রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না
মুনতাসীর মামুন
॥ সপ্তম কিস্তি ॥
যার এখন গণভবনে থাকার কথা ছিল তিনি এখন ডিবি অফিসের কাঠের বেঞ্চে বসে রিমান্ডে অশ্রুপাত করছেন। কিন্তু এই অশ্রুতে সমব্যথী হওয়ার কোন কারণ নেই। এই জুনায়েদ বাবুনগরী ১৯৭১ সালে মুজাহিদ বাহিনীর নেতা ছিলেন। হেফাজতের নায়েবে আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী জুনায়েদের মামা। মামা-ভাগিনা ১৯৭১ সালের পরও আওয়ামী বিরোধিতা ছাড়েননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁরা সা.কা. চৌধুরীর হয়ে কাজ করেছেন এবং এই জুনায়েদ বিভিন্ন বক্তৃতায় বলেছেন, যারা আওয়ামী লীগে ভোট দেয় তারা নাস্তিক। ঢাকায় তাদের প্রথম সমাবেশেও টাকা যোগায় সা.কা.র পরিবার [জনকণ্ঠ ১০.৫.১৩]। যার কথা ছিল এখন বঙ্গভবনে আয়েসে দিন কাটাবার, তিনি এখন হাটহাজারি মাদ্রাসায় কাঠের বেঞ্চিতে বসে কাঁদেন। কিন্তু এখানেও সমব্যথী হওয়ার বা সম্মান দেখাবার কোন কারণ নেই। কারণ, তিনিও ১৯৭১ সালে যুক্ত ছিলেন মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে।
ইতিহাস হচ্ছে অভিজ্ঞতা। সে কারণে আমরা বারবার বলি, ইতিহাসটা দেখ, তারপর সিদ্ধান্ত নাও। আমাদের ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বলে, যে একবার রাজাকার সে সব সময় রাজাকার। ১৯৭১ সালে যারা রাজাকারী করেছে তারা কি ঐ পথ ছেড়েছে? একটা উদাহরণ দেখান যাবে? যাবে না। আমরা আরও বলি, যুক্তিযোদ্ধা হওয়া যতটা সহজ ছিল, আজীবন মুক্তিযোদ্ধা থাকা ততটা সহজ নয়। জিয়াউর রহমান ও তার সাথীরা এর বড় প্রমাণ, যাদের সঙ্গে ইয়াজিদের তুলনা করা যেতে পারে। বা সাদেক হোসেন খোকা, যিনি এখন পরিচিত সাদেক হোসেন ধোঁকা নামে; বা মওদুদ, সিভিলিয়ানদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি এ দেশের ক্ষতি করেছেন। তাই আমরা ইতিহাসকে অভিজ্ঞতা হিসেবে মানি এবং কঠিন সত্যে উপনীত হই যে, তাদের সহস্র তোষণ করলেও তাদের পক্ষে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়া সম্ভব নয়, আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা সম্ভব নয়, ভান হয়ত করতে পারে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এ কথা কখনও বুঝতে চাননি। প্রতিবার ক্ষমতায় গিয়ে তারা তাদেরই গুরুত্ব দিয়েছেন যারা তাদের হয়ে লড়াই করননি বা তাদের হয়ে কাজ করেছেন বলে ভান করছেন। এও এক ধরনের অদ্ভুত মানসিকতা, যা হীনম্মন্যতার তুল্য এবং এ কারণেই তারা সব সময় সমস্যায় পড়েছেন।
বেগম জিয়াও প্রস্তুত ছিলেন। জনাব ধোঁকার বাসায়, বাবুনগরী টাকা-পয়সা হেফাজতে নিতে ও সরকার পতনের বিষয়ে, ৫ মে-তেও আলাপ করেছেন বলে পত্রিকায় প্রকাশ। জানা যায় সরকার পতন ও সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মওদুদও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শোনা যায়, সরকার পতন হলে তারাই দ্রুত বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে আসল ক্ষমতা হস্তগত করে বাবুনগরীদের হাটহাজারি পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু পতন হলো না। বাবুনগরীদের সাহায্যের জন্য খালেদার আহ্বান ঢাকাবাসী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তার গলার স্বর আর শোনা যায়নি।
খালেদা বা আহমাদ শফী ক্ষমতায় গেলে জামায়াতীরা জানত, তারাই হবে চাবিকাঠি। সুতরাং বিএনপির চেয়ে তারাই মাঠে নেমেছিল বেশি। এবং সে কারণেই ইসলামী ব্যাংক আক্রান্ত হয়নি, অন্যান্য ব্যাংক আক্রান্ত হয়েছে। ইতিহাসের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, আজ ইসলামী ব্যাংক আক্রান্ত হলে জামায়াত আন্দোলন থেকে সরে যাবে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা জামায়াত ও পাকিস্তানীদের মার দিতে পেরেছিল দেখে তারা নতজানু হয়ে বসেছিল। ৫ মের অভিজ্ঞতা বলে, রাজাকার, রাজাকারপন্থী বা রাজাকারের বাচ্চাদের সঙ্গে যদি নমিত ব্যবহার না করেন তাহলে তারা ঠিক থাকবে। পত্রিকার খবরে প্রকাশ, আহমাদ শফী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন, তার পুত্র আনাছ ও দুই খাদেমকে যেন গ্রেফতার করা না হয় [কালের কণ্ঠ, ১০.৫.১৩]।
তার কারণে এতগুলো মানুষের মৃত্যু হলো, জখম হলো, গ্রেফতার হলো, কারও কথা তার মনে হয়নি; শুধু পুত্র ও দুই খাদেমের কথাই মনে হলো! ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগেও তিনি শুধু সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, যে অগণিত মানুষের ক্ষতি তিনি করেছেন তাদের কাছে নয়। মনে রাখা ভাল, মানবিকতা তাদের বড় গুণ নয়। হলে, ১৯৭১ সালে তারা নিজেদের মানুষদের হত্যা করতেন না, মা-বোনদের ধর্ষণ করতেন না।
এ সব রাজাকার ১৯৭৫ সালের পর মাদ্রাসা তৈরি করে তাতে আশ্রয় নিতে থাকে। এবং এভাবেই বাংলাদেশে সহস্র মিনি মাদ্রাসা তৈরি হয়। শুনেছিলাম আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছিলেন, জামায়াত বা কওমি এক ভোট, নারীও এক ভোট। আমাকে দু'ইটাই দেখতে হবে। এখানেই ফ্যালাসি। ইতিহাসের অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করা। জামায়াত বা মাদ্রাসা ভোট তার পক্ষে যাবে না, কিন্তু নারীর যাবে। সে ক্ষেত্রে মাদ্রাসা ভোট উপক্ষো নয়, গুরুত্ব না দেয়াই সমীচীন।
সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে আপাতত মাদ্রাসাগুলো খুব একটা নড়াচড়া করবে না। এদের নেতারা এত টাকা খেয়েছে যে, নিজেদের স্বার্থ আরও ক্ষুণœ হোক সেটি চাইবে না। কিন্তু তারা সব সময় পাকিস্তানী বাংলাদেশীদের পক্ষেই থাকবে। এছাড়া নিজেদের শক্তির দম্ভ ভেঙ্গে যাওয়ায়ও তারা হতবাক।
বিএনপি-জামায়াত এখন মরিয়া অবস্থায়। তাদেরও নিজেদের শক্তি সম্পর্কে যে বিশ্বাস ছিল তার ভিত নড়ে গেছে। তাদের হরতালের ডাক ব্যর্থ হয়েছে। তাদের লিডার আলবদর কামারুজ্জামানের ফাঁসির দ- হওয়ার পরও তারা আর আগের মতো রাস্তায় সহিংসতা দেখাতে পারেনি। কিন্তু, তারা এও জানে যে, এবার ক্ষমতায় যেতে না পারলে হেজাবিদের সেই রাজনৈতিক শক্তি আর থাকবে না। সুতরাং এখন তারা দেশ ধ্বংসে যা যা করার তা তা করবে। অর্থাৎ সামনের দিনগুলো আরও রক্তক্ষয়ী হওয়ার সম্ভাবনা।
৫-৬ মের ঘটনার অন্য একটি দিকও আছে। তা'হলো, পাকিস্তানী বাংলাদেশী বা হেজাবিরা অপরাজেয় নয়। বরং এই ধারণা তৈরি করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি অপরাজেয়, তারা ফিনিক্স পাখির মতো। এই শক্তির জায়গা থেকেই আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কাজ করে যেতে হবে।
এ জন্য প্রথম কাজটি হবে সব ধরনের মান-অভিমান ভুলে সরকার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দল, গ্রুপ, সংগঠন ও ব্যক্তিতে যৌথ ফ্রন্ট গড়তে হবে। লড়াইটা হবে হেজাবি অপশক্তির হাত থেকে দেশকে ও নিজেদের রক্ষা করা। সরকার আমাদের জন্য কী করল, তার চেয়েও বড় কথা আমরা কী করলাম, তা একবার ভাবা; সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র দেখে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার ভিত্তিতে কাজ করা যায় কিনা তা বিবেচনা করা। সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের বিভিন্ন উদ্যোগ সমন্বয় ও সাহায্য করা।
না, আমি কাউকে পরামর্শ দেব সে রকম বিজ্ঞ নিজেকে মনে করি না এবং সে ধৃষ্টতাও দেখাব না। সিভিল সমাজের স্বার্থে শুধু বলব, রাজনৈতিক নেতৃত্বেই আমরা এগিয়ে যাব। শুধু আশা করব, রাজনৈতিক নেতারা সিভিল সমাজের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতি আরও সংবেদনশীল হবেন এবং গুরুত্ব আরোপ করবেন। কারণ, আমরাও ভোটার। আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরও তাদের জয়-পরাজয় নির্ভর করে। আমরাও একটি শক্তি এবং আমাদের চিরকালীন দাস হিসেবে ভাবার কোনও কারণ নেই। আমাদের অভিজ্ঞতা এ রকম-
১. ইসলামের নাম নিয়ে অনেকে রাজনৈতিক দল গঠন করে, ধর্ম ব্যবহার করে গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের ব্যস্ত। এ কারণে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে এবং করবে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে না যাওয়ায় ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক রাষ্ট্রধর্ম অটুট থাকায় তাদের মনে এ প্রতীতি জন্মেছে যে, তারা অত্যন্ত শক্তিশালী। এ এক ধরনের জুজুর ভয়। সে কারণে, তারা মনে করে ধর্ম/ ইসলামের নাম ব্যবহার করে তারা যা খুশি তা করতে পারে। এমন কি বিএনপি ও জাতীয় পার্টি 'ইসলামী' দল না হয়েও অনবরত ইসলাম ব্যবহার করছে। ডানপন্থা এভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। সুতরাং ভেবে দেখার সময় এসেছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে রাখা উচিত কি উচিত নয়। সৌদি আরব পর্যন্ত ইসলামিক রিপাবলিক নয়, কিংডম অব এরাবিয়াও নয়, সৌদি এরাবিয়া। কিন্তু মুসলমানরা এ ব্যাপারে নিশ্চুপ।
এ যুক্তিও উড়িয়ে দেয়া যায় না, সংবিধান থেকে এসব সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো রাতারাতি উড়িয়ে দেয়া যাবে না। সময়টা ১৯৭২ নয়। এখন ধর্ম সমাজ- রাজনীতিতে অনেকটা স্পেস নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এ সাংঘর্ষিক অবস্থা কতটা হ্রাস করা যায় সেটি ভেবে দেখা দরকার। হয়ত, ১৪ দল আরেকবার ম্যান্ডেট পেলে এ বিষয় সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে পারে। অথবা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী শক্তি যদি হেজাবিদের থেকে শক্তিশালী হতে পারে এবং হেজাবিরা যে ধর্মের নামে ধোঁকা দিচ্ছে সেটি তৃণমূলে বোঝানো যায়, তা'হলে বিষয়টি সহজ হবে। হেজাবিদের কোরান পোড়ানো একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। আমাদের মনে রাখা দরকার, হেজাবিরা একটি দু'টি নয় কয়েক শ' কোরান, জায়নামাজ ও তসবি পুড়িয়ে ফেলার পরও হেজাবিদের তেমনভাবে ধোলাই দিতে কেউ নামেনি। কিন্তু অন্যপক্ষের কেউ যদি অসাবধানেও একটি কোরান পোড়ান তা'হলে ১৪ দলকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য হেজাবিরা বাংলাদেশ তোলপাড় করে ফেলত। মনে রাখা দরকার, সাঈদীর চাঁদে অবস্থানও এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে। সুতরাং বাস্তবধর্মী এবং ইতিবাচক কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটি ভেবে দেখা উচিত। (চলবে)
যার এখন গণভবনে থাকার কথা ছিল তিনি এখন ডিবি অফিসের কাঠের বেঞ্চে বসে রিমান্ডে অশ্রুপাত করছেন। কিন্তু এই অশ্রুতে সমব্যথী হওয়ার কোন কারণ নেই। এই জুনায়েদ বাবুনগরী ১৯৭১ সালে মুজাহিদ বাহিনীর নেতা ছিলেন। হেফাজতের নায়েবে আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী জুনায়েদের মামা। মামা-ভাগিনা ১৯৭১ সালের পরও আওয়ামী বিরোধিতা ছাড়েননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁরা সা.কা. চৌধুরীর হয়ে কাজ করেছেন এবং এই জুনায়েদ বিভিন্ন বক্তৃতায় বলেছেন, যারা আওয়ামী লীগে ভোট দেয় তারা নাস্তিক। ঢাকায় তাদের প্রথম সমাবেশেও টাকা যোগায় সা.কা.র পরিবার [জনকণ্ঠ ১০.৫.১৩]। যার কথা ছিল এখন বঙ্গভবনে আয়েসে দিন কাটাবার, তিনি এখন হাটহাজারি মাদ্রাসায় কাঠের বেঞ্চিতে বসে কাঁদেন। কিন্তু এখানেও সমব্যথী হওয়ার বা সম্মান দেখাবার কোন কারণ নেই। কারণ, তিনিও ১৯৭১ সালে যুক্ত ছিলেন মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে।
ইতিহাস হচ্ছে অভিজ্ঞতা। সে কারণে আমরা বারবার বলি, ইতিহাসটা দেখ, তারপর সিদ্ধান্ত নাও। আমাদের ইতিহাসের অভিজ্ঞতা বলে, যে একবার রাজাকার সে সব সময় রাজাকার। ১৯৭১ সালে যারা রাজাকারী করেছে তারা কি ঐ পথ ছেড়েছে? একটা উদাহরণ দেখান যাবে? যাবে না। আমরা আরও বলি, যুক্তিযোদ্ধা হওয়া যতটা সহজ ছিল, আজীবন মুক্তিযোদ্ধা থাকা ততটা সহজ নয়। জিয়াউর রহমান ও তার সাথীরা এর বড় প্রমাণ, যাদের সঙ্গে ইয়াজিদের তুলনা করা যেতে পারে। বা সাদেক হোসেন খোকা, যিনি এখন পরিচিত সাদেক হোসেন ধোঁকা নামে; বা মওদুদ, সিভিলিয়ানদের মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশি এ দেশের ক্ষতি করেছেন। তাই আমরা ইতিহাসকে অভিজ্ঞতা হিসেবে মানি এবং কঠিন সত্যে উপনীত হই যে, তাদের সহস্র তোষণ করলেও তাদের পক্ষে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়া সম্ভব নয়, আওয়ামী লীগকে সমর্থন করা সম্ভব নয়, ভান হয়ত করতে পারে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এ কথা কখনও বুঝতে চাননি। প্রতিবার ক্ষমতায় গিয়ে তারা তাদেরই গুরুত্ব দিয়েছেন যারা তাদের হয়ে লড়াই করননি বা তাদের হয়ে কাজ করেছেন বলে ভান করছেন। এও এক ধরনের অদ্ভুত মানসিকতা, যা হীনম্মন্যতার তুল্য এবং এ কারণেই তারা সব সময় সমস্যায় পড়েছেন।
বেগম জিয়াও প্রস্তুত ছিলেন। জনাব ধোঁকার বাসায়, বাবুনগরী টাকা-পয়সা হেফাজতে নিতে ও সরকার পতনের বিষয়ে, ৫ মে-তেও আলাপ করেছেন বলে পত্রিকায় প্রকাশ। জানা যায় সরকার পতন ও সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতায় যাওয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ মওদুদও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শোনা যায়, সরকার পতন হলে তারাই দ্রুত বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে আসল ক্ষমতা হস্তগত করে বাবুনগরীদের হাটহাজারি পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু পতন হলো না। বাবুনগরীদের সাহায্যের জন্য খালেদার আহ্বান ঢাকাবাসী কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তার গলার স্বর আর শোনা যায়নি।
খালেদা বা আহমাদ শফী ক্ষমতায় গেলে জামায়াতীরা জানত, তারাই হবে চাবিকাঠি। সুতরাং বিএনপির চেয়ে তারাই মাঠে নেমেছিল বেশি। এবং সে কারণেই ইসলামী ব্যাংক আক্রান্ত হয়নি, অন্যান্য ব্যাংক আক্রান্ত হয়েছে। ইতিহাসের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, আজ ইসলামী ব্যাংক আক্রান্ত হলে জামায়াত আন্দোলন থেকে সরে যাবে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা জামায়াত ও পাকিস্তানীদের মার দিতে পেরেছিল দেখে তারা নতজানু হয়ে বসেছিল। ৫ মের অভিজ্ঞতা বলে, রাজাকার, রাজাকারপন্থী বা রাজাকারের বাচ্চাদের সঙ্গে যদি নমিত ব্যবহার না করেন তাহলে তারা ঠিক থাকবে। পত্রিকার খবরে প্রকাশ, আহমাদ শফী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে অনুরোধ করেছেন, তার পুত্র আনাছ ও দুই খাদেমকে যেন গ্রেফতার করা না হয় [কালের কণ্ঠ, ১০.৫.১৩]।
তার কারণে এতগুলো মানুষের মৃত্যু হলো, জখম হলো, গ্রেফতার হলো, কারও কথা তার মনে হয়নি; শুধু পুত্র ও দুই খাদেমের কথাই মনে হলো! ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগেও তিনি শুধু সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন, যে অগণিত মানুষের ক্ষতি তিনি করেছেন তাদের কাছে নয়। মনে রাখা ভাল, মানবিকতা তাদের বড় গুণ নয়। হলে, ১৯৭১ সালে তারা নিজেদের মানুষদের হত্যা করতেন না, মা-বোনদের ধর্ষণ করতেন না।
এ সব রাজাকার ১৯৭৫ সালের পর মাদ্রাসা তৈরি করে তাতে আশ্রয় নিতে থাকে। এবং এভাবেই বাংলাদেশে সহস্র মিনি মাদ্রাসা তৈরি হয়। শুনেছিলাম আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছিলেন, জামায়াত বা কওমি এক ভোট, নারীও এক ভোট। আমাকে দু'ইটাই দেখতে হবে। এখানেই ফ্যালাসি। ইতিহাসের অভিজ্ঞতাকে উপেক্ষা করা। জামায়াত বা মাদ্রাসা ভোট তার পক্ষে যাবে না, কিন্তু নারীর যাবে। সে ক্ষেত্রে মাদ্রাসা ভোট উপক্ষো নয়, গুরুত্ব না দেয়াই সমীচীন।
সরকারের কঠোর অবস্থানের ফলে আপাতত মাদ্রাসাগুলো খুব একটা নড়াচড়া করবে না। এদের নেতারা এত টাকা খেয়েছে যে, নিজেদের স্বার্থ আরও ক্ষুণœ হোক সেটি চাইবে না। কিন্তু তারা সব সময় পাকিস্তানী বাংলাদেশীদের পক্ষেই থাকবে। এছাড়া নিজেদের শক্তির দম্ভ ভেঙ্গে যাওয়ায়ও তারা হতবাক।
বিএনপি-জামায়াত এখন মরিয়া অবস্থায়। তাদেরও নিজেদের শক্তি সম্পর্কে যে বিশ্বাস ছিল তার ভিত নড়ে গেছে। তাদের হরতালের ডাক ব্যর্থ হয়েছে। তাদের লিডার আলবদর কামারুজ্জামানের ফাঁসির দ- হওয়ার পরও তারা আর আগের মতো রাস্তায় সহিংসতা দেখাতে পারেনি। কিন্তু, তারা এও জানে যে, এবার ক্ষমতায় যেতে না পারলে হেজাবিদের সেই রাজনৈতিক শক্তি আর থাকবে না। সুতরাং এখন তারা দেশ ধ্বংসে যা যা করার তা তা করবে। অর্থাৎ সামনের দিনগুলো আরও রক্তক্ষয়ী হওয়ার সম্ভাবনা।
৫-৬ মের ঘটনার অন্য একটি দিকও আছে। তা'হলো, পাকিস্তানী বাংলাদেশী বা হেজাবিরা অপরাজেয় নয়। বরং এই ধারণা তৈরি করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি অপরাজেয়, তারা ফিনিক্স পাখির মতো। এই শক্তির জায়গা থেকেই আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কাজ করে যেতে হবে।
এ জন্য প্রথম কাজটি হবে সব ধরনের মান-অভিমান ভুলে সরকার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব দল, গ্রুপ, সংগঠন ও ব্যক্তিতে যৌথ ফ্রন্ট গড়তে হবে। লড়াইটা হবে হেজাবি অপশক্তির হাত থেকে দেশকে ও নিজেদের রক্ষা করা। সরকার আমাদের জন্য কী করল, তার চেয়েও বড় কথা আমরা কী করলাম, তা একবার ভাবা; সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র দেখে আমাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার ভিত্তিতে কাজ করা যায় কিনা তা বিবেচনা করা। সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের বিভিন্ন উদ্যোগ সমন্বয় ও সাহায্য করা।
না, আমি কাউকে পরামর্শ দেব সে রকম বিজ্ঞ নিজেকে মনে করি না এবং সে ধৃষ্টতাও দেখাব না। সিভিল সমাজের স্বার্থে শুধু বলব, রাজনৈতিক নেতৃত্বেই আমরা এগিয়ে যাব। শুধু আশা করব, রাজনৈতিক নেতারা সিভিল সমাজের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতি আরও সংবেদনশীল হবেন এবং গুরুত্ব আরোপ করবেন। কারণ, আমরাও ভোটার। আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরও তাদের জয়-পরাজয় নির্ভর করে। আমরাও একটি শক্তি এবং আমাদের চিরকালীন দাস হিসেবে ভাবার কোনও কারণ নেই। আমাদের অভিজ্ঞতা এ রকম-
১. ইসলামের নাম নিয়ে অনেকে রাজনৈতিক দল গঠন করে, ধর্ম ব্যবহার করে গোষ্ঠীস্বার্থ উদ্ধারের ব্যস্ত। এ কারণে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে এবং করবে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে না যাওয়ায় ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক রাষ্ট্রধর্ম অটুট থাকায় তাদের মনে এ প্রতীতি জন্মেছে যে, তারা অত্যন্ত শক্তিশালী। এ এক ধরনের জুজুর ভয়। সে কারণে, তারা মনে করে ধর্ম/ ইসলামের নাম ব্যবহার করে তারা যা খুশি তা করতে পারে। এমন কি বিএনপি ও জাতীয় পার্টি 'ইসলামী' দল না হয়েও অনবরত ইসলাম ব্যবহার করছে। ডানপন্থা এভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। সুতরাং ভেবে দেখার সময় এসেছে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে রাখা উচিত কি উচিত নয়। সৌদি আরব পর্যন্ত ইসলামিক রিপাবলিক নয়, কিংডম অব এরাবিয়াও নয়, সৌদি এরাবিয়া। কিন্তু মুসলমানরা এ ব্যাপারে নিশ্চুপ।
এ যুক্তিও উড়িয়ে দেয়া যায় না, সংবিধান থেকে এসব সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো রাতারাতি উড়িয়ে দেয়া যাবে না। সময়টা ১৯৭২ নয়। এখন ধর্ম সমাজ- রাজনীতিতে অনেকটা স্পেস নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এ সাংঘর্ষিক অবস্থা কতটা হ্রাস করা যায় সেটি ভেবে দেখা দরকার। হয়ত, ১৪ দল আরেকবার ম্যান্ডেট পেলে এ বিষয় সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে পারে। অথবা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী শক্তি যদি হেজাবিদের থেকে শক্তিশালী হতে পারে এবং হেজাবিরা যে ধর্মের নামে ধোঁকা দিচ্ছে সেটি তৃণমূলে বোঝানো যায়, তা'হলে বিষয়টি সহজ হবে। হেজাবিদের কোরান পোড়ানো একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। আমাদের মনে রাখা দরকার, হেজাবিরা একটি দু'টি নয় কয়েক শ' কোরান, জায়নামাজ ও তসবি পুড়িয়ে ফেলার পরও হেজাবিদের তেমনভাবে ধোলাই দিতে কেউ নামেনি। কিন্তু অন্যপক্ষের কেউ যদি অসাবধানেও একটি কোরান পোড়ান তা'হলে ১৪ দলকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য হেজাবিরা বাংলাদেশ তোলপাড় করে ফেলত। মনে রাখা দরকার, সাঈদীর চাঁদে অবস্থানও এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে। সুতরাং বাস্তবধর্মী এবং ইতিবাচক কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেটি ভেবে দেখা উচিত। (চলবে)
Also Read:
বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০১৩, ২৬ বৈশাখ ১৪২০রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না - ॥ প্রথম কিস্তি ॥মুনতাসীর মামুনশুক্রবার, ১০ মে ২০১৩, ২৭ বৈশাখ ১৪২০রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না - ॥ দ্বিতীয় কিস্তি ॥মুনতাসীর মামুনশনিবার, ১১ মে ২০১৩, ২৮ বৈশাখ ১৪২০রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না ॥ তৃতীয় কিস্তি ॥মুনতাসীর মামুনশনিবার, ১১ মে ২০১৩, ২৮ বৈশাখ ১৪২০
রবিবার, ১২ মে ২০১৩, ২৯ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না ॥ চতুর্থ কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
সোমবার, ১৩ মে ২০১৩, ৩০ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না ॥ পঞ্চম কিস্তি ॥
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=16&dd=2013-05-13&ni=135164মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০১৩, ৩১ বৈশাখ ১৪২০
রাজাকার, রাজাকারপন্থী, রাজাকারের বাচ্চাদের কর্তৃত্ব এ দেশে আর হবে না ॥ ষষ্ঠ কিস্তি ॥
মুনতাসীর মামুন
ويقترح رجل الله يتصرف [ Man proposes, Allah the Almighty disposes]
†f‡¯Í †Mj †eMg wRqvi Ôeøy wcÖ›UÕ
http://www.amadershomoy2.com/content/2013/05/07/news0036.htm
হেফাজতের পাশে থাকার আহবান খালেদার
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমhttp://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=0be0cde05c6adb6ffd4a6cdd81f64bfc&nttl=05052013194180বন্ধুর পথে বিএনপি
__._,_.___