Banner Advertiser

Wednesday, June 22, 2016

[mukto-mona] ‘রাজনীতির ধর্মীয়করণ’ প্রশ্নে জাতিসংঘ - মিজানুর রহমান খান



সরল–গরল

'রাজনীতির ধর্মীয়করণ' প্রশ্নে জাতিসংঘ

মিজানুর রহমান খান | আপডেট: ০০:৩৮, জুন ২৩, ২০১৬ | প্রিন্ট সংস্করণ


বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে একটি ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ, এখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বা জাতিগত সংখ্যালঘুরা যে যুগ যুগ ধরে সংখ্যাগরিষ্ঠের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অজানা নয়। আবার তাতে যে ইদানীং বিরাট ঘাটতি পড়েছে এবং সে জন্য উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো দায়ী—এ খবরও তাদের কাছে রয়েছে। তবে তারা এর জন্য সরকারকেও দায়ী মনে করে। গত বছরের ৩১ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর শেষে জাতিসংঘের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক স্পেশাল র্যা পোর্টিয়ার যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে, তাতে সরকারের বিরুদ্ধে ইসলামিদের সঙ্গে আপসের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর সঙ্গে গত সপ্তাহে ইইউ সংসদের বিতর্কে অংশগ্রহণকারী সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামত মিলিয়ে দেখলে পরিষ্কার হয় যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিষয়টি বাদ দিলেও জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণকারী শক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমাগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাকে এখন 'বাক্স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিসর সংকীর্ণ' করে ফেলার প্রতিভূ হয়ে ওঠার দিকেও ইঙ্গিত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মীয় মেলবন্ধনটা ঐতিহাসিকভাবে বহু মতাদর্শগত এবং তার শিকড় গভীরে বিস্তৃত। ওই র্যা পোর্টিয়ার মুসলিম ও হিন্দুর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে মুগ্ধতা প্রকাশের পর উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশের সমাজে বর্তমানের 'অন্যতম বৈশিষ্ট্য' হলো হিন্দুর সংখ্যা কমছে। একাত্তরের ২৩ ভাগ এখন প্রায় ৯ ভাগে নেমেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি সম্পত্তিগত বিরোধ ও তাদের প্রতি সহিংস আচরণকে চিহ্নিত করেন। আর আমরা সবাই জানি যে ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি আইন 'সরকারের ভেতরের সরকার' কার্যকর করতে দিচ্ছে না।
ওই র্যা পোর্টিয়ার ইসলামিদের ওপর মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাব বেড়েছে বলে মত দেন আর হিন্দু স্বার্থ রক্ষায় ভারতের সম্পৃক্ততাকে 'প্রায় প্রাকৃতিক', বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের সঙ্গে অনুরূপ সম্পৃক্ততা যথাক্রমে মিয়ানমার ও পাশ্চাত্যের সঙ্গে আছে বলেও উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের এই বিদেশি যোগসূত্র জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি কোনো হুমকি বা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে কোনোভাবে বিপদাপন্ন করছে বলে প্রতীয়মান হয় না। তবে তাঁর কথায়, এই অঞ্চলের ঘটনাবলির ভিত্তিতে কখনো (ভবিষ্যতে) বাংলাদেশে একটি 'ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা' তৈরি হতেও পারে। কিন্তু এ বিষয়টি তিনি আর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেননি। ইইউতে বাংলাদেশ পরিস্থিতি বিস্ফোরণোন্মুখ এবং দেশটি তাতে ভেঙে পড়লে তার প্রভাব গোটা অঞ্চলে পড়বে বলেও মত এসেছে। সেখানে অনেকেই খ্রিষ্টানদের নাজুক অবস্থার দিকে দিকনির্দেশ করেছেন।
প্রতিবেদনটি খুবই ইতিবাচকভাবে বলেছে, ধর্ম একটি ব্যক্তিগত বিষয় বলে পাশ্চাত্যে ধর্মনিরপেক্ষতাকে যেভাবে দেখা হয়, সেটা বাংলাদেশের সংবিধান নেয়নি বরং এতে সব ধর্মের 'অন্তর্ভুক্তি' স্বীকৃত হয়েছে। আবার এটাও পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, 'বাহাত্তরের ধর্মনিরপেক্ষ ধারণার ভিত সরাসরি গণতন্ত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত করেছিল দেশটির সংবিধান। একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র ও একটি ধার্মিক সমাজ একসঙ্গে চলতে পারে। কিন্তু সেক্যুলার রাষ্ট্র ও একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র একসঙ্গে চলতে পারে না।' বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি কেন এ কথা স্মরণ করাতে গেলেন, সেটা সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। সরকার কি ইতিমধ্যে সেদিকে হাঁটার প্রবণতা দেখাচ্ছে না? তিনি একটা কথা সাফ এবং যথার্থ বলেন যে সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে ধর্মের কারণে বৈষম্যমুক্তির অঙ্গীকার দিয়ে ২(ক) অনুচ্ছেদে ঘোষিত রাষ্ট্রধর্মের প্রভাব অগ্রাহ্য করার দাবি সরকারি মহল করলেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা তাতে আশ্বস্ত নয়।
'শান্তিপূর্ণ ইসলাম দীর্ঘকাল দেশটিতে শিকড় গেড়ে আছে এটা ঠিক, আবার উগ্রপন্থী ব্যাখ্যার প্রভাবও উদ্বেগজনক পর্যায়ে আছে'—ওই রিপোর্ট এভাবে চিত্রিত করার পর প্রকারান্তরে বলেছে, সরকার ও নাগরিক সমাজ উভয়ে উদ্বিগ্ন, কারণ সরকার 'ধর্মনিরেপক্ষতা'কে সুরক্ষা দিতে গিয়ে গণতন্ত্রকেই বনবাসে দিয়েছে। তিনি এরপর রীতিমতো রূঢ় হয়ে ওঠেন, সরকার 'সম্ভবত' ক্রমবর্ধমানভাবে 'ইসলামি জঙ্গি'দের তুষ্ট করতে লিপ্ত, তাই তারা তাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এমনভাবে ধর্মীয় উপকরণের মিশেল দিচ্ছে, যাতে বলা যায় সরকার ইতিমধ্যে ইসলামিদের সঙ্গে 'আংশিক আপস' করেছে।
র্যা পোর্টিয়ার প্রফেসর হাইনের বিয়েলেফেল্ট একজন জার্মান দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ। তিনি তাঁর রিপোর্টে এরপর পরিহাসের সুরে বলেন, 'বাংলাদেশ সরকার যার মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি এবং তারা এখন 'ধর্মের রাজনৈতিকীকরণ' মোকাবিলা করতে গিয়ে 'রাজনীতির ধর্মীয়করণে' নেমেছে। গোটা রিপোর্টের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগ তিনি এই ভাষাতেই করেছেন। র্যা পোর্টিয়ার স্মরণ করিয়ে দেন যে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও ব্লগারদের হত্যার পরে সরকারের পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের প্রতি বাক্স্বাধীনতার অনুশীলনে 'সীমা লঙ্ঘন' না করতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে।
প্রফেসর বিয়েলেফেল্ট বান্দরবান ও রাঙামাটিতে গিয়ে দেখেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাহাড়িদের অনেক বৈষয়িক উন্নতি হয়েছে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে যেসব জমি ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয়েছে তা বেহাত হয়েছে। ২০১২ সালে রামুর সন্ত্রাসী ঘটনায় ১৮ মামলা ও ১১টি ক্ষেত্রে বিচার শুরু হলেও কারও শাস্তি হয়নি। পুলিশ ও বিচার বিভাগের গতিহীনতা দায়মুক্তির পরিবেশ গড়ে তুলেছে। বিদায়ী মানবাধিকার কমিশনার নিরুপা দেওয়ান কমিশনে ছয় বছর ধরে পার্বত্যবিষয়ক সাব–কমিটির প্রধান ছিলেন। অন্তত দশটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট সরকারকে দিয়েছেন। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো সুপারিশ বলুন, যেটা সরকার মেনেছে। তিনি সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হন।
ওই র্যা পোর্টিয়ার আলিয়া ও কওমি মাদ্রাসা পরিদর্শন করে ধারণা পেয়েছেন যে 'উগ্র মনোভাবের' বিস্তারে কিছু 'কওমি' মাদ্রাসা ভূমিকা রাখে। আমরা অন্তত জানি কওমি শিক্ষা বোর্ড তাদের পাঠ্যক্রম সংস্কার বা সরকারি নজরদারিতে আসতে রাজি হয়নি। আবার মানবাধিকার কমিশনের বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রসঙ্গক্রমে বিস্ময় প্রকাশ করেই জানালেন, 'সম্প্রতি সরকারের নজরে এসেছে যে আলিয়া মাদ্রাসার সরকারি পাঠ্যপুস্তকে জিহাদকেও ইসলামের একটি মূল স্তম্ভ হিসেবে দেখানো হয়েছে।' এর আগে জেনেছি, বর্তমান সরকারের আমলে ইসলামি ফাউন্ডেশনের প্রকাশনায় নারীর প্রতি উদ্বেগজনক গোঁড়া ব্যাখ্যা পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। এ কাজের দায়িত্বশীলেরা সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়েছেন।
এটা লক্ষণীয় যে আমরা যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারাটাই বাতিল করতে পারি না, আর সেখানে ওই র্যা পোর্টিয়ার কিনা বাক্স্বাধীনতার স্বার্থে ২০০৬ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মতো কালাকানুনগুলো বিলকুল বাতিলের সুপারিশ করেছেন। তবে তিনি তার ২০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে যেভাবে সুপারিশ নির্দিষ্ট করেছেন, তাতে সরকারের মুখ চুন হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এর উত্তর কীভাবে কী সরকার জমা দেয়, সেটা সত্যি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হবে বটে। সরকারকে লক্ষ্য করে তাঁর দেওয়া যেসব সুপারিশ প্রণিধানযোগ্য তার মধ্যে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে ধর্ম ব্যবহার না করা'র কথাটাও আছে। এই অভিযোগে আমরা জেনারেল জিয়া ও এরশাদকে অভিযুক্ত করেছি। অন্যান্য সুপারিশ হলো, আন্তধর্ম সম্পর্ক বাড়ানো এবং সেই সম্পর্ক আরও জোরালো করার চেষ্টা দ্বিগুণ করা, অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে বক্তৃতার পরম্পরা রক্ষা করা, উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন জোগানো, হামলার শিকার হওয়াদের নিন্দা করে জঙ্গিতুষ্টি অর্জন বন্ধ করা, দুর্নীতির সংস্কৃতির লাগাম টানা, বক্তৃতা–বিবৃতিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ (হেট স্পিচ) ছড়ানো বন্ধে ২০১২ সালে মরক্কোর রাবাতে গৃহীত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভূসম্পত্তি নিশ্চিত করা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিকতা চর্চায় সুরক্ষাদান, কমিউনিটি পুলিশ কার্যকর করা এবং পার্সোনাল ল-এ সংস্কার আনা। অন্যদিকে ধর্মীয় সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বলা হয়েছে, আন্তধর্ম সংলাপে যাতে তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। অবশ্য কিছুকাল আগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, আন্তধর্মবিষয়ক একটি প্রকল্প তাঁরা কোনোমতে চালু করেছিলেন। কিন্তু টাকার সংকুলান করতে না পারায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অরল্যান্ডোর নাইট ক্লাবে হামলার পরপরই দেওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্য শুনেছিলাম। সেদিন সিএনএন লাইভে হিলারি যা বলেছিলেন তাই বোধ করি সব থেকে প্রণিধানযোগ্য। হিলারি বলেছিলেন, এখন সময় এসেছে 'বিষাক্ত হওয়া মন' মোকাবিলা করা, এসব মানুষ কোনো সংগঠন করে বা করে না, সেটা বড় ব্যাপার নয়। আমরাও মনে করি, বিষাক্ত মনের কোনো সীমানা নেই। ব্রিটিশ সাংসদ জোয়ের সন্দেহভাজন খুনি থমাস ম্যায়ার ভেতরে ভেতরে নাৎসিবাদে আচ্ছন্ন হয়েছিলেন অন্তত ১৭ বছর, কেউ টের পায়নি। অরল্যান্ডোর ঘাতক মতিনের জন্ম আমেরিকায়, তিনি কখনো আলিয়া বা কওমি মাদ্রাসায় যাননি, তাই বলে তাঁর জঙ্গি হতে বাধেনি। সম্ভবত সব থেকে অপ্রয়োজনীয় তর্ক, আইএস আছে কি নেই। আমাদের 'বিষাক্ত মনের' মানুষ আছে, তাদের মোকাবিলায় উপযুক্ত কৌশলগুলোর ব্যবহার ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই। আর এসব কৌশলের মধ্যে গণতন্ত্র ও মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন অন্যতম।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক৷

mrkhanbd@gmail.com
http://www.prothom-alo.com/opinion/article/896185/'রাজনীতির-ধর্মীয়করণ'-প্রশ্নে-জাতিসংঘ

জুন ২৩, ২০১৬ | প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন:

প্রফেসর হাইনের বিয়েলেফেল্ট রিপোর্টে:

Preliminary findings of Country Visit to Bangladesh by Heiner Bielefeldt, Special Rapporteur on freedom of religion or belief - See more at: http://www.ohchr.org/EN/NewsEvents/Pages/DisplayNews.aspx?NewsID=16399&LangID=E#sthash.FaX5uMzJ.dpuf





__._,_.___

Posted by: "Jamal G. Khan" <M.JamalGhaus@gmail.com>


****************************************************
Mukto Mona plans for a Grand Darwin Day Celebration: 
Call For Articles:

http://mukto-mona.com/wordpress/?p=68

http://mukto-mona.com/banga_blog/?p=585

****************************************************

VISIT MUKTO-MONA WEB-SITE : http://www.mukto-mona.com/

****************************************************

"I disapprove of what you say, but I will defend to the death your right to say it".
               -Beatrice Hall [pseudonym: S.G. Tallentyre], 190





__,_._,___