রামলীলা বাঁধা থাকে সম্প্রীতির সুরে
ইতিহাস বলে, আগরা থেকে দিল্লিতে রাজধানী সরিয়ে আনার পরে মোগল সম্রাট শাহজাহান সব রকম উৎসব পালনেই তাঁর সেনাবাহিনীকে উৎসাহ দিতেন। ধর্মের বাছবিচার ছিল না। তখন লাল কেল্লার খুব কাছ দিয়েই বইত যমুনা। কেল্লার পিছনে নদীর ধারেই ধুমধাম করে উদ্যাপন হতো দশেরা।
দিল্লিতে প্রথম রামলীলা কমিটি তৈরি করেছিলেন শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর। এখনও লাল কেল্লার সামনের মাঠে হয় সেই রামলীলা। এ বছর তাতে নতুন চমক। বিজেপির একগুচ্ছ নেতা-নেত্রী রামলীলায় অভিনয় করছেন। কেউ সাজছেন অঙ্গদ, কেউ অহল্যা।
গেরুয়া শিবিরের রাজনীতিকদের পাশেই এই রামলীলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন মুসলমান অভিনেতা ও কারিগরেরা। মোগল জমানার ঐতিহ্য মেনেই জাত-ধর্মের কোনও বেড়া নেই।
'রামনাম' এখানে সম্প্রীতির সুরে বাঁধা।
লাল কেল্লার সামনে 'লব কুশ রামলীলা কমিটি'র এই আয়োজনে প্রতি বছরই দেখা যায় টিভি-সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। এ বছরও রাম সাজবেন টেলি-অভিনেতা বিকাশ কারওয়াল। রাবণ হবেন বলিউডের মুকেশ ঋষি। ভোজপুরি অভিনেত্রী সুভি শর্মা সাজবেন সীতা। নারদ হবেন রবি কিষেণ।
ভোজপুরি সিনেমা থেকে রাজনীতিতে এসে মনোজ তিওয়ারি এখন দিল্লিতে বিজেপির সভাপতি। তিনি অঙ্গদ হবেন। কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় প্রতিমন্ত্রী বিজয় সাম্পলা সাজবেন নিষাদ রাজ। দিল্লির বিজেপি নেতা বিজেন্দ্র গুপ্তর স্ত্রী তথা রোহিণীর কাউন্সিলর শোভা দেবী অহল্যার চরিত্রে চুটিয়ে রিহার্সাল করছেন। উত্তর দিল্লি ও পূর্ব দিল্লি পুরসভার দুই মেয়র, প্রীতি অগ্রবাল ও নিমা ভগতকেও দেখা যাবে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে।
শোভা দেবী বলছেন, ''রামলীলা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ না নিলে ভগবান রামের আসল বাণী মানুষের কাছে পৌঁছনো যাবে না। রামলীলা শুধু গরিবদের জন্য— এই ধারণাটাও বদলানো উচিত।''
যুদ্ধের দৃশ্যে চমক আনতে নিয়ে আসা হয়েছে লখনউয়ের জাদুকর হাসান কমল রিজভিকে। তিনি নরকন্তকের চরিত্রে অভিনয় করছেন। রাজা মুরাদ, শাহবাজ খান, আলি খানের মতো অভিনেতারাও রয়েছেন। রামলীলা কমিটির সভাপতি অশোক অগ্রবাল বলছেন, ''আমাদের লক্ষ্য, সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ।''
লাল কেল্লার সামনেই আর একটি রামলীলার আয়োজক 'নব শ্রী ধার্মিক রামলীলা কমিটি'।
এ বছর তারা ঘোষণা করেছিল, তাদের রামলীলার প্রধান চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সকলেই ব্রাহ্মণ এবং তাঁরা রামলীলা চলাকালীন ব্রহ্মচর্য পালন করবেন। কিন্তু তা করতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে ওই কমিটি।
অগ্রবাল জানিয়ে দিচ্ছেন, এই ধরনের ধর্মীয় ও জাতিগত ভেদাভেদের কোনও স্থান নেই। বলছেন, ''লাল কেল্লা থেকেই সাম্প্রদায়িকতা ও জাতপাত তাড়ানোর কথা বলেছেন নরেন্দ্র মোদী। সেই কেল্লার সামনে রামলীলায় এই ভেদাভেদ কাম্য নয়।''
__._,_.___