বিএনপি হঠাৎ কেন মারমুখী?
সেলিম জাহিদ | তারিখ: ১১-১২-২০১২
সাম্প্রতিক অতীতের enকর্মসূচির সঙ্গে তুলনা করলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটাই আক্রমণাত্মক। হঠাৎ দলটির এই মারমুখী অবস্থান কেন—এ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে। এই রাজনৈতিক বিশ্লেষণে প্রথমেই উঠে এসেছে দলটির ওপর জামায়াতের চাপ ও প্রভাব। সে চাপের কারণ কী এবং বিএনপিরই বা তাতে প্রভাবিত হওয়ার কারণ কী—এসবের উত্তরেই পাওয়া যেতে পারে বিএনপির বর্তমান অবস্থানের ব্যাখ্যা।
বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বিশ্লেষণ হচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে যুদ্ধাপরাধের এক বা একাধিক মামলার রায় ঘোষণা হোক—সরকার এই মর্মে তৎপর বলে মনে করে জামায়াত। তারা যেকোনো মূল্যে এর প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেছে। এসব কর্মসূচিতে তারা বিএনপির সমর্থন চায়।
সরকার বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য প্রকাশ্যে বলে আসছে। আবার সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগ, তারা বিএনপিকে ভাঙতে চায় এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়। এ দুজনকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে তাঁদের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুত করার বিষয়ে সরকারের তৎপরতা আছে বলে মনে করে বিএনপি। আর এখানেই জামায়াত বিএনপিকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, যুদ্ধাপরাধের এক বা একাধিক মামলার বিচার শেষ করার পর সরকার খালেদা জিয়া ও তারেকের মামলা দ্রুত শেষ করতে চাইবে। তাই এখন জামায়াতের কর্মসূচিতে সমর্থন, সহযোগিতা না করলে ভবিষ্যতে বিএনপির বিপদের সময় তারা বিষয়টি মনে রাখবে। গত ৪ নভেম্বর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াতের ডাকা হরতালে 'নৈতিক' সমর্থন দেয় বিএনপি। তখন সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতেই বিএনপি হরতালে সমর্থন দিয়েছে। আর বিএনপি বলেছে, ৩ নভেম্বর জামায়াতকে ঢাকায় সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে ডাকা হরতালে তারা সমর্থন দিয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর হরতাল ডেকে সারা দেশে সহিংসতা সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির তা পালন করে। এই সরকারের সময়ে এর আগে বিএনপিও এত কড়া হরতাল করতে পারেনি। তাই জামায়াতের 'সফল হরতাল' বিএনপিকে রাজনৈতিক চাপে ফেলে দেয়। এ কারণেও গত রোববারের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে জামায়াত-শিবিরের পাশাপাশি বিএনপির নেতা-কর্মীরা মরিয়া হয়ে মাঠে নামেন। এ কর্মসূচি সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কর্মসূচি যাতে শক্তভাবে পালন করা হয়, সে জন্য বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে দায়িত্বও ভাগ করে দেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, জামায়াতের হরতাল ও রোববার রাজপথ অবরোধ প্রত্যাশামতো পালন বিএনপিকে আজকের হরতালের কর্মসূচি দিতে উৎসাহ জোগায়।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার দাবি করেন, হরতাল ছাড়া তাঁদের কোনো উপায় ছিল না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'অবরোধ কর্মসূচি প্রতিহত করতে সরকার পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে যেভাবে মানুষ খুন করেছে, গুলি ও লাঠিপেটা করে আহত করা হয়েছে; তাতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।'
বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, জানুয়ারি মাস থেকে আস্তে আস্তে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল দলের নীতিনির্ধারকদের। কিন্তু হঠাৎ করে মারমুখী কর্মসূচিতে যাওয়ার বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের একটি অংশকে জানানো হয়নি বলে বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়।
সূত্রটি জানায়, বিএনপির এ ধরনের কর্মসূচিতে জড়ানোর পেছনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির পাশাপাশি মিত্র দল জামায়াতের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থরক্ষার বিষয় জড়িত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, বিএনপি মনে করে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের কয়েক নেতার বিচারের রায় ঘোষণার পর আগামী বছরের জুনের মধ্যে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তাঁর বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলার রায় হয়ে যেতে পারে। তাতে সাজা হলে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত বাধার মুখে পড়বেন তাঁরা। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ দুর্নীতির মামলা ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। দুটি মামলারই বিচার নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আর তারেক রহমান ও গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের করা আয়কর ফাঁকির মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, সরকার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাঁদের মামলা দুটির গতি বাড়িয়েছে।
এম কে আনোয়ার বলেন, 'এটা অসম্ভব নয়, সে চেষ্টা তারা (সরকার) করছে। বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে সরকার যদি নিজেদের ইচ্ছামতো জজ বসিয়ে বিচার করতে চায়, জনগণ তা প্রতিহত করবে।'
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, বিএনপিকে ভেঙে এর একাংশকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে নিতে সরকারের পক্ষ থেকে বছর দেড়েক আগে গোপন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই প্রক্রিয়া হালে পানি না পেলেও বিএনপির নেতারা মনে করছেন, মামলা দুটির বিচার দ্রুত শেষ করার পর সরকার সে প্রক্রিয়া আবার শুরু করতে পারে।
দলের সূত্রগুলো জানায়, এ অবস্থায় যতটা সম্ভব আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচনকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিষয়টির সুরাহা করে নিতে চায় বিএনপি। আগামী বছরের অক্টোবরে বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। বিএনপি মনে করছে, মে অথবা জুন মাসের মধ্যেই সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করাতে হলে রাজপথের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। তাই এত দিন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে এসে আকস্মিক মারমুখী কর্মসূচি দিতে শুরু করেছে দলটি।
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-11/news/312295
মির্জা ফখরুল গ্রেপ্তার, ২০ গাড়িতে আগুন-ভাঙচুর
হরতালের আগেই উত্তাপ
নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১১-১২-২০১২
গ্রেপ্তারের পর মির্জা ফখরুল
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-11/news/312292
__._,_.___