সেনাবাহিনীতে যাতে উগ্র রাজনৈতিক মতবাদের কেউ ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। এম ইদ্রিস আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য মুজিবুল হক, নুরুল মজিদ হুমায়ুন ও রফিকুল ইসলাম এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানেরা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, সেনাবাহিনীর পার্সোনেল সার্ভিসেস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রাজ্জাকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকে সম্প্রতি সেনাবাহিনীতে ঘটে যাওয়া ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ইদ্রিস আলী সাংবাদিকদের বলেন, কমিটির মতে, সশস্ত্র বাহিনীতে এমন ব্যবস্থা থাকা উচিত, যাতে কোনো ধরনের উগ্র মতবাদ সামরিক বাহিনীর মধ্যে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, সে সম্পর্কে এখন থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, উগ্র মতবাদ বলতে তাঁরা সব ধরনের চরম মতবাদকে বুঝিয়েছেন। সংসদীয় কমিটির এ সুপারিশকে ইতিবাচক মনে করেন সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সময় যথাযথভাবে যাতে যাচাই-বাছাই (পুলিশ ভেরিফিকেশন) হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এ ছাড়া নিয়োগের পরও সেনাসদস্যরা উগ্রপন্থী হয়ে যেতে পারেন। তাই প্রশিক্ষণ ও চাকরির সময়কালীন তাঁদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি রাখতে হবে। তবে আরেক সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান মনে করেন, সেনাবাহিনীকে হেয় করতে এ ধরনের কথাবার্তা বা সুপারিশের কথা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে উগ্র ধর্মান্ধতা নেই, বরং সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার মানসিকতা দূর করতে হবে। এই বাহিনীকে তার নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী চলার ব্যবস্থা রাখলে কোনো ধরনের উগ্রতার সুযোগ থাকবে না। একই সঙ্গে তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পেশাদারি বজায় রাখতে হবে। ব্যর্থ অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক ইন্ধন ছিল: সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কমিটির সভাপতি ইদ্রিস আলী বলেন, সাম্প্রতিক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনায় জড়িতদের সংখ্যা খুব কম। তিনি বলেন, এই অভ্যুত্থানচেষ্টার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী এ বিষয়ে ইন্ধন জুগিয়েছে। সেনাবাহিনীকে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। সেই রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিযবুত তাহ্রীর নাকি বিএনপি—এ প্রশ্নের জবাবে ইদ্রিস আলী বলেন, 'অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িতদের হিযবুত তাহ্রীরের প্রতি আনুগত্য ছিল। পরে একটি রাজনৈতিক দল এটাকে পুঁজি করতে চেয়েছে।' সেই রাজনৈতিক দল বিএনপি কি না জানতে চাইলে সংসদীয় কমিটির সভাপতি বলেন, 'এটা আপনারা বুঝে নিন।' তিনি বলেন, এ ধরনের একটি ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা ব্যর্থ করে দেওয়ায় কমিটির পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং কোনো অপরাধী যাতে পার পেয়ে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। | ||
__._,_.___