Banner Advertiser

Sunday, July 28, 2013

[mukto-mona] Fw: [notun_bangladesh] পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্যকথা----ড. মিল্টন বিশ্বাস


----- Forwarded Message -----
From: Gonojagoron Moncho <projonmochottar@gmail.com>
To:
Sent: Friday, July 26, 2013 8:15 AM
Subject: [notun_bangladesh] পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্যকথা----ড. মিল্টন বিশ্বাস

 




গত ১৭ জুলাই একটি দৈনিক পত্রিকায় 'দীপু মনির বিশ্বরেকর্ড' শিরোনামে প্রতিবেদনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কে কুৎসা রটানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রি ডা. দীপু মনি গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে ৬০০ দিন দেশের বাইরে ছিলেন এবং তিনি রাষ্ট্রের অনেক লক্ষ-লক্ষ টাকা ব্যয় করেছেন ইত্যাদি তথ্যের আলোকে তার দপ্তরের সাফল্যকে ম্লান করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তৎপর হয়েছে বিরোধী পক্ষ। উক্ত দীর্ঘ প্রতিবেদনের কোথাও বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের কোনো কথা নেই। বরং ভিত্তিহীন অনেক তথ্য হাজির করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে এই মন্ত্রণালয় ব্যর্থ। অথচ আমরা জানি বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রি একজন দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে দেশ-বিদেশে পরিচিতি পেয়েছেন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে বিদেশের গণমাধ্যমে বর্তমান সরকার সম্পর্কে যে বিরোধিতা এবং বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালানো হয় তা মোকাবেলা করার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রির। তিনিই রাতদিন পরিশ্রম করে বহির্বিশ্বে অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দিয়েছেন। তার তৎপরতার কারণেই সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য বিপুল। গত ২১ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রি ডা. দীপু মনি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগগুলোর প্রতিবাদও জানিয়েছেন।

২০০৮ সালে মহাজোট সরকারের দিন বদলের সনদে পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে বলা হয়েছিল: 'বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। 'সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়' এই নীতির আলোকে স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করা হবে। ভারত, নেপাল, ভতান ও মিয়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক বজায় রেখে বহুমুখী সহযোগিতা জোরদার করা হবে। সার্ক বিমসটেক ও ডি-৮ ভুক্ত দেশগুলোসহ আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সুদৃঢ় করা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডাসহ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক জোরদার ও ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করা হবে। রাশিয়া, চীন এবং আশিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক সুদৃঢ় করা হবে। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার সঙ্গে অধিকতর যোগাযোগ ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হবে। বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক এবং উন্নয়ন ও সহযোগিতার ক্ষেত্র জোরদার করা হবে। মুসলিম উম্মাহর সংহতি এবং ইসলামি সম্মেলন সংস্থার(ওআইসি) কাঠামোর অর্থনৈতিক কর্মকা- ও সহযোগিতা জোরদার করা হবে। ... সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠন করা হবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা হবে।' এ নির্বাচনী অঙ্গীকার পুরোপুরিই বাস্তবায়ন হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে।
বিএনপি-জামাত জোট আমলে জঙ্গিবাদের উত্থান ও দেশব্যাপী তা-ব দেখে বিশ্ববাসী হতচকিত হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে ২০০৯ সালের ৬ তারিখের পর থেকে। মহাজোটের নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল করে তুলেছে। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র দপ্তরের অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছিল ২০০৯ সালের জুলাই মাসে। এটিও ছিল এই বিচার প্রক্রিয়াকে বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার প্রচেষ্টা। ইতোমধ্যে রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের জন্য রাশিয়ার কারিগরি সহায়তা নেওয়ার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়ার সফরে ফলে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। একাজে পররাষ্ট্র দপ্তরকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। অন্যদিকে ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, সন্ত্রাস দমন ও গণতন্ত্র রক্ষায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের অংশীদার হয়ে থাকবে। সেই সময় তিনি জানান, বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হবে। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। সম্প্রতি জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনো বর্তমান সরকারের কর্মকা-ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে যাচ্ছে। ২০১২ সালের মে মাসে হিলারি ক্লিনটন ঢাকা সফরে এসে 'পার্টনারশিপ ডায়লগ' আয়োজনের লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। দুদেশের মধ্যে সুসম্পর্কের একটি দৃষ্টান্ত এই চুক্তি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ বছরে ডায়লগ অনুষ্ঠিত হয়। নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রি এবং তার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টার কারণে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক খুব ভালো। গত ২৬ ও ২৭ মে(২০১৩) ঢাকায় দ্বিতীয় 'বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পার্টনারশিপ ডায়লগ' বা অংশীদারি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সেখানকার পররাষ্ট্রমন্ত্রির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জন কেরি তাকে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেয়ায় বাংলাদেশ এখন বিশে^র অনেক রাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি আর শারম্যান বাংলাদেশ সফরে এসে ডা. দীপু মনির সঙ্গে বৈঠক করেন। শারম্যানের মতে, বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া সন্ত্রাস, নারী পাচার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধন করেছে। বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রশংসা করেছেন অনেকেই।
'এ দেশের মাটিতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালানো কঠিন'- এই বার্তা চলতি বছরের(২০১৩) শুরুর প্রথম ৫ মাসে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য সবচেয়ে ইতিবাচক সংবাদ। সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের মাটিতে কাজ চালানো সন্ত্রাসীদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক সন্ত্রাস নিয়ে গত ৩০ মে ওয়াশিংটনে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। ২০১২ সালের পরিস্থিতি নিয়ে 'কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম ২০১২' শীর্ষক ওই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিবেদনে আইন প্রণয়ন, আইনের প্রয়োগ এবং সীমান্ত নিরাপত্তা, জঙ্গি অর্থায়ন রোধ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ- এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনের কথা বলা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে বৃহৎ শক্তিগুলো, বিশেষ করে ভারতের প্রভাব রয়েছে। 'দুই বিশাল অর্থনীতি'র মাঝখানে থাকা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন ডা. দীপু মনি।
এর আগে আমেরিকা ভিত্তিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে বাংলাদেশকে একটি উদার ও দ্রুত উন্নয়নশীল সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে উল্লে¬খ করেছেন বিখ্যাত কলামিস্ট সদানন্দ ধুমে। অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হয়ে গেলেও বিগত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি গড়ে ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বমানের অ্যাপারেল ইন্ড্রাস্টি গড়ে তুলেছে যেখানে প্রায় ৩৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে যার বেশিরভাগই নারী। যেখানে এইচএ্যান্ডএম, ওয়ালমার্ট ও টমি হিলফিগারের মতো বিশ্বের অভিজাত ব্র্যান্ডের কাপড় তৈরি হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে আবির্র্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ যদি তার সস্তা শ্রমকে কাজে লাগিয়ে যথাযথ পরিবেশ বজায় রাখতে পারে তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চীনের বিকল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। বিশ্বের অন্যতম রেটিং কোম্পানি গোল্ডম্যান সাকস-এর করা 'নেক্সট-১১'-এর তালিকায় বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে বিশ্বের এই এগারটি দেশের বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক সমস্যার সমাধান হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে তিস্তা চুক্তি করা হলে পরস্পরের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বর্তমান সরকারের আমলের অগ্রসরমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো অনেক বিশ্বখ্যাত পত্রিকার শিরোনাম হওয়ার পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। এ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল বিশ্বমন্দার মোকাবিলায় সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরে বিশ্বমন্দার প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষার জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে নীতি-পরামর্শ গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগের মহাজোট সরকার। অঙ্গীকার অনুসারে তথ্য ভা-ার গড়ে তুলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জরুরিভিত্তিতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। বিনিয়োগ, জ্বালানি নিরাপত্তা, মুদ্রামান সুরক্ষা ও রফতানি সহায়তা এবং জনশক্তি রফতানি অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে দ্রব্যমূল্যের চাপ দুঃসহ হয়ে ওঠেনি। তাছাড়া দুর্নীতিমুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচার, নারীর অধিকার ও সুযোগের সমতা, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সুশাসন, দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার দৃঢ় সংকল্প ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দেশের অর্থনীতিকে গতিশীলতা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশ(১৩ ট্রিলিয়ন ডলার), যার সামরিক শক্তি ছাড়া অন্য কোন নৈতিক বা অর্থনৈতিক শক্তি নেই। পক্ষান্তরে দরিদ্র দেশ হয়েও বাংলাদেশ বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে শক্ত আর্থিক ভিত গড়ে তুলেছে।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তা এন্টনি ডিন ট্রানচিনা শেখ হাসিনার সরকার ও তার মন্ত্রী পরিষদের প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, 'শেখ হাসিনা অ্যান্ড হার কেবিনেট আর ডুইং এক্সিলেন্ট জব'। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে এই মার্কিনি এ কথা বলেন। তার মতে সরকারের অধীনে প্রতিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের টেকনোলজির ওপর নেয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং-এ আজ শীর্ষ তিনে অবস্থান করছে। জঙ্গি দমনে এবং নারী ক্ষমতায়নে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন। এ কারণে দেশটি বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভাল থাকলে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে গ্যালাপের জরিপে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা প্রমাণিত হয়েছে। আগের যে কোন সরকারের চেয়ে বর্তমান সরকার ভাল করছে। বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা হয়েছে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় এবং আদালতের এখতিয়ার বলেই বিএনপি জোটের নেতারা কারাগারে। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি¬উ মজিনা এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে ভালো করছে বাংলাদেশ; চলতি বছর ধান/চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। উল্লে¬খ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৯ কোটি ডলার প্রদান করেছে। তবে ধান ছাড়াও কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে হবে; যাতে খাদ্যমান সম্পূর্ণ হয়। আমিষ, খনিজ, ভিটামিন সহজলভ্য করতে উদ্যোগী হতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশের বার্ষিক রফতানি ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। ২০১১ সালে ১ হাজার ১শ কোটি ডলারেরও বেশিপণ্য(তৈরি পোশাক) ইউরোপে রফতানি করতে সক্ষম হয়েছে এদেশ। অথচ ২০১০ সালে রফতানি ছিল ৭শ ১৫কোটি ডলারের পণ্য। ইউরো জোনের ঋণ সংকট ও অর্থনৈতিক মন্দার পরেও বাংলাদেশ আতঙ্কিত নয়। বর্তমান সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় বিশ্বাসী। এর আগে ক্ষমতার ৫ বছর মেয়াদে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হতো; সে পর্যায় অতিক্রম করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের মধ্যে মাথাপিছু জাতীয় আয় ২ হাজার ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরে 'প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১ চূড়ান্ত করেছে বর্তমান সরকার'। এসবই দেশের প্রথম দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। মুদ্রা ও রাজস্বনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সময়ের মধ্যে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মূল্যস্ফীতির বার্ষিক হার ৫ দশমিক ২ শতাংশে স্থির রাখার কথাও বলা হয়েছে পরিকল্পনায়। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১১ এর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১০-১১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ৮১৮ ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ৭৫১ ডলার। আয় বৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশ দরিদ্র দেশের বদনাম ঘুচাতে পারবে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন দেশের সুশাসনের প্রতিষ্ঠা। আইনের শাসন নিশ্চিত ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা, উন্নত সরকারি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নির্মাণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যক্তি খাতকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও দক্ষ করে তোলা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশ এখন আর দুর্নীতিতে প্রথম স্থানে নেই; এখন এটি একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণার পুরো কৃতিত্ব পররাষ্ট্র দপ্তরের। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পরিচালিত কার্যক্রমের ফলেই উন্নয়নের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে। সিলেটে তেল পাওয়া গেছে; যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে; রায় কার্যকর হবে অতিশিঘ্রই। বিরোধী দলের হঠকারী ও অপরাজনীতির কথা বাদ দিলে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল এবং সফল একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সালের মধ্যে এদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে দলমত নির্বিশেষে(মৌলবাদী-জঙ্গি বাদে) সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মূলত শেখ হাসিনার প্রথম শাসনকাল(১৯৯৬-২০০১) ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের শিখরস্পর্শী সময়। সেই সময় আওয়ামী লীগ সরকার আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে। বাংলাদেশ তখন এনটিপি, সিটিবিটি, ভূমি মাইন বিরোধী চুক্তি এবং রাসায়নিক অস্ত্র বিরোধী সমঝোতা অনুমোদন করে। ১৯৯৮ সালে ভারত, পাকিস্তান কর্তৃক পারমাণবিক পরীক্ষার পর শেখ হাসিনা দুটি দেশ সফর করেন। দুটি দেশের উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করা হয়। এরপরই ঢাকায় ত্রিদেশীয় বাণিজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ডি-৯ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে আসেন। ঠিক একইভাবে বর্তমান মহাজোট সরকারের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রি হিলারি ক্লিনটন এদেশ সফরে এসে সরকারের প্রশংসা করেছেন। দেশ-বিদেশ থেকে গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য সংগ্রামের স্বীকৃত পেয়েছেন শেখ হাসিনা। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ২০০০ সালে তিনি বাংলাদেশের প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের আমন্ত্রণে সে দেশ সফর করেন। এবারও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে একাধিকবার রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন। বর্তমান বাংলাদেশ সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক অগ্রগতির ৫টির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত একটি দেশ। চীন, ব্রাজিল, সিঙ্গাপুর ও তুরস্কের পর এদেশের অবস্থান। সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে এদেশের অবস্থান পাকিস্তান থেকে ২৯ ধাপ ওপরে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লেগাটুম ইনস্টিটিউট ১৪২টি দেশকে নিয়ে বিশ্বের সমৃদ্ধশালী দেশের যে তালিকা তৈরি করেছে তাতে এদেশের অবস্থান ১০৩তম। সেখানে ভারতের অবস্থান ১০১তম এবং পাকিস্তানের ১৩২তম। এ বছর প্রকাশিত 'বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৩' বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ব ব্যাংকের মন্তব্য উপস্থাপন করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, মানব উন্নয়ন সূচকে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভালো করেছে বাংলাদেশ। 'ইকোনমিস্ট'-এর সম্পাদকীয় 'আউট অব বাস্কেট' শিরোনামে বলা হয়েছে বাংলাদেশ এখন বিশ্ব প্রেক্ষাপটে উন্নয়নের মডেল। মানব কল্যাণের প্রায় প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যতিক্রমী। এজন্য সুখী দেশের তালিকায় এদেশ ১১তম। কারণ ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে এদেশ অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ। ক্ষুধা, সন্ত্রাস, যুদ্ধ আর অর্থনৈতিক মন্দাশূন্য এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে নির্বিরোধ সম্পর্ক বাংলাদেশকে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আর তার সবই অর্জিত হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রি-আমলা ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর অক্লান্ত পরিশ্রমে।

লেখক : সাহিত্যিক ও সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়,
http://www.abnews24.com/article.php?details=29891