিরকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে নানার বাসার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। সেখানে রয়েছে তাদের চার মাস বয়সী আরেক শিশুসন্তান। সুস্থ সাফির বাড়ি ফিরবে_ এমন খবরে নানার বাড়িতে ছিল আনন্দের হিল্লোল। তবে কী মর্মন্তুদ! বাসায় পেঁৗছার আগেই দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমার আগুনে আবার ঝলসে যায় ছোট্ট সাফিরের সেই পুড়ে যাওয়া ডান পা, ফুলের মতো মুখ, দুই হাত; সঙ্গে পোড়ে একটি দম্পতির স্বপ্নও।ফুলের মতো শিশুর সুন্দর মুখটি ঝলসে দিল ওরা।
সাফির এখন রাজধানীর লালমাটিয়ার সিটি হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চঞ্চলতা আর খিলখিল হাসির শব্দ ফোটে না তার আদুরে কণ্ঠে। সীমাহীন যন্ত্রণায় কাতর দুই চোখ খুঁজে বেড়ায় তার মা-বাবাকে; কিন্তু পায় না। কীভাবে পাবে? একই আগুনে পুড়েছেন তার মা-বাবাও। পোড়া শরীর নিয়ে তারাও পড়ে আছেন হাসপাতালের বিছানায়। সন্তানের পাশে থাকতে না পারার যন্ত্রণা তাদের পোড়া শরীরের যন্ত্রণার চেয়েও অনেক বেশি। অশ্রু ঝরানো ছাড়া এ যন্ত্রণা প্রকাশের ভাষাও যেন তাদের জানা নেই। নিজেরা চিকিৎসক হয়েও এ পরিস্থিতির কাছে অসহায়।
রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। সেই আগুনে দগ্ধ হয় শিশু সাফির, তার মা ডা. শারমিন সিদ্দিকা এবং বাবা ডা. সাইফুল ইসলাম। তাদের উদ্ধার করে লালমাটিয়া সিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, একটি বেডে হেলান দিয়ে বসে আছেন মা শারমিন। তার দুই হাত ব্যান্ডেজ করা। একটি হাত গলায় ঝোলানো। ছেলেকে আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে এ হাত ভেঙে গেছে। পুড়েছে কপাল, চোখের কোণসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাইফুল ইসলাম। সাফিরের শরীর থেকে আগুন লাগা জ্যাকেট খুলতে গিয়ে তার পুড়েছে দুই হাত, গলা ও মুখের একাংশ। ভেঙেছে একটি হাতও। ব্যান্ডেজ লাগানো ভাঙা হাতটি গলায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
'সাফির কান্না করছে, মাকে খুঁজছে'_ নার্সদের কাছে এমন তথ্য পেলেই নিজেদের শরীরের যন্ত্রণা ভুলে দৌড়ে যান ছেলের শয্যাপাশে। চেষ্টা করেন ছেলের কান্না থামাতে। নানা গল্প শোনান। কিন্তু যন্ত্রণাকাতর সাফিরের কান্না থামে না। কোলে ওঠার আবদার নিয়ে মা-বাবার দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যান্ডেজ লাগানো ভারী হাত তোলার শক্তি নেই ছোট্ট শরীরে। কাঁদতে কাঁদতেই সে ঘুমিয়ে পড়ে আইসিইউর বিছানায়। মা-বাবার চোখেও ঝরছে পানি। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ছেলের অচেনা মুখের দিকে। চিকিৎসকদের পরামর্শে আবার ফিরে যান নিজেদের নির্ধারিত শয্যায়।
আলাপকালে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন শারমিন; একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, 'কী দোষ করেছিলাম? কোন অপরাধে এই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশু মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করছে?'সিটি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিফ কনসালট্যান্ট শহিদুল বারী জানান, সাফিরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত_ এ কথা এখনই বলা যাবে না।সাইফুল ইসলামের ভাই মো. ফারুক জানান, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সাফির এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। তাকে পাঁচ দিন পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এর পর তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।ফারুক বাসের আগুন দেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বলেন, বাসে আগুন ধরে যাওয়ার পর শারমিনকে জানালা দিয়ে বাইরে বের করার চেষ্টা করেন সাইফুল। এ সময় শারমিন নিচে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে যায়। পরে তাড়াহুড়ো করে সাফিরকে নিয়ে বাস থেকে নামার সময় সাফির হাত থেকে ছুটে যায় এবং তার শরীরে আগুন ধরে যায়। সে আগুন নেভাতে গিয়ে সাইফুলের দুই হাত পুড়ে যায়
http://khabor.com/archives/41923
- মধ্যরাতে বাসে পেট্রোল বোমায় মা-মেয়ে দগ্ধJanuary 20, 2015
- বরিশালে দুই লঞ্চে আগুনJanuary 20, 2015
- পোড়াতে যদি এত লাগে ভালোJanuary 20, 2015
- অবরোধের বিভীষিকা : ফুলের মতো শিশুর সুন্দর মুখটি ঝলসে দিল ওরাJanuary 20, 2015
- বিএনপির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য দমনে সরকারের যেকোন পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানাবে জাপা : রওশন এরশাদJanuary 20, 2015
- জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত : পররাষ্ট্রমন্ত্রীJanuary 20, 2015
- মানবতা বিরোধী ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অপরাধে বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের দাবি : সংসদে সরকারি দলJanuary 20, 2015
ফেনী শহরে অবরোধ সমর্থকরা বিভিন্ন আড়তের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যবোঝাই ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানসহ অন্তত ২৫টি গাড়ি ভাংচুর করলেও অক্ষত ছিল এক বিএনপি নেতার আড়তের পণ্যবোঝাই ট্রাক।
__._,_.___