সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা
সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা। দেবী দুর্গার আগমন সংক্ষুদ্ধ পৃথিবীতে শান্তি বয়ে আনুক, সবার জীবন হউক উচ্ছল শান্তিময়। এই শারদীয়া শুভেচ্ছা বার্তাটি যখন লিখতে বসেছি ঠিক তখনই দেখলাম পূজা উপলক্ষে এক ভাষণে নৌমন্ত্রী বলেছেন, 'বিএনপি জামাত অসুরদের শায়েস্তা করতে হবে'। দূর্গা পূজার মূল থিমটি হচ্ছে 'অসুরের বিরুদ্ধে সুরের বিজয়' অর্থাৎ অসুন্দর/অসত্যের বিরুদ্ধে সুন্দর/সত্যের বিজয়। অসুর কি শুধু বিএনপি-জামাতে আছে, অন্য কোথাও নেই? অসুর সর্বত্রই আছে, মন্ত্রী বা সাংসদ যারা ক্ষমতার দাপটে জোর পূর্বক হিন্দু সম্পত্তি দখল করেন তারাও অসুর বটে! যারা মুর্ক্তি ভাঙ্গে তারাও অসুর। আমরা বাংলাদেশে সকল দলের অসুরদের বিরুদ্ধে সুরের বিজয় কামনা করছি।
পত্রিকায় দেখলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মুর্ক্তি ভাঙ্গার বিরুদ্ধে আইন করা হবে। ১৯৭২ সালের অক্টোবরে ঠিক এমনি দুর্গাপূজার মহাষ্টমীর দিন সারাদেশে একযোগে পরিকল্পনামফিক মন্দির ও প্রতিমার ওপর হামলা হয়। বাঙালি চেতনায় সেদিন এনিয়ে কেউ উচ্চ্বাচ্য করেনি। স্বাধীন বাংলাদেশে মন্দির বা মুর্ক্তিভাঙ্গার সেই শুরু; আজো সেই ধারা অব্যাহত আছে। সেদিনও ঐ ঘটনার বিচার করার তাগিদ কেউ অনুভব করেননি বা চার দশক পর আজো তা কেউ অনুভব করেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ, তিনি অন্তত: বলেছেন। চুয়াল্লিশ বছরে বাংলাদেশে হাজার হাজার মন্দির ভেঙ্গেছে, কিন্তু এই অপরাধে একজনও সাজা পেয়েছেন এমন নজির নাই। ফেইসবুকে একজন প্রশ্ন রেখেছেন, বাংলাদেশে মুর্ক্তি ভাঙ্গা বন্ধ হবে কবে? আর একজন উত্তর দিয়েছেন, যখন কোন হিন্দু থাকবে না বা সব মন্দির ভাঙ্গা শেষ হবে।
মুর্ক্তি ভাঙ্গলে বা মন্দিরে আগুন দিলে হিন্দুর ধর্মীয় অনুভুতিতে কি আঘাত লাগে? ছোটকালে অনেকের 'কাতুকুতু' থাকে। বড় হতে হতে আঘাতে আঘাতে কাতুকুতু চলে যায়। হিন্দুর অনুভুতিটাও ওই রকম, চুয়াল্লিশ বছরে সেটা ভোথা হয়ে গেছে। ক'দিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে প্রতি উপজেলায় একটি করে আধুনিক মসজিদ নির্মান করা হবে। মন্দিরের কথা বলতে সম্ভবত: তিনি ভুলে গেছেন। কিছুদিন আগে শ্রদ্ধেয় গাফফার চৌধুরী নিউইয়র্ক এলে তাকে এক হিন্দু বাড়ী দখলের কাহিনী বলি। শুনে তিনি বলেছিলেন, হিন্দুর সম্পত্তি তো 'গনিমতের' মাল। প্রতিমাও কি গনিমতের মাল? এ সময়ে দেশে বা প্রবাসে পূজার ঢোল বাজছে। হোমরা-চোমরারা অনেকে প্রধান অতিথি হয়ে মন্দিরে মন্দিরে যাবেন, সুন্দর সুন্দর কথা বলবেন, সম্প্রীতির বাণী শোনাবেন। তারপর আবার 'যেই লাউ সেই কদু'। এ প্রসঙ্গে আমার একটি তথ্য জানতে বড় ইচ্ছে করছে! সেটা হলো, কেউ কি কখনো খালেদা জিয়াকে কোন পূজা মন্ডপে যেতে দেখেছেন?
আমাদের দেশে এক্ষণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নহর বইছে। পূজা এলে এমনই হয়। এবার অনেক বেশি পূজা হচ্ছে। বেশি পূজা মানে কি বেশি সম্প্রীতি? এখন পর্যন্ত তেমন বড় ধরনের গোলযোগের সংবাদ পাইনি। সরকার বা সংশ্লিষ্ট সবাই এজন্যে বাহবা পেতে পারেন। হিন্দুরা যে ভালো আছে, শান্তিপূর্ণ পূজা এর প্রমান, দেশে-বিদেশে এমত অকাট্য প্রমান অগ্রাহ্য করা কষ্টকর। কিন্তু এর পেছনে সরকারের কত টাকা খরচ হয়েছে সেই হিসাব কি কেউ রাখেন? শান্তি বজায় রাখতে সরকার র্যাব-পুলিশ-বিজিবি সবই মোতায়েন করেছেন। শুনেছি কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা প্রহরায় নেমেছেন। আরো শুনলাম, কোথায় নাকি এমনকি বিএনপি-জামাতও নেমে পড়েছে শান্তি রক্ষায়। হিন্দুদের প্রতি এমন দরদ শুধুমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব!
আমাদের দেশে শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেয়ার একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে যথেস্ট যুক্তি আছে। যারা এর পক্ষে তাদের যুক্তি হলো, শিয়াল মুরগী খায় তা সবার জানা। সুতরাং শিয়ালের জিন্মায় মুরগি রেখে গেলে ব্যাটা আর কোন ফন্দি-ফিকির করতে পারবেনা। সত্যি সত্যি যদি আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামাতের সুমতি হয়, তাহলে নিশ্চিত বলা যায়, 'সামনে আছে শুভদিন'। আসলে কি তাই? কথায় বলে, 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরের মেঘ দেখলে ভয় পায়'। এত পুলিশ মিলিটারী দেখে আমরাও ভীত! পুলিশ প্রহরায় কি শান্তিতে ঘুমান যায়? প্রশ্ন জাগে, পূজা মন্ডপে পুলিশ না থাকলে কি হবে? কই, ঈদের দিন তো পুলিশ দিতে হয়না!
লেখাটা যখন প্রকাশিত হবে তখন হয়তো বিজয়া এসে পড়বে, সবাইকে তাই বিজয়ার আগাম শুভেচ্ছাও জানিয়ে রাখলাম।
শিতাংশু গুহ, কলাম লেখক।
নিউইয়র্ক, ২০শে অক্টোবর ২০১৫।
SitangshuGuha 646-696-5569
__._,_.___