কনসার্ট হয়েছে দোয়া মাহফিল হয়নি |
সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১১ স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে: শেষ পর্যন্ত ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় কনসার্টই হলো। শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল হতে দেয়া হয়নি। কনসার্ট সম্পন্ন এবং আলেম-উলামাদের যে কোন তৎপরতা রোধে তলব করা হয় আধাসামরিক বাহিনী (বিজিবি)। শুধু বিজিবিই নয় র্যাব, আর্মড পুলিশ ও পুলিশ বাহিনীর শ’ শ’ সদস্য মোতায়েন করা হয় গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। দোয়া মাহফিল ও কনসার্টের ভেন্যু বেষ্টন করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এসব সদস্যের সম্মিলিতভাবে অবস্থান গ্রহণ ছাড়াও শহরের মোড়ে মোড়ে ছিল তাদের অবস্থান। সাইরেন বাজিয়ে সকাল থেকেই শহরে টহল দিয়েছে র্যাব ও পুলিশের গাড়ি। রীতিমতো যুদ্ধসাজ। স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকার আয়েশা মেমোরিয়াল নামের একটি প্রাইভেট হাসপাতালের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন ও গুণীজন সংবর্ধনা পরিষদ নামের স্থানীয় একটি সংগঠন আয়োজিত এ কনসার্ট নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এই কনসার্টে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা হবে এই অভিযোগ এনে তা বাতিলের দাবি করে আসছিলেন স্থানীয় আলেম-উলামা। কনসার্টের স্থানে একই দিন ও একই সময়ে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি দেয়া হয়। পরে প্রশাসন এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বৈঠক করলে তারা দোয়া মাহফিল অন্যত্র করার সিদ্ধান্ত নেন। শনিবার এখানকার বড় মাদরাসায় বৈঠক করে রোববার পৌর মুক্তমঞ্চে শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল করার সিদ্ধান্ত নেন জেলার শতাধিক মাদরাসার শিক্ষকরা। জেলা প্রশাসকও বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। আলেম-উলামাদের কর্মসূচি ঠেকাতে নেয়া হয় ব্যাপক প্রস্তুতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বড় হুজুরের ছেলে হযরত মাওলানা মনিরুজ্জামান সিরাজী জানান, শনিবার রাতে সদর থানার ওসি আবদুর রব তাকে এবং জেলার শীর্ষস্থানীয় অন্য আলেমদের ফোন করে জানান, ওপরের নির্দেশ আছে তারা দোয়া মাহফিল করতে পারবেন না। এও বলা হয়, পৌর মুক্তমঞ্চে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে কোথাও তারা দোয়া মাহফিল করতে পারবেন না। এরপর গতকাল সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যে সয়লাব হয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর। পুলিশ সূত্র জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পুলিশ ছাড়াও কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলা থেকে শতাধিক পুলিশ আনা হয়। র্যাব-৯ এর ৮০ সদস্যের একটি দল এবং বিজিবি’র ৪০ সদস্যের একটি দল এবং আমর্ড পুলিশ মোতায়েন করা হয় দুই ভেন্যু ছাড়াও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে। ৩টি পিকআপ ভ্যানে করে একত্রে র্যাব সদস্যরা সাইরেন বাজিয়ে সারা শহরে টহল দিতে থাকে। দোয়া মাহফিলের স্থান পৌর মুক্তমঞ্চটি ঘিরে রাখে বিজিবি ও বিপুল সংখ্যক পুলিশ। কনসার্টের স্থান নিয়াজ মুহম্মদ স্টেডিয়াম ঘিরে ছিল কঠোর নিরাপত্তা বলয়। র্যাব-পুলিশ ঘিরে রেখেছিল এ মাঠের চারপাশ। বেলা ১২টায় জেলা প্রশাসক মাঠে এসে কনসার্টের উদ্বোধন করেন। এ সময় জেলা প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারাও ছিলেন। ছিলেন পুলিশ সুপার জামিল আহমেদ। জেলা প্রশাসক তার বক্তৃতায় বলেন, আপনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রেখে অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন। বেহায়াপনার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, একটি গোষ্ঠি এ অনুষ্ঠান বানচালের চেষ্টা করেছিল তাদের প্রতিহত করা হয়েছে। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) জহিরুল হক খান এর নেতৃত্বে একটি মিছিল মাঠে আসে। তারা রবিউল ভাইয়ের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন বলে স্লোগান দিতে দিতে মাঠে প্রবেশ করে। কনসার্টে দিনভর পারফর্ম করে এল আর বি, দলছুট ও হ্রদয় খান। অনেক তরুণ-যুবতী তাদের গানের তালে উন্মাতাল হয়। ওদিকে আলেম-উলামারা তাদের কর্মসূচি পালন থেকে পিছিয়ে যান। গতকাল তাদের কোন কর্মসূচি ছিল না। তারা জানান, সংঘাত এড়াতেই তারা কর্মসূচি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেননি। |
__._,_.___