'বদি রুমি জুয়েল আলতাফ ভাইয়ের আঙুল কেটেছিল নিজামী'
'অস্ত্র ও গ্রেনেডের খবর পেতে আমার বুড়ো আঙুল কেটে দিয়েছিল মতিউর রহমান নিজামী। আমার চোখের সামনে গেরিলা যোদ্ধা বদি, রুমি, জুয়েল, আজাদ ও সুরকার আলতাফ মাহমুদকে নির্যাতন করেন নিজামী, মুজাহিদ ও ক্যাপ্টেন কাইয়ুম।' একান্ত সাক্ষাৎকারে মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জেলাল বুধবার প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন। অপরদিকে, মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজে পাক আর্মিদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতেন নিজামী ও মুজাহিদ। এমন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী যুবক রুস্তম আলী মোল্লা। তিনি বলেন, 'পাক আর্মির পিকঅ্যাপ ভ্যানে করে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল কলেজে আসতেন নিজামী মুজাহিদ, মইনউদ্দিনরা। তাদের কাছে থাকত এলএমজি ও স্টেনগ্যান।'
মুক্তিযুদ্ধকালে নিজামীর অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী বিচ্ছু জালাল ও রুস্তম আলী মোল্লা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, কিভাবে নিজামী-মুজাহিদরা পাক আর্মিদের সহযোগিতা করেছে। কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
বিচ্ছু জালালের চোখে নিজামী: ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল মতিউর রহমান নিজামী ইস্কাটন গার্ডেন সার্কিট হাউস থেকে আমাদের এক বোনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল নিজামীরা। সেই সময় যখন হিট অ্যান্ড রান পদ্ধতিতে ঢাকা শহরে পাকিস্তানি আর্মি এবং আল বদরদের ওপর চোরা গোপ্তা চালাচ্ছিলাম, তখন ৩০ আগস্ট আমি আল বদরদের হাতে ধরা পড়ি। নাখাল পাড়ায় এমপি হোস্টেলের পাশে একটা গলির কাছের একটা রুমে নিজামী আমাকে নিজ হাতে টর্চার করেছে। সেখানে আমার সহযোদ্ধা বদি, রুমি, জুয়েল, আজাদ, সুরকার আলতাফ মাহমুদ আরও কয়েকজন ছিল। তাদেরকে অর্ধমৃত অবস্থায় আমার চোখের সামনে মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, চৌধুরী মঈন উদ্দিন, ক্যাপ্টেন কাইয়ুমসহ আরও অনেকে নির্মমভাবে টর্চার করেছে।
খুর দিয়ে নিজামী আমার বুড়ো আঙুল কেটে দিয়েছিল জানিয়ে বিচ্ছু জালাল বলেন, আমার কাছে কী কী অস্ত্র আছে, আমার হ্যান্ড গ্রেডটা কোথায় রেখেছি তা জানার জন্য আমার ওপর টর্চার করেছে নিজামী। রুমী, বদি, আলতাফ ভাইয়ের আঙুল কেটেছে মতিউর রহমান নিজামী, মুজাহিদরা। রাইফেলের বাট দিয়ে আমার মাথার আঘাত করেছিল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ আমাকে একবার নির্যাতন করে, আরেকবার জুয়েল, বদি,, রুমিকে, আলতাফ মাহমুদকে টর্চার করেছে নিজামীরা। এমনকি অর্ধমৃত অবস্থায় তাদের টর্চার করেছে নিজামী, মুজাহিদ ও ক্যাপ্টেন কাইয়ুম। দুর্ধর্ষ আল বদর কমান্ডার নিজামীকে আমি দেখেছি, বাসায় বাসায় তল্লাশি চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে নিয়ে যেতে।
বিচ্ছু জালাল আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে দেখেছি মতিউর রহমান নিজামী আলী আহসান মুজাহিদরা বাসের মধ্যে কাঁদা দিয়ে লেপে কারফিউর মধ্যে যেকোনো ঘরের ভেতর ঢুকে যুবক ছেলেদের ধরে নিয়ে আসছে। তাদের নির্মমভাবে হত্যা করছে।
রুস্তম আলী মোল্লা: মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল কলেজের রুস্তম আলী মোল্লার বাবা নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন। ওই কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন তিনি। তখন তার বয়স ছিল একুশ। নিজামী ও মুজাহিদ প্রায় প্রতিদিনই ফিজিক্যাল কলেজে আসতেন। এ ব্যাপারে রুস্তম আলী মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, 'আমি তখন ওই কলেজে থাকতাম। আমার বাবাও সে'খানে থাকত। আমার বাবা নিরাপত্তা প্রহরী ছিল। মতিউর রহমান নিজামী প্রতিদিন মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল কলেজ ট্রেনিংয়ে আসতেন। কোনো দিন সকাল আসত আবার কোনো দিন বিকেলে আসত। পাক আর্মিদের সঙ্গে বসে চা-নাশতা করতেন নিজামী ও মুজাহিদ। তাদের সঙ্গে মিটিং করত। পাক আর্মিদের যে পিকআপ ভ্যান ছিল ওই পিকআপ ভ্যানে করে তিনি আসতেন। আর নিজামী, মুজাহিদ, মইনউদ্দিন, আশরাফ এলএমজি, স্টেনগান নিয়ে চলত। আমার চোখের সামনে কলেজে অগণিত মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে গণকবরও রয়েছে। নারীদেরও নির্যাতন করা হতো।
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/732505/ 'বদি-রুমি-জুয়েল-আলতাফ-ভাইয়ের-আঙুল-কেটেছিল-নিজামী'
নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল
ফাঁসির দণ্ড বহালের খবর শুনেছেন নিজামী
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/732724/
এমন রায়ের অপেক্ষায় ছিলেন বুদ্ধিজীবীদের সন্তানেরা
__._,_.___