----- Forwarded Message -----
From: SyedAslam <syed.aslam3@gmail.com>
To: notun Bangladesh <notun_bangladesh@yahoogroups.com>
Sent: Sunday, June 10, 2012 8:11 AM
Subject: Nuremberg Trial : ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল_৩ - কোর্ট চ্যালেঞ্জ করে ওরাও সেদিন গণহত্যা অস্বীকার করেছিল
From: SyedAslam <syed.aslam3@gmail.com>
To: notun Bangladesh <notun_bangladesh@yahoogroups.com>
Sent: Sunday, June 10, 2012 8:11 AM
Subject: Nuremberg Trial : ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল_৩ - কোর্ট চ্যালেঞ্জ করে ওরাও সেদিন গণহত্যা অস্বীকার করেছিল
কোর্ট চ্যালেঞ্জ করে ওরাও সেদিন গণহত্যা অস্বীকার করেছিল
ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল_৩
মামুন-অর-রশিদ ॥ পৃথিবীর কোথাও যুদ্ধাপরাধী কিংবা গণহত্যার সঙ্গে জড়িতরা তাদের বিচার হবে ভাবতে পারেনি। আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিশ্বস্বীকৃত গণহত্যার বিষয়টিও তারা অস্বীকার করে। জার্মানির 'প্যালেস অব জাস্টিস'-এ দাঁড়িয়ে হিটলারের নাৎসী বাহিনী মিত্রশক্তি গঠিত 'নু্যরেমবার্গ ট্রায়াল'-এর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল। কিন্তু তাদের চ্যালেঞ্জ আদালতে টেকেনি। নাৎসী বাহিনী একই সঙ্গে অস্বীকার করেছিল গণহত্যার বিষয়টিও। স্বাধীনতার প্রায় চার দশক পর বাংলাদেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে, তখন তারা বিশেষ ট্রাইব্যুনালকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। কিন্তু ধোপে টেকেনি। একই সঙ্গে ঘাতকচক্র একাত্তরে নির্বিচারে অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, লুটপাট এবং গণহত্যার বিষয়টিও অস্বীকার করছে। বিশেষ করে '৭৫-এর ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডিতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলার মাটিতে রাজাকারদের দম্ভ বেড়ে গিয়েছিল। জেনারেল জিয়ার হাত ধরে দেশে কথিত 'বহুদলীয় গণতন্ত্রের শরাব'-এর নামে স্বাধীনতাবিরোধীরা ধর্মীয় রাজনীতির আবার অনুমতি পেয়ে গাড়িতে মন্ত্রিত্বের পতাকা উড়িয়েছে। দম্ভ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং তাদের যুদ্ধাপরাধও অস্বীকার করেছে।
'মিথ্যাকে শতবার বলে সত্যে পরিণত করা' তত্ত্বের প্রবক্তা হিটলারের আরেক দোসর গোয়েবলস ততৰণে আত্মহত্যা করে ইহলোক ত্যাগ করলেও জার্মান নাৎসিরা গোয়েবলসের পথ ধরে আত্মরৰার জন্য আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গণহত্যার বিষয়টিও অস্বীকার করেছিল। বাংলাদেশেও তাই ঘটছে। বাঙালীর মহান মুক্তি সংগ্রামে '৭১ সালে পাক বাহিনীর এদেশীয় দোসর গোলাম আযম আর নিজামী-মুজাহিদের হাতে গড়া রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর ঘাতকচক্র কোনদিন দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি এদেশে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এই ঘাতকচক্র গাড়িতে মন্ত্রিত্বের পতাকা লাগানোর পর তাদের ঔদ্ধত্য এবং স্পর্ধা আরও বেড়ে যায়। তারা মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধকেই অস্বীকার করতে থাকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রশাসন দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিশেষ ট্রাইবু্যনাল গঠন এবং যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়। ঠিক জার্মান নাৎসিদের মতোই বাংলাদেশে '৭১-এর যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সহযোগীরা বিশেষ আদালতের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। এমনকি একাত্তরের ঘাতকচক্র অগি্নসংযোগ, ধর্ষণ, লুটপাট এবং গণহত্যার বিষয়টিও অস্বীকার করছে। জার্মানির নাৎসি বাহিনীর ঘাতকদের মতো বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক পাক বাহিনীর এদেশীয় দোসরদের বিচার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তবে নু্যরেমবার্গ ট্রায়ালে প্যালেস অব জাস্টিসে পাঁচ শতাধিক কৰ ছিল। বিচারক, প্রসিকিউটর, অভিযুক্তদের কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। ২৪ জনের মধ্যে ২২ জনের দ-াদেশ প্রদানে বিশ্বের দুই পরাশক্তিসহ শক্তিধর চার রাষ্ট্রের ৫৬ আইনজীবী আইনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। আট মাস ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তথ্যচিত্র সংগ্রহ, শুনানি এবং প্রায় দেড় মাস ধরে রায় লেখা হয়। ২৫ ঘণ্টায় এই রায় পাঠ করে শোনানো হয়। নাৎসি বর্বরদের বিচারকাজ পরিচালনায় নু্যরেমবার্গ ট্রায়ালে একাধিক আদালত বসিয়ে বিচারকাজ চালিয়েছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে তদনত্ম কর্মকর্তা, প্রসিকিউটর নিয়োগ ও তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সবাই হতাশাই ব্যক্ত করেছেন। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত বিশেষ ট্রাইবু্যনালের নিরাপত্তা ও তথ্যচিত্র সংগ্রহের চিনত্মা করে আদালত অঙ্গনের পরিধি ও পরিসর ব্যাপকভাবে বাড়ানো দরকার। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আর্থিক সমর্থনের বিষয়টি যথাসময়ে নিশ্চিত করা দরকার। বাংলাদেশে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন তাদের মতে বিষয়টি মোটেই খেলনা নয়, তাই যথার্থ গুরুত্ব দিয়েই এটি বিবেচনা করতে হবে।
নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতকদের যখন আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে, তখন সাৰ্য-প্রমাণের অভাব হবে ভেবে গণহত্যার বিষয়টিও তারা অস্বীকার করে, যা ঘটেছিল জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বক্তব্যেও। একাত্তরের ঘাতকচক্র মুক্তিযুদ্ধকালীন গোটাদেশে অগি্নসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ ও গণহত্যার বিষয়টি এখন বেমালুম অস্বীকার করছে। কিন্তু জাতীয়-আনত্মর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম, আলোকচিত্র, ডকুমেন্টারি, চলচ্চিত্র এবং পৃথিবীর বিভিন্ন আর্কাইভে সংরৰিত দলিলপত্র মুছে দেয়া ঘাতকদের পৰে সম্ভব হয়নি। আর এগুলোই তখন সাৰ্য হিসেবে কাজ করে। যেমনটি করেছে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে গঠিত প্রথম আনত্মর্জাতিক আদালত নু্যরেমবার্গ ট্রায়ালে। আগামীতে যা কার্যকর হবে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায়ও।
নু্যরেমবার্গ ট্রায়ালে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, পরস্পরের যোগসাজশ এবং গণহত্যার বিষয়টিই ছিল মুখ্য বিবেচ্য ॥ যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধের ৰেত্রে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, পরস্পরের যোগসাজশ এবং গণহত্যার বিষয়টিই বিচারে প্রাধান্য দেয়া হয়। নু্যরেমবার্গ ট্রায়ালেও তাই হয়েছে। তাহলে একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে এত ভাবতে হবে কেন? কে বা কারা, কেন এই গণহত্যা চালিয়েছে_ এসব প্রশ্নের উত্তর জাতীয় ও আনত্মর্জাতিক পর্যায়ে কারোরই অজানা নয়। এই গণহত্যার লৰ্য কী ছিল? এমন বর্বরোচিত গণহত্যার মাধ্যমে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতেই পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। একসঙ্গে তাই এত নির্দোষ, নিরপরাধ ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়। অপরাধের ধরন ভিন্ন_ তবে ব্যাপকতা এবং উদ্দেশ্য ভয়ঙ্কর। এসব অপরাধের ধরন, প্রকৃতি, উদ্দেশ্য তুলে ধরে 'ওয়ারক্রাইম সেভেনটি ওয়ান' প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
বিশ্বে গণহত্যা চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের নাম নিশানাও নেই ॥ সম্প্রতি নির্মিত জেনোসাইড : দ্য হরর কন্টিনিউস' প্রামাণ্যচিত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ রম্নয়ান্ডা, বুরুন্ডি, সিয়েরালিওন, বসনিয়া, সার্ভিয়া, ফিলিসত্মিন, ইসরাইল, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের ভয়াবহ গণহত্যার নৃশংস দৃশ্য তুলে ধরা হলেও '৭১-এ বাংলাদেশের ভয়াবহ গণহত্যা সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। ইতোমধ্যে কম্বোডিয়ায় গণহত্যার জন্য রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তার বিচার হয়েছে। এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার অব্যাহত রয়েছে। জার্মানিতে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং সেই বছরই বিচারকাজ শেষ হলেও ৫৫ বছর পর সম্প্রতি জার্মানির বিশেষ আদালতে ৫৬ বছর বয়সী এক নাৎসিকে শাসত্মি দেয়া হয়।
হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে পাকি বাহিনীর সমালোচনা ॥ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো সে দেশের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের রিপোর্টে তৎকালীন পূর্ব পাকিসত্মান এবং আজকের বাংলাদেশে পাক সামরিক বাহিনীর '৭১ সালে নির্বিচারে গণহত্যার কঠোর সমালোচনা করে বলা হয়_ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী কেন এত বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে। ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ১ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৭২ সাল থেকে কাজ শুরম্ন করে। কমিশন উর্ধতন ও মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় ২১৩ সেনা কর্মকর্তার সাৰ্য গ্রহণ করে। এতে ১৬ ডিসেম্বরের আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশের রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। ১৯৭২ সালের ১২ জুলাই প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোকে কমিশন রিপোর্ট প্রদান করে। এই রিপোর্টে পাকিসত্মানের সুসজ্জিত সামরিক বাহিনীর এত বেসামরিক লোকের নিধনযজ্ঞের ভর্ৎসনা করা হয়।
দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকরা পাকিস্তানেও ভাল নেই ॥ মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিসত্মান গেছে এদেশীয় মুসলিম লীগার এবং পাক বাহিনীর দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রায় ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি সামনে নিয়ে না আসার জন্য পাকিসত্মান সরকারের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারকে সরাসরি অনুরোধ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। ফলে আইন সংস্কারের মাধ্যমে পাকিসত্মানে বসবাসরত বাঙালীদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিবাসী আইনের বিধান কঠোর করা হচ্ছে। গত অক্টোবর মাসে পাক সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বিশেষ বৈঠকে মিলিত হয়েছে। এ ব্যাপারে যৌথ উদ্যোগে কাজ শুরম্ন করেছে পাকিসত্মানের প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰ (এনএআরএ_ ন্যাশনাল এলিয়েনস্ রেজিস্ট্রেশন অথরিটি) এবং জাতীয় পরিসংখ্যান রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰ (এনএডিআরএ_ ন্যাশনাল ডাটাবেজ এ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অথরিটি)। প্রসঙ্গত, পাকিসত্মান সরকার ১৯৭৪ সালের পূর্বে যে সব বাঙালী পাকিসত্মান ফিরে গেছে, তাদের আবাসিক ঠিকানা থাকলে নাগরিকত্ব দেয়ার আইন করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম তাদের নাগরিকত্ব না দিয়ে কয়েক হাজার বাঙালীকে শুধু রেজিস্ট্রেশন এবং কাজের অনুমতি দেয়া হয়।
পাকিসত্মানে বসবাসরত বাঙালীদের নিয়ন্ত্রণে সে দেশের সরকার আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। আনত্মঃমন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তাদের মতামত সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিকে জানিয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর ইসলামাবাদে পাক সরকারের সংশিস্নষ্টরা এ বিষয়ে এক সভায় মিলিত হন। আব্দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পাকিসত্মানের প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰের এবং জাতীয় পরিসংখ্যান রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰকে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া পরিবর্তনের নির্দেশনা দেয়া হয়।
পাকিসত্মানের প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰের দেয়া সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী পাকিসত্মানে ২০ লাখ প্রবাসী বাঙালী থাকলেও তাদের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন রয়েছে মাত্র ৫৩ হাজারের। বাকি প্রায় ১৯ লাখ ৫০ হাজার বাঙালীকে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয়। পাকিসত্মানে জন্মগ্রহণকারী থার্ড জেনারেশনের বাঙালীরাও রেজিস্ট্র্রেশন না পেলে পুলিশের হয়রানি থেকে রেহাই পান না। পাকিসত্মান সরকারের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকা- এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে পাকিসত্মান সরকার অবৈধ অভিবাসী বাঙালীদের ব্যাপারে আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এবারের আইনী সংস্কারে অবৈধ বাঙালীদের পাকিসত্মানে অবস্থান করা আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্র দাবি করেছে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের (ইউএনএইচআরসি) একটি প্রতিনিধি দল ১৯৮০ সালে পাকিসত্মানে বিদেশী অভিবাসী সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে পাকিসত্মান পরিদর্শনে যায়। প্রতিনিধি দল প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তখন পাকিসত্মানে মোট অভিবাসীর সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন মিলিয়ন (৩৫ লাখ)। এদের মধ্যে ২২ লাখ অভিবাসী করাচীতে বাস করত, যাদের শতকরা ৯০ ভাগ বা প্রায় ২০ লাখ বাঙালী। ঘনবসতিপূর্ণ মকর কলোনি অথবা মোহাম্মদী কলোনি নামে পরিচিত এলাকায় অধিকাংশ বাঙালীর বসবাস।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দলকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ২৫ বছর বয়সী নুর-উল-হাসান বলেন, 'করাচীতে জন্ম নেয়ার পরেও কেন আমাকে ভিনদেশী (এলিয়েন) বলা হবে? শামসুদ্দীন নামের আরেক যুবক কমিশনের প্রতিনিধি দলকে বলেন, বাংলায় কথা বলার জন্যই পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করেছিল। পুরনো একটি পরিচয়পত্র দেখানোর পরও তাকে দু'মাস কারাবন্দী থাকতে হয় বলে তিনি জানান। আব্দুর রহমান পবিত্র কোরানের কসম কেটে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমি পাকিসত্মানে জন্মেছি। আমার বাবা পাকিসত্মানী। আমার সনত্মানও জন্মেছে পাকিসত্মানে। তিনি আত্মপরিচয়ের সন্ধানে নিজের দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার কথা বর্ণনা করে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আমরা মুসলিম লীগার হিসেবে পরিচিত ছিলাম। তখন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের টার্গেট করেছে। পাক সেনারা ৰেত্রবিশেষে আমাদের আপন ভেবেছে, আবার শত্রম্ন ভেবে নির্যাতনও করেছে। এখন পাকিসত্মানে এসেও একই ধরনের আচরণের শিকার হচ্ছি। তাহলে আমরা যাবটা কোথায়? আব্দুল নামের এক যুবক দাবি করেন, আমাদের এখানে 'দ্বিতীয় শ্রেণী'র নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিসত্মান এসেও আত্মপরিচয় নিশ্চিত করতে পারছি না।' পাকিসত্মানে বসবাসকারী অধিকাংশ বাঙালী গরিব। ওসমান টাউন বাঙালীপাড়া বাঙালী অধু্যষিত একটি এলাকা, যেখানে অধিকাংশ বাঙালীর বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। এখানে বাঙালীদের ক্রমাগত অসহনীয় হয়রানির শিকার হতে হয়। রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰ এবং পাক পুলিশ তাদের হয়রানি করে বলে কমিশনের রিপোর্টে উলেস্নখ করা হয়। এমনকি সরকারী হাসপাতালে অসুস্থ বাঙালীদের ভর্তি করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
'৭১-এ গণহত্যার বিচারে বাংলাদেশে স্বজনহারাদের আর্তি একাত্তর আমার 'বেদনার্ত অতীতের স্মৃতিময় দ্যোতনা। স্বজনহারানোর বেদনায় অনুৰণ রক্তৰরণের ধারায় জীবনসায়াহ্নে গণহত্যাকারীদের বিচার আমার আর্তি। রক্তপিপাসু হায়েনার দোসর এদেশীয় খুনীদের বিচার করে দেশকে ন্যায়ের ধারায় ফিরিয়ে আনা আমার তৃষ্ণা।' এভাবেই বলেছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলীম চৌধুরীর কন্যা নুজহাত চৌধুরী শম্পা। সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে গঠিত বিশেষ ট্রাইবু্যনাল অভিযুক্তদের মধ্যে দ-িতদের পুনর্বিচার কিংবা দ-াদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনের সুযোগ বিচার প্রক্রিয়াকে আনত্মর্জাতিক মহলের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তবে সবার শঙ্কা_ দ-াদেশের পর বিচারিক রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন যেন বিচার প্রক্রিয়াকে ঝুলিয়ে না দেয়!
'মিথ্যাকে শতবার বলে সত্যে পরিণত করা' তত্ত্বের প্রবক্তা হিটলারের আরেক দোসর গোয়েবলস ততৰণে আত্মহত্যা করে ইহলোক ত্যাগ করলেও জার্মান নাৎসিরা গোয়েবলসের পথ ধরে আত্মরৰার জন্য আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে গণহত্যার বিষয়টিও অস্বীকার করেছিল। বাংলাদেশেও তাই ঘটছে। বাঙালীর মহান মুক্তি সংগ্রামে '৭১ সালে পাক বাহিনীর এদেশীয় দোসর গোলাম আযম আর নিজামী-মুজাহিদের হাতে গড়া রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর ঘাতকচক্র কোনদিন দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি এদেশে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এই ঘাতকচক্র গাড়িতে মন্ত্রিত্বের পতাকা লাগানোর পর তাদের ঔদ্ধত্য এবং স্পর্ধা আরও বেড়ে যায়। তারা মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধকেই অস্বীকার করতে থাকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রশাসন দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বিশেষ ট্রাইবু্যনাল গঠন এবং যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়। ঠিক জার্মান নাৎসিদের মতোই বাংলাদেশে '৭১-এর যুদ্ধাপরাধী এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সহযোগীরা বিশেষ আদালতের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। এমনকি একাত্তরের ঘাতকচক্র অগি্নসংযোগ, ধর্ষণ, লুটপাট এবং গণহত্যার বিষয়টিও অস্বীকার করছে। জার্মানির নাৎসি বাহিনীর ঘাতকদের মতো বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক পাক বাহিনীর এদেশীয় দোসরদের বিচার এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তবে নু্যরেমবার্গ ট্রায়ালে প্যালেস অব জাস্টিসে পাঁচ শতাধিক কৰ ছিল। বিচারক, প্রসিকিউটর, অভিযুক্তদের কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। ২৪ জনের মধ্যে ২২ জনের দ-াদেশ প্রদানে বিশ্বের দুই পরাশক্তিসহ শক্তিধর চার রাষ্ট্রের ৫৬ আইনজীবী আইনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। আট মাস ধরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তথ্যচিত্র সংগ্রহ, শুনানি এবং প্রায় দেড় মাস ধরে রায় লেখা হয়। ২৫ ঘণ্টায় এই রায় পাঠ করে শোনানো হয়। নাৎসি বর্বরদের বিচারকাজ পরিচালনায় নু্যরেমবার্গ ট্রায়ালে একাধিক আদালত বসিয়ে বিচারকাজ চালিয়েছে। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে তদনত্ম কর্মকর্তা, প্রসিকিউটর নিয়োগ ও তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সবাই হতাশাই ব্যক্ত করেছেন। এসব বিবেচনায় বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত বিশেষ ট্রাইবু্যনালের নিরাপত্তা ও তথ্যচিত্র সংগ্রহের চিনত্মা করে আদালত অঙ্গনের পরিধি ও পরিসর ব্যাপকভাবে বাড়ানো দরকার। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় আর্থিক সমর্থনের বিষয়টি যথাসময়ে নিশ্চিত করা দরকার। বাংলাদেশে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন তাদের মতে বিষয়টি মোটেই খেলনা নয়, তাই যথার্থ গুরুত্ব দিয়েই এটি বিবেচনা করতে হবে।
নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতকদের যখন আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে, তখন সাৰ্য-প্রমাণের অভাব হবে ভেবে গণহত্যার বিষয়টিও তারা অস্বীকার করে, যা ঘটেছিল জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বক্তব্যেও। একাত্তরের ঘাতকচক্র মুক্তিযুদ্ধকালীন গোটাদেশে অগি্নসংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ ও গণহত্যার বিষয়টি এখন বেমালুম অস্বীকার করছে। কিন্তু জাতীয়-আনত্মর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম, আলোকচিত্র, ডকুমেন্টারি, চলচ্চিত্র এবং পৃথিবীর বিভিন্ন আর্কাইভে সংরৰিত দলিলপত্র মুছে দেয়া ঘাতকদের পৰে সম্ভব হয়নি। আর এগুলোই তখন সাৰ্য হিসেবে কাজ করে। যেমনটি করেছে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে গঠিত প্রথম আনত্মর্জাতিক আদালত নু্যরেমবার্গ ট্রায়ালে। আগামীতে যা কার্যকর হবে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায়ও।
নু্যরেমবার্গ ট্রায়ালে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, পরস্পরের যোগসাজশ এবং গণহত্যার বিষয়টিই ছিল মুখ্য বিবেচ্য ॥ যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতার বিরম্নদ্ধে অপরাধের ৰেত্রে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, পরস্পরের যোগসাজশ এবং গণহত্যার বিষয়টিই বিচারে প্রাধান্য দেয়া হয়। নু্যরেমবার্গ ট্রায়ালেও তাই হয়েছে। তাহলে একাত্তরের গণহত্যা নিয়ে এত ভাবতে হবে কেন? কে বা কারা, কেন এই গণহত্যা চালিয়েছে_ এসব প্রশ্নের উত্তর জাতীয় ও আনত্মর্জাতিক পর্যায়ে কারোরই অজানা নয়। এই গণহত্যার লৰ্য কী ছিল? এমন বর্বরোচিত গণহত্যার মাধ্যমে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতেই পরিকল্পিত নিধনযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। একসঙ্গে তাই এত নির্দোষ, নিরপরাধ ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়। অপরাধের ধরন ভিন্ন_ তবে ব্যাপকতা এবং উদ্দেশ্য ভয়ঙ্কর। এসব অপরাধের ধরন, প্রকৃতি, উদ্দেশ্য তুলে ধরে 'ওয়ারক্রাইম সেভেনটি ওয়ান' প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
বিশ্বে গণহত্যা চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের নাম নিশানাও নেই ॥ সম্প্রতি নির্মিত জেনোসাইড : দ্য হরর কন্টিনিউস' প্রামাণ্যচিত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ রম্নয়ান্ডা, বুরুন্ডি, সিয়েরালিওন, বসনিয়া, সার্ভিয়া, ফিলিসত্মিন, ইসরাইল, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের ভয়াবহ গণহত্যার নৃশংস দৃশ্য তুলে ধরা হলেও '৭১-এ বাংলাদেশের ভয়াবহ গণহত্যা সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। ইতোমধ্যে কম্বোডিয়ায় গণহত্যার জন্য রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তার বিচার হয়েছে। এখনও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার অব্যাহত রয়েছে। জার্মানিতে ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং সেই বছরই বিচারকাজ শেষ হলেও ৫৫ বছর পর সম্প্রতি জার্মানির বিশেষ আদালতে ৫৬ বছর বয়সী এক নাৎসিকে শাসত্মি দেয়া হয়।
হামুদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে পাকি বাহিনীর সমালোচনা ॥ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো সে দেশের প্রধান বিচারপতি হামুদুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের রিপোর্টে তৎকালীন পূর্ব পাকিসত্মান এবং আজকের বাংলাদেশে পাক সামরিক বাহিনীর '৭১ সালে নির্বিচারে গণহত্যার কঠোর সমালোচনা করে বলা হয়_ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী কেন এত বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে। ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ১ ফেব্রম্নয়ারি ১৯৭২ সাল থেকে কাজ শুরম্ন করে। কমিশন উর্ধতন ও মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় ২১৩ সেনা কর্মকর্তার সাৰ্য গ্রহণ করে। এতে ১৬ ডিসেম্বরের আত্মসমর্পণ এবং বাংলাদেশের রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে অনেক কিছু বেরিয়ে আসে। ১৯৭২ সালের ১২ জুলাই প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোকে কমিশন রিপোর্ট প্রদান করে। এই রিপোর্টে পাকিসত্মানের সুসজ্জিত সামরিক বাহিনীর এত বেসামরিক লোকের নিধনযজ্ঞের ভর্ৎসনা করা হয়।
দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকরা পাকিস্তানেও ভাল নেই ॥ মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ ছেড়ে পাকিসত্মান গেছে এদেশীয় মুসলিম লীগার এবং পাক বাহিনীর দোসর আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা। স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রায় ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি সামনে নিয়ে না আসার জন্য পাকিসত্মান সরকারের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সরকারকে সরাসরি অনুরোধ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। ফলে আইন সংস্কারের মাধ্যমে পাকিসত্মানে বসবাসরত বাঙালীদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিবাসী আইনের বিধান কঠোর করা হচ্ছে। গত অক্টোবর মাসে পাক সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বিশেষ বৈঠকে মিলিত হয়েছে। এ ব্যাপারে যৌথ উদ্যোগে কাজ শুরম্ন করেছে পাকিসত্মানের প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰ (এনএআরএ_ ন্যাশনাল এলিয়েনস্ রেজিস্ট্রেশন অথরিটি) এবং জাতীয় পরিসংখ্যান রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰ (এনএডিআরএ_ ন্যাশনাল ডাটাবেজ এ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অথরিটি)। প্রসঙ্গত, পাকিসত্মান সরকার ১৯৭৪ সালের পূর্বে যে সব বাঙালী পাকিসত্মান ফিরে গেছে, তাদের আবাসিক ঠিকানা থাকলে নাগরিকত্ব দেয়ার আইন করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যনত্ম তাদের নাগরিকত্ব না দিয়ে কয়েক হাজার বাঙালীকে শুধু রেজিস্ট্রেশন এবং কাজের অনুমতি দেয়া হয়।
পাকিসত্মানে বসবাসরত বাঙালীদের নিয়ন্ত্রণে সে দেশের সরকার আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। আনত্মঃমন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে তাদের মতামত সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটিকে জানিয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর ইসলামাবাদে পাক সরকারের সংশিস্নষ্টরা এ বিষয়ে এক সভায় মিলিত হন। আব্দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পাকিসত্মানের প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰের এবং জাতীয় পরিসংখ্যান রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰকে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া পরিবর্তনের নির্দেশনা দেয়া হয়।
পাকিসত্মানের প্রবাসী রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰের দেয়া সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী পাকিসত্মানে ২০ লাখ প্রবাসী বাঙালী থাকলেও তাদের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন রয়েছে মাত্র ৫৩ হাজারের। বাকি প্রায় ১৯ লাখ ৫০ হাজার বাঙালীকে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হয়। পাকিসত্মানে জন্মগ্রহণকারী থার্ড জেনারেশনের বাঙালীরাও রেজিস্ট্র্রেশন না পেলে পুলিশের হয়রানি থেকে রেহাই পান না। পাকিসত্মান সরকারের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকা- এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে পাকিসত্মান সরকার অবৈধ অভিবাসী বাঙালীদের ব্যাপারে আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে এবারের আইনী সংস্কারে অবৈধ বাঙালীদের পাকিসত্মানে অবস্থান করা আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে সংশিস্নষ্ট সূত্র দাবি করেছে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের (ইউএনএইচআরসি) একটি প্রতিনিধি দল ১৯৮০ সালে পাকিসত্মানে বিদেশী অভিবাসী সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে পাকিসত্মান পরিদর্শনে যায়। প্রতিনিধি দল প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, তখন পাকিসত্মানে মোট অভিবাসীর সংখ্যা ছিল সাড়ে তিন মিলিয়ন (৩৫ লাখ)। এদের মধ্যে ২২ লাখ অভিবাসী করাচীতে বাস করত, যাদের শতকরা ৯০ ভাগ বা প্রায় ২০ লাখ বাঙালী। ঘনবসতিপূর্ণ মকর কলোনি অথবা মোহাম্মদী কলোনি নামে পরিচিত এলাকায় অধিকাংশ বাঙালীর বসবাস।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দলকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ২৫ বছর বয়সী নুর-উল-হাসান বলেন, 'করাচীতে জন্ম নেয়ার পরেও কেন আমাকে ভিনদেশী (এলিয়েন) বলা হবে? শামসুদ্দীন নামের আরেক যুবক কমিশনের প্রতিনিধি দলকে বলেন, বাংলায় কথা বলার জন্যই পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করেছিল। পুরনো একটি পরিচয়পত্র দেখানোর পরও তাকে দু'মাস কারাবন্দী থাকতে হয় বলে তিনি জানান। আব্দুর রহমান পবিত্র কোরানের কসম কেটে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমি পাকিসত্মানে জন্মেছি। আমার বাবা পাকিসত্মানী। আমার সনত্মানও জন্মেছে পাকিসত্মানে। তিনি আত্মপরিচয়ের সন্ধানে নিজের দীর্ঘদিনের যন্ত্রণার কথা বর্ণনা করে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আমরা মুসলিম লীগার হিসেবে পরিচিত ছিলাম। তখন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের টার্গেট করেছে। পাক সেনারা ৰেত্রবিশেষে আমাদের আপন ভেবেছে, আবার শত্রম্ন ভেবে নির্যাতনও করেছে। এখন পাকিসত্মানে এসেও একই ধরনের আচরণের শিকার হচ্ছি। তাহলে আমরা যাবটা কোথায়? আব্দুল নামের এক যুবক দাবি করেন, আমাদের এখানে 'দ্বিতীয় শ্রেণী'র নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিসত্মান এসেও আত্মপরিচয় নিশ্চিত করতে পারছি না।' পাকিসত্মানে বসবাসকারী অধিকাংশ বাঙালী গরিব। ওসমান টাউন বাঙালীপাড়া বাঙালী অধু্যষিত একটি এলাকা, যেখানে অধিকাংশ বাঙালীর বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। এখানে বাঙালীদের ক্রমাগত অসহনীয় হয়রানির শিকার হতে হয়। রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপৰ এবং পাক পুলিশ তাদের হয়রানি করে বলে কমিশনের রিপোর্টে উলেস্নখ করা হয়। এমনকি সরকারী হাসপাতালে অসুস্থ বাঙালীদের ভর্তি করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে।
'৭১-এ গণহত্যার বিচারে বাংলাদেশে স্বজনহারাদের আর্তি একাত্তর আমার 'বেদনার্ত অতীতের স্মৃতিময় দ্যোতনা। স্বজনহারানোর বেদনায় অনুৰণ রক্তৰরণের ধারায় জীবনসায়াহ্নে গণহত্যাকারীদের বিচার আমার আর্তি। রক্তপিপাসু হায়েনার দোসর এদেশীয় খুনীদের বিচার করে দেশকে ন্যায়ের ধারায় ফিরিয়ে আনা আমার তৃষ্ণা।' এভাবেই বলেছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলীম চৌধুরীর কন্যা নুজহাত চৌধুরী শম্পা। সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে গঠিত বিশেষ ট্রাইবু্যনাল অভিযুক্তদের মধ্যে দ-িতদের পুনর্বিচার কিংবা দ-াদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদনের সুযোগ বিচার প্রক্রিয়াকে আনত্মর্জাতিক মহলের কাছে অধিকতর গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তবে সবার শঙ্কা_ দ-াদেশের পর বিচারিক রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন যেন বিচার প্রক্রিয়াকে ঝুলিয়ে না দেয়!
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2011-01-06&ni=44716
বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারী ২০১১, ২৩ পৌষ ১৪১৭
__._,_.___