অভিষেক অনুষ্ঠানে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম নেতারা
ট্রাইব্যুনাল বাদ দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের ক্রসফায়ারে হত্যা করতে হবে
পাকিস্তানে থাকা ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীরও বিচার করতে হবে : সফিউল্লাহ
নিজস্ব প্রতিবেদক
যুদ্ধাপরাধীদের ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবি করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম নেতারা বলেছেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকাররা কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আমাদের জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেনি। সে জন্য এখন কোনো ট্রাইব্যুনাল নয়, বরং র্যাব দিয়ে প্রকাশ্যে তাদের ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করতে হবে।'
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ঢাকা বিভাগীয় কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে গতকাল তারা এ কথা বলেন। এ সময় তারা সব দলের যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবি করে আরো বলেন, 'আওয়ামী লীগে কেউ যদি যুদ্ধাপরাধী থাকে তবে তাদেরও অবিলম্বে বহিষ্কার করে বিচার করতে হবে। সেসব অপরাধীর দায় আমরা নিতে পারব না।'
সংগঠনের ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) এ কে খন্দকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব:) কে এম সফিউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব:) হারুন অর রশিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ম. হামিদ, ঢাকা মহানগর সমন্বয়ক মোস্তফা মহসিন মন্টু, কলামিস্ট হারুন হাবিব ও ঢাকা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাহমুদুর রহমান। এ ছাড়া শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। নতুন কমিটিকে শপথবাক্য পাঠ করান লে. জেনারেল (অব:) হারুন অর রশিদ।
এ কে খন্দকার বলেন, আমরা রাজনৈতিক হিংসার বশবর্তী হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইনি, বরং জাতীয় জীবনের কলঙ্ক মোচনের জন্যই বিচার দাবি করছি। তবে শুধু চার-পাঁচজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার নয়, সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
তিনি বলেন, কেবল একটি ট্রাইব্যুনালে এত জনের বিচার সম্ভব নয়। সে জন্য আরো ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
কে এম সফিউল্লাহ বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সাড়ে ৩৭ হাজার যুদ্ধোপরাধীর বিচার শুরু করেন। সেখান থেকে প্রায় ২৬ হাজার অপরাধীকে শর্তসাপেক্ষে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। বাকি ১১ হাজার ৭৫২ জনকে বন্দী রেখে বিচার করে ৭৫২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। চারজনকে ফাঁসিও দেয়া হয়। কিন' ১৫ আগস্টের পর দালাল আইন বাতিল করে সবাইকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। সে জন্য দালাল আইন পুনর্বহাল করে সাজাপ্রাপ্ত সবাইকে কারাগারে নিতে হবে, তাহলে বিচারের প্রতি দেশের মানুষের আস'া থাকবে।
তিনি বলেন, বন্দীবিনিময় করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেন। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের মাধ্যমে ওই সব অপরাধীরও বিচার করতে হবে।
হারুন অর রশিদ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সভা-সেমিনার হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীরা বিপুল টাকা খরচ করে তাদের নিয়োগ করেছে। তারা আন্তর্জাতিক লবিস্টও নিয়োগ করেছে। কিন' সরকার নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
হারুন হাবিব বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার করে সরকার সাপের লেজে পা দিয়েছে। সে জন্য তাদের মাথা অক্ষত রাখা কোনোভাবেই ঠিক হবে না।
সংগঠনের শরীয়তপুর জেলা সভাপতি দিদারুল আলম মাস্টার যুদ্ধাপরাধীদের ক্রসফয়ার দাবি করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকাররা কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আমাদের জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেনি। সে জন্য এখন কোনো ট্রাইব্যুনাল নয়, র্যাব দিয়ে প্রকাশ্যে তাদের ক্রসফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করতে হবে। তার এমন বক্তব্য হলভর্তি সেক্টর কামান্ডার্স ফোরাম নেতাকর্মীরা বিপুল করতালি দিয়ে সমর্থন জানান।
ফরিদপুর জেলা সভাপতি সালাউদ্দীন আহমদ বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাকালে মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন করেননি। সে জন্য তাকে সপরিবারে জীবন দিতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী বলেন, কোন কোন দলে যুদ্ধাপরাধী আছে আমরা তা জানি। যুদ্ধাপরাধীদের কেউ আজ প্রেসিডিয়াম, কেউ স'ায়ী কমিটি আবার কেউ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল। তবে তারা যে দলেরই হোক না কেন তাদের জাতীয় সংসদ এবং দল থেকে বহিষ্কার করে বিচার করতে হবে। একই সাথে তৎকালীন কলাবরেটর সিএসপি ও যুদ্ধাপরাধী সাবেক আইজিপি এবং ডিআইজিদেরও অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচার করতে হবে, না হলে মুক্তিযোদ্ধারাই নিজ হাতে দায়িত্ব তুলে নেবে।
__._,_.___