http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=78369
Please protest and write on this
মুজাহিদের পরিবারের সাংবাদিক সম্মেলন
বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে সন্তানের হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি
ছাত্র লীগের হামলায় নিহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুজাহিদুল ইসলামের হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে মুজাহিদুল ইসলামের পরিবার গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে -সংগ্রাম
স্টাফ রিপোর্টার : গত ৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় নিহত মুজাহিদুল ইসলামের হত্যার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে তার পরিবার। হত্যার সাথে জড়িত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ছাত্র হত্যা বন্ধে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ারও দাবি জানান তারা।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য রাখেন মুজাহিদুল ইসলামের পিতা মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর মীর। উপস্থিত ছিলেন চাচা শাহজাহান মীর, নূরুল কবীর মীর, আইনুল মীর ও ফুফাতো ভাই একরামুল হক।
লিখিত বক্তব্যে মুজাহিদের পিতা বলেন, ঘটনার এতদিন পরেও মুজাহিদের খুনীদের গ্রেফতার না হতে দেখে কষ্ট দিগুণ বেড়ে গেছে। তাছাড়া মুজাহিদের মৃত্যু পরবর্তী অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা আমাদের একেবারে পাথর করে দিয়েছে। আজ দেখছি আমার নিহত সন্তানকে নিয়ে অপরাজনীতি করা হচ্ছে। মৃত সন্তানকে নিয়ে বিভিন্ন মহলের মিথ্যাচার দেখে আমরা স্তম্ভিত।
তিনি বলেন, আমরা জানি মুজাহিদ মাদরাসায় থাকাকালিন সময়েই ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাথে যুক্ত হয়। তার সদিচ্ছা ও ইসলামের অনুশাসনের প্রতি মনযোগী হওয়ার প্রমাণ পেয়ে আমরা তাকে বাধা দেইনি। মেধাবী মুজাহিদ দাখিল পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হয় চট্টগ্রাম কলেজে। এ সময় সে ছাত্রশিবিরের কর্মকান্ডে আরো সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়। ২০১০ সালের এইচএসসি পাসের পর মুজাহিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ২০১০-১১ সেশনে ভর্তি হয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই সে ছাত্রশিবিরের সাথী হয় বলে তার কাছ থেকে জানতে পারি। সর্বশেষ সে ছিলো ছাত্রশিবিরের জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রচার সম্পাদক। কিন্তু মুজাহিদ নিহত হবার পর থেকে ছাত্রলীগের নির্লজ্জ মিথ্যাচার দেখে আমরা বিস্মিত। মুজাহিদ কখনোই ছাত্রলীগ করেনি। মৃত মুজাহিদকে নিয়ে ছাত্রলীগের এই নির্জলা মিথ্যা আমাদেরকে ব্যথিত করেছে। আমরা মুজাহিদের বিশ্বাস ও আদর্শকে সবসময় সম্মান জানিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, ৮ ফেব্রয়ারি আমাদের মুজাহিদ ও মাসুদ বিন হাবীব নামে দু'জন ছাত্র নিহত হয়েছে। গণমাধ্যমে আমরা তা দেখেছি, শুনেছি। দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলোর ফুটেজ দেখে স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি, খুনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই ছিলেন। আইন-শৃক্মখলা রক্ষাকারী বাহিনীও ঘটনাস্থলে ছিল। ঘটনার পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে প্রিয় সন্তানের লাশ কবরস্থ করেই আমি সুবিচার প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করতে যাই। কিন্তু থানায় গিয়ে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের আচরণ আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমাকে জানানো হয়, ওসি সাহেব থানায় নেই এবং তিনি ছাড়া মামলা গ্রহণ করা যাবে না। রাত ২.৩০ টায় পর্যন্ত আমাকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়। এ সময়ে বারবার মোবাইলে ওসি সাহেবের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি মোবাইলে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। আমি বুঝতে পারি যে, তিনি আমাকে এড়িয়ে চলছেন। রাত ২.৩০টায় থানার লোকজন বলেন যে, ওসি সাহেব ফোনে বলেছেন, এজাহার রেখে যাওয়ার জন্য, আগামীকাল মামলা গ্রহণ করা হবে। অতঃপর, আমি থানা থেকে চলে আসি এবং পরদিন (১০ ফেব্রুয়ারি) বারবার থানায় যোগাযোগ করলেও মামলা গ্রহণ করার ব্যাপারে তারা আমাকে কোন তথ্য দেননি। নানা অজুহাত দেখিয়ে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি ওসি সাহেব বলেন যে, মামলা নেয়া যাবে না, ওপর থেকে বারণ আছে। অতঃপর উপায়ান্তর না পেয়ে ১২ ফেব্রুয়ারি আমি ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে চট্টগ্রাম আদালতে মামলা দায়ের করি। হাটহাজারী থানার ওসি সামিউল আলম সন্তানহারা পিতার প্রতি এই অমানবিক আচরণ ও একজন নাগরিক হিসেবে আমার আইনের আশ্রয় লাভের সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করার প্রতিবাদে আমার পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে আমরা একটি সংবাদ সম্মেলন করেছি। ৯ ফেব্রুয়ারি গোপনে ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান তুষার, মুজাহিদকে 'ছাত্রলীগ কর্মী' উল্লেখ করে ছাত্রশিবিরের ৪৪ জনের নাম উল্লেখপূর্বক আরো ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা দায়ের করেছে বলে তিনি জানান। একজন মৃত ছাত্রের সাথে এমন নির্মম পরিহাস ও অপরাজনীতি দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে গেছেন বলে তিনি দাবি করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পুলিশ মুজাহিদের লাশ দ্রুত দাফন করার জন্য চাপ দেয়ায় জানাযার নির্ধারিত সময়ের আগেই দাফন করতে হয়েছে। এছাড়া পুলিশ জানাযায় আগত লোকদের বাধা সৃষ্টি করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
__._,_.___