মঙ্গলবার, ৬ মার্চ ২০১২, ২৩ ফাল্গুন ১৪১৮ ইতিহাস বিকৃতি রাষ্ট্রদ্রোহ, দায়ীদের ফাঁসি দেয়া উচিত ॥ হাইকোর্ট উন্মুক্ত ভার্সিটির সাবেক ভিসি এরশাদুল বারীকে তলব ১২ মার্চ, ঢাবির প্রো-ভিসিসহ পাঁচ অধ্যাপককে আজ হাজিরের নির্দেশ স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগের মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এরশাদুল বারীকে তলব করেছে হাইকোর্ট। ১২ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে তাঁকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এ সময় আদালত বলেছে, 'ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। যারা এ কাজ করেছেন, হয় তারা আহাম্মক, না হলে তারা ইচ্ছে করে এ কাজ করেছেন। 'এমন বিশ্বাসঘাতকতা কিভাবে হলো? যারা করেছেন, তাদের ফাঁসি দেয়া উচিত। সোমবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। একই সঙ্গে বিকৃত করে ইতিহাস লেখার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসিসহ পাঁচ অধ্যাপককে আজ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত রুলের শুনানিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদসহ পাঁচ অধ্যাপক আদালতে হাজির হলে আদালত এ আদেশ দেয়। এছাড়াও বিকৃতির ঘটনায় ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে করা কমিটিকে আজ মঙ্গলবার আদালতে আসতে অনুরোধ করা হয়েছে। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার অধ্যাপক শওকত আরা হোসেন, সাবিহা সুলতানা, মাহফুজা চৌধুরী ও দেলোয়ার হোসেন আদালতে উপস্থিত হয়েছেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আর আই এম আমিনুর রশিদ বিদেশে অবস্থান করায় তিনি সোমবার হাজির হননি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বইতে বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপনের অভিযোগে ২০১০ সালে আদালতে এ রিটটি করেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী আলতাফউদ্দিন। হারুন-অর-রশীদ ও শওকত আরা যৌথভাবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি প্রোগ্রামের পৌরনীতি দ্বিতীয় পত্র বই লেখেন। বইটিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ গ্রেফতারের পর জনতা দিক নির্দেশনার অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়ে। জাতির এ সঙ্কটকালে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান নিজেকে প্রেসিডেন্ট ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।" সাবিহা সুলতানা, মাহফুজা চৌধুরী ও দেলোয়ার হোসেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একই প্রোগ্রামের সমাজ বিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র বই লেখেন। এই বইয়ের 'বাংলাদেশের জন্ম ও ক্রম বিকাশ' অধ্যায়ের এক অংশে বলা হয়, "অকুতোভয় মেজর জিয়া তার সহসঙ্গী বাঙালী সৈনিকদের নিয়ে কেবল পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রামই গড়ে তোলেননি, তিনিই প্রথম চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে দেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।" শুনানিতে আদালত সৈয়দ হায়দার আলীর উদ্দেশে বলেন, 'আজ এ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে এলএলএম পদে নিয়োগের জন্য একটি মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় স্বাধীনতার ঘোষকের নাম জিজ্ঞাসা করা হলে ৯০ শতাংশ প্রার্থী জিয়াউর রহমানকে ঘোষক বলেছেন। এর দায় কার? প্রফেসররা বই লেখেন জিয়াউর রহমানকে ঘোষক বলে। আর কোমলমতি ছেলেরা তাই পড়েন। যারা এসব ইতিহাস বিকৃতি করেন, তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো উচিত। তাদের একমাত্র শাস্তি হলো ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো।' আদালত আরও বলে, 'আমরা জানি, যখন স্বাধীনতা ঘোষণা হচ্ছে, তখন জিয়াউর রহমান সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানী অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছিলেন। পরে সৈন্যদের প্রতিরোধের মুখে তিনি আর যাননি। এটা মেজর রফিকও বলেছেন।' আদালত বলে, 'ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহিতা। যারা এ কাজ করেছেন, হয় তারা আহাম্মক, না হলে তারা ইচ্ছে করে এ কাজ করেছেন। এতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। যতদিন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বইতে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক লেখা ছিল, ততদিন শিক্ষার্থীরা এ বিষয়টিই জেনেছে। এটা এখন আর তাদের মন থেকে ভুলিয়ে দেয়া যাবে না। বা তাদের আবার ওই ক্লাসে ভর্তি করিয়ে সংশোধন করে পড়ানো যাবে না।' আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন ড. বেলাল হোসেন জয়, প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদের পক্ষে সৈয়দ হায়দার আলী। সরকার পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্র্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন। |