Banner Advertiser

Sunday, March 1, 2015

[mukto-mona] আমার দ্বিমত : তৌফিক ইমরোজ খালিদী



Videos:

TV talk on Editors' Council statement 1

TV talk on Editors' Council statement 2

https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=aqKqX24rDLM

 

 TV talk on Editors' Council statement 3

https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=XEEmcllTAHY

 TV talk on Editors' Council statement 4

https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=cRCp4o5DuTY

 

 TV talk on Editors' Council statement 5

https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=aDz90pLEs6I

 TV talk on Editors' Council statement 6

https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=ysSA7omDdvM

 

TV talk on Editors' Council statement 7

https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=G4UIQIGrWso



আমার দ্বিমত : তৌফিক ইমরোজ খালিদী

তৌফিক ইমরোজ খালিদী

Published: 2015-03-01 23:39:22.0 BdST Updated: 2015-03-02 01:25:01.0 BdST

সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে আমি একমত নই। বাংলাদেশের কয়েকটি মুদ্রিত সংবাদপত্রের প্রধান নির্বাহী বা সম্পাদকদের এই সংগঠনটির বক্তব্যের সঙ্গে সবিনয়ে দ্বিমত পোষণ করছি

এই সংবাদপত্রগুলো বেশিরভাগই প্রকাশিত হয় রাজধানী থেকে। তাদের সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর করা বিবৃতিটি ভণ্ডামি, দ্বৈতনীতি ও ব্যক্তিস্বার্থপ্রসূত কর্মকাণ্ডের আরেকটি জাজ্বল্যমান উদাহরণ। এ কথা কেন বলছি তার ব্যাখ্যা আমার কাছে আছে। আমরা যারা গণমাধ্যমে কাজ করছি তাদেরকে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে কেন সচেষ্ট হতে হবে তাও ব্যাখ্যা করছি।

এই সম্পাদকদের কেউ কেউ সত্যিকার অর্থে কখনোই পেশাদার সাংবাদিকতা করেননি। এদের কারও কারও সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। বেশিরভাগকেই ব্যক্তিগতভাবে জানি বেশ কিছুদিন ধরে।

এদের অনেকেই আবার সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন 'নোয়াব' এর সদস্য। বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ, 'বিএসপি' থেকে বেরিয়ে 'নোয়াব'-এর জন্ম। এদের অনেকে দুই সংগঠনেরই, 'সম্পাদক পরিষদ' ও 'নোয়াব'-এর নেতৃত্বে রয়েছেন। স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্নটি তাই এসেই যাচ্ছে। আমি জানি না এ নিয়ে আলোচনা করব কিনা। খুব বেশি প্রসঙ্গান্তরেও যেতে চাই না।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক 'ডেইলি স্টার' পত্রিকার মালিক-সম্পাদকমাহফুজ আনাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন পরিষদের সভাপতি দৈনিক 'সমকাল' সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। তিনি সম্পাদক, তবে মালিক-সম্পাদক নন। কয়েক দশকের পেশাদার সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞ তিনি। বৈঠকের দু'দিন আগে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান জনাব সারওয়ার। বিবৃতিটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সেখান থেকে এর বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেন তিনি। গোলাম সারওয়ার  বলেন, বিবৃতির বিষয়ে তিনি জানেন না। কী প্রক্রিয়ায় বিবৃতিটি তৈরি হয়েছে এবং প্রকাশ করা হয়েছে সে সম্পর্কেও তিনি অবগত নন।

২৪ সদস্যের পরিষদের অনেকেই প্রকাশ্যে বলেছেন, তারা সভায় যাননি। আসলে ক'জন সেদিন উপস্থিত ছিলেন?

সভাটি কোথায় হয়েছিল বিবৃতিতে তারও উল্লেখ নেই। এখন আমরা জানি যে, সভাপতির অবর্তমানে অনুষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ সভাটি হয়েছিল ৩০,০০০ প্রচার সংখ্যার 'ডেইলি স্টার' পত্রিকার নতুন ভবনে। মুদ্রণ প্রমাদের কথা কেউ ভেবে থাকলে বলছি, তিনের পর শূন্যের সংখ্যা চারটিই।

বিবৃতি প্রকাশ ও সভার সময়টি খেয়াল করুন। বিষয়বস্তু নিয়ে পরে আসছি। উসকানিমূলক বিষয়বস্তু সম্বলিত পোস্টারের ছবি ছাপানোর অভিযোগে 'ডেইলি স্টার'-এর বিরুদ্ধে এক আইনজীবীর দায়ের করা মামলার কয়েক দিন পর সভাটি করা হয়।

পত্রিকাটির মালিক-সম্পাদক তার নিজের অফিসে বসে সভায় সভাপতিত্ব করেন। মনে করা হয়, তিনি নিজেই বিবৃতিটি প্রণয়ন করেছেন এবং সংবাদ মাধ্যমে তা প্রকাশ করেছেন।

আমার ব্যক্তিগত মতামত হল, ৩০ হাজার প্রচার সংখ্যার (কোনো কোনো বিজ্ঞাপনী সংস্থা এ সংখ্যা আরও কম বলে দাবি করে) পত্রিকার তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ছবিটি পোস্টারের উদ্দিষ্ট জনগণকে প্রভাবিত করতে পারবে বলে মনে হয় না। আইনজীবী তার আর্জিতে বলেছেন, 'ডেইলি স্টার' প্রকাশ না করলে নিষিদ্ধ ঘোষিত ইসলামী সংগঠনটির পোস্টার মানুষের অগোচরেই থেকে যেত। সঙ্গত কারণে ওই আইনজীবীর বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই।

এ নিয়ে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গেও আমি দ্বিমত পোষণ করছি। ছবি ছাপানোর জন্য 'ডেইলি স্টার'কে শাস্তি দেওয়া হবে বলে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। ছবিটির উপরে দেওয়া পত্রিকার ক্যাপশনই পরিষ্কারভাবে বলে দেয় যে, তারা পোস্টারটির বার্তাকে দুষেছেন। "উগ্রবাদীরা আবার তাদের কুৎসিত মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।" এই ক্যাপশনের 'কুৎসিত' শব্দটিই বলে দেয় যে, পত্রিকাটির উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না।

আবারও বলছি, এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত। এ বিষয়ে এখনও আদালতে শুনানি শুরু হয়নি। রাষ্ট্রের খুব ক্ষমতাশালী পদে বসে কারও মামলার এই পর্যায়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়। তার ওপর প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করেছেন তার সংসদীয় সুবিধা। যদিও একজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন।

২৪ সদস্যের 'সম্পাদক পরিষদ' নিজেদের ভেতরের বিবাদ কীভাবে মেটাবেন সেটা তারা জানেন। তাদের সাধারণ সম্পাদক নিজে সংশ্লিষ্ট আছেন এমন একটি বিষয়ে তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়টি তারা কীভাবে সামলাবেন সেটিও তাদেরই ব্যাপার। কিন্তু আমরা যারা বাকি সংবাদ মাধ্যমে কাজ করছি, আমাদের জন্য তার বিবৃতি ভাবনার বটে। কারণ তাতে আমাদের পাঠক, শ্রোতা ও দর্শকদের মধ্যে এমন একটি উপলব্ধি জন্মাতে পারে যে, পরিস্থিতির হঠাৎ মারাত্মক অবনতি ঘটেছে বলেই সম্পাদকদের এমন একটি বিবৃতি দিতে হয়েছে।

বাংলাদেশে সাংবাদিকতার পরিবেশ কখনোই খুব ভালো ছিল না। আমাদের জেলা সংবাদদাতারা প্রায় প্রতিদিনই হুমকি পান। যদিও পেশাগত সুবিধা অপব্যবহারের অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত পার্বত্য এলাকায় যারা খবর সংগ্রহে নিয়োজিত আছেন তাদের জীবন সত্যিই খুবই কঠিন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের পরিবার তাদের হত্যাকাণ্ডের বিচারের অপেক্ষায় আছে বছরের পর বছর।

তারপরও এ কথা বলতেই হবে যে, পরিষদের বিবৃতির বিষয়বস্তুতে এবং পরিবেশনায় পেশাদারি দৃষ্টিভঙ্গির অভাব রয়েছে।

'ডেইলি স্টার'-এর ঘটনা বাদেও বিবৃতিতে 'নিউ এইজ'-এর একটি ঘটনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, একজন পুলিশ কর্মকর্তা ওয়ারেন্ট ছাড়াই পত্রিকাটির কার্যালয়ে জঙ্গিদের কথিত সভার খবর পেয়ে সেখানে তল্লাশি করতে যান। খবর হল, পুলিশ কর্মকর্তাটি কার্যালয়ে প্রবেশ করেননি। বিবৃতিতে এই দুটি ঘটনার কথা তুলে ধরে এমন এক চিত্র দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যে, যেন এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না।

একে বাস্তবসম্মত ও সৎ প্রচেষ্টা বলা যাবে না। বাংলাদেশে অনেক বিষয়কে বড় করে দেখানোর প্রবণতা আছে, বিশেষ করে গণমাধ্যমে।

নিজেদের অভিজ্ঞতার কথাই বলি। ২০১২ সালের ২৮শে মে আমার দুই তরুণ সহকর্মীকে আমাদের কার্যালয়ের নিচেই ছুরিকাহত করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের একটি অংশ একে আমাদের সাংবাদিক ও বার্তাকক্ষের ওপর হামলা বলে প্রকাশ করেছিল। হামলার পর এই দুজনসহ অন্যরা তাড়া খেয়ে বার্তাকক্ষে উঠে যায়। তাতে বার্তা কক্ষের মেঝে রক্তে ভেসে যায়। মাসখানেক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরে।

সাংবাদিক ইউনিয়ন, এমনকি 'রিপোর্টার্স সঁ ফ্রঁতিয়ে'-এর মতো সংগঠন তখন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়। তাদের সেই বিবৃতি ঘটনার সঠিক চিত্র তুলে ধরেছিল কি? এটা একটি অপরাধমূলক ঘটনা মাত্র, সাংবাদিকতার সঙ্গে কোনোভাবেই তা সংশ্লিষ্ট নয়। আমার সহকর্মীরা কর্মরত অবস্থায় প্রায়শই আক্রমণের শিকার হন, মাঝে মাঝে সে সব হামলা মারাত্মকও হয়। কখনও কখনও দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে গিয়ে মিথ্যা অভিযোগে মামলা মোকাদ্দমার মধ্যেও পড়েন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশে, অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশে এবং আরও অনেক দেশে আমাদের প্রিয় এই পেশার হাল এমনই। আমরা লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছি, চালিয়ে যাব।

২৪শে ফেব্রুয়ারির বিবৃতিতে তোলা অভিযোগগুলো ঢালাও। আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো পেশাদার সাংবাদিক এটি তৈরি করেননি। আর ফোন কলের কথা বলছেন? পাঠকদের সামনে যদি এর তালিকা তুলে ধরতাম তাহলে সেটা বইমেলার সবচেয়ে মোটা বই হত। সবাই নিজ নিজ জনসংযোগ চর্চার অধিকার সংরক্ষণ করেন। তাদের কথা আমাদের শুনতেই হবে এমন কথা নেই।

সহিংসতাপ্রবণ অবরোধের সময় কীভাবে সাংবাদিকতা করতে হবে বা হরতালের খবরের সময় কী করতে হবে সে বিষয়ে মন্ত্রীরা আমাদের সবক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কেউ কি তাদের কথা শুনেছে? এমনকি তাদের আহ্বানে সবাই কি বৈঠকে গেছেন?

আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমরা ভুল করি। জবাবদিহির জন্য আমাদেরকেও রাজি থাকতে হবে। সন্দেহভাজন কাউকে ধরতে কোনো পত্রিকা অফিসে তল্লাশি চালানো যাবে না এমন কোনো বেদবাক্যের কথা কেউ বলতে পারবে না। তবে পুলিশ যেভাবে দৈনিক 'ইনকিলাব'এর বার্তাকক্ষ থেকে পত্রিকাটির সাংবাদিককে ধরে নিয়ে গেছে, আমরা এর প্রতিবাদ ও নিন্দা করি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওই পত্রিকা সাংবাদিকতার নামে যে অনৈতিক কাজ করেছে, আমরা কি তার নিন্দা জানিয়েছি? অথবা অন্য অনেক ক্ষেত্রে দৈনিক 'আমার দেশ' যা করেছে? রুপার্ট মারডক, তার 'সান' অথবা 'ফক্স নিউজ', তাদের চেয়েও খারাপ কাজ করেছে আমার দেশ। বন্ধ হওয়ার আগে 'নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড' যেসব কুকীর্তি করেছে, তার চেয়েও জঘন্য। পশ্চিমে গণমাধ্যম ও রাজনীতির মধ্যে যে আঁতাত নিয়ে সবসময় সমালোচনা হয়, এসব বিষয় তার চেয়েও নিকৃষ্ট।

আমাদের সংকোচনশীল মুদ্রণ মাধ্যমের 'সম্পাদকদের' একটি অংশ যে পঁচিশটি ইলেকট্রনিক মাধ্যমের ওপর আরোপিত কথিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্বিগ্ন, সেটা ভালো খবর। কয়েক জন সম্পাদক বলেছেন, 'একুশে টিভি'র আবদুস সালাম, 'এনটিভি'র মোসাদ্দেক আলী ফালু সরকারি হস্তক্ষেপের শিকার। 'আমার দেশ'-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এখন সম্পাদক পরিষদের বড় উদ্বেগের নাম।

আমি ভুল না জানলে, খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, 'নোয়াব'-এর একটি সভায় মাহফুজ আনাম 'আমার দেশ' পত্রিকাকে ছোট এই সংগঠনের সদস্যপদ দিতে জোর গলায় অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। আমি বুঝতে পারি কেন তিনি এর বিরোধিতা করেছেন; কীভাবে কথা বলেছেন তাও যেন কল্পনায় দেখতে পাই। সে সময়কার বহুল প্রচারিত 'আমাদের সময়' পত্রিকার সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান 'নোয়াব'-এর সদস্য হতে চেয়েছিলেন।

সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব মাহফুজ আনামের উপস্থিতিতে একটি টিভি অনুষ্ঠানে নাঈমুল ইসলাম খান অভিযোগ করে বলেছেন, তাকে দু' দু'বার সদস্যপদ দিতে অস্বীকার করা হয়। সংগঠনটি সরকারের কাছে নিউজপ্রিন্টের শুল্ক কমানোর মতো বিষয়ে দরকষাকষি করে থাকে। মাহফুজ আনাম হাসতে হাসতে ঐ অনুষ্ঠানে নাঈমুল ইসলাম খানকে বলেন, "ভাই, বিষয়টা তুমি এখানে তুলছ কেন?"

২০০৬ সালে দৈনিক 'ইত্তেফাক'-এর তদানীন্তন মালিক মঈনুল হোসেন ও তার সঙ্গীদের  নিয়ন্ত্রণাধীন 'বিএসপি' (বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ) ভেঙে ২০০৬ সালে কয়েকজন মালিক মিলে 'নোয়াব' গঠন করেন। মাহফুজ আনাম এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এখন দৈনিক 'প্রথম আলো' সম্পাদক 'নোয়াব'এর সভাপতি, যিনি আবার 'সম্পাদক পরিষদ'এর নির্বাহী কমিটির সদস্য।

মাহমুদুর রহমান যদি 'সম্পাদক পরিষদ'-এর সদস্যপদের জন্য আবেদন করতেন এবং আমি যদি এর অংশ হতাম, অবশ্যই নানা কারণে জনাব আনামকেই সমর্থন করতাম। কোনোভাবেই আমি জনাব রহমানকে 'সম্পাদক' মনে করি না এবং সম্ভবত কখনোই করব না।

মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তারের পর একটি টিভি  অনুষ্ঠানে তিন জ্যেষ্ঠ সম্পাদকের (আবেদ খান, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ এবং আমানুল্লাহ কবীর, যাদের সবাই সাংবাদিকতায় পঞ্চম দশক পার করছেন) সঙ্গে কারণগুলো বর্ণনা করেছিলাম আমি। যুক্তিগুলো সোজা-সাপটা। মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ নেই।

কর্পোরেট নির্বাহী থেকে ব্যবসায়ী বনে যাওয়া জনাব মাহমুদুর রহমান সম্পর্কে তার এক সাবেক নিয়োগকর্তা একবার আমাকে বলেছিলেন, কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দেওয়ার কারণেই কর্মক্ষেত্রে তার দ্রুত উন্নতি হয় এবং আর "এই প্রক্রিয়ায় তিনি উদ্ধত হয়ে উঠে থাকতে পারেন।"

পরে জনাব রহমান বিদেশি পুঁজি আকষর্ণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি সংস্থার প্রধান হন। তারপর কিছুদিন তিনি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একজন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান। এই 'উদ্ধত' লোকটি বিনিয়োগ বোর্ডের প্রধান থাকার সময় সিপিডির রেহমান সোবহানসহ নাগরিক সমাজের কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচিত হয়ে ওঠেন। আরও অনেকের সঙ্গে ব্যবসায়ী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করিয়েছিলেন। প্রায়ই টেলিভিশনের নানা টকশোতে তাকে সরকারের নীতির পক্ষে কথা বলতে দেখা যেত। সহ-আলোচকদের থামিয়ে দিতে গিয়ে খুব ভদ্রোচিত ভঙ্গিতে তা করতেন তাও বলা যাবে না।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও 'এনটিভি'র মালিক মোসাদ্দেক আলী ফালুর কাছ থেকে ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেকে 'আমার দেশ' পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ঘোষণা করার পর মাহমুদুর রহমানের চূড়ান্ত ঔদ্ধত্যের প্রকাশ ঘটে। পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রায়ই মন্তব্যের নামে যা লিখতেন, সেগুলো আমরা যাকে সাংবাদিকতা বলে জেনেছি, তার ধারেকাছে ছিল না। মন্তব্য প্রতিবেদন নামে যেগুলো ছাপা হত, সেগুলো আসলে ছিল একজন রাগান্বিত মানুষের চিৎকার-চেচামেচি, তর্জন-গর্জন। সবচেয়ে জঘন্য ছিল প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা প্রতিবেদন ও শিরোনামগুলো। এর সবই ছিল সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের মাধ্যমে ধর্মীয় উগ্রবাদে উসকানি দেওয়া ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর নিকৃষ্ট উদাহরণ।

সেদিন ঐ টেলিভিশন অনুষ্ঠানে 'আমার দেশ' পত্রিকার শিরোনামগুলো পর্যালোচনা করে আমরা চারজনই একমত হয়েছিলাম যে, তার কাজগুলো সাংবাদিকতার অনুমোদিত সীমার মধ্যে পড়ে না। এ ধরনের সাংবাদিকতার নিন্দা জানিয়ে 'সম্পাদক পরিষদ' কোনো বিবৃতি দিয়েছিল কি? "শুধুমাত্র একবার," এক সহকর্মী আমাকে শুধরে দিয়ে জানিয়েছেন, "চব্বিশে ফেব্রুয়ারির বিবৃতির পৃষ্ঠাপোষকদের একজন, পত্রিকাটির আক্রমণের শিকার হওয়ার পর।"

আরও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলা উচিৎ- মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করার সময় বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি সে রকম কাভারেজ পায়নি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম তখন প্রায় প্রত্যেক মুহূর্তের খবর প্রচার করেছে।  'আমার দেশ' পত্রিকার সমর্থকরা আমাদের ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যারা এই 'গ্রেপ্তার নাটকের' খবরে তেমন গুরুত্ব দেননি, তাদের মধ্যে পরিষদের সর্ব-সাম্প্রতিক বিবৃতির কয়েকজন সমর্থকও আছেন।

এবার আবদুস সালামের প্রসঙ্গ। তাকে নিয়ে কথা না বলাই ভালো। তাকে জানার এবং কীভাবে তিনি কাজ করেন তা দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। বন্ধ হয়ে যাওয়া টিভি চ্যানেলটি যখন আবার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, বছর দশেক আগে, তখন আমাকে তার দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল, আর আবদুস সালাম কোম্পানির একক বৃহত্তম অংশীদার হবার চেষ্টা করছিলেন। (নানান উপায়ে তিনি তা হতেও পেরেছিলেন।)

তারেক রহমান ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের মতো লোকদের সঙ্গে তার একটা অন্যরকম যুদ্ধ চলছিল। সালাম তখন সরকারি দমনের শিকার বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনার সমর্থন চাচ্ছিলেন (এবং পেয়েওছিলেন)।

২০০১-২০০৬ সময়কালের বিএনপি সরকারের সময় বন্ধ হয়ে যাওয়া একুশে টেলিভিশন আবার চালু করার জন্য আমরা চেষ্টা করছিলাম। লন্ডনে বিশ্বের অন্যতম প্রধান একটি সংবাদমাধ্যমের কাজ ছেড়ে এসে সেখানে আমি মাত্র কয়েক সপ্তাহ টিকতে পেরেছিলাম। জনাব সালামের বিরুদ্ধে এখন যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা সবারই জানা; তাই এখানে আর বলার দরকার নেই।

মোসাদ্দেক আলী ফালু সব সময়ই আলোচিত ব্যক্তি। তবে এখনকার প্রশ্ন হল, 'এনটিভি'র চেয়ারম্যান-কাম-মালিককে কেন গ্রেপ্তার করা হল? তার চ্যানেলে প্রচারিত কোনো কিছুর জন্য কি? কেউ কি বলতে পারবে যে, 'এনটিভি' তার অনুপস্থিতিতে তাদের অবস্থান পাল্টে ফেলেছে? অথবা জনাব সালামের গ্রেপ্তারের পর 'ইটিভি'ই তা করেছে? ওইসব 'ক্রাইম শো'র একটিও কি আপনারা দেখেছেন? তাহলে বুঝতে পারতেন কেন প্রশ্নটা করেছি। ইউটিউবে আমি কিছু কিছু দেখেছি।

এই সম্পাদকদের অনেকেই আবার মালিক হিসেবে তাদের সুবিধামতো প্রকাশ্যেই নিজেদের রূপটা বদলে ফেলেন। প্রতি বছর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাজেটপূর্ব যে আলোচনাগুলো হয়, তার একটি সেশনে  সম্পাদকদের সঙ্গে মন্ত্রীর বৈঠক হয়। সেখানে সম্পাদকদের মধ্যে যারা 'নোয়াব'এর সদস্য, তারা সে বৈঠকে জাতীয় অর্থনীতির চেয়ে নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্কের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন। ব্যবসায়ী হিসেবে যখন আপনি তদ্বির করবেন, তখন সম্পাদক হিসেবে আপনি আপনার ধার হারাবেন, যদিও বাংলাদেশে সম্পাদক হলেই সম্পূর্ণ দায়মুক্তি পাওয়া যায়, যদি না আপনি জঘন্য ধরনের একজন ভূমিদস্যু হয়ে থাকেন, এবং এক কপিও বিক্রি হয় না এমন এক পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক হন।

আমাদের দেশে যদি কোনো সম্পাদক বিকালে হাঁটতে গিয়ে ডাকাতের কবলে পড়েন, তাহলেও গোটা কমিউনিটি তাকে মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখাতে সব বন্দুক তাক করবে। 'নোয়াব'-এর সদস্য হিসেবে, এরাই আবার সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন-ভাতা প্রদানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ লড়াই চালান।

কোনো সাংবাদিক বা কর্মচারী যে কোম্পানিতে কাজ করেন তার মালিকানার অংশীদার হওয়াতে দোষের কিছু দেখি না, কিন্তু স্বার্থের সংঘাত ভিন্ন একটি বিষয়। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সংসদীয় কমিটির প্রধানরা যে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি করেন, সে ধরনের ব্যবসায় জড়িত থাকলে স্বার্থের সংঘাতের ব্যাপারে আমরা অভিযোগ করি। স্বার্থের সংঘাত অথবা অন্য কোনো ধরনের অনৈতিক কাজকর্মের জন্য জবাবদিহি থেকে দায়মুক্তি 'সম্পাদক' নামের এই অতিমানবদের জন্য বিশেষ কোনো অধিকার হতে পারে না।

যেমন, মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে জনাব মাহফুজ আনাম ও ড. কামাল হোসেনকে ব্র্যাকেটবন্দি করার ও তাদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্য নিয়ে কোনো সমস্যা দেখি না। এই বক্ততব্য তিনি দিতেই পারেন, সে অধিকার তার রয়েছে৤ তবে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে জনাব আনামের সংশ্লিষ্টতার পরিষ্কার প্রমাণ উপস্থাপন ছাড়া তাকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বক্তব্য সমর্থন করি না। আমরা সাধারণ মানুষ যা জানি, তার চেয়ে বেশি তথ্য জয়ের কাছে হয়তো থাকতে পারে।

২০০৭-২০০৮ এ এই সম্পাদকদের কয়েকজন সামরিক বাহিনীর দায়িত্বগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তাদের কমপক্ষে দুজন একই সঙ্গে 'নোয়াব' ও 'সম্পাদক পরিষদ'-এর সদস্য। এই দু'জনই জরুরি অবস্থার আবরণে সামরিক শাসন আনার কাজ তরান্বিত করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। এই 'অর্জন' নিয়ে প্রকাশ্যে গর্ব করতেও দেখা গেছে তাদের। 

২০০৭ সালের শুরুর দিকে কয়েক ডজন সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ গণমাধ্যমকর্মীর উপস্থিতিতে এক সভায় এই সম্পাদকদের একজন তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার কথা থামিয়ে দিতে চেষ্টা করেছিলেন। "এটা আমাদের সরকার এবং আমরাই এই সরকার এনেছি," সভায় উপস্থিতদের কাছে এটা অনেকবার শুনেছি।

এই সম্পাদকদের নাম প্রায় সবাই জানেন বলে আমি আর এখানে উল্লেখ করলাম না। দু'বছরের এই জরুরি আইনের আমলে গণমাধ্যম ও অনেক মৌলিক অধিকারের ওপর সরকারের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এই সম্পাদকদের মধ্যে কোনো অস্বস্তি ছিল না। তারা আমাদের সংবাদ মাধ্যমের ইতিহাসের জঘন্যতম উদাহরণগুলোর কয়েকটি সৃষ্টি করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে এমন কিছু প্রতিবেদন তারা প্রকাশ করেছেন তারা যেগুলোতে সূত্র উল্লেখ থাকত না; এভাবে ওইসব ব্যক্তির মানহানি করা হয়েছে অন্যায়ভাবে। তারা রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে চালানো তথাকথিত শুদ্ধি অভিযান সমর্থন করেছেন। রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের অনেকে যে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তা স্বীকার করতে আমার আপত্তি নেই। তবে এসব ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। গণমাধ্যমের কাজ ছিল সঠিক প্রক্রিয়ার পক্ষে কথা বলা।

ওইসব প্রতিবেদনের ওয়েবলিংকগুলো এখন আর নেই। আগ্রহীরা 'হার্ড কপি' পড়ে দেখতে পারেন। বহু বছরের মধ্যে এই প্রথম 'হার্ড কপির' পক্ষে কথা বলছি আমি। এর কিছু আমার কাছেও আছে।

রাজনীতিতে জড়ানো গণমাধ্যমের কাজ নয়- বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সব নষ্টের মূলে রয়েছে সম্পাদকদের ওই দোষ। এই সম্পাদকদের অন্তত কয়েকজনের বিষয়ে সন্দিহান হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, আর তা কেবল তাদের এক-এগারোর ভূমিকার জন্য নয়। 'সুশীল সমাজের' অনির্বাচিত সদস্যদের রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা দেখতে চান- তারা সর্বত্র সক্রিয়। যে কোনো মূল্যে দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কলঙ্কিত করতে তারা তৎপর। সেই অনুরণন ২৪ ফেব্রুয়ারির বিবৃতিতেও রয়েছে। 

[মূল ইংরেজি থেকে ভাষান্তরিত। লেখক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক।] 

http://bangla.bdnews24.com/media_bn/article932717.bdnews

Why I do not agree with Editors Council

There are reasons for one to be suspicious of at least some of these editors, and not just for their 1/11 role

http://bdnews24.com/media-en/2015/03/02/why-i-do-not-agree-with-editors-council

RELATED STORIES


__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___