Banner Advertiser

Friday, March 9, 2012

[mukto-mona] Fw: [KHABOR] ৭ মার্চের ভাষণ ॥ গেটিসবার্গ এ্যাড্রেসের চেয়েও বহুমাত্রিক, যুগান্তকারী


----- Forwarded Message -----
From: AbdurRahim Azad <Arahim.azad@gmail.com>
To: khabor <khabor@yahoogroups.com>
Sent: Friday, March 9, 2012 6:01 PM
Subject: [KHABOR] ৭ মার্চের ভাষণ ॥ গেটিসবার্গ এ্যাড্রেসের চেয়েও বহুমাত্রিক, যুগান্তকারী

 

7th March Speech of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman

http://www.youtube.com/watch?v=8JY2sPiiZuY


৭ মার্চের ভাষণ ॥ গেটিসবার্গ এ্যাড্রেসের চেয়েও বহুমাত্রিক, যুগান্তকারী
মুহম্মদ শফিকুর রহমান
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ-এর গণর‌্যালি ও গণমিছিল থেকে ফিরে জনকণ্ঠের সপ্তাহের কলামটা লিখতে বসে ভাবছিলাম- কোত্থেকে-কিভাবে শুরু করব। আওয়ামী লীগের র‌্যালি এবং মিছিল; এটা বড় হবে, বিশাল হবে, স্মরণকালের বৃহত্তম হবে, এটাই স্বাভাবিক। রাজপথে আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নেই; যা আছে দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী সব। এদের প্রতিহত করার জন্য এক মার্চ মাসই যথেষ্ট। একুশ মানে যেমন 'মাথা নত না করা' তেমনি ৭ই মার্চ মানে 'ষড়যন্ত্রকারীদের পরাভূত করা।' এবারের ৭ মার্চের গণর‌্যালি এবং গণমিছিল সেই বার্তাই দিয়ে গেল। 
৭ মার্চের স্মরণকালের বৃহত্তম গণর‌্যালি, গণসমাবেশের পর আসছে ১৪ মার্চ, মহাজোটের মহাসমাবেশ। মাঝখানে বিএনপি-জামায়াত জোটের ১২মার্চ 'চলো চলো ঢাকা চলো' পড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাবে সে রকম কিছু বলতে চাই না। একটা কথা অবশ্যই বলব যে, স্বাধীনতার অগ্নিঝরা একটি মাস, যে মাসের ৭ ও ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ছাড়াও ঐ সব ঐতিহাসিক দিনের জন্মদাতার জন্মদিনও ১৭ মার্চ, সে মাসে এ ধরনের একটি 'ঢাকা চলো'র কর্মসূচী দেয়া ঠিক হয়নি। কারণ গত বিজয়ের মাসে জাতি বোমাবাজি দেখেছে। 
তবে কি এ মাসেই যেহেতু জামায়াত-শিবির, রাজাকার-আলবদর-আলশামসরা হেরেছিল বলেই এভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে প্রতিশোধ নিতে চান? চলো চলো ঢাকা চলোর নামে রাজধানীর কোথাও অবস্থান নিয়ে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে যাতে করে বিচারের কাঠগড়া থেকে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম-নিজামীদের বের করে আনা যায়। নইলে স্বাধীন দেশে বাস করবেন অথচ স্বাধীনতার মহান দিবসগুলোকে সম্মান দেবেন না; এমনটি হতে পারে না। নিহায়ত অকৃতজ্ঞ না হলে কেউ এমন কাজ করে?
একটা কথা খুবই স্পষ্ট যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন। বিগত নির্বাচনেও মহাজোটের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, যার পক্ষে মানুষ আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটকে নয়-দশমাংশ আসন দিয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম। আজকের তরুণরা জিয়া-এরশাদের মার্শাল 'ল' দেখে দেখে এবং খালেদা জিয়ার রাজাকার-আলবদর-আলশামস, যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবির তোষণ এবং জাতির জনক ও জাতীয় ৪ নেতার খুনীদের লালন-পালন দেখে দেখে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটকে ক্ষমতায় পাঠিয়েছে ওই অপশক্তির বিচার করার জন্য। এ বিচার যে হবে এটা দেশবাসী, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা-সবাই জানে, বিশ্বাস করে। তাই তো তারা সেøাগান তুলেছে 'বঙ্গবন্ধুর বাংলায়-রাজাকারের ঠাঁই নাই, হবে না', 'যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই-দিতে হবে।'এই বিচারকার্য সম্পন্ন করা এখন মহাজোট সরকারের সাংবিধানিক কর্তব্য। 
'৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দিবস', ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবস', '২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস।' এই দিবসগুলো ছাড়াও এই মার্চ মাসের প্রথম দিন পাকি সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া ৩ মার্চ আহূত পার্লামেন্ট অধিবেশন বাতিল করে দিয়েছিলেন, এ মাসেই স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল, এ মাসেই স্বাধীনতার ইশতেহার (৩ তাং পল্টনে) পাঠ এবং জাতি বঙ্গবন্ধুকে 'জাতির জনক' হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিল। আবার এ মাসেই বঙ্গবন্ধু-ভুট্টো আলোচনা, বঙ্গবন্ধু-ইয়াহিয়া বৈঠক; যা ছিল চক্রান্ত এবং ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে সামরিক জান্তা 'অপারেশন সার্চলাইট' নাম দিয়ে গণহত্যা শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধুও তাঁর প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনি নানান ঘটনায় এ মার্চ মাসটির মতো ঘটনাবহুল মাস আর নেই। 
একাত্তরের মার্চ ছিল বিশ্ব ইতিহাসে সাড়া জাগানো একটি মাস। এ মাসেই বাংলা ও বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পালিত হয়েছিল অসহযোগ আন্দোলন। তখনও এ বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে এবং সেই কাঠামোর মধ্য থেকেই বাংলাদেশ চলেছে বঙ্গবন্ধুর কথায়। বঙ্গবন্ধু তাঁর ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে যা বলতেন তাই আইন হয়ে যেত। তাজউদ্দিন আহমদ যে বিবৃতি-বিজ্ঞপ্তি পাঠাতেন তা সরকারী পরিপত্রের (Circular) মতো মানা হতো। একটি মাত্র আঙ্গুল যা নির্দেশ দিত তাই বাংলার প্রতিটি মানুষ অক্ষরে অক্ষরে পালন করত দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-ভয় তুচ্ছ করে। ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীও অসহযোগ আন্দোলন করেছেন কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ মহাত্মার অসহযোগকে ছাড়িয়ে এমন নতুন এক ভাষা দিয়েছিল; যা এর আগে পৃথিবীর কোন ডিকশনারিতে ছিল না, এখনও নেই। 
বঙ্গবন্ধু যখন বলেন:
" আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দেবার চাই যে, আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট, কাছারি, আদালত, ফৌজদারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরিবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে, সে জন্য যে সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা-গরুর গাড়ি চলবে, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে। শুধু সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রীমকোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমিগবর্নমেন্ট দফতর, ওয়াপদা; কোন কিছু চলবে না। ২৮ তাং কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন।"
এই নির্দেশনার প্রতিটি অক্ষর সেদিন বাংলার মানুষ পবিত্র দায়িত্ব বলে পালন করেছেন। 
কি এক অমোঘ সম্মোহনী শক্তি ছিল অই অঙ্গুলি হেলনে- এত সুন্দরভাবে কেউ ডান হাতের আঙ্গুল তুলে কথা বলেছেন, বক্তৃতা করেছেন, মানুষকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং মানুষ ঐশীবাণীর মতো পালন করেছেন; এমন নজিরও তো দেখলাম না। 
কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায়:
"তখন পলকে দারুণ ঝলকে
তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা
জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার 
সকল দুয়ার খোলা। 
কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?"
একজন মানুষ কি করে এত শক্তিধর হন আজও চোখ বন্ধ করে কল্পনা করলে হৃদয়ে দোলা লাগে। তিনি বলেছেন-
: সেক্রেটারিয়েট চলবে না ...
: চলেনি। 
: তিনি বলছেন-সুপ্রীমকোর্ট, হাইকোর্ট চলবে না ...
: চলেনি। 
: বলছেন-গরিবের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য রিকশা, গরুর গাড়ি 
চলবে...
: চলেছে। 
: বলছেন-রেল চলবে, লঞ্চ চলবে ....
: চলেছে। 
: বলছেন-২৮ তাং কর্মচারীরা গিয়ে বেতন নিয়ে আসবেন....
: বেতন নিয়ে এসেছেন। 
: বলছেন-পূর্ববাংলা থেকে কোন টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে যাবে না ...
: যায়নি। 
: বলছেন-আমার কথা না শুনলে খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করে দেবেন....
: জনতা বন্ধ করে দিয়েছেন।
: বলছেন-রেডিও-টেলিভিশনে আমার কথা প্রচার না করলে কেউ সেখানে যাবেন না...
: কেউ যাননি। 
একটি মাত্র মানুষ যা বলছেন তাই অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়েছে। এর নজির কি বিশ্বের ইতিহাসে আছে?
গত শনিবারের কলামে আমি তিনটি প্রধান দিক তুলে ধরেছিলাম। যেমন রাজনৈতিক, সামরিক ও প্রশাসনিক-এই তিনটি দিক আলোচনা করেছিলাম। বিশেষ করে একজন মানুষ নিজের রাজনীতি ও জাতির আশা-আকাক্সক্ষা এবং নাগরিকদের যাতে কষ্ট না হয় সে জন্য প্রশাসন ঠিক রেখে এবং সামরিক জেনারেল না হয়েও কি করে স্বাধীনতার জন্য গেরিলা যুদ্ধের যথার্থ রূপরেখা দিলেন, ভাবলে কি অবাক লাগে না? এসব গত সংখ্যার কলামে বলেছিলাম কিন্তু লেখাটি ছাপা হবার পর মনে হলো অন্তত ২টি দিক আলোচনা করিনি। এ নিবন্ধে আমি তা তুলে ধরার চেষ্টা করব: 
১. পয়লা মার্চ ইয়াহিয়া ৩ তারিখের পার্লামেন্ট অধিবেশন বন্ধ করে দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু ৩ তারিখেই হোটেল পূর্বাণীতে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছিলেন-৭ মার্চ রেসকোর্সের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভায় পরবর্তী দিক নির্দেশনা দেবেন। সে মুহূর্ত থেকে ৭ কোটি মানুষের মধ্যে একটাই আলোচনা ছিল; তবে কি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দেবেন? না-কি পাকিদের আরও সময় দেবেন? বিদেশীদের মধ্যেও এমনি নানানমুখী চিন্তাভাবনা ছিল। দেখা গেল বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণাও (Unilateral declaration of independence) দিলেন এই বলে "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'; আবার পাকি শাসন বা বহির্বিশ্বের বৈরী শক্তি যাতে তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী (Cessationist) হিসেবে দোষ দিতে না পারে সে জন্য পার্লামেন্টে যাবার জন্য ৪টি শর্ত জুড়ে দিলেন। যেমন তিনি বলেছেন 'এসেম্বলি কল' করেছেন, আমার দাবি মানতে হবে:
১. সামরিক আইন মার্শাল ল উয়িদড্র করতে হবে
২. সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত যেতে হবে
৩. যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে 
৪. জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে (১৯৭০-এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ) ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। 
এভাবে বঙ্গবন্ধু সাপও মারলেন, লাঠিও ভাঙ্গল না। কেউ আর তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলতে পারল না, বলার কোন জায়গাই রাখলেন না। কারণ বঙ্গবন্ধুর সামনে একটি উদাহরণ ছিল যে, আফ্রিকার কোন একটি দেশে (সম্ভবত বায়াফ্রা) এমনি Unilateral declaration of independence দিয়ে পরে আর সামলাতে পারেনি এবং বিপ্লবীরা বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন। 

দুই.

দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি সবচে বেশি স্পর্শকাতর ছিল তা হলো বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে স্বাধীনতা আন্দোলন করেছেন। আগে থেকেই তিনি কোন্ কোন্ দেশে আমাদের যেতে হবে, কোথায়-কার কাছ থেকে কি কি সাহায্য পাওয়া যাবে, সবই বঙ্গবন্ধু ঠিক করে গিয়েছিলেন বলেই ইন্দিরা গান্ধীর মতো মহান নেত্রী আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যেহেতু আন্দোলনটি ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সেহেতু যাতে করে আরববিশ্ব বা কোন মুসলিম দেশ বলতে না পারে বঙ্গবন্ধুর মানুষরা অবাঙালীদের বা ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তাই তিনি বলেছেন: ''শোনেন, মনে রাখবেন, শত্রু বাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান, বাঙালী-অবাঙালী যাঁরা আছেন তাঁরা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আমাদের ওপর; আমাদের যেন বদনাম না হয়।"
একটি কথার পুনরাবৃত্তি করতে চাই-এই ভাষণটি ছিল অলিখিত (extempore) অথচ মাত্র ১৯ মিনিটে ১০৯৫ শব্দে সবদিক রক্ষা করে একটি জাতির স্বাধীনতা ঘোষণা করা যায়, নিরস্ত্র জাতিকে এক অঙ্গুলি হেলনে (এত সুন্দরভাবে অঙ্গুলি হেলনেরও নজির নেই বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে, অবশ্য এত সুন্দর (Handsome) পুরুষ মানুষও বিরল) সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করে দুনিয়া কাঁপানো এক মুক্তিযুদ্ধে একটি শক্তিশালী সামরিক জান্তাকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করা যায়, এমন নজিরও কি আছে? যে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ, পৌনে ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম ও জীবন উৎসর্গ করা, এক কোটি মানুষের ভারতে আশ্রয় গ্রহণ, দেশান্তরে ৪ কোটি মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য নিজ বাড়ি থেকে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় গ্রহণ; এমন নজিরও কি আছে কোথাও? দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও এত লোক মারা হয়নি, আশ্রয় হারা হয়নি।
কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ ভাষণের (Gettysburg Address) সঙ্গে তুলনা করেন। আমি মনে করি, কোন তুলনাই চলে না। কেননা, 
: আব্রাহাম লিংকন ছিলেন আমেরিকার ১৬তম প্রেসিডেন্ট, তিনি তাঁর ভাষণটি দেন আমেরিকার স্বাধীনতার ৮৭ বছর পরে (fourscore and seven years ago our fathers brought forth on this continent, a new nation, conceived in liberty, and dedicated to the proposition that all men are created equal) অর্থাৎ তিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতি হিসেবে স্বাধীন জাতির বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে গৃহযুদ্ধ (Civil war) দমনের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তাঁর প্রতিপক্ষ কোন রাষ্ট্রশক্তি ছিল না। 
পক্ষান্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তখনও কেবল একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের (১৯৭০-এর নির্বাচনে) নেতা এবং তাঁর মাথার ওপর রাষ্ট্রশক্তি; তাও আবার ভিন্নভাষী, ভিন্ন সংস্কৃতির সামরিক জান্তা। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু যখন 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' বলে বলছেন " রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ-জয় বাংলা অর্থাৎ বাঙালীর জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ ঘোষণা। আর আব্রাহাম লিংকন একটি স্বাধীন জাতির রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি ঘোষণা করছেন That this nation, under God, shall have a new birth of freedom and that government of the people by the people for the people shall not perish from the earth". এই হচ্ছে একটি দেশের স্বাধীনতার ৮৭ বছর (Fourscore and seven years ago) পরে রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কথা। তবে ৮৭ বছর আগে-পরে হলেও একটা জায়গায় দু'জনের মিল পাওয়া যায়- আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, and that ... shall not perish from the earth আর বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ৭ কোটি মানুষকে (বাঙালী) দাবায়ে রাখতে পারবা না, ... আমরা যখন 'মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।' 
এই ভাষণটি এতই বহুমাত্রিক যে, এর প্রতিটি শব্দই বিশ্লেষণের দাবি রাখে। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে আরও কিছু দিক আলোচনা করব। 
আজকের কলামটির ইতি এভাবে টানতে চাই যে, আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হয়ত সঙ্গত কারণেই এ ভাষণের মমার্থ, বহুমাত্রিকতা কিংবা দূরদৃষ্টি টার্গেট অনুধাবন করতে পারেননি বা পারছেন না, কিন্তু ইয়াজউদ্দীন-এমাজউদ্দীন কিংবা ব্যারিস্টারদের তো না বোঝার কথা নয়। বরং এই লোকগুলো তাঁকে নেত্রীর বদলে Madam বা সভাপতির বদলে Chairperson বলে যে তাঁকেই খাটো করছেন; তাও তিনি বোঝেন কিনা, জানি না। আশা করি তিনি বুঝবেন। 

ঢাকা : ৮ মার্চ ২০১২
লেখক : ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2012-03-10&ni=89328

1971 March 7th shek mujibur rahman

http://www.youtube.com/watch?v=Ep74MqbXEWU&feature=related