http://www.dailynayadiganta.com/details/28805
"এমনিতেই বহু আগে থেকে চলছে ভারতীয় হিন্দি ও বলিউড কালচারের বেপরোয়া আগ্রাসন। তার ওপর বর্তমান সরকারের সময় স্রোতের মতো ওপার থেকে গায়ক-গায়িকা, নট-নটীরা আসছেন। তাদের উদ্দাম উন্মাতাল নাচ-গানের অবাঞ্ছিত সয়লাবে আমাদের তরুণসমাজ ভেসে যাওয়ার উপক্রম। এরই ধারাবাহিকতায় বিপিএল উদ্বোধনের জন্যও ভারতীয় শিল্পীদের আনা হয়েছিল। তারা অশালীন ও অর্ধনগ্ন দেহভঙ্গির অসঙ্গত প্রদর্শনী দ্বারা একশ্রেণীর মানুষের বিকৃত আনন্দ জুগিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে ফিরেছেন। আরো আছেন চিয়ারলিডার নামের ইউরোপীয় তরুণীকুল। এভাবে দেশ ও জাতির নৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি করার অধিকার"
সম্পাদকীয়
বিপিএলের তোড়জোড় ও মহাড়ম্বর
চোখ ধাঁধানো আলোর নিচে অন্ধকার
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নামে গত শুক্রবার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে ঢাকার শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। অনেক তোড়জোড় আর প্রচারণার পর মহাড়ম্বরে খুবই জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আগের দিন এর উদ্বোধন হয় একই স'ানে। দেশের প্রশাসনিক বিভাগগুলোর নামে একেকটি টিম করা হয়েছে। টিমগুলোর নামের মধ্যে একটি করে বিশেষণ যে আছে শুধু তা-ই নয়, প্রতিটি টিমের একজন করে 'মালিক'ও আছেন। খেলোয়াড়দের নিলামে তুলে দর হাঁকিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। কারো কারো 'দাম' কোটি টাকায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বিপিএলে বিভিন্ন টিম বিরাট অঙ্কের অর্থ খরচ করে কয়েকজন খ্যাতনামা বিদেশী ক্রিকেটার এনেছে। সেই সাথে বিদেশী কোচও। বর্ণাঢ্য, ব্যয়বহুল ও রাজসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিপিএল উদ্বোধন করেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। দিনের পর দিন প্রচারণাসহ বিপুল আয়োজনে বিপিএল সবার নজর কাড়লেও এর উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও প্রথম ম্যাচে ছিল না খুব বেশি দর্শক। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, ক্রিকেটের এই জৌলুশপূর্ণ প্রতিযোগিতা নিয়ে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ উঠেছে শুরুতেই।
বিপিএলের প্রস'তির সূচনা থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এই প্রতিযোগিতায় ক্রীড়ার চেয়ে বাণিজ্য বড়। এরপর যাবতীয় উদ্যোগ-আয়োজন শেষে বিপিএল শুরু হয়ে তিন দিন খেলা হয়েও গেছে। ইতোমধ্যে 'ভদ্রলোকের খেলা' ক্রিকেটের এই জমকালো টুর্নামেন্টের সাথে শুধু অনিয়ম ও অস্বচ্ছতা নয়, অশ্লীলতার মারাত্মক অভিযোগও যুক্ত হয়েছে। এভাবে জনপ্রিয় খেলাটির নাম কলঙ্কিত হতে দেখে বলতে হয়, উদ্বোধন পর্বের চোখ ধাঁধানো আলোর নিচেই আছে নিকষ অন্ধকার।
এমনিতেই বহু আগে থেকে চলছে ভারতীয় হিন্দি ও বলিউড কালচারের বেপরোয়া আগ্রাসন। তার ওপর বর্তমান সরকারের সময় স্রোতের মতো ওপার থেকে গায়ক-গায়িকা, নট-নটীরা আসছেন। তাদের উদ্দাম উন্মাতাল নাচ-গানের অবাঞ্ছিত সয়লাবে আমাদের তরুণসমাজ ভেসে যাওয়ার উপক্রম। এরই ধারাবাহিকতায় বিপিএল উদ্বোধনের জন্যও ভারতীয় শিল্পীদের আনা হয়েছিল। তারা অশালীন ও অর্ধনগ্ন দেহভঙ্গির অসঙ্গত প্রদর্শনী দ্বারা একশ্রেণীর মানুষের বিকৃত আনন্দ জুগিয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে ফিরেছেন। আরো আছেন চিয়ারলিডার নামের ইউরোপীয় তরুণীকুল। এভাবে দেশ ও জাতির নৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি করার অধিকার উদ্যোক্তাদের কে দিয়েছে?
মুক্তবাণিজ্য ও বিশ্বায়নের এ যুগে খেলাও হয়ে গেছে ব্যবসায়ের উপকরণ। তাই জনপ্রিয় ক্রিকেট নিয়ে রমরমা বাণিজ্যে অসংখ্য লোকের পকেট ফাঁকা করে কিছু লোক ফুলে-ফেঁপে উঠছে। বিপিএলের ক্ষেত্রে মুনাফা লোটার প্রবণতার সাথে যোগ হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও অস্বচ্ছতার অভিযোগ। এর ব্যবস'াপনার দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশী-না-ভারতীয়, তা নিয়ে গোলকধাঁধা। আর এটা তো জানা কথা, সততার বেলায় লুকোচুরির প্রয়োজন হয় না। বিপিএলকে উপলক্ষ বানিয়ে মহলবিশেষের কয়েক শ' কোটি টাকা পাচারের লক্ষ্য থাকার অভিযোগ কতটা সত্য, তা খতিয়ে দেখা দরকার। তদুপরি, বিপিএল'কে জড়িয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রয়াস, তথা জুয়াড়িদের জঘন্য তৎপরতার আভাস অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয়।
আমাদের আবেদন, ক্রিকেটসহ যাবতীয় খেলাধুলাকে স্বাস'্যচর্চা ও নির্মল আনন্দের মাধ্যম হিসেবেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিন। পেশাদারিত্বের নামে মুনাফা লোটার বাণিজ্যিক বিবেচনাকে মুখ্য করে তুলবেন না। বিশেষত ক্রিকেট অঙ্গন যেন অর্থগৃধ্নুদের শোষণের মৃগয়া ক্ষেত্রে পর্যবসিত না হয়। সেই সাথে, বিনোদনের নামে জাতির ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ ধ্বংসের সুচতুর প্রয়াস মেনে নেয়া যায় না। বিপিএল নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর দ্রুত তদন্ত এবং কার্যকর প্রতিকার হওয়া জরুরি। অন্যথায় এ ধরনের আয়োজন অপচয়, অশ্লীলতা ও অনৈতিক বাণিজ্যের লজ্জাকর প্রদর্শনীরূপেই চিহ্নিত হ
__._,_.___