Banner Advertiser

Monday, July 13, 2015

[mukto-mona] প্রকাশের জন্যে--



গাফফার চৌধুরী এলেন, চলেও গেলেন 


মুক্তিবুদ্ধি চর্চার মহানায়ক আবদুল গাফফার চৌধুরী নিউইয়র্ক এলেন, একাশি বছর বয়সে একাত্তরের মত ফাইট করলেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে, তারপর চলেও গেলেন বিজয়ীর বেশে। পেছনে রেখে গেলেন একরাশ প্রশ্ন। এসেছিলেন হাসিখুশি প্রফুল্ল মনে, গেলেন কিছুটা চিন্তাক্লিস্ট। চিন্তা নিজেকে নিয়ে নয়, দেশকে নিয়ে। বাংলাদেশকে কি পারবে এর আবহমান কালের ঐতিহ্য মুক্তিবুদ্ধির চর্চা অব্যাহত রাখতে? পরক্ষণে এর উত্তরও তিনি নিজেই দিয়ে গেছেন, বলেছেন, 'বাংলাদেশে তালেবানী পতাকা উড়বে না'। যাবার আগে রোববার শেষ প্রকাশ্য সভায় তিনি বলে গেলেন, 'আমি আশাবাদী, শত অপপ্রচার ও প্রতিরোধের মধ্যে আপনারা এই যে সভা আয়োজন করেছেন, তাতে মনে হয়, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিই বিজয়ী হবে'।

কি ঘটেছিলো নিউইয়র্কে? ৩রা জুলাই বাংলাদেশ মিশনে তিনি দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। আমন্ত্রিত হলেও আমি উপস্থিত ছিলাম না। রাতেই দু'তিন জন অভিযোগ করলেন, ফটো সেশনের কারণে অনেকেই তাদের প্রিয় ব্যাক্তিত্ব গাফফার চৌধুরীর কাছে ঘেষতে পারেননি। তাত্ক্ষনিক ইন্টারনেট ক্লিপিং, ছবি বা সংবাদে বোঝা গেল জমজমাট অনুষ্টান হয়েছে। পরদিন নেটে কিছু হেডিং দেখে 'অশনিসংকেত'-এর আশংকা করলাম। দু'একটি নিউজে উস্কানি দেখলাম। দু'এক জনের সাথে কথা বললাম, তারা আস্বস্থ করলেন, জানালেন, উনি এমন কিছু বলেননি যে সমস্যা হতে পারে।

সেদিনই বিকালে এক ঘরোয়া আড্ডায় গাফফার চৌধুরীর সাথে দেখা। দেখেই তিনি এমন এক সম্বোধন করলেন যে, শুনলে হিন্দুরা ক্ষেপে যাবে! বললাম, গাফফারভাই মিশনে কি বলেছেন, মনে হয় আগুন তো প্রায় লাগছে। আড্ডায় যা হয়, সবাই সবকথা ঠিকমত শুনেনা। তাই কেউ পাত্তা দিলেন না। ড: নূরন নবীর বাসভবনে ওই আড্ডা ছোট হলেও শহরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু এ প্রসঙ্গ আর ওঠেনি। পরদিন রোববার বেশ দেরিতে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আগুন ইতিমধ্যে বেশ ছড়িয়ে পড়েছে। সেদিন সন্ধ্যায় একটি অনুষ্ঠান ছিলো তা বাতিল হয়। স্থান পরিবর্তন করে অন্যত্র সভা করার প্রচেষ্টাও ভেস্তে যায়। মৌলবাদীরা মিছিল করে। আয়োজক একজন মুক্তিযোদ্ধা কিছুটা নাজেহাল হন।

এরই মধ্যে বহু বক্তৃতা-বিবৃতি দেখি বা শুনি। আওয়ামী লীগের বড়নেতার একটি ভিডিও ক্লিপ শুনি। তাতে তিনি যা বলেন তা অনেকটা এরকম: 'আওয়ামী লীগ ইসলামের বিরুদ্ধে কোন কথা সহ্য করেনা; গাফফার চৌধুরীর বক্তব্য ইসলাম বিরোধী কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে'। অথচ মিশনের মিটিং-এ ওনারা উপস্থিত ছিলেন, মিডিয়ায় গাফফার চৌধুরীর দুই পাশে স্বামী-স্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল ছবি এসেছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, মিশনের সভায় গাফফার চৌধুরীর বক্তব্যের সামান্য প্রতিবাদও হয়নি। তথায় উপস্থিত শ'দুই মানুষের পঁচানব্বই শতাংশই  জ্ঞানীগুণী, প্রগতিশীল মুসলমান। সবাই বক্তৃতা শুনলেন, হাততালি দিলেন, ছবি তুললেন, কারো মনে আচড়ও লাগলো না; অথচ আটচল্লিশ ঘন্টার ব্যবধানে পরিস্তিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেল!!

বিএনপি ও মৌলবাদীরা ঘোষণা দিলো, গাফফার চৌধুরীকে নিউইয়র্কে আর সভা করতে দেয়া হবেনা। জামাতীরা তলে তলে মুসল্লীদের ক্ষেপিয়ে দিলো। তারা তওবা করার আহবান জানালো। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে গাফফার চৌধুরীকে 'মুরতাদ' ফতোয়া দিলেন। বিএনপি যখন ঘোষণা দেয় সভা করতে দেয়া হবেনা; তখন আওয়ামী লীগের ওপর দাযিত্ব বর্তায় ওই সভা করার। কিন্তু আওয়ামী লীগ কিছু করেনা। দাযিত্ব তখন এসে পরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির ওপর। তারা তাদের মহান দাযিত্ব পালন করেন। পত্রিকা, মিডিয়া, নেটে শ'শ' স্টেটমেন্ট আসে গাফফার চৌধুরী ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। সবাই তারপাশে দাড়ায়।

কিন্তু কে শুনে কার কথা! মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ ধর্মান্ধ শক্তি পরিস্থিতি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নেবার প্রয়াস নেয়। ফেইসবুকে আমি একটি পোস্টিং দেই, জামাত-বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের কারণে গাফফার চৌধুরীর সভা পন্ড হয়েছে'। দু'এক জন এর বিরোধিতা করে লম্বা ফিরিস্তি দেন। কয়েক ঘন্টার মধ্যে গাফফার চৌধুরীর ভিডিও স্টেটমেন্ট বেরোয়: 'আওয়ামী লীগের অন্তর্কলহে সভা পন্ড হয়েছে'। যাহোক, এরমধ্যে তিনি বস্টন যান এবং সফল সভা করেন। ফিরে এলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি রোববার বাঙালী জনাকীর্ণ জ্যাকসন হাইটস এলাকায় সভা দেয়, গাফফার চৌধুরীর নাগরিক সম্বর্ধনা। আওয়ামী লীগের নীচতলার নেতাকর্মীরা এবং সবাই ঝাপিয়ে পরে এইসভা সফল করতে। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।

বিএনপি-জামাত, মৌলবাদীরা বসে ছিলোনা, তারাও সকল চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শেষপর্যন্ত ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয়। সভাস্থল কর্তিপক্ষকে কে বা কারা হুমকি দেয়, পুলিশ আসে, নিরাপত্তার কারণে কর্তিপক্ষ ভেন্যু বাতিল করে। আয়োজকরা সকাল দশটায় একটি তিনতারা হোটেলের সভাকক্ষ ভাড়া করে বিকাল তিনটায় সকল বাঁধাবিপত্তি উপেক্ষা করে গাফফার চৌধুরীর নাগরিক সম্বর্ধনার কাজ সমাপ্ত করে। যারা ঘোষণা করেছিলো গাফফার চৌধুরীর সভা করতে দেবেনা, তাদের মুখে ছাই দিয়ে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি একুশের গানের প্র্নেতাকে যথাযোগ্য সন্মান জানায়। সম্পন্ন হয় নাগরিক সম্বর্ধনার কাজ।

যাবার আগে ওটাই ছিলো গাফফার চৌধুরীর শেষ প্রকাশ্য সভা। সেখানে তিনি আশা-নিরাশার কথা বলেছেন। বলেছেন, ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কামাল আতাতুর্কের মত বিপ্লবী সরকারের কথাও তিনি বলেছেন। এও বলেছেন শেখ হাসিনার পক্ষে একা এই দানব ধ্বংশ করা সম্ভব নয়, সবাইকে একসাথে এর বিরুদ্ধে সামাজিক বিপ্লব ঘটাতে হবে। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, মৌলবাদ বাংলাদেশের প্রধান অন্তরায়। বিভিন্ন সময়ে মুরতাদ ফতোয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, কাজী নজরুলকে এরা 'কাফের' উপাধি দিয়েছিলো; এখন তারা তাকে বলে 'মুসলিম জাগরণের কবি'। কবি ইকবালকে-ও এরা 'কাফের' ঘোষণা দিয়েছিলো, এই কবি ইকবাল এখন পাকিস্তানের জাতীয় কবি এবং এরা এখন বলে 'আল্লামা ইকবাল'।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনাকেও এরা বহুবার কাফের বলেছে এবং আওয়ামী লীগকে তো বলে, 'ভারতের দালাল'। 

প্রশ্ন হলো, গাফফার চৌধুরীর বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ করলো, ফতোয়া দিলো, এরা কারা? সমস্যাটা সেখানেই। সাধারণ মানুষ এরমধ্যে নেই। এরা সেই পুরানো চিহ্নিত মহল। মিশনের সভায় যারা যোগ দিয়েছিলেন তারা কেউ বিক্ষোভে যোগ দেননি, বরং অনেকেই গাফফার চৌধুরীর পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন। এর মানে হলো, কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে একটি মহল এথেকে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। পবিত্র রমজান মাসে ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে কেউ কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার প্রয়াস নিচ্ছে।

গাফফার চৌধুরী শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতিষ্টান। তার অসন্মান একুশের অসন্মান। একুশের পথ বেয়ে আমাদের স্বাধীনতা। একুশ মানে বাংলাভাষা। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ। যারা   গাফফার চৌধুরীর বিরোধিতা করেছেন তারা প্রায় সবাই একুশের বিরোধী, স্বাধীনতার বিরোধী; বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বা বাংলা ভাষার বিরোধী। এরা গণতন্ত্র ও প্রগতির বিরোধী। এরা পাকিস্তানপন্থী স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। এদেরই পূর্বসূরীরা রাজাকার-আলবদর ছিলো, এরাই যুদ্ধপরাধীদের বিচার চায়না এবং এরাই বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানাতে চায়। এরা কেউ থাকবে না। আবদুল গাফফার চৌধুরীই থাকবেন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন মহান একুশ থাকবে, ততদিন গাফফার চৌধুরী থাকবেন।

শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
নিউইয়র্ক। ১৪ জুলাই ২০১৫।






__._,_.___

Posted by: Sitangshu Guha <guhasb@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___