সম্প্রীতির রাখী পরল বসিরহাট
বাদুড়িয়া, বসিরহাট দক্ষিণ যখন হিংসার আগুনে পুড়ছে, সে সময় বসিরহাট ২ ব্লক শান্ত, নির্বিকার। জনজীবন স্বাভাবিক। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মানুষ গ্রাম পাহারা দিচ্ছিল।
৩ জুলাই যখনই সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট নিয়ে মহকুমা উত্তাপ বাড়ছে, তখনই সতর্ক হয়ে এ টি এম আবদুল্লার নেতৃত্বে একদল যুবক দলীয় সঙ্কীর্ণতা ছেড়ে ফেলে নেমে পড়লেন
এলাকায়। ১০ জন করে শুরু করলেন পাহারা। খোলাপোতা, মাটিয়া, স্বরূপনগরে তিনটি ক্যাম্প করে বসলেন। মানুষকে বোঝালেন, গুজব ছড়াবেন না। গুজব নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের ছবি দিয়ে ফ্লেক্স বার্তা 'মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম' ছেয়ে গেল গোটা এলাকায়। গ্রামে গ্রামে রাতে ওরা আশ্বাস দিল— 'আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমোন, আমরা
জেগে আছি।' ৯টা পঞ্চায়েতে এভাবে চলল প্রচার। মাটিয়া–শ্রীনগরে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান প্রেমেন্দ্র মল্লিক (ঝন্টু) বলেন, পাড়ায় পাড়ায় সকাল–বিকেল শান্তি মিছিল হয়েছে।
হিন্দু–মুসলমান সব সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে। ঘটনার দিন থেকে দিনরাত এক করে আমরা এলাকা 'ঠিক' রেখেছি। যেখানেই সামান্য উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, আধ ঘণ্টার মধ্যে
তা নিরসন করে ফেলা হয়েছে। ব্লকের ৭টা কলোনি এলাকায় আলাদাভাবে নজরদারি চালাতে পড়ে ছিল এলাকার ছেলেরা। এলাকায় শান্তি অটুট রাখতে আলাদা বাহিনী লাগেনি।
ফাঁড়ির পুলিসকে দরকার হয়নি।
আজও এলাকার মানুষ পথে রয়েছেন। মাটিয়া বাজারে একে অন্যের হাতে রাখি পরিয়ে শান্তির বার্তা দিলেন। যেখানে হাজির থেকে প্রাক্তন বিধায়ক এ টি এম আবদুল্লা পিরজাদা মাহবুব বিল্লা,
প্রদীপ সরকার, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক আবু সালেক আহমেদ একে অন্যের হাতে রাখি পরালেন। এ টি এম আবদুল্লা রনি বলেন, রাজনীতি করার সময় আছে। এখন রাজনীতির সময় নয়।
মানুষের পাশে থেকে ঐক্য, সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ রাখাটাই এখন জরুরি। বাস্তবিকই এত হিংসা–বিদ্বেষের মাঝে কোনও প্রশ্ন না তুলে বসিরহাট উত্তর দেখিয়ে দিল।
শান্তি রক্ষায় নজির গড়ল বসিরহাট উত্তর - Anandabazar
ছেলের প্রত্যাখ্যান, হিন্দু বৃদ্ধের শেষকৃত্য করলেন মুসলিম কন্যা
সংবাদ সংস্থা
ওয়ারঙ্গল: ধর্মের নাম করে দেশে দেশে, সমাজে সমাজে বিষ ঢেলে চলে এক দল মানুষ। আর এক দল মানুষ জীবন দিয়ে দেখান, ধর্ম আসলে মানুষের প্রতি মানুষের প্রেম আর কর্তব্য। দ্বিতীয় দলে পড়েন তেলেঙ্গানার ওয়ারঙ্গল জেলার ইয়াকুব বাই। মঙ্গলবার রাতে কে শ্রীনিবাসন নামে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মারা যান ইয়াকুবের আশ্রয়ে থাকা অবস্থাতেই। কিন্তু তাঁর ছেলে বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। এরপর ইয়াকুব বাই নিজেই হিন্দু রীতি মেনে বৃদ্ধের দেহ সৎকার করেন।
ইয়াকুব এবং তাঁর স্বামী একটি বৃদ্ধাশ্রম চালান। বিনা অর্থে আশ্রয় দেন, সেবা করেন নিরাশ্রয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের। সেখানে প্রায় ৭০ জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকেন। দু'বছর আগে একটি বাস স্টপের কাছ থেকে শ্রীনিবাসনকে প্যারালাইজড অবস্থায় উদ্ধার করেন ওই মুসলিম মহিলা। বৃদ্ধের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে যোগাযোগ করা হলেও শ্রীনিবাসনকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাননি তাঁর ছেলে। তার পর থেকে এত দিন পর্যন্ত ওই বৃদ্ধ ইয়াকুব বাইয়ের আশ্রয়েই থাকতেন। মঙ্গলবার তাঁর মৃত্যুর পর ফের তাঁর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু বৃদ্ধের ছেলে জানান, সম্প্রতি তিনি হিন্দু ধর্ম থেকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। তাই তিনি তাঁর বাবার সৎকার করতে রাজি নন। এমতাবস্থায় বৃদ্ধের সৎকারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ইয়াকুব বাই।
__._,_.___