http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=69095
যুদ্ধাপরাধ বিচার আন্তর্জাতিক মানের না হলে বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না
গতকাল সোমবার স্থানীয় একটি হোটেলে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন -সংগ্রাম
স্টাফ রিপোর্টার : জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুন্যাল আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। অন্যথায় এ বিচার বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। বাংলাদেশে গঠিত ট্রাইবুন্যালের ত্রুটিগুলো তিনি জাতিসংঘের বৈঠকে উত্থাপন করবেন।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠককালে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয় সেজন্য পরিবেশ সৃষ্টিতে জাতিসংঘ ভূমিকা রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বৈঠক শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা শমসের মবিন চেীধুরী এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
তিনি আরও জানান, সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিট থেকে অত্যন্ত হৃদত্যাপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে পৌনে এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে খালেদা জিয়া বান কি মুনকে জানান, বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুন্যালে নানা অসঙ্গতি রয়েছে। এখানে ভিকটিমদের সঠিকভাবে আইনগত সুবিধা নেয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কারিগরি আইনগত দুর্বলতাসমূহ দলিল আকারে তার কাছে তুলে দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
শমসের মবিন বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইবুন্যালে যে বিচার প্রক্রিয়া চলছে সে বিষয়ে খালেদা জিয়ার কাছে তার মতামত জানতে চেয়ে বান কি মুন নিজেই বলেছেন, জাতিসংঘ চায় এই বিচার যেন আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।
বেগম জিয়া তাকে বলেছেন, বিএনপি দল হিসেবে চায় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের যেন বিচার হয়। এ ব্যাপারে কোনো অস্পষ্টতা নেই। তবে যেন সুবিচার হয়। বিচারের নামে যেন অবিচার ও প্রহসন না হয়। বিচার প্রক্রিয়া সকলের কাছে যেন গ্রহণযোগ্য হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
জবাবে বান কি মুন বলেন, জাতিসংঘের এ বিষয়ে মতামত হলো এই বিচার আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হতে হবে। খালেদা জিয়া ট্রাইব্যুনালের যেসব কারিগরী আইনগত দুর্বলতা রয়েছে তার একটি দালিলিক কাগজপত্র বান কি মুনের কাছে হস্তান্তর করেন বলেও জানান শমসের মবিন।
তিনি বলেন, ওই দলিলে আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক মানের নয় বলে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে। খালেদা জিয়া বান কি মুনকে বলেছেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র এই মুহূর্তে হুমকির মুখে রয়েছে। গণতন্ত্র হোঁচট খাচ্ছে। এখন ভোটারের ভোট নিশ্চিত করার উপায় বাংলাদেশে নেই। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে বড় দলগুলো অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
এর জবাবে বান কি মুন খালেদা জিয়াকে বলেন, আমি এই বিষয়টি সিরিয়াসলি নোট নিচ্ছি এবং আমলে নিলাম। আমি ও আমার প্রতিনিধি বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক শক্তির সাথে আলাপ আলোচনা করবো। আশা করি, সেই পরিস্থিতি যেন বাংলাদেশে হয় যে, সকল দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে।
শমসের মবিন বলেন, বান কি মুন দ্বিতীয়বার সর্বসম্মতিক্রমে জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ায় তাকে স্বাগত জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ সফরে আসায় তাকে ধন্যবাদ জানান।
বৈঠকে চেয়ারপার্সনের সঙ্গে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমদ। অপরদিকে বান কি মুনের সঙ্গে তার সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।
__._,_.___