মুক্তিযুদ্ধ শুরু হতে না হতেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালী জাতিকে সমূলে নিধন করার লক্ষ্যে যে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের আমির রাজাকার বাহিনী ও পরবর্তীতে তাঁর বিশ্বস্ততম শিষ্য মাওলানা নিজামী আলবদর বাহিনী গঠন করেছিলেন এবং ওঁদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে সর্বাগ্রে শান্তি কমিটি গঠন করা হয়েছিল অপরাপর ইসলামী দলগুলোকে তাঁদের বিশ্বস্ত সঙ্গীতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে, সেই গোলাম আযম ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে গ্রেফতার হওয়াতে দেশজোড়া আনন্দ মিছিল করতে গিয়ে, আনন্দের আতিশয্যেই কি না জানি না, অনেককেই বলতে শুনেছি এইবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নতুন গতিবেগ পেল। এ কথা ঠিক, যুদ্ধাপরাধীদের পালের গোদা গোলাম আযম, বাঙালী জাতি ও ধর্মনিরপেক্ষতা ও হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের চরমতম শত্রæ গোলাম আযম দীর্ঘ ৪০ বছর পর গ্রেফতার হওয়াতে মানুষের, বিশেষত দেশপ্রেমিক স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষদের কাছে অতিশয় আনন্দের একটি ব্যাপার। কিন্তু শুধুমাত্র এই গ্রেফতারের মাধ্যমেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে নতুন মাত্রা পেল বা তাতে নতুন গতিবেগের সঞ্চার হলো এমন ধারণা আদৌ বাস্তবানুগ নয়।
এই বিষয়টি নিয়ে আমার নিজ¯^ ভাবনা প্রকাশের পূর্বে আমি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি আমার প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তিনি আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন- গ্রেফতার হননি। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে আনীত অভিযোগপত্র বিবেচনা করে তাতে সন্তুষ্ট হয়ে ট্রাইব্যুনালের মাননীয় বিচারকবৃন্দ ঐ অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে, অভিযুক্ত গোলাম আযমকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিস্ময়করভাবে দেখা গেল, ঐ আদেশের পর পরই অভিযুক্ত মারাত্মক ধরনের আসামি গোলাম আযমের পাশে বসা তাঁরই সুযোগ্য সন্তান কিন্তু কোন অধিকারে পুলিশ তা করতে দিল। বাবাকে জেলগেটে পৌঁছে দিতে প্রয়োজনে তিনি তো তাঁর ঐতিহাসিক বাবা যে এসি, গাড়িতে করে আদালতে হাজির হতে গিয়েছিলেন সেই রাজসিক গাড়িতে করে পুলিশভ্যানের পেছন পেছন জেলগেট পর্যন্ত যেতে পারতেন এবং সালাম জানিয়ে বিচারে, নিরপরাধ প্রমাণিত হয়ে সমম্মানে বের হয়ে আসার প্রার্থনা জানাতে পারতেন। তা নয় তিনি একেবারেই পুলিশ বা প্রিজন ভ্যানে বাবার পাশে বসে দিব্যি প্রকাশ্য গোপন নানা আলাপ করতে করতে গেলেন, টিভি চ্যানেলে দেখলাম।
দেখার ইতি কিন্তু এখানেই ঘটেনি। পরে দেখা গেল ঐ দিনই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়েছেন। কি রোগ হঠাৎ করে তাঁকে আক্রমণ করে বসল- তা কিন্তু কাউকে জানানো হলো না বা কার চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাও না। কোন ওয়ার্ডে, কত নম্বর বেডে রয়েছেন তাও বলতে শুনিনি। তাঁর এই রোগ কি কোন গোপন রোগ যে তা জনগণকে জানানো অসমীচীন বলে বিবেচিত হলো? আর জেলে যেতে বা যেতে না যেতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেনই বা কি করে? আত্মসমর্পণের আগে তাঁর তো কোন অসুস্থতার কথা শুনিনি বা তাঁকে কোন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার কথাও কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখিনি। হঠাৎ তা হলে কি হলো যে তাঁকে অত বিখ্যাত ও দামী চিকিৎসা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রিজন সেলে নিতে হলো? এ সম্পর্কে গোলাম আযম নিজে তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে যে মিথ্যে তথ্য দিয়েছেন তাকেই আস্থায় নেয়া হয়েছে। তবু পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে বিশেষ করে হার্টের পরীক্ষার পর তো ডাক্তারেরা তাঁকে সে ব্যাপারে সুস্থ বলে মত দিয়েছেন। অপর যা যা অভিযোগ, সেগুলোর চিকিৎসা দিব্যি জেল হাসপাতালেই হতে পারে। কিন্তু সে পথে যাওয়া হবে কি? তাঁকে কারাগারে যে মর্যাদা দেওয়া হলো তাও কি ভি.আই.পি মর্যাদা? যা কোন দিন বঙ্গবন্ধুকেও দেয়া হয়নি।
অতঃপর দেখা যাক গতিবেগ সংক্রান্ত অপরাপর বিষয়াদি। পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) এ. কে. খোন্দকারের নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিযুদ্ধ সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম তো অনেক আগেই প্রথম চালানে ৫০ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রদান করেছেন। যাদেরকে এখন কারাগারে দেখছি তাঁরা ছাড়াও তো আরও ৪০ জনের অধিক এখনও বাকি। তারা তো দিব্যি আরামে-আয়েশে নিশ্চিন্তে খেয়ে দেয়ে নাদুসনুদুস হচ্ছেন। শত শত কোটি টাকা তো তাদের দলীয় তহবিলে আছে যা যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আনীত মোকদ্দমাগুলো পরিচালনার জন্য ব্যয় করা হবে। সেই অপরাধীদেরকে ধরা হচ্ছে না কেন? কারাগারে পূর্বাহ্নে আটক করে রেখেই তো গুরুতর মামলার অপরাধীদের বিচার করা চিরকালের প্রচলিত নিয়ম। নইলে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীদেরকে প্রভাবিত করা বা আত্মগোপনে দেশের কোন অঞ্চলে বা বিদেশে পালিয়ে যাওয়া তো অসম্ভব কিছু নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা থেকে এ ব্যাপারে শিক্ষা নিয়ে তাদের আটক করা অত্যন্ত জরুরী। এই লোকগুলো তো টাকা ও অপরাপর কারণে সমাজে যথেষ্ট প্রভাবশালীÑ তারা তো ইতোমধ্যে যাদেরকে আটক করে বিচার আমলে নেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারী তালিকায় রাখা সাক্ষীদেরকে প্রভাবিত করাÑ ভয়ভীতি দেখিয়ে আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ানো বা প্রয়োজনে হত্যা বা গুম করা তো অ¯^াভাবিক কিছু নয়। তাই তদন্তের পূর্বে গ্রেফতারের বিধান যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনে না থাকে তবে অবিলম্বে তেমন আইন প্রণয়ন করে তাদেরকে দ্রুত কারাগারে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা হোক। নতুবা এ মোকদ্দমাগুলো না পাবে আকাক্সিক্ষত গতিবেগÑ না পাবে মানুষের কাছে কোন আশাবাদ।
আমি এই প্রসঙ্গে অনুরোধ জানাব মুক্তিযুদ্ধ সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম কর্তৃপক্ষকে যুদ্ধাপরাধীদের সব নাম ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার জন্য। নইলে তাদের সামনে কাজের তালিকা যে কত দীর্ঘ তা তারা সত্যই অনুধাবন করতে পারবেন না।
একথা ঠিক, তদন্ত কর্তৃপক্ষ, প্রসিকিউটর টিম এবং বিচারক- সবই সংখ্যায় অত্যন্ত অল্প। এ ওপর সরকার বলছে ফেব্রæয়ারি মাসেই দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল কাজ শুরু করবে। যদি সরকারের এই কথাটি সত্য হয় তবে অবিলম্বে যথেষ্টসংখ্যক বিচারক, প্রসিকিউটর এবং তদন্ত কর্মকর্তার নিয়োগ প্রদান করা হোক এবং নতুন ট্রাইব্যুনালের আদালত কক্ষ, বিশ্রাম কক্ষ, আইনজীবী ও তদন্ত কর্মকর্তাদের বসার উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং যাবতীয় নথিপত্র ঠিকমতো নিরাপদে রাখার ব্যবস্থাদি অগ্রিম করা হোক। নইলে এই কাজগুলো শেষ করতে ২০১২ সাল পার হয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু হবে না। এ ব্যাপারে প্রথম ট্রাইব্যুনালÑপ্রসিকিউটর্স ও তদন্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও উপযুক্ত আদালত কক্ষাদি নির্ধারণের ক্ষেত্রে অতীতের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত করুণÑ যথেষ্ট কালক্ষেপণ করা হয়েছিলÑ যা কিছুতেই ভুলে যাবার নয়। আর্থিক প্রশ্নে বহুকাল আগে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন (সম্ভবত ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নকালে) যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এই সময়কালের মধ্যে এ ব্যাপারে সরকারী তরফ থেকে আর কোন উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি। জানি না, পরবর্তী বাজেটগুলোতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনানুযায়ী অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিনা। যদি তা হয়েও থাকে তবে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠন উপলক্ষে আরও অনেক বেশি পরিমাণ বরাদ্দ সামগ্রিকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য নির্দিষ্ট করা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রয়োজন হলে এ ব্যাপারে তহবিল সংগ্রহের জন্য সরকারী বেসরকারী উভয়ভাবেই বিদেশের কাছে আবেদন জানানো হোক। এতে বিপুল সাড়া পাওয়া যাবে।
আমি তো মনে করি আর একটি নয়, অন্তত ৫টি ট্রাইব্যুনাল বিভাগীয় ভিত্তিতে গঠন করা উচিত। নইলে আগামী ২০ বছরেও সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচারকার্য সমাধা করা কোনক্রমেই সম্ভব হবে না।
আর ততদিন কোন একটি সরকার ক্ষমতায় থাকার মতো রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বাংলাদেশে বিরাজও করছে না। তাই সব ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা আদৌ অমূলক নয়।
স্মরণ রাখা প্রয়োজন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম অবাধে চালাতে গেলে অবশ্যই ব্যাপক জনমত তার অনুক‚লে থাকতে হবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই নানা কারণে সরকার তার জনপ্রিয়তা কিছুটা হারিয়েছে। মানুষের কাছে তার জীবনের দৈনন্দিন সমস্যা যথেষ্ট বড়। সেই সমস্যাগুলো সমাধান দ্রুত করার জন্য সকল কিছুর মূল্য, প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়েও, বর্তমানের তুলনায় অন্তত অর্ধেকে নামিয়ে আনা প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, জনমত অনুকূলে দৃঢ়ভাবে সংগঠিত করার জন্যে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষীয় অসাম্প্রাদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও আদর্শনিষ্ঠ সকল রাজনৈতিক দল, শক্তি ও ব্যক্তির কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলে কেন্দ্র, জেলা, উপজেলা, এবং সম্ভব হলে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সকল যুদ্ধাপরাধীর আশু বিচারের দাবিতে প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
পত্রপত্রিকায় এই বিষয়ের নানাদিক নিয়েও অধিকতর পরিমাণে লেখালেখিরও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি। তা কিন্তু করার কথা ছিল না কারণ অঙ্কটি অত্যন্ত সোজা। পুরাতনকালের বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্যে বলে, 'দশের লাঠি একের বোঝা।' এ প্রবাদ বাক্যটি আজকাল বই-পুস্তকে তেমন না পাওয়া গেলেও বিষয়টি বা তার অন্তর্নিহিত মর্মার্থ সবারই ভালমতো জানা আছে। এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষও, কারও কারও সঙ্গে কারও কারও দ্ব›দ্ব-কলহ-ঝগড়া থাকলেও কোন বিপদ এলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবেলা করে থাকেন। গ্রামের অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মানুষেরা যা বুঝেনÑ শিক্ষিত ও পরিপক্ব রাজনীতিকরা তা বুঝেন নাÑ এমন নয়। কিন্তু তাঁরা রোগাক্রান্ত। ভয়ানক একটি রোগে ভুগছেন তাঁরা। সে রোগটি হলো অহমিকা। নিজেকে অতি বড়, অতি বুদ্ধিমান এবং সকল কিছু করার মতো একমাত্র ক্ষমতাধারী- সুতরাং অন্যকে ঐক্যের জন্য বলব কেন? অনুরোধ আবেদন জানানো তো দূরের কথা। তাঁরা দেশের সকল সঙ্কটকেই অতিশয় ক্ষুদ্র মনে করেন- কোনক্রমেই বুঝতে রাজি হন না যে মাত্র তিন বছর যেতে না যেতেই ক্ষমতাশীন বৃহৎ দলটির পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত। অবহেলা করলে বা এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।
আমার প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের এই প্রসঙ্গে খেয়ালে আনতে অনুরোধ করি (সরকারী মহল এতই বিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল যে তাঁদেরকে অনুরোধ জানিয়ে লাভ নেই) যে পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তার জীবনও আজ নিরাপদ নয় ইসলামী ছাত্র শিবিরের হাতে। তারা ইতোমধ্যে তা বহুবার দেখিয়ে দিয়েছে। একবার নয়- একাধিকবার। যদি এ ব্যাপারে সরকারী অবহেলা দূর না হয় অবিলম্বে- তবে জীবন রক্ষার্থে ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালনে পুলিশ কেন অগ্রসর হবে? সরকার কি তাদের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে? অথচ দুর্দিনটা শুধুমাত্র সরকারী দলের নয়- দুর্দিনটা দেশের এবং দেশের জনগণের- দলমত-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে। তবুও প্রয়োজনীয় সতর্কতা বজায় রেখেই তাঁদের ওপর দেশবাসীর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সদাসক্রিয় থাকার জন্য পুলিশ-র্যাব বাহিনীসমূহের প্রতি আহান জানাচ্ছি। পদ্মপত্রে নীরের মতো পাকিস্তানের গণতন্ত্র ঠলকে পড়তে চলেছে- বাংলাদেশেও তেমন ঘটনা ঘটাতে একটি চিহ্নিত কুচক্রী মহল তৎপর যে হবে না নিশ্চিতভাবে তা বলা যায় না। আর তা যদি ঘটে তবে সমূহ বিপদ।
সরকারী দলের মধ্যেও অনেকে বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেনঅন্তত আংশিকভাবে এটা আনন্দের কথা। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীসহ সকল ধর্মাশ্রয়ী দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক। এ নির্দেশ সুপ্রীমকোর্টও দিয়েছিলেন কিন্তু তা না মেনে তাড়াহুড়া করে সংবিধান সংশোধন করে বর্তমান সরকারই জামায়াত-শিবিরসহ সকল ধর্মাশ্রয়ী দলের রাজনীতিকে বৈধতা দিয়েছে। ফলে যুদ্ধাপরাধীরা নতুন প্রাণের সন্ধান পেয়ে এমনটি ঘটাতে সাহসী হচ্ছে।
অপরপক্ষে প্রয়োজনীয় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে যুদ্ধাপরাধীদের সবার এবং ত্বরাšি^ত বিচারের দাবি আজও অশ্রুত। কিন্তু তেমন ঐক্য গড়ে তুলে দেশে ব্যাপকতম জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে সারাদেশে যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সভা-সমাবেশ-মিছিল-মানববন্ধন প্রভৃতির মাধ্যমে গণজোয়ার সৃষ্টি করা হতো- নিশ্চিতভাবেই তার ফলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজে আকাক্সিক্ষত গতিবেগের সৃষ্টি হতো। সকল দেশদ্রোহী অপশক্তি চক্রান্তকারীরাও সে অবস্থায় চুপসে যেতে বাধ্য হতো। তারা জানে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি। কিন্তু আমরা বুঝি না যে আমরা বিজয়ী শক্তি- তাই আমাদের দায়িত্ব সর্বাধিক।
raneshmaitra@gmail.com