----- Forwarded Message -----
From: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>
To: Khobor <khabor@yahoogroups.com>
Sent: Wednesday, August 1, 2012 1:35 AM
Subject: [KHABOR] আগস্ট শুধু জাতির শোকের নয়, বাঙালির স্বাধীন জাতিসত্তায় পুনর্জাগরণেরও মাস
From: SyedAslam <Syed.Aslam3@gmail.com>
To: Khobor <khabor@yahoogroups.com>
Sent: Wednesday, August 1, 2012 1:35 AM
Subject: [KHABOR] আগস্ট শুধু জাতির শোকের নয়, বাঙালির স্বাধীন জাতিসত্তায় পুনর্জাগরণেরও মাস
আগস্ট শুধু জাতির শোকের নয়, বাঙালির স্বাধীন জাতিসত্তায় পুনর্জাগরণেরও মাসআব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী | |
বাংলাদেশের জাতীয় শোকের মাস আগস্ট। এই মাসে কেবল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হলে হয়তো সামগ্রিক অর্থে গোটা মাসটাকে শোকের মাস বলা যেত না। এই মাসে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ এবং জাতীয় কবি নজরুল ইসলামেরও মৃত্যু হয়। ফলে গোটা আগস্ট মাসটাই বাঙালির কাছে ধীরে ধীরে জাতীয় শোকের মাসে পরিণত হয়েছে। এই শোকের মাসটিকে ক্ষমতায় বসে এতকাল যারা অগ্রাহ্য ও উপেক্ষা করেছেন, তাদের কি জাতিদ্রোহী বলা যায়? নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। ২০১০ সালের জাতীয় শোকের মাসের বৈশিষ্ট্য এই যে, এবারই প্রথম জাতিদ্রোহীদের সব প্রচারণা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা ব্যর্থ করে শোকের মাসটির সামগ্রিক তাৎপর্য জাতি উপলব্ধি করেছে এবং জাতির জনকের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা ও জাতীয় কবিকেও আরও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে। বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় পরিচয়ের দুটি বড় বিভাগ আছে। তাদের একদল সুন্নি এবং আরেক দল শিয়া। এছাড়াও তাদের মধ্যে ছোট-বড় আরও বিভাগ আছে। এখানে সে আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক। আমার বলার কথা, কারবালার যুদ্ধে শহীদ, মহানবীর দৌহিত্র ইমাম হোসেনকে শিয়া সম্প্রদায় তাদের ইমাম মনে করে এবং গত দেড় হাজার বছর ধরে তার শাহাদতের দিন ১০ মহররমকে শোকের দিন হিসেবে বিরাটভাবে পালন করে আসছে। শিয়াদের সঙ্গে ধর্মীয় ব্যাপারে অনেক বিরোধ থাকা সত্ত্বেও সুন্নিরাও মহররম মাসের এ শোকের দিনটি পালন করে। তাদের কাছে ইমাম হোসেনের মহানবীর (সা.) নাতি হওয়ার পরিচয়টিই বড়। তাছাড়া মাবিয়াপুত্র এজিদের স্বৈরাচার ও ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি শহীদ হয়েছিলেন। তাকে চক্রান্ত করে যুদ্ধের ফাঁদে ফেলে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয়েছিল। সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলমানরাও তাই এই দিনে শিয়াদের সঙ্গে মিলে এ শাহাদত দিবসটি পালন করতে দ্বিধা করে না। লক্ষ্য করার বিষয়, বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও এখন দলীয় নেতার পরিচয় অতিক্রম করে জাতির জনক এবং একটি জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিশ্বময় পরিচিতি ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন। তাকে সপরিবারে হত্যার পেছনেও ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী দেশী-বিদেশী চক্রের ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি তার বর্বর হত্যাকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দেশটির স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল। ফলে দলমত নির্বিশেষে বাংলার মানুষ তাদের জনকের মৃত্যুতে শোকাহত হয়েছে এবং তার হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই ঘাতকদের বিচার ও শাস্তি দাবি করে এসেছে। বাংলাদেশে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ঘটনাকে তারা দেড় হাজার বছর আগের কারবালার মতো একটি মর্মান্তিক ঘটনা বলেই মনে করে। কিন্তু শোক প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা শিয়া-সুন্নিদের মতো মিলিত হতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা দীর্ঘকাল এ ন্যাশনাল ট্রাজেডিকে জাতির মন থেকে মুছে ফেলার জন্য বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অনবরত কলঙ্ক লেপন করেছে এবং তার বর্বর ঘাতকদের কখনও 'সূর্যসন্তান', কখনও 'স্বৈরাচারী মুজিবের উৎখাতকারী' হিসেবে চিহ্নিত করে হিরো সাজাতে চেয়েছে। মাবিয়াপুত্র এজিদ যেমন মদিনার খেলাফতকে ধ্বংস করে নিজেকে খলিফা ঘোষণা দ্বারা ধীরে ধীরে দামেস্ক ও বাগদাদকেন্দ্রিক সুলতানাত (রাজতন্ত্র) প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছিলেন, তেমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেশটিকে পাকিস্তানি প্যাটার্নের সামরিক ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার দিকে নিয়ে যায়। প্রচারশক্তির জোরে তারা বঙ্গবন্ধুর বাকশাল পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থাকে ফ্যাসিবাদ আখ্যা দিয়ে তাদের সামরিক ফ্যাসিবাদকে 'বহুদলীয় গণতন্ত্র' হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা চালায়। বাংলাদেশে একটার পর একটা রক্তাক্ত ক্যু ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর জেনারেল জিয়াউর রহমান প্রথম যখন লন্ডনে আসেন, তখন এক ব্রিটিশ সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আপনার পার্লামেন্ট কি সার্বভৌম? জিয়াউর রহমান জবাব দেননি। সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করেছেন, আপনার পার্লামেন্টে বিরোধী দল আছে বলেছেন। তারা কি সরকারের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে? জিয়াউর রহমানের জবাব না। আবার প্রশ্ন, বিরোধী দল কি পার্লামেন্টে সরকারি দলের পেশ করা বাজেট প্রত্যাখ্যানের অধিকার রাখে? এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন পেলে সরকারের পদত্যাগ কি বাধ্যতামূলক? জিয়াউর রহমানের জবাব পার্লামেন্টে বিরোধী দল বাজেটের বিরুদ্ধে প্রস্তাব আনতে পারে, কিন্তু তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সরকারের পতন ঘটবে না। একমাত্র রাষ্ট্রপতিই (অর্থাৎ তিনিই) তার ইচ্ছায় কোন মন্ত্রিসভাকে ক্ষমতায় বসাতে এবং ক্ষমতা থেকে অপসারিত করতে পারেন। ব্রিটিশ সাংবাদিক বিরাট বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, এটা কী ধরনের বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্র? পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুবের পার্লামেন্টেও বিরোধী দল ছিল। কিন্তু তাদের কোন ক্ষমতা ও অধিকার ছিল না। আপনার পার্লামেন্টও দেখছি পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের প্যাটার্নে গড়া পার্লামেন্ট। আপনি দাবি করছেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছেন। অথচ ঢাকার সংবাদপত্র সম্পাদকরা বলছেন, তারা নামে স্বাধীন; কাজে আপনার তথ্য মন্ত্রণালয়ের কড়া হুকুমের (অপ্রকাশ্য) অধীন। তারা দেশটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবের ছবি ছাপা দূরের কথা, নামও প্রয়োজনবোধে ছাপতে পারেন না। তার নামের আগে বঙ্গবন্ধু লাগানো সংবাদপত্রের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জিয়াউর রহমান এরপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে চলে যান। সেদিনই বিকালের দিকে তিনি লন্ডনের ইস্ট এন্ডে ব্রিক লেনে বাঙালিদের এক সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়েছিলেন। তিনি মাত্র জনতার উদ্দেশে আসসালামু আলাইকুম বলেছেন, লক্ষ্য করলেন সভার এক কোনায় কিছু লোক কালো পতাকা হাতে তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে বক্তৃতা বন্ধ করে সভামঞ্চ থেকে নেমে তিনি সিক্যুরিটি গার্ডদের পাহারায় গাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এসব খবর পরের দিন লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় ছবিসহ প্রকাশিত হয়েছিল। ইসলামের প্রথম যুগের প্রতিনিধিত্বশীল শাসন ব্যবস্থা খেলাফত ধ্বংসকারী এজিদের মতো দেড় হাজার বছর পরের বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হত্যাকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান ছিলেন একই ধরনের ভীরু, কিন্তু নিষ্ঠুর চক্রান্তকারী। এ ধরনের ব্যক্তিদের অনেকেরই চরিত্র আবার কোমলে-কঠোরে গঠিত হতে দেখা যায়। যেমন ইমাম হাসান ও হোসেনকে হত্যাকারী এজিদ ছিলেন নিষ্ঠুর ঘাতক, কিন্তু পাশাপাশি তিনি চমৎকার প্রেমের কবিতা লিখতেন। তিনি সে যুগের আরবে বিরাট কবিখ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন। কারবালা হত্যাকাণ্ডের ভিলেন হিসেবে নিন্দিত না হলে তিনি হয়তো তখনকার সারা আরব জগতে একজন বিখ্যাত কবি হিসেবে প্রশংসিত হতেন। এ যুগের 'ফ্যাসিস্ট দানব' হিসেবে পরিচিত জার্মানির নাৎসিনায়ক হিটলারের চরিত্রও ছিল এক ধরনের কোমলে-কঠোরে গঠিত। তার আদেশে কয়েক লাখ নিরীহ ইহুদি নারী-পুরুষ ও শিশুকে গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়েছিল; কিন্তু এ হিটলারই আবার রঙ তুলি হাতে চমৎকার ছবি আঁকতেন। তার আঁকা বেভারিয়ার নিসর্গচিত্র এখনও নিলাম ঘর থেকে বিরাট দামে বিক্রি হয়। এ ধরনের কোমলতা ও কঠোরতার মিশ্রণ বাংলাদেশের জিয়াউর রহমানের চরিত্রে ছিল না। কেবল কালো চশমায় ঢাকা তার চোখের নিষ্ঠুর দৃষ্টি সবার কাছে ধরা পড়ত না। বঙ্গবন্ধু হয়তো জিয়াউর রহমানের চরিত্র বুঝতে পারেননি। তাই জেনারেল ওসমানী এবং আরও অনেকের দ্বারা অনুরুদ্ধ হয়েও তিনি মেজর জিয়াউর রহমানকে অ্যাকটিভ সার্ভিস বা মিলিটারি চাকরি থেকে অপসারণ করে সিভিল বা ডিপ্লোমেটিক সার্ভিসে পাঠাননি; বরং তাকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ করেছিলেন। তাতে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতালিপ্সা তৃপ্ত হয়নি। তিনি নেপথ্যে বসে বঙ্গবন্ধু হত্যায় যেমন কলকাঠি নেড়েছেন; তেমনি মুক্তিযুদ্ধে তার সহসংগ্রামী জেনারেল খালেদ মোশাররফকে এমনকি তার জীবনরক্ষাকারী পরম বন্ধু কর্নেল তাহেরকেও হত্যা করতে (ক্যাঙারু কোর্টের বিচারে) দ্বিধা করেননি। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতালিপ্সা ও চক্রান্তে সেই যে স্বাধীন বাংলা তার স্বাভাবিক গতিধারা হারিয়েছে, আজ সাড়ে তিন দশক পরও সেই ধারায় ফিরে আসতে পারেনি। আজ যে বাংলাদেশে ধর্মকে অসাধু রাজনীতির মূলধন করে ব্যবসায়ে পরিণত করা হয়েছে, তার শুরু ইসলামের প্রাথমিক যুগেই। এজিদের বাবা হজরত মাবিয়া হজরত আলীকে (রা.) খলিফা হিসেবে অস্বীকার করে যুদ্ধ করে খেলাফত দখলের চেষ্টা করেছিলেন। যুদ্ধে মাবিয়া পরাজিত হন। তিনি সসৈন্যে বন্দি অথবা নিহত হতেন। তার পলায়নের পথ ছিল না। তখন তিনি তার সৈন্যদের পরামর্শ দেন, তারা যেন একখণ্ড করে পবিত্র কোরআন তাদের যুদ্ধাস্ত্র বর্ষার আগায় বেঁধে পলায়ন করতে থাকে। তারা তাই করে। হজরত আলীর সৈন্যরা পবিত্র কোরআনে আঘাত লাগবে বিধায় শত্রু সৈন্যদের ওপর আর অস্ত্র চালনা করেনি। তারা নির্বিঘ্নে পলায়ন করে। সেদিন পরাজিত মাবিয়াকে পলায়নের সুযোগ দেয়া না হলে পরবর্তীকালে এজিদের উত্থান এবং কারবালা কাণ্ড ঘটানো সম্ভব হতো না। মধ্যযুগের ভারতবর্ষেÑ মোগল আমলেও দেখেছি সিংহাসন দখল ও ভ্রাতৃহত্যার জন্য রাজনীতিতে ধর্মের নিষ্ঠুর ব্যবহার। সম্রাট শাহজাহানের পর মোগল সিংহাসনের দাবিদার সম্রাটের জ্যেষ্ঠপুত্র পণ্ডিত দারাশিকোকে হত্যার জন্য 'ধার্মিক' নামে পরিচিত ঔরঙ্গজেব ফতোয়াবাজির আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন। দারাশিকো ফার্সিতে উপনিষদ তর্জমা করেছিলেন। ঔরঙ্গজেব দিল্লি ও আগ্রায় মোল্লাদের দ্বারা ফতোয়া দেওয়ালেন, দারাশিকো মুরতাদ। ইসলাম রক্ষার জন্য তাকে হত্যা করতে হবে। বন্দি অবস্থায় দারাশিকোকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে তার মৃতদেহ হাতির পিঠে চাপিয়ে দিল্লির রাজপথ প্রদক্ষিণ করা হয়। একই পন্থায় আরেক ভাই মুরাদকেও (মদ্যপানের অপরাধে) হত্যা করা হয়। অন্য ভাই সুজা ঢাকা থেকে পালাতে গিয়ে ঔরঙ্গজেবের নির্দেশে আরাকানের রাজার হাতে সপরিবারে নিহত হন। আধুনিক ভারতে জিন্নাহ, যিনি নিজে প্রকৃত মুসলমান (শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত খোজা পরিবার) ছিলেন না এবং ধর্মের কোন ধার ধারতেন না, তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের রক্ষার নামে রক্তাক্ত সাম্প্রদায়িক বিরোধ বাধিয়ে ভারত ভাগ করলেন; যে দেশভাগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ২৪ লাখের মতো হিন্দু-মুসলমান-শিখ কয়েক বছরে প্রাণ হারিয়েছে; চার কোটির মতো নর-নারীকে বাস্তুহারা হয়ে স্বদেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মের চল্লিশ লাখের বেশি নারী ধর্ষিত, অপহৃত বা নিহত হয়েছে। শেষ বয়সে জিন্নাহ পাকিস্তানের মোহাজের শিবিরে গিয়ে মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশা দেখে বলেছিলেন, 'আমি এ পাকিস্তান চাইনি।' বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সুখী জাতিরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু তাই ধর্মনিরপেক্ষতাকেই শ্রেষ্ঠ পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতা যে ধর্মহীনতা নয়, বরং বহু ধর্মসম্প্রদায় অধ্যুষিত জাতিরাষ্ট্রে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা করে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এ বাস্তব সত্যটাকেই বঙ্গবন্ধু তার রাষ্ট্র-ভাবনায় গ্রহণ করেছিলেন। এমএন রায় বলেছেন, "ইসলামই প্রথম ধর্মনিরপেক্ষতার বাণী বিশ্বে প্রচার করেছে। 'তোমার ধর্ম তোমার জন্য, আমার ধর্ম আমার জন্য' এবং 'ধর্মে কোন জুলুম বা অত্যাচার নেই' এ কথা কোরআন ছাড়া আর কোন ধর্মগ্রন্থ প্রচার করেনি।" বঙ্গবন্ধু ব্যক্তিজীবনে ধার্মিক ছিলেন (তার কন্যা শেখ হাসিনাও তাই)। নামাজ পড়তেন এবং সুযোগ পেলেই কোরআন তেলাওয়াত করতেন। তার সরকার সেক্যুলারিস্ট হওয়া সত্ত্বেও দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য প্রকাশ্যে মদ্যপান নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়দৌড় বন্ধ করে দিয়েছিলেন (এই ঘোড়ার রেস মক্কা শরিফের রেসের মাঠেও নিষিদ্ধ করা হয়নি)। তা সত্ত্বেও তাকে দুর্নাম দেয়া হয়েছিল ইসলামবিরোধী এবং ধর্মের শত্রু বলে। আর যে জিয়াউর রহমান বন্দুকের সাহায্যে ক্ষমতা দখল করেই দেশের পানশালাগুলো আবার খুলে দিলেন, সবার জন্য মদ্যপান অবারিত করে দিলেন, তিনি হয়ে দাঁড়ালেন ইসলামের প্রোটেকটর। তিনি জিন্নাহর মতো কোন প্রকার ধর্মচর্চা করতেন না। জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা রচিত ও গৃহীত সংবিধানে তিনি নিজের একক ইচ্ছায় 'বিসমিল্লাহ' সংযোজন ও ধর্মনিরপেক্ষতার উচ্ছেদ ঘটিয়েছিলেন তার ধর্মপ্রীতি ও ধার্মিকতার জন্য নয়, তার ক্ষমতা দখলকে স্থায়ী করার উদ্দেশ্যে ধর্মকে অত্যন্ত অসৎ ও অবৈধভাবে ব্যবহারের লক্ষ্যে। আজ বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বীজ থেকে যে ভয়াবহ জঙ্গি ও মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিষবৃক্ষ জন্ম নিয়েছে, তার সেই বীজটি দেশে রোপণ করে গেছেন জিয়াউর রহমানের মতো স্বার্থান্ধ, ক্ষমতালোভী সামরিক শাসকরা। ধর্মকে তা সুরক্ষা দেয়নি, বরং সন্ত্রাসকে ধর্মের খোলসে আত্মপ্রকাশের রাস্তা সুগম করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রনীতি ও রাজনৈতিক দর্শন যদি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা লাভের সুযোগ পেত, তাহলে আত্মঘাতী সংঘর্ষ-সংঘাতে দীর্ণ পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও একই সমস্যা-সঙ্কটের সম্মুখীন না হয়ে আজ একটি সুখীসমৃদ্ধ ন্যায়ভিত্তিক সামাজিক পরিবেশের দেশ হয়ে উঠত। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে পারলে হয়তো আতাতুর্ক অথবা লিঙ্কনের মতো ইলেকটেড, বেনোভোলেন্ট ডিক্টেটর আখ্যা পেতেন; কিন্তু বাংলাদেশের প্রকৃত গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটত এবং দেশটি সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার সুযোগ পেত। জাতীয় শোকের মাস আগস্টে আমরা যতই শোকান্বিত হই, বাঙালি চরিত্রে অনেক দোষের মধ্যে একটা বড় গুণ আছে। গুণটি হল, পরম শোককেও তারা বিরাট শক্তি ও সাহসে পরিণত করতে পারে। একুশে ফেব্র"য়ারির ভাষা শহীদ দিবস ছিল আমাদের জন্য এক পরম শোকের দিবস। সেই দিবসটি আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি ভাষা দিবস। ভাষার জন্য শোক নয়, ভাষা ও সংস্কৃতির যুদ্ধে অর্জিত বিজয়ের উৎসব দিবস এখন ২১ ফেব্রুয়ারি। আগস্ট মাসও তিন জাতীয় ব্যক্তিত্বের তিরোধানের শোকের মাস হলেও এই মাস এখন বাংলাদেশের বাঙালির স্বাধীন জাতিসত্তার পুনর্জাগরণের সাহসী ও প্রেরণাদানমূলক মাসও হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু তাই আবার জাতীয় জীবনে ফিরে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল বাঙালির জাতীয় জীবনে এখন আরও বেশি প্রতিষ্ঠিত। এক উর্দু কবি লিখেছিলেন, 'ইসলাম জিন্দা হোতা হায় হর কারবালাকে বাদ।' (প্রতিটি কারবালার পর ইসলাম জীবিত হয়ে ওঠে)। কথাটা বাংলাদেশের জাতীয় শোকের মাস আগস্ট সম্পর্কেও সত্য। শোকের মাসের শোক বাংলাদেশের মানুষের মন থেকে ধীরে ধীরে অন্তর্হিত হয়েছে। শোকের বদলে সেখানে তৈরি হয়েছে অমিত সাহস ও শক্তি। সেই শক্তি ও সাহস জোগাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল। বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ নির্বাসনের পর দেশে ফিরে এসেছেন এবং বাংলাদেশের মানুষও আবার তার স্বাধীন বাঙালি জাতিসত্তার দিকে প্রত্যাবর্তনে উন্মুখ হয়ে উঠেছে। এবারের আগস্ট তাই আমাদের কাছে শোকের মাস নয়, নিজেদের সেক্যুলার জাতিসত্তার শেকড়ে এবং স্বদেশে ফেরারও সাহস ও অনুপ্রেরণা লাভের মাস। আমি হতাশাবাদী নই। রবীন্দ্রনাথের কবিতাকে একটু বদল করে আমার প্রার্থনা 'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির বাঙালিরে সেই তীর্থে করো জাগরিত।' [সূত্রঃ যুগান্তর, ১৫/০৮/১০] | |
http://www.sonarbangladesh.com/articles/AbdulGaffarChowdhury http://www.bangladeshnews24x7.com/?p=4931 |
__._,_.___