নিউইয়র্ক থেকে এনআরবি নিউজ : জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় ৯ বছরে ২৭ বার গ্রেফতার হওয়ার পর বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিভোগকারী বিএনপি নেতা জাহিদ এফ সরদার সাদীর সর্বশেষ ধাপ্পাবাজির শিকার হলেন মার্কিন কংগ্রেসের ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যানসহ প্রভাবশালী ৬ কংগ্রেসম্যান। ৮ জানুয়ারি কংগ্রেসম্যানরা প্রদত্ত এক বিবৃতিতে 'রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যে এমন ধাপ্পাবাজির ঘটনাকে কোনভাবেই সহ্য করা যায় না' বলে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ্য যে, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক ইনকিলাবসহ বেশ কটি দৈনিক, বৃটেনের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসসহ কয়েকটি ওয়েবসাইটে ঐ ৬ কংগ্রেসম্যানের বিবৃতির নামে যা প্রকাশ করা হয়েছে তাকে সরাসরি নাকচ করে দিয়ে ক্ষুব্ধ ফরেন এফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান (ক্যালিফোর্নিয়া-রিপাবলিকান) এডোয়ার্ড রয়েস এবং কমিটির প্রভাবশালী মেম্বার কংগ্রেসম্যান (নিউইয়র্ক-ডেমক্র্যাট) এলিয়ট এঙ্গেল, কংগ্রেসম্যান স্টিভ শ্যাবট(রিপাবলিকান-ওহাইয়ো), কংগ্রেসম্যান যোসেফ ক্রাউলী(ডেমক্র্যাট-নিউইয়র্ক), কংগ্রেসম্যান জর্জ হোল্ডিং (রিপাবলিকান-নর্থ ক্যারলিনা) এবং কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং (ডেমক্র্যাট-নিউইয়র্ক) এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেছেন যে, তাদের নামে যা প্রচার করা হয়েছে তা ভূয়া ও ভিত্তিহীন। প্রতারণামূলকভাবে সেটি করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, 'বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অব্যাহতভাবে মনিটর করছেন ফরেন এফেয়ার্স কমিটি এবং কংগ্রেসের অনেক সদস্য'-এমন কথা কখনো তারা বলেননি কিংবা কোন বিবৃতিও দেননি। 'যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নামে ভূয়া বিবৃতি প্রচার করে কোন রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক মতলব হাসিলের চেষ্টা করবে তা কখনোই বরদাশত করা যেতে পারে না'-উল্লেখ করা হয়েছে যুক্ত বিবৃতিতে।
উল্লেখ্য যে, জাহিদ এফ সরদার সাদীর ফেসবুকেও পোস্টিং দেয়া হয়েছে জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক একটি সংবাদ। সেখানেও কংগ্রেসম্যান হাকিম জাফরীর নাম ব্যবহার করে বিএনপির পক্ষে ভূয়া কথাবার্তা উল্লেখ করা হয়েছে। 'যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজু' (যদিও সেই নামটিও ভূয়া) সংবাদদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ফেসবুকের ঐ পোস্টিংয়ে। সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নাম ব্যবহারই শুধু নয়, যুক্তরাজ্যের ওয়েবসাইট পত্রিকা 'ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসে প্রকাশিত সংবাদের রিপোর্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে 'আয়ান সিলভেরা' এবং সেখানে কংগ্রেসম্যান এড রয়েসের ছবিকে বলা হয়েছে রয়টারের ছবি হিসেবে। মিডিয়াগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করতে এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জাল করে বিএনপির রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের এমন প্রতারণার তথ্য ফাঁস হবার পর অনেক প্রবাসী কয়েক বছর আগে পদ্মা সেতুতে কাল্পনিক ঘুষ-দুর্নীতির লেনদেনের সাথে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের জড়িয়েও ভূয়া ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করছেন। সে সময়ের কথিত ঐ সংবাদে এমন সব গল্পের অবতারণা করা হয়েছিল যে, পরবর্তীতে তা মিথ্যায় পর্যবসিত হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ঐ গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিকেরইনকটাত্মীয়দের পাসপোর্ট নাকি কানাডা সরকার আটক করেছে। অথচ ঐ ধরনের সংবাদ প্রকাশের পরই বেশ কয়েক দফা ঐ আত্মীয়রা কানাডা থেকে ঢাকা এবং নিউইয়র্কেও যাতায়াত করেন। বিভিন্ন দৈনিকে ও ওয়েবসাইটে ৬ কংগ্রেসম্যানের স্বাক্ষর জালিয়াতির ঐ বিবৃতিও জাহিদ এফ সর্দার সাদী বিভিন্ন নামে ই-মেইল করেন বলে তার এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী এনআরবি নিউজকে জানান। এই সহকর্মীও নিজের নাম জাহির করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কংগ্রেসম্যানরা সোচ্চার হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ঐ নেতা নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।
কংগ্রেসম্যানদের নাম ব্যবহার করে প্রদত্ত ঐ ভূয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, 'বাংলাদেশের বর্তমান ভয়াবহ রাজনৈতিক সংঘাত এবং সরকার কতৃক মানবাধিকারের চরম অবমাননার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে (৬ জানুয়ারি) বিশদ আলোচনা হয় এবং অধিবেশনে উপস্থিত প্রতিনিধি পরিষদের সন্মানিত সদস্যগণ এই অগনতান্ত্রিক কর্মকান্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এর তীব্র নিন্দা করেন। এতদসংক্রান্ত এক বিবৃতিতে মার্কিন কংগ্রেস বাংলাদেশ সরকারকে অব্যহত মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় কঠোর হুশিয়ারী প্রদান করেন।' কংগ্রেসম্যানদের জাল স্বাক্ষরে বিতরণকৃত বিবৃতির বরাত দিয়ে আরো উল্লেখ করা হয় যে, 'ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বৈদেশিক দূত ডা মুজিবুর রহমান মজুমদার এবং জাহিদ এফ সরদার সাদী। এ বিষয়ে বেগম জিয়ার বিশেষ উপদেষ্টা জনাব সাদী জানান, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে নজিরবিহীনভাবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এবং দুপুর ২টা ২২ মিনিটে নিউইয়র্ক থেকে পুনঃনির্বাচিত কংগ্রেসম্যান হাকিম জেফরী বিষয়টি হাউজে উত্থাপন করেন।'
সাদী জানিয়েছেন, এই বিশেষ বিবৃতিটিতে নাকি আরো বলা হয়, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী হিসাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দির্ঘকাল ধরে বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রাতিষ্ঠানিকিকরণ, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সবধরনের সহায়তা দিয়ে আসছে। বিশ্বের প্রধানতম গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গনতন্ত্র চিরস্থায়ীকরণের পক্ষেই সহায়তা করেছে। বিশেষ করে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ভয়াবহ রাজনৈতিক মতবিরোধ সমাধান কল্পে এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু,গ্রহনযোগ্য,নিরপেক্ষ এবং সকলের অংশ গ্রহনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পক্ষ থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অসহযোগিতার কারণে ৫ জানুয়ারী ২০১৪ এ একটি বিতর্কিত এবং একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতিতে এই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পূর্বেই ১৫৪ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়-যা কিনা আধুনিক বিশ্বে বিরল। বিরোধী দল বিএনপি এবং তার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের দাবী অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনে দাবি সম্পূর্ন উপেক্ষা করে যাচ্ছে আওয়ামী সরকার এবং সমস্যা সমাধানে কোন আলোচনায় বসতেও অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।বর্তমানে এ দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধীদলগুলোর নেতা কর্মীদের দমন করতে নির্মম ভাবে নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করছে বাংলাদেশ সরকার-যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অবিলম্বে তারা বাংলাদেশ সরকারের এহেন কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য কঠোর হুশিয়ারী প্রদান করেন ।'
কংগ্রেসম্যান হাকিম জাফরীকে উদ্ধৃত করে ভূয়া ঐ বক্তব্যে আরো বলা হয় যে, 'সাবেক প্রধান মন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গত কয়েকদিন যাবৎ তার কার্যালয়ে নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য এবং মতামত বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করার মতো অগনতান্ত্রিক ও আইনবিরুদ্ধ কার্যকলাপেও গভীর উদ্বেগ এবং হতাশা প্রকাশ করা হয়।'
কংগ্রেসম্যানদের স্বাক্ষর জাল করে ভূয়া বিবৃতি প্রকাশ ও প্রচারের সাথে জড়িত সাদীকে অবিলম্বে বিএনপির সকল দায়-দায়িত্ব থেকে বহিস্কারের দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ সম্রাট এবং বিএনপি নেতা মো. বশির। তারা এনআরবি নিউজকে ৮ জানুয়ারি রাতে বলেন, 'জালিয়াতি ও ধাপ্পাবাজ লোকজন যদি বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেই থাকেন তবে, নিকট ভবিষ্যতে প্রবাসে সত্যিকারের কোন কর্মী খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সময় থাকতে এ ধরনের চিহ্নিত লোকজনকে বহিস্কার করা উচিত বলেও তারা উল্লেখ করেন। সপ্তাহ দুয়েক আগে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কমিটির এক সংবাদ সম্মেলন থেকেও সাদীর মত ধাপ্পাবাজদের অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানানো হয়। উল্লেখ্য, উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে পুরনো ও সর্বাধিক প্রচারিত সাপ্তাহিক ঠিকানায় গত ৫ ডিসেম্বর সাদীর জালিয়াতি-জুচ্চুরির ডকু্যুমেন্টস অনুসন্ধানী একটি প্রতিবেদন সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়।
যুক্তরাজ্যের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের লিংক এবং প্রতারক জাহিদ সরদার সাদীর ফেসবুক লিংক এখানে দেয়া হলো।
http://khabor.com/archives/40998
Related Links:
https://bn-in.facebook.com/ZahidFSarderSaddi
যাঁদের নাম প্রতারণা করে ব্যবহার করা হয়েছে,তাঁরা কেউ বিবৃতির সঙ্গে জড়িত না।
বিএনপি বরাবরই মিথ্যাচারে পারদর্শী :
weGbwc †Pqvicvim‡bi we‡kl Dc‡`óv Ges
বিএনপির ˆe‡`wkK `~Z Rvwn` Gd mi`vi mv`x !
[জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় ৯ বছরে ২৭ বার
গ্রেফতার হওয়া,বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তিভোগকারী
বিএনপি নেতা জাহিদ এফ সরদার সাদী]
__._,_.___