Banner Advertiser

Friday, February 26, 2016

[mukto-mona] ঐক্য পরিষদের প্রেস-কনফারেন্সের লিখিত বক্তব্য:




---------- Forwarded message ----------
From: Bapi Adhikary <noel4all@gmail.com>
Date: 2016-02-26 15:42 GMT-05:00
Subject: Re: Press Conference
To: Sitangshu Guha <guhasb@gmail.com>


PRESS CONFERENCE
02-26-2016

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র শাখার পক্ষ থেকে উপস্থিত সকল প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সকল সুভানুধ্যায়ীদের স্বাগত জানাচ্ছি।

বিশেষ করে আমাদের সংগঠনের ডাকে আজকের এই প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত সাংবাদিক ভাইদের প্রতি আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

সাংবাদিকগন জাতির কন্ঠস্বর, সমাজের দর্পন, গভীর পর্যবেক্ষণকারী, বিশ্বের বিবেক বলেই আমরা আজ আপনাদের আমন্ত্র জানিয়েছি। সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র তথা
মানুষের স্বার্থে আপনাদের কর্ম এবং দায়িত্বপালন আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। আপনাদের শাণিত লেখনী, প্রচার ও প্রকাশ যে কোন অপশক্তিকে পরাজিত করতে
পারে। আপনাদের ক্ষুরধার তীক্ষ্ম দৃষ্টি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বিষয়কেও এড়িয়ে যায় না। মানুষের জন্য যা কিছু কল্যানকর তার জন্যই আপনাদের জীবনাদর্শ উৎসর্গকৃত বলে, আমরা আজ আপনাদেরকে আমাদের পাশে দাঁড়াবার জন্য আহ্বান করেছি। ধন্যবাদ এই ক্রান্তিকালে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবার জন্যে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র সংগঠনটির জন্ম বহির্বিশ্বের বিভিন্ন কর্মসূচীর সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সমর্থনে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া ও পালন করা। এটা কোন রাজনৈতিক সংগঠন নয়। কোন রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য আমরা কোন কর্মসূচী গ্রহন করি না এবং বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন কিংবা বিরোধীতাও আমাদের
সংগঠনের লক্ষ ও উদ্দেশ্য নয়। আমাদের সংগঠনের নামের মধ্যেই এর ক্রিয়াকলাপ ও তাৎপর্য প্রতীয়মান।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন একটি দৈনন্দিন ঘটনা। বিদায়ী বছরে এমন একটি দিনও হয়ত পাওয়া যাবে না, যেদিন কোন না কোন মিডিয়ায়, দেশের কোথাও না কোথাও হিন্দু মন্দির বা মূর্তি ভাঙচুর, হিন্দুর জমি দখল, নাবালিকা ধর্ষণ ও ধর্মান্তরিতকরণ বা দেশত্যাগের হুমকী ইত্যাদি খবর প্রকাশিত হয়নি।

আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে বাংলাদেশের সাম্প্রতীক সকল ঘটনা প্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছি।

বিগত ৬ মাসে আমরা ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যেভাবে হত্যা, ধর্ষন, লুটপাট, সম্পত্তি দখল, মুক্তপণ আদায় সহ সামগ্রিকভাবে অত্যাচারের
যে ভয়াবহ চিত্র অবলোকন করলাম, তা ‌‌‍৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদরদের অত্যাচার এবং ধ্বংসলীলাকেও হার মানায়। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু
সম্প্রদায় এখন মধ্যযুগীয় বর্বরতার শিকার।

মাত্র ৪ দিন পূর্বে গত ২১ শে ফ্রেবুয়ারী ২০১৬ তারিখে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে শ্রীশ্রী সন্তো গৌড়ীয় নামক হিন্দু মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা এবং গুলিবিদ্ধ ভক্ত গোপালচন্দ্র রায়ের মুমূর্ষকাতর অবস্থা, খুব
সহজেই নিরাপত্তাহীন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের করুণ পরিস্থিতির নির্বাক চিত্রায়ন। দু'-একজন কে গ্রেফতার করেই সরকার দায়িত্ব পালন করেছে বলে আমরা মনে করি না । আমরা এই বিষবৃক্ষ সমূলে উৎপাটন চাই। দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি দেখতে চাই ।

আমরা দেখেছি- তুলসী রানীর পেটে লাথি দিয়ে ৭ মাসের বাচ্চার গর্ভপাত, প্রকাশ্য দিবালোকে নিজগৃহে ঢুকে খ্রীষ্টান পুরোহিতের গলায় ছুরি চালানোর দৃশ্য, নাগেশ্বরী পৌরসভার ভগিরভিটা গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের শ্রাদ্ধ
অনুষ্ঠানে হামলা করে জমি দখলের চেষ্টা।

সংখ্যালঘু নারী ধর্ষন এবং প্রতীমা ধ্বংস এখন বাংলাদেশে উৎসব এর আরেক নাম।

আমরা ক্ষুব্ধ এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়ের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং গুলিবিদ্ধ মুমূর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন ভক্ত গোপালচন্দ্র রায়ের আশু আরোগ্য কামনা করছি।

সুপ্রিয় বন্ধুগন,
আমরা আপনাদের ও বিবেকবান মানুষের জ্ঞাতার্থে কিছু তথ্য উপাত্ত তুলে ধরছি:

২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কমপক্ষে ৬৫টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩১ জন।

ডিসেম্বর ২০১৫ তে, দুজন খ্রিস্টান ধর্মযাজকসহ ডিসেম্বরে বড়দিন উদযাপনের আগে সারা দেশে ৩৭ জন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। ঘরবাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটে ৮টি। বিভিন্ন মন্দিরের হামলার ঘটনায় ২১টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১ জন সংখ্যালঘু নারী, অপহরণ ও এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ২জন। ২টি পরিবারকে উচ্ছেদসহ কমপক্ষে ৫ শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারকে উচ্ছেদের তৎপরতার কথা জানা গেছে, যেসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতকারীরা রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাবকে ব্যবহার করেছেন।

অন্যদিকে এসব ঘটনার মধ্যে কমপক্ষে ৫টিতে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যোগসাজশে দুষ্কৃতকারীরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ১৪টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ এবং মানবাধিকার সংস্থা শারি এর পর্যবেক্ষণে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সারা দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর
এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তথ্য জানা গেছে।

সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলের ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতার আরো ১টি অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ৫৫
হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদের তৎপরতা বন্ধের দাবিতে গত ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

২ ডিসেম্বর ২০১৫ দুর্বৃত্তদের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নিহত হন নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার মানস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্জুন বিশ্বাস।

৩ ডিসেম্বর ২০১৫ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌরসভার শহরগাছী এলাকায় এক আদিবাসী নারীকে ধর্ষণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কাজিরবন কালী মন্দিরের মূর্তি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।

৫ ডিসেম্বর ২০১৫ শনিবার পর্যটন কেন্দ্র দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কান্তজিউ মন্দির প্রাঙ্গণে রাসমেলার যাত্রা প্যান্ডেলে দুর্বৃত্তের ছোড়া হাতবোমা বিস্ফোরণে আহত হন ৯ জন।

৮ ডিসেম্বর ২০১৫ রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ থানাধীন নিউ শহীদ লেন এলাকায় শ্রীশ্রীশ্যামা কালীবাড়ির মন্দিরে দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায়। এ সময় মন্দিরের আসবাবপত্র ও অন্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। এতে ৬ জন আহত হয়।

১০ ডিসেম্বর ২০১৫ দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ডাবোর ইউনিয়নের জয়নন্দ ডহচি গ্রামে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) মন্দিরে গুলি ও বোমা
হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। রাত সোয়া ৮টার দিকে মন্দিরে কীর্তন ও ধর্মসভা চলার সময় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ২জন গুলিবিদ্ধসহ ৪জন আহত হয়।

১৫ ডিসেম্বর ২০১৫ কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের ভাড়রা গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রকাশ্যে শিব মন্দিরে হামলা ও ৩টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। হিন্দু অধ্যুষিত ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চালানোর কারণে অনেকেই তাদের জমি ছেড়ে অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছেন।

১৫ই ডিসেম্বর ২০১৫ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ার জহরেরকান্দি গ্রামের উত্তরপাড়া সার্বজনীন মনসা মন্দিরে মনসা মূর্তি ও একই গ্রামের রামকৃষ্ণ মিশনের রাধা গোবিন্দ মন্দিরের রাধাকৃষ্ণের মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা বাজারের শত বছরের পুরনো সার্বজনীন কালীমন্দিরের ৭টি প্রতিমা ভাঙচুর করে দুবৃর্ত্তরা।

২০ ডিসেম্বর ২০১৫ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় দুর্বৃত্তরা বাউসী বাঙালিপাড়া পদ্মা পূজা মন্দিরের পদ্মা প্রতিমা ভাঙচুর করে। এ মাসে মর্মান্তিক ২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে নেত্রকোনায় ও ঝিনাইদহে।

২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ রাতে নিখোঁজ হয় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপেজলার খোদ্দরায় গ্রামের বলয় দাসের ছেলে সৌরভ দাস। পরদিন দুপুরে সৌরভের গলাকাটা লাশ পাওয়া যায় উক্ত গ্রামের নির্মাণাধীন একটি ভবনে।

সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়নের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয় ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা।

৯ ডিসেম্বর ২০১৫ চাঁদা না পেয়ে ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়ার পালপাড়ায় হামলা ও অগ্নিসযোগ করে স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। এতে আহত হয় ৮জন।

বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানেও হামলার ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইলে।

গত ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে না দেওয়ায় নান্দাইল উপজেলার উত্তর মুশুলি গ্রামে সনাতন ধর্মের একটি বিয়েতে হামলা চালায় একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক।

মর্মান্তিক এসিড সন্ত্রাস এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২জন সংখ্যালঘু নারী। গত ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ঢাকার ধামরাই উপজেলার টোপোর বাড়ি এলাকায় দুর্বৃত্তের ছোড়া এসিডে ঝলসে যায় কলেজছাত্রী মল্লিকা চক্রবর্তীর
মুখমণ্ডল।

কেবল মাত্র ১টি মাসের যে খতিয়ান তুলে ধরলাম তাতেও সকলে অনুমান করতে পারবেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অবস্থ্ কতটা ভয়াবহ। কোন কিছুতেই যেন
সরকারের টনক নড়ছে না!

আমরা স্তম্ভিত! সভ্য সমাজে, স্বাধীন বাংলাদেশে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ধর্মীনিরপেক্ষতা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার দাবিদার সরকার ক্ষমতায় আসীন থাকা সত্ত্বেও যদি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় প্রতিকার না পায়, নিরাপত্তা না পায় এবং বিচারহীনতা পরীলক্ষিত হয়, তবে মৌলবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গীগোষ্ঠী উৎসাহিত হয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

আমরা যদি আরেকটু পিছনের দিকে বিগত বছরগুলোর সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পরিসংখ্যান তুলে ধরি, তাহলে তাদের জীবন ও নিরাপত্তা পরিস্হিতি সম্পর্কে
সাম্যক ধারনা পাওয়া যাবে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম আদম শুমারি অনুযায়ী মুসলিম ছিল ৮৫.৪ ভাগ এবং হিন্দু ছিল ১৩.৫ ভাগ। ১৯৮১ সালের দ্বিতীয় আদম
শুমারি অনুযায়ী, সেই সংখ্যা যথাক্রমে ৮৬.৭ ভাগ ও ১২.১ ভাগ। ১৯৯১ সালের আদম শুমারিতে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৮.৩ ভাগ ও ১০.৫ ভাগে। ২০০১ সালের আদম শুমারিতে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৯.৭ ভাগ এবং ৯.২ ভাগে। আর ২০১১ সালের সর্বশেষ আদম শুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশে মুসলিম ও হিন্দু জনসংখ্যা যথাক্রমে ৯০.৪ ভাগ এবং ৮.৫ ভাগ। আদম শুমারির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে এই দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে প্রায় ৯ লাখ। ২০১১ থেকে ২০১৫ এই চার বছরে আর কত হিন্দু দেশ ছেড়ে গেছে সেই পরিসংখ্যান অবশ্য সরকারি নথিতে নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই সময়ে অন্তত আরো ৪ থেকে ৫ লাখ হিন্দু দেশ ছেড়েছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশে এখন হিন্দু জনসংখ্যা শতকরা ৮ ভাগেরও কম।

২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যার মুসলিম ৯০.৪ ভাগ, হিন্দু ৮.৫ ভাগ, বৌদ্ধ ০.৬ ভাগ, খ্রিষ্টান ০.৩ ভাগ ও অন্যান্য ০.২ ভাগ। ২০১৫ সালের অনুমানিক হিসাব ধরলে দেশে মুসলিম জনসংখ্যা ৯১ শতাংশ অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে হিন্দু জনসংখ্যা ৮ ভাগের চেয়েও কমেছে। গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১লাখ হিন্দু দেশ ত্যাগ করছে। যার প্রধান কারণ কিন্তু নিরাপত্তাহীনতা। এই প্রবণতা চলতে থাকলে ২০২১ সালের আদম শুমারি আসতে আসতে দেশে হিন্দু জনসংখ্যা শতকরা ৫ বা ৬ ভাগে নেমে আসবে, যা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় সরকার যে চরমভাবে ব্যর্থ, সেই চিত্রই কেবল তুলে ধরে। দেশ থেকে সংখ্যালঘু জনসংখ্যা কমে যাবার এই একই চিত্র অন্যান্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্যও প্রায় সমানভাবে প্রযোজ্য।

এভাবে প্রতি বছর বিশাল সংখ্যক শুধুমাত্র সংখ্যালঘু জনসংখ্যা কমে যাবার প্রবণতা থেকেই দেশের মানুষের নিরাপত্তার ব্যাপারটি আন্দাজ করা সম্ভব।

দেশের সাধারণ মানুষ যে মোটেও নিরাপদে নেই, সেই চিত্র তো প্রতিদিনের সংবাদপত্র আর টেলিভিশনের খবর দেখলেই বোঝা যায়। সেখানে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারটি আরো আশংকাজনক।

আমাদের পরিস্হিতি আজ এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে আদম শুমারী নয়, আমাদের এখন লাশ শুমারী করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর
হাজার হাজার সংখ্যালঘু কমে যাবার বেশ কিছু ঋণাত্মক অনুসঙ্গ রয়েছে। সেগুলো
হল-

১.      নিরাপত্তাহীনতা
২.      সম্পত্তি বেদখল
৩.      ধর্মীয় উপাসনালয়ের উপর আঘাত             
৪.      আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি
৫.      পাড়ায় বা মহল্লায়  বসত ভিটায় হামলা       
৬.      সংখ্যালঘু নারীদের ধর্ষন
৭.      বিচারহীনতা                                      
৮.      দলীয় মাস্তানদের একক দৌরাত্ম
৯.      হুমকি           
১০.     খুন
১১.     গুম                                             
১২.     নির্যাতন ও নিপিড়ন
১৩.     দাঙ্গা আতংক                                     
১৪.     প্রশাসনিক ব্যর্থতা
১৫.     দেশত্যাগে বাধ্য করা 
১৬.‌     জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা  

আমরা শংকিত। আমাদের পরিবার পরিজন আজ নিরাপত্তাহীনতায়। আমরা ভীত সন্ত্রস্ত প্রিয় বাংলাদেশ নিয়ে। আমাদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। পারস্পারিক
সম্প্রীতির বাংলাদেশে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে যে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হচ্ছে সে দিকে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করার আমরা জোর দাবী জানচ্ছি।

আমাদের অন্যান্য দাবী সমূহ:

১. ধর্মীয় নৃগোষ্ঠির স্বার্থ রক্ষার জন্য আলাদা মন্ত্রনালয় গঠন এবং মন্ত্রী পরিষদ ও সংসদে ১৫% সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে ।
২. প্রশাসনিক উচ্চপদে আনুপাতিক হারে ধর্মীয় নৃগোষ্ঠির নিয়োগ দান করতে হবে।
৩. বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান করতে হবে।
৪. পুলিশ ও প্রশাসনের সকল স্তরে নিষ্ক্রিয়তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ ও সাজার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি চাই।
৬. সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন চাই এবং তাৎক্ষনিক ন্যূনতম ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরন ও পূর্নবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. পুলিশ বাহিনী, সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড ও গ্রামরক্ষী বাহিনীতে ১৫% সংখ্যালঘু নিয়োগ দান করতে হবে।
৮. সকল সন্ত্রাসীদের অর্থের উৎস ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, শিক্ষালয় ও প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারের বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
৯. উৎসব পালনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সাহাবুদ্দীন রিপোর্ট বাস্তবায়ন করতে হবে।
আমরা সরকারের কাছে সকল হত্যা, ধর্ষন, লুন্ঠনকারী, সন্ত্রাসী জঙ্গীগোষ্ঠীদের আশু গ্রেফতারপূর্বক দ্রুত বিচারের আওতায় এনে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করি।

সরকার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এবং বিচার করে প্রমাণ করুন তারা সংখ্যালঘু সমস্যা সমাধানে সত্যিকার অর্থেই আন্তরিক এবং যাতে করে ভবিষ্যতে
কেউ কোন ধরণের নির্যাতনের সাহস না পায়। মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার সম্ভব হলে কিংবা রাজন হত্যা মামলার দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে পারলে সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে নয় কেন?

বাংলাদেশ ১৯৭২ সংবিধানের আলোকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ হোক আমরা তা চাই। আমরা ৭২ এর সংবিধানের আংশিক নয়, পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই।

পরিশেষে, আমরা সরকারের সকল উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি, অসমাপ্ত কাজের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য শুভ কামনা করছি। সংখ্যালঘু
সম্প্রদায়ের সকল বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ রাখছি। সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মানে আমরা পাশে ছিলাম, আমরা পাশে থাকব।

অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধশালী সুখী বাংলাদেশ এর আত্মপ্রকাশ হোক, এই কামনা করছি।

সকলকে ধন্যবাদ।

স্বপন দাস 
সাধারণ সম্পাদক

নবেন্দু দত্ত           নয়ন বড়ুয়া        রেভা: জেমস রায়
প্রেসিডেন্ট            প্রেসিডেন্ট               প্রেসিডেন্ট

বক্তব্য লিখন:

বাপী অধিকারী 
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক 
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদ, যুক্তরাষ্ট্র।

SitangshuGuha 646-696-5569



__._,_.___

Posted by: Sitangshu Guha <guhasb@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___