জাতিগত নির্মূল: বনি ইসরাইল থেকে রোহিঙ্গা
বনি ইসরাইল জাতির ওপরে নির্যাতন ও তাদের প্রাচীন মিসর ত্যাগে বাধ্য করা সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিপিবদ্ধ ও প্রাতিষ্ঠানিক জাতি-বিদ্বেষের ঘটনা। বনি ইসরাইল জাতির ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে জাতিগত নিধন বা 'এথনিক ক্লিনজিং' ইতিহাসের অনেক পুরোনো পাঠ। বার্মায় চলমান বর্তমান রোহিঙ্গা নিধন আমাদের প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে এবং জাতিগত নির্মূলের নৃশংস বিষয়টি আবারও আমাদের সামনে চলে এসেছে।
ঐতিহাসিক বিবরণগুলো আমাদের জানায়, মানবসভ্যতার প্রাচীন আমল থেকেই জাতিগত নিধন বা নির্মূল ও বিদ্বেষের নিদর্শন রয়েছে। একই সঙ্গে হয়েছে গণহত্যাও। আরবের 'ফার্টাইল ক্রিসেন্ট'-এ মেসোপটেমিয়ার সভ্যতাগুলোকে জাতিগত নিধনের উৎসভূমি বলে ঐতিহাসিকেরা বিবেচনা করেন। এখানে বলে রাখা ভালো, গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এথনিক ক্লিনজিং বা জাতিগত নিধন বড় পরিসরে বোঝানো হয়। বিভিন্ন সংজ্ঞা অনুসারে বলা যায়, জাতিগত নির্মূল বা 'এথনিক ক্লিনজিং' বলতে বোঝায়, জোরপূর্বক, শক্তি প্রদর্শন করে কোনো নৃ, ধর্মীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে কোনো বিদ্যমান রাষ্ট্র বা সামাজিক কাঠামো থেকে বের করে দেওয়া বা গণহত্যা করা বা আটক করা। এটা করা হয় মূলত বিদ্যমান জাতিগত সামাজিক কাঠামো পরিবর্তন করে কোনো একটি নৃগোষ্ঠীর একক কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক মিশায়েল মান, রুডি রোমেল বা বেইলোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেরেক এইচ হাভিসের মতো অনেক গবেষকই মনে করেন, গণহত্যা জাতিনিধনের অনেকগুলো নির্মমতম মাধ্যমের (টুলস) একটি। অধ্যাপক মিশায়েল মান জাতিনিধন ও গণহত্যাকে সমন্বয় করেছেন 'মার্ডারাস ক্লিনজিং' বলে। তাঁর মতে, ডেমোস (democracy) যখন এথনোস (ethnicity) দ্বারা বিভ্রান্ত হয়, তখনই 'মার্ডারাস ক্লিনজিং' হয়ে থাকে। এ অবস্থায় নৃজাতীয়তাবাদীদের (ethnonational) বিভিন্ন দল রাষ্ট্রকে নিজস্ব বলে দাবি করে দুর্বল প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে উদ্যোগী হয়।
ইতিহাসের প্রাচীন সময় থেকে চলে আসা এই জাতিগত নির্মূলের কারণ কী? গবেষকেরা নিরন্তর অনুসন্ধান করে চলেছেন এর উত্তরের জন্য। সমাজতত্ত্ব ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান গবেষণার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে আছে এই জাতিবিদ্বেষ, যুদ্ধ ও ধ্বংসের চরিত্র ও কারণ নির্ধারণে। তবে কারণ হিসেবে নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ধর্মীয়, রাজনৈতিক ভাবাদর্শগত পরিচয় ও কর্তৃত্বের একটা সম্পর্ক আমরা দেখতে পাই বা অন্যভাবে যদি বলি, ডেরেক এইচ হাভিস এটিকে বিভাজিত করেছেন দুইভাবে। একটি কারণ হচ্ছে উপযোগিতাবাদ বা 'ইউটিলিটারিয়ান' ধরনের। মূলত ভূমি, সম্পদ, দাস সংগ্রহের জন্য একটি জাতিকে নির্মূল করে দেওয়া হতো। প্রাচীনকালে এ রকম জাতিগত নির্মূলের ঘটনা দেখা যায়। আরেকটি হচ্ছে ভাবাদর্শ বা 'আইডিওলজিক্যাল'। ভাবাদর্শের জায়গা থেকে একটি গোষ্ঠী বা জাতি অপর বর্ণ, জাতি, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীকে নির্মূলের চেষ্টা করে থাকে। তবে উভয় প্রকারের জাতিগত নির্মূলের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সামাজিক বা রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী গোষ্ঠীর সর্বময় কর্তৃত্ব স্থাপন। তাই পরবর্তী সময়ে মধ্যযুগে এই কর্তৃত্ব স্থাপনের প্রক্রিয়ায় ধর্ম ও রাজনীতির একটি জটিল সংমিশ্রণ আমরা দেখতে পাই।
ইতিহাস বলে বনি ইসরায়েলি জাতির অধিকাংশই মিসরীয় সভ্যতার সময় শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। বনি ইসরায়েল জাতির পর আমরা জাতিগত নির্মূল, উচ্ছেদের বিভিন্ন নমুনা নিয়মিতই দেখতে পাই মেসপটেমিয়া সভ্যতায়। খ্রিষ্টপূর্বের শেষ সহস্রাব্দের শুরু দিকে প্রথম অ্যাসিরীয় শাসক তৃতীয় টিগলাথ পিলেসারের (৭৫৪-৭২৭ খ্রিষ্টপূর্ব) আমলে বহুসংখ্যক মানুষকে তাদের বাস্তুভিটা ত্যাগে বাধ্য করা হয় বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে।
মধ্যযুগে এসে নৃতাত্ত্বিক নৈকট্য, ধর্মীয় বিশ্বাস ও রাজনৈতিক নাগরিকত্ব সম্রাট ও সাম্রাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। এ সময় সাম্রাজ্যগুলোতে ধর্ম প্রবল শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। মধ্যযুগের ওই সময় থেকে ভাবাদর্শ, বিশেষ করে ধর্মকে ভিত্তি করে ব্যাপক হারে দমন ও নিধন শুরু হয়। বিশুদ্ধ জাতি তৈরি প্রচেষ্টায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ইহুদি নিধনের কথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। ফ্যাসিস্ট জাতীয়তাবাদী জার্মান নাজি বাহিনী হিটলারের নেতৃত্বে ইহুদি নিধনযজ্ঞে ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ছয় মিলিয়নের বেশি ইহুদি মারা যায় ইউরোপে।
গত শতককে অনেকেই বলে থাকেন জাতিগত নিধন ও গণহত্যার শতাব্দী। গণহত্যা বিশেষজ্ঞ রুডি রুমেলের হিসাবমতে, গত শতকে ১৭০ মিলিয়ন মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছে। নাজি জার্মান, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চিয়াং কাইশেকের অধীনে ন্যাশনালিস্ট চায়না, কমিউনিস্ট চায়নায় ব্যাপক হারে মানুষ গণহত্যার শিকার হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। এসব ছাড়াও গত শতাব্দীতে কম্বোডিয়া, বুরুন্ডি, রোয়ান্ডা, সুদানের দারফুর, গুয়াতেমালা, সোমালিয়া ও উগান্ডাতে গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলের বিবরণ আমরা পাই। গত শতাব্দীতে শুরু হওয়া আরেকটি জাতিগত নিধনের একটি নির্মম উদাহরণ হচ্ছে ফিলিস্তিন।
বিশ্বে গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূলের সাম্প্রতিকতম নজির হচ্ছে বার্মা। বার্মার আরাকানে পরিষ্কারভাবে রোহিঙ্গা জাতিকে নিধন করা হচ্ছে গণহত্যার মাধ্যমে। জাতিসংঘের হিসাবমতে, সাম্প্রতিক ঘটনায় তিন হাজারের বেশি হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছে অজস্র রোহিঙ্গা নারী। রোহিঙ্গাদের ঘটনায় জাতিগত নিধনের সব উপাদানই বিদ্যমান। যেমন গণহত্যা, ভূমি থেকে উচ্ছেদ, ধর্ষণ। উচ্ছেদ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের কারণে জীবিত ব্যক্তিরাও আতঙ্কিত হয়ে অভিবাসী হয়ে যাবে। একদিকে বার্মার সরকার রোহিঙ্গাদের অস্তিত্বই অস্বীকার করছে। নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি এটিকে বাঙালি-বার্মিজ সংঘাত হিসেবে দেখাতে চাইছেন। তার কথায় বার্মা সরকারের রোহিঙ্গা নীতিরই প্রতিফলন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী বলেও প্রচার করছে বার্মার সরকার। যেমন আমরা দেখছি অ্যাসিরীয় সভ্যতার আমলে। বিরুদ্ধ শক্তি বা শত্রুর সঙ্গে যোগাযোগ আছে বলে ওই সময় অনেক জাতিসত্তাকেই রাজ্য থেকে বের করে দেওয়া হতো।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে গণহত্যা জাতি নিধনের অন্যতম নির্মম অস্ত্র এবং বার্মায় সেটিই হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই জাতি নিধনকারীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কী? এরা কি জাতীয়তাবাদী নাকি কর্তৃত্ববাদী অভিজাত। সরলীকরণ করে বলা যায়, জার্মানরা ইহুদিদের হত্যা করেছে বা সার্বরা বসনীয়দের নিধন করেছে। জাতিগত নিধন কি কালেকটিভ অ্যাক্টরের কাজ। নাকি রাষ্ট্রের ইচ্ছাই এই কালেকটিভ অ্যাক্টররা বাস্তবায়ন করছে মাত্র বা রাষ্ট্রই কালেকটিভ অ্যাক্টরের চিন্তার প্রতিফলন ঘটায়। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক বিস্তর হয়েছে। অধ্যাপক মিশায়েল মান দীর্ঘদিন ধরেই জাতিগত নিধন নিয়ে গবেষণা করছেন। আমরা যদি তাঁর এই বিষয়ে 'সোশ্যাল পাওয়ার মডেল' গ্রহণ করি, তবে দেখতে পাই যে সমাজকাঠামোতে বিদ্যমান বিভিন্ন অ্যাক্টর ও এজেন্টদের আন্তসম্পর্কের মধ্যে যে শক্তির খেলা বিদ্যমান, তার ফলাফল হচ্ছে এই জাতিগত নিধন। জাতিগত নিধন হচ্ছে এমন একটি ঘটনা, যা শক্তিশালী গোষ্ঠীর জনগণের নামে দুর্বল গোষ্ঠীকে দমন, নিপীড়ন ও আধিপত্য বিস্তারের বৈধতা অর্জনের ইচ্ছার ফলাফল। এর পেছনে ক্ল্যাসিক্যাল রাজনৈতিক বাস্তববাদ তত্ত্ব মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে ও রাজনৈতিক শক্তির নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
জাতিগত নিধনকে আমরা প্রাগৈতিহাসিক, প্রাচীন, বর্বর বলে একধরনের মনস্তাত্ত্বিক স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি কি তাই বলে? খুনি হুতু ও সার্বরা খুব বেশি দূর অতীতের ঘটনা নয় বা আমাদের পাশের দেশ বার্মার সরকার। আমরা অন্যের ওপরে দোষ চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা মোক্ষ লাভের চেষ্টা করি। যেমন লস অ্যাঞ্জেলেসের মিউজিয়াম অব টলারেন্সে নাজি জার্মানদের বীভৎসতার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এই লস অ্যাঞ্জেলেসেই ইউরোপীয় আগন্তুকদের দ্বারা পরিচালিত স্থানীয় আদিবাসীদের ওপর গণহত্যার কোনো বিবরণ নেই বা বার্মা সরকার বলছে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সন্ত্রাসের যোগসাজশ রয়েছে। আমরা কেউ কেউ তা আমলেও নিচ্ছি। কিন্তু বার্মা গণহত্যার মধ্য দিয়ে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। অধ্যাপক মিশায়েল মান এই 'এথনিক ক্লিনজিং ও সিস্টেমেটিক জেনোসাইড' বা তার ভাষায় 'মার্ডারাস ক্লিনজিং'কে গণতন্ত্রের অন্ধকার দিক বলে চিহ্নিত করেছেন, 'আমরা আধুনিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ ও সময়ে আছি বলে দাবি করছি। কিন্তু বিংশ শতাব্দীতেই সবচেয়ে বেশি জাতিগত নির্মূলের ঘটনা আমরা দেখতে পাই...গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার বা তথাকথিত গণতন্ত্রীদের অধীনেই এসব হয়েছে।' এবং বার্মায় সেটিই হচ্ছে।
বার্মার ঘটনা আমাদের এমন এক পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, পোস্ট কলোনিয়াল অথবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে আমরা বর্তমানে যে জমানায় দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে ওয়েস্টফেলিয়ান জাতি রাষ্ট্রগুলো তার অমীমাংসিত সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারেনি। এটা প্রাচীনকালেও ছিল। এখনো আছে। ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতির রাজনৈতিক ভাবের সম্মিলনের মাধ্যমে ইকক্লুসিভ বা অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র গড়ার যে স্বপ্ন আমরা দেখি, তার এখনো কোনো সুরাহা হয়নি, যেখানে নাগরিক হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, সংস্কৃতির মানুষ নিজ নিজ স্বতন্ত্রতা এবং বৈচিত্র্য নিয়ে সমান নাগরিক অধিকারের ভিত্তিতে রাজনৈতিক জনসমাজ রূপে আত্মপ্রকাশ করবে। কিন্তু এর বিপরীতে রাষ্ট্র যদি কোনো স্থির ধারণায় কেন্দ্রীভূত হয়, তবে তা রক্তক্ষয়ী ফ্যাসিবাদ ডেকে আনে। বহুমুখী থেকে একমুখী সমাজের দিকে ধাবিত হয়। আর এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় নিপীড়ন, নির্মূল অবশ্যম্ভাবী। এতে করে সমাজের, রাষ্ট্রের নৃশংস দিকটিই বের হয়ে আসে।
কার্যত নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে, আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার উদ্ভব এবং বিকাশের মধ্যে এমন কিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়েছে, যা বারবার হিংস্র রূপে আবির্ভূত হচ্ছে। ফলে প্রশ্ন তোলা খুবই ন্যায্য, আধুনিক রাষ্ট্রের গভীরে কি কোনো আধুনিক বর্ণবাদ লুকিয়ে আছে? এ কারণেই কি রাষ্ট্রের নৃশংস চেহারা বারবার বেরিয়ে আসে সেই মিসরের নগররাষ্ট্র থেকে হালের বার্মা।
বার্মার ঘটনাবলিসহ সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতি মানবজাতির সামনে পুরোনো এসব প্রশ্নকে জান্তবভাবে করে হাজির করেছে। সমাজ, রাষ্ট্র, নৃবিজ্ঞানীসহ সব চৈতন্যশীল মানুষের নবায়িত চৈতন্য এবং সক্রিয়তার প্রয়োজনীয়তা এখন খুব বেশি দরকার রাষ্ট্রসংক্রান্ত এই সমস্যার মীমাংসার জন্য।
ড. মারুফ মল্লিক: রিসার্চ ফেলো, সেন্টার ফর কনটেম্পোরারি কনসার্নস, বার্লিন, জার্মানি
__._,_.___