শনিবার, ১১ মে ২০১৩, ২৮ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না
মুনতাসীর মামুন
॥ তৃতীয় কিস্তি ॥
৫ মে যে মুহূর্তে হেফাজতকে ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হলো সে মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সিভিল সমাজের তাদের সমর্থকরা প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এতটা নতিস্বীকার তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। অনেকে এও বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে আর সমর্থন করা যায় না। এবং সেটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। এরপর হেফাজতী তা-ব।
হেফাজতী তা-বের একটি প্যাটার্ন লক্ষ্য করুন। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে জামায়াতীরা বিভিন্ন জায়গায় যে তা-ব করেছে হেফাজতের তা-বও সে রকমÑ গাছ কেটে ফেলা, ডিভাইডার ভেঙ্গে ফেলা, গাড়িতে, দোকান-পাটে আগুন, বোমা ও ককটেল ছুড়ে মারা; বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যু নিশ্চিত করা। তারাও ছিল অস্ত্রসজ্জিত, না হলে নিরাপত্তারক্ষীদের মৃত্যু হলো কিভাবে? ঐ দিন রাত পর্যন্ত যাঁরা এ দৃশ্য দেখেছেন, তাঁদের অনেকে বলেছেন, এ রকম ঘটনা বাংলাদেশে আর ঘটেনি। আসলে তরুণ প্রজন্মের সদস্য সংখ্যা বেশি, তাই তাদের কাছে এটি ভয়ানক মনে হচ্ছে। না এর আগেও দু'বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ১৯৭১ সালের পর। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও পরে ইয়াজিদ জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় চার নেতা ও কয়েক হাজার সৈন্যকে হত্যা ছিল ১৯৭১ সালের পর সবচেয়ে বড় হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা।
২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলা ছিল আরো ভয়াবহ। কারণ রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে মন্ত্রী ও প্রশাসন মিলে গ্রেনেড ছুড়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ২৭ জনকে হত্যা করে।
এরপর ৫ মের ঘটনা। তুলনামূলক হিসেবে নিহত কম। প্রথমটি যিনি ঘটান বলে সবার অনুমান তিনিও বিএনপি সৃষ্টি করেন। গ্রেনেড ঘটনা ঘটায় বিএনপি-জামায়াত মিলে। ৫ মে'র ঘটনা ঘটিয়েছে হেফাজত-জামায়াত-বিএনপি মিলে। এবং প্রতিটি ঘটনা ঘটানো হয়েছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এর অর্থ একটি। সেটি হলো শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। হ্যা, যদি পাকিস্তান তারা মেনে নেয় তাহলে তাদের থাকতে দেয়া যাবে। গত ৩৫ বছরে আমাদের জায়গা ছেড়ে দিতে দিতে আজ তারা এ দুঃসাহস দেখাতে পারছে। হেফাজতকে যাঁরা অরাজনৈতিক বলতেন তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নয়। যে সব মন্ত্রী বারবার বলেছেন, হেফাজতে বিএনপি- জামায়াত ঢুকে নাশকতা চালিয়েছে তাঁরাও মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন। তাঁরা হেফাজতের দোষ ঢাকতে চেয়েছেন। এসব রাজনৈতিক কৌশল যে ভ্রান্ত, হেফাজত তা প্রমাণ করেছে। হেফাজত প্রথম থেকে রাজনৈতিক কথা বলে আসছে। হেফাজতের আমির ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষেÑ এ কথাটা মনে রাখা জরুরী। তারা এতদিন নীরব ছিল, এখন সরব হয়েছে মাত্র। তথাকথিত আল্লামা সাঈদীর জায়গা নিয়েছেন আল্লামা আহমেদ শফিÑ তফাত এটুকুই মাত্র। হেফাজতের সব দাবিতে যদি রাজনৈতিক মতলব না থাকত বা যৌক্তিক হতো তাহলে তারা বিএনপির ১৮ বছর রাজত্বে সেগুলো তুলল না কেন? এমনকি জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কেন ব্ল্যাসফেমি আইনের কথা তোলা হলো না? কেন সাঈদীর বা কাদের মোল্লার রায়ের পর জামায়াতের মতো হেফাজতীরা দাবি তুলে আন্দোলন শুধু নয় সরকার উৎখাতের আহ্বান জানায়? সরকার উৎখাতের দাবি ও ৬ তারিখে সরকার গঠনের দাবি কি রাজনৈতিক না অরাজনৈতিক?
হরতালের সময় জামায়াত-বিএনপি প্রথমে ককটেল ছুড়ে মারে, তারপর গাড়িতে আগুন লাগায়। এবং ভাংচুর করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালায়। তাদের লক্ষ্য অর্থনীতি পঙ্গু করে দেয়া। শেখ হাসিনার আমলের প্রবৃদ্ধি তারা গ্রহণ করতে পারছে না। এই পাকিস্তানীমনা লোকগুলোর মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ডিঙ্গিয়ে যাবেÑ তা হতে পারে না। পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্র হলে বাংলাদেশকেও ব্যর্থ রাষ্ট্র হতে হবে। লক্ষ্য করুন, হেফাজত জনতা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকে আগুন দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্টে নয়। জামায়াত-বিএনপির কাছে ক্রেডিবিলিটি তারা তাদের তুলে ধরতে চেয়েছে, আলেমদের একাংশ ও পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী আহমেদ শফির চেলারা প্রচুর টাকা খেয়েছে। সুতরাং যারা টাকা দিয়েছে তাদের কাছে নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরতে হয়। তারা যদি জামায়াতবিরোধী হতো তা হলে জনতা, সোনালী, ব্র্যাক বা গৃহঋণ সংস্থায় আগুন নয়, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ বা ইবনে সিনাতেও আগুন দিত। তারা জামায়াত-বিএনপি পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে চায়নি। তারা চেয়েছে বিরুদ্ধ পক্ষ এবং পরিণামে বাংলাদেশের যাতে ক্ষতি হয়, যাতে তারা ভিক্ষুক হয়ে যায়। এখানে বিএনপি জামায়াত নেতাদের একটি প্রশ্ন করতে চাইÑ যদি এখন ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মালিকদের টেলিভিশন অফিস ও অর্থ প্রতিষ্ঠান একই রকম হামলার শিকার হয় তারা বুঝতে পারছেন অবস্থা কী হবে? যদি বেছে বেছে খোকা, মওদুদ ও জামায়াতী নেতাদের গাড়ি টার্গেট করা হয় তখন কী হবে? ধরা যাক, শেখ হাসিনার বদলে বিএনপি ও হেফাজতীরা ক্ষমতায় এলো। পরদিন থেকে ১৪ দল ও সমমনারা যদি একই কাজ করে, ক্ষমতায় থাকতে পারবেন? অর্থনীতি যদি একেবারে ভেঙ্গে পড়ে তাহলে ক্ষতায় থাকা যাবে? সুস্থমনা বা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে চাইলে এ ধরনের কর্মকা- কেউ করত না। কিন্তু বিএনপি, এরশাদ, জামায়াত আমলে তো গুন্ডারাজই প্রতিষ্ঠিত হয়; সুতরাং তারা এ ধরনের বিকৃত রাজনীতি করবে তাই স্বাভাবিক। ৫ মে'র সমাবেশের ইতিবাচক দিক হলো হেফাজতীরাও যে বিকৃতমনা, অসুস্থ রাজনীতির বাহক সেটি প্রমাণিত হলো।
দুপুর পর্যন্ত ঢাকার মানুষরা ভেবেছিলেন সত্যিই হেফাজতীরাজ বোধহয় প্রতিষ্ঠিত হলো। বিএনপি সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করছিলÑ যখন তারাও যোগ দেবে হেফাজতীদের সঙ্গে। খালেদা জিয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বোঝা গিয়েছিল, পুরো বিষয়টি পরিকল্পিত এবং কেন ৩ মে বেগম জিয়া এত উৎফুল্ল ছিলেন তাও স্পষ্ট হলো। সে প্রসঙ্গ পরে।
অনেকে বলছেন, হেফাজতীরা ভাড়া করা এতিম তালেবএলেমদের দিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেøাগান দেওয়াচ্ছিলেন। সেøাগানটি ছিল 'শেখ হাসিনার গালে গালে জুতা মার তালে তালে'। মাদ্রাসার ছাত্রদের তাহজীব-তমুদ্দুন শেখাবার বদলে এইসব বেয়াদবি শিক্ষা দিচ্ছে বাবুনগরীরা। একজন ধর্মপ্রাণ বয়সী মহিলার নামে এই সেøাগান সভ্যতার কোন নিরিখে পড়ে না। হে বাবুনগরী, আহমেদ শফির নামে এ সেøাগান দিলে ভালো লাগবে? না, এ বেয়াদবি সেক্যুলার উদারপন্থীরা করে না। এসব বেয়াদবি শিক্ষা দেয়া হয় বাবুনগরীদের মাদ্রাসায়। এই সব সেøাগানের কারণে শেখ হাসিনা ক্রুদ্ধ হয়ে হেফাজতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তিনি ক্রুদ্ধ হতে পারেন, কিন্তু এই কারণে হেফাজতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন এমন মহিলা তিনি নন। রাজনীতি করলে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। ১৯৭৫ সালের পর থেকে যন্ত্রণার যে স্টিমরোলার তাঁর ওপর দিয়ে গেছে, অন্য কারো পক্ষে তা সহ্য করা দুঃসহ হয়ে উঠত।
অনেকের মতে, আওয়ামী লীগ অফিসে ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে বহুবার হামলা হেফাজতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণ এটি একটি সামান্য কারণ হতে পারে বটে, তবে মূল কারণ নয়। হেফাজতীদের মতো উঠতি একটি দল আওয়ামী লীগ অফিস বারবার আক্রমণ করবে এবং সরকার আগের মতো নিশ্চুপ থাকবেÑ তাহলে দলই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। হতাশা আরো বাড়বে। তারপরও বলব এটি মূল কারণ নয়। মূল কারণ, হেফাজতী-জামায়াতী-বিএনপিরা এমন তা-ব সৃষ্টি করছিল যাতে মনে হচ্ছিল, এ সরকার কার্যত আর নেই। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার তা মেনে নিতে পারে না। তাদের ব্যবস্থা নিতে হয়। তাছাড়া জনগণের জানমাল রক্ষা করাও সরকারের অন্তিম দায়িত্ব।
ইতোমধ্যে হেফাজতী-জামায়াতী-বিএনপিরা বায়তুল মোকাররমের ধর্মীয় বইয়ের দোকানগুলো আক্রমণ করে। গত ৪২ বছরে অনেক দুর্যোগেও এসব ক্ষুদ্র দোকানের ওপর কখনও হামলা হয়নি। কারণ এসব দোকানে কোরান, আমপারা, তসবি, জায়নামাজ, টুপি, আতর বিক্রি হয়। হেফাজতী-জামায়াতী-বিএনপি (সংক্ষেপে এরপর থেকে হেজাবি) যখন দোকানগুলো আক্রমণ করতে যায় তখন ক্ষুদ্র দোকানদাররা বারবার মিনতি করছিল। ইয়াজিদের বরপুত্ররা তা শোনেনি। রসুল (স.)-এর নাতিদের হত্যায় ইয়াজিদের মন কাঁপেনি, আর ইয়াজিদের পুত্রদের হাত কাঁপবে? বরং কোরান-হাদিস যাতে ভালো করে আগুনে পোড়ে সে জন্য গান পাউডার ছড়িয়ে আগুন দেয়া হয়। নিমিষে ৬৩৫ জিল পবিত্র কোরান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ভস্মীভূত হয় অন্যান্য বই ও সামগ্রী। ক্ষতির পরিমাণ এক কোটিরও বেশি। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব দেখল হেজাবিরা ধর্মগ্রন্থ কিভাবে পোড়ায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় পাপ ধর্মগ্রন্থ পোড়ানো। নাস্তিক হওয়াও এত বড় পাপের মধ্যে পড়ে না। এক হিন্দু ভদ্রলোক বলছিলেন, ভাই, মুসলমান না হতে পারি; কিন্তু কোরান তো পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, সেটিতে আগুন দিতে বুক কাঁপল না! ধর্মগ্রন্থ পোড়ানো দেখে তাঁর চোখে পানি। একজন বলেছিলেন, যে ইসরাইল ও ইহুদীদের অধিকাংশ মুসলমান রাষ্ট্র ঘৃণা করে তারাও কখনও কোরান পোড়ায়নি। (চলবে)
৫ মে যে মুহূর্তে হেফাজতকে ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হলো সে মুহূর্তে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীসহ সিভিল সমাজের তাদের সমর্থকরা প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এতটা নতিস্বীকার তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। অনেকে এও বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে আর সমর্থন করা যায় না। এবং সেটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। এরপর হেফাজতী তা-ব।
হেফাজতী তা-বের একটি প্যাটার্ন লক্ষ্য করুন। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে জামায়াতীরা বিভিন্ন জায়গায় যে তা-ব করেছে হেফাজতের তা-বও সে রকমÑ গাছ কেটে ফেলা, ডিভাইডার ভেঙ্গে ফেলা, গাড়িতে, দোকান-পাটে আগুন, বোমা ও ককটেল ছুড়ে মারা; বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যু নিশ্চিত করা। তারাও ছিল অস্ত্রসজ্জিত, না হলে নিরাপত্তারক্ষীদের মৃত্যু হলো কিভাবে? ঐ দিন রাত পর্যন্ত যাঁরা এ দৃশ্য দেখেছেন, তাঁদের অনেকে বলেছেন, এ রকম ঘটনা বাংলাদেশে আর ঘটেনি। আসলে তরুণ প্রজন্মের সদস্য সংখ্যা বেশি, তাই তাদের কাছে এটি ভয়ানক মনে হচ্ছে। না এর আগেও দু'বার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ১৯৭১ সালের পর। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও পরে ইয়াজিদ জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় চার নেতা ও কয়েক হাজার সৈন্যকে হত্যা ছিল ১৯৭১ সালের পর সবচেয়ে বড় হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা।
২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলা ছিল আরো ভয়াবহ। কারণ রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে মন্ত্রী ও প্রশাসন মিলে গ্রেনেড ছুড়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ২৭ জনকে হত্যা করে।
এরপর ৫ মের ঘটনা। তুলনামূলক হিসেবে নিহত কম। প্রথমটি যিনি ঘটান বলে সবার অনুমান তিনিও বিএনপি সৃষ্টি করেন। গ্রেনেড ঘটনা ঘটায় বিএনপি-জামায়াত মিলে। ৫ মে'র ঘটনা ঘটিয়েছে হেফাজত-জামায়াত-বিএনপি মিলে। এবং প্রতিটি ঘটনা ঘটানো হয়েছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এর অর্থ একটি। সেটি হলো শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। হ্যা, যদি পাকিস্তান তারা মেনে নেয় তাহলে তাদের থাকতে দেয়া যাবে। গত ৩৫ বছরে আমাদের জায়গা ছেড়ে দিতে দিতে আজ তারা এ দুঃসাহস দেখাতে পারছে। হেফাজতকে যাঁরা অরাজনৈতিক বলতেন তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নয়। যে সব মন্ত্রী বারবার বলেছেন, হেফাজতে বিএনপি- জামায়াত ঢুকে নাশকতা চালিয়েছে তাঁরাও মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন। তাঁরা হেফাজতের দোষ ঢাকতে চেয়েছেন। এসব রাজনৈতিক কৌশল যে ভ্রান্ত, হেফাজত তা প্রমাণ করেছে। হেফাজত প্রথম থেকে রাজনৈতিক কথা বলে আসছে। হেফাজতের আমির ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষেÑ এ কথাটা মনে রাখা জরুরী। তারা এতদিন নীরব ছিল, এখন সরব হয়েছে মাত্র। তথাকথিত আল্লামা সাঈদীর জায়গা নিয়েছেন আল্লামা আহমেদ শফিÑ তফাত এটুকুই মাত্র। হেফাজতের সব দাবিতে যদি রাজনৈতিক মতলব না থাকত বা যৌক্তিক হতো তাহলে তারা বিএনপির ১৮ বছর রাজত্বে সেগুলো তুলল না কেন? এমনকি জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে কেন ব্ল্যাসফেমি আইনের কথা তোলা হলো না? কেন সাঈদীর বা কাদের মোল্লার রায়ের পর জামায়াতের মতো হেফাজতীরা দাবি তুলে আন্দোলন শুধু নয় সরকার উৎখাতের আহ্বান জানায়? সরকার উৎখাতের দাবি ও ৬ তারিখে সরকার গঠনের দাবি কি রাজনৈতিক না অরাজনৈতিক?
হরতালের সময় জামায়াত-বিএনপি প্রথমে ককটেল ছুড়ে মারে, তারপর গাড়িতে আগুন লাগায়। এবং ভাংচুর করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর চালায়। তাদের লক্ষ্য অর্থনীতি পঙ্গু করে দেয়া। শেখ হাসিনার আমলের প্রবৃদ্ধি তারা গ্রহণ করতে পারছে না। এই পাকিস্তানীমনা লোকগুলোর মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ডিঙ্গিয়ে যাবেÑ তা হতে পারে না। পাকিস্তান ব্যর্থ রাষ্ট্র হলে বাংলাদেশকেও ব্যর্থ রাষ্ট্র হতে হবে। লক্ষ্য করুন, হেফাজত জনতা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংকে আগুন দিয়েছে। ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্টে নয়। জামায়াত-বিএনপির কাছে ক্রেডিবিলিটি তারা তাদের তুলে ধরতে চেয়েছে, আলেমদের একাংশ ও পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী আহমেদ শফির চেলারা প্রচুর টাকা খেয়েছে। সুতরাং যারা টাকা দিয়েছে তাদের কাছে নিজেদের যোগ্যতা তুলে ধরতে হয়। তারা যদি জামায়াতবিরোধী হতো তা হলে জনতা, সোনালী, ব্র্যাক বা গৃহঋণ সংস্থায় আগুন নয়, ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ বা ইবনে সিনাতেও আগুন দিত। তারা জামায়াত-বিএনপি পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করতে চায়নি। তারা চেয়েছে বিরুদ্ধ পক্ষ এবং পরিণামে বাংলাদেশের যাতে ক্ষতি হয়, যাতে তারা ভিক্ষুক হয়ে যায়। এখানে বিএনপি জামায়াত নেতাদের একটি প্রশ্ন করতে চাইÑ যদি এখন ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনার মতো প্রতিষ্ঠানগুলো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মালিকদের টেলিভিশন অফিস ও অর্থ প্রতিষ্ঠান একই রকম হামলার শিকার হয় তারা বুঝতে পারছেন অবস্থা কী হবে? যদি বেছে বেছে খোকা, মওদুদ ও জামায়াতী নেতাদের গাড়ি টার্গেট করা হয় তখন কী হবে? ধরা যাক, শেখ হাসিনার বদলে বিএনপি ও হেফাজতীরা ক্ষমতায় এলো। পরদিন থেকে ১৪ দল ও সমমনারা যদি একই কাজ করে, ক্ষমতায় থাকতে পারবেন? অর্থনীতি যদি একেবারে ভেঙ্গে পড়ে তাহলে ক্ষতায় থাকা যাবে? সুস্থমনা বা গণতান্ত্রিক রাজনীতি করতে চাইলে এ ধরনের কর্মকা- কেউ করত না। কিন্তু বিএনপি, এরশাদ, জামায়াত আমলে তো গুন্ডারাজই প্রতিষ্ঠিত হয়; সুতরাং তারা এ ধরনের বিকৃত রাজনীতি করবে তাই স্বাভাবিক। ৫ মে'র সমাবেশের ইতিবাচক দিক হলো হেফাজতীরাও যে বিকৃতমনা, অসুস্থ রাজনীতির বাহক সেটি প্রমাণিত হলো।
দুপুর পর্যন্ত ঢাকার মানুষরা ভেবেছিলেন সত্যিই হেফাজতীরাজ বোধহয় প্রতিষ্ঠিত হলো। বিএনপি সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করছিলÑ যখন তারাও যোগ দেবে হেফাজতীদের সঙ্গে। খালেদা জিয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বোঝা গিয়েছিল, পুরো বিষয়টি পরিকল্পিত এবং কেন ৩ মে বেগম জিয়া এত উৎফুল্ল ছিলেন তাও স্পষ্ট হলো। সে প্রসঙ্গ পরে।
অনেকে বলছেন, হেফাজতীরা ভাড়া করা এতিম তালেবএলেমদের দিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেøাগান দেওয়াচ্ছিলেন। সেøাগানটি ছিল 'শেখ হাসিনার গালে গালে জুতা মার তালে তালে'। মাদ্রাসার ছাত্রদের তাহজীব-তমুদ্দুন শেখাবার বদলে এইসব বেয়াদবি শিক্ষা দিচ্ছে বাবুনগরীরা। একজন ধর্মপ্রাণ বয়সী মহিলার নামে এই সেøাগান সভ্যতার কোন নিরিখে পড়ে না। হে বাবুনগরী, আহমেদ শফির নামে এ সেøাগান দিলে ভালো লাগবে? না, এ বেয়াদবি সেক্যুলার উদারপন্থীরা করে না। এসব বেয়াদবি শিক্ষা দেয়া হয় বাবুনগরীদের মাদ্রাসায়। এই সব সেøাগানের কারণে শেখ হাসিনা ক্রুদ্ধ হয়ে হেফাজতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তিনি ক্রুদ্ধ হতে পারেন, কিন্তু এই কারণে হেফাজতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন এমন মহিলা তিনি নন। রাজনীতি করলে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়। ১৯৭৫ সালের পর থেকে যন্ত্রণার যে স্টিমরোলার তাঁর ওপর দিয়ে গেছে, অন্য কারো পক্ষে তা সহ্য করা দুঃসহ হয়ে উঠত।
অনেকের মতে, আওয়ামী লীগ অফিসে ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে বহুবার হামলা হেফাজতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণ এটি একটি সামান্য কারণ হতে পারে বটে, তবে মূল কারণ নয়। হেফাজতীদের মতো উঠতি একটি দল আওয়ামী লীগ অফিস বারবার আক্রমণ করবে এবং সরকার আগের মতো নিশ্চুপ থাকবেÑ তাহলে দলই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। হতাশা আরো বাড়বে। তারপরও বলব এটি মূল কারণ নয়। মূল কারণ, হেফাজতী-জামায়াতী-বিএনপিরা এমন তা-ব সৃষ্টি করছিল যাতে মনে হচ্ছিল, এ সরকার কার্যত আর নেই। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার তা মেনে নিতে পারে না। তাদের ব্যবস্থা নিতে হয়। তাছাড়া জনগণের জানমাল রক্ষা করাও সরকারের অন্তিম দায়িত্ব।
ইতোমধ্যে হেফাজতী-জামায়াতী-বিএনপিরা বায়তুল মোকাররমের ধর্মীয় বইয়ের দোকানগুলো আক্রমণ করে। গত ৪২ বছরে অনেক দুর্যোগেও এসব ক্ষুদ্র দোকানের ওপর কখনও হামলা হয়নি। কারণ এসব দোকানে কোরান, আমপারা, তসবি, জায়নামাজ, টুপি, আতর বিক্রি হয়। হেফাজতী-জামায়াতী-বিএনপি (সংক্ষেপে এরপর থেকে হেজাবি) যখন দোকানগুলো আক্রমণ করতে যায় তখন ক্ষুদ্র দোকানদাররা বারবার মিনতি করছিল। ইয়াজিদের বরপুত্ররা তা শোনেনি। রসুল (স.)-এর নাতিদের হত্যায় ইয়াজিদের মন কাঁপেনি, আর ইয়াজিদের পুত্রদের হাত কাঁপবে? বরং কোরান-হাদিস যাতে ভালো করে আগুনে পোড়ে সে জন্য গান পাউডার ছড়িয়ে আগুন দেয়া হয়। নিমিষে ৬৩৫ জিল পবিত্র কোরান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ভস্মীভূত হয় অন্যান্য বই ও সামগ্রী। ক্ষতির পরিমাণ এক কোটিরও বেশি। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব দেখল হেজাবিরা ধর্মগ্রন্থ কিভাবে পোড়ায়। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় পাপ ধর্মগ্রন্থ পোড়ানো। নাস্তিক হওয়াও এত বড় পাপের মধ্যে পড়ে না। এক হিন্দু ভদ্রলোক বলছিলেন, ভাই, মুসলমান না হতে পারি; কিন্তু কোরান তো পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, সেটিতে আগুন দিতে বুক কাঁপল না! ধর্মগ্রন্থ পোড়ানো দেখে তাঁর চোখে পানি। একজন বলেছিলেন, যে ইসরাইল ও ইহুদীদের অধিকাংশ মুসলমান রাষ্ট্র ঘৃণা করে তারাও কখনও কোরান পোড়ায়নি। (চলবে)
শনিবার, ১১ মে ২০১৩, ২৮ বৈশাখ ১৪২০
Also Read:
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০১৩, ২৬ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না - ॥ প্রথম কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
শুক্রবার, ১০ মে ২০১৩, ২৭ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না - ॥ দ্বিতীয় কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
ويقترح رجل الله يتصرف
†f‡¯Í †Mj †eMg wRqvi Ôeøy wcÖ›UÕ
http://www.amadershomoy2.com/content/2013/05/07/news0036.htm
হেফাজতের পাশে থাকার আহবান খালেদার
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=0be0cde05c6adb6ffd4a6cdd81f64bfc&nttl=05052013194180
বন্ধুর পথে বিএনপি
__._,_.___