লড়াকু জাতীয়তাবাদকে কেনা যায় না
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
বাংলাদেশের তিনটি রাজনৈতিক দলের সাম্প্রতিক পৃথিবী সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই। তিনটি দল হচ্ছে : জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি এবং হেফাজতে ইসলাম। তিনটি দলই সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে পেছন দিকে তাকিয়ে আছে এবং ধর্মকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের ভিত্তি কেন্দ্রমূল হিসেবে ভাবছে। এই তাকানো অতীতাশ্রয়ী এবং এই ধর্মের সঙ্গে নবীজির (স.) ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। এই সম্পর্কহীনতা তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্বের ভিত্তি; সেজন্য তাদের ইতিহাস কিংবা অভিজ্ঞতার সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল নেই। ধর্ম যে অতীব জটিল বিষয় এবং বিশ্বাস যে অত্যন্ত জটিল অভিজ্ঞতা : এই বোধ জামায়াতে ইসলামীর মুরব্বি, বিএনপির মুরব্বি এবং হেফাজতে ইসলামের মুরব্বির মধ্যে নেই। তাদের ধর্মবোধ রাজনৈতিক, সেজন্য তাদের বোধের মধ্যে আধুনিক সমাজবিজ্ঞান নেই, পলিসি মেকিং নেই এবং প্ল্যানিং নেই। হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আহমদ শফীর মধ্যে বর্তমান পৃথিবীর মানুষী অবস্থা সম্বন্ধে কোন ধারণা নেই, বিএনপির সুপ্রীম নেতা খালেদা জিয়া ধর্মজ্ঞ এবং ধর্ম সম্বন্ধে তাঁর মধ্যে ইতিহাসের অভিজ্ঞতা আছেÑ এ কথা তাঁর পরম শত্রুও বলবে না, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম ধর্মকে ভায়োলেন্সের অংশ করে তুলেছেন এবং ভায়োলেন্সকে ইসলামের শক্তি হিসেবে তাঁর ক্যাডারদের কাছে বিক্রি করে চলেছেন। ধর্ম তাদের কাছে রাজনীতি বলে, ধর্মের কথা বললেই তাদের তিনজনেরই মুখে লালা পড়তে থাকে। ধর্মের লালা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যত সহজ, বিজ্ঞানমনস্কতা দিয়ে মানুষকে ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর করা তার চেয়ে অনেক অনেক কঠিন। সেজন্য এই তিন ব্যক্তির মধ্যে ধর্ম সম্বন্ধে, ইতিহাস সম্বন্ধে এবং ভবিষ্যতের বিজ্ঞানমনস্ক অগ্রসর হওয়া সম্বন্ধে কোন থিওরিটিক্যাল এবং এমপেরিক্যাল ভিত্তি নেই।
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি একাকার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অধিকার পৃথিবীর কোথাও নেই। বাংলাদেশে এই অধিকারের দাবিতে অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম এবং বিএনপি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অধিকার যেমন নেই, তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন এবং রাজনীতিও নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশে এই তিনটি দল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার অধিকারের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিরোধী। এখানেই বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির তফাত। এই তফাতের সূত্র ধরে জামায়াত, বিএনপি এবং হেফাজত প্রচার করে চলেছে: আওয়ামী লীগ ধর্মকে নিষিদ্ধ করার চক্রান্ত করছে। সত্যি কি তাই? যুদ্ধাপরাধী কারা? জামায়াতে ইসলামীরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালÑ আইসিটি যেমন জামায়াতে ইসলামীদের যুদ্ধাপরাধী বলে বিচার করে চলেছে, তেমনি জামায়াতে ইসলামীর সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা মধ্যপ্রাচ্যেও বর্তমানে স্বীকৃতি লাভ করছে না। বরং মধ্যপ্রাচ্য এখন ধর্ম সম্বন্ধে অবসন্ন বোধ করছে। মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি সেক্যুলার জনসমষ্টির বাধার মুখে পড়েছে। সিরিয়ায় ধর্ম নিয়ে রাজনীতি গৃহযুদ্ধের আকার ধারণ করেছে।
তুরস্কে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির উজ্জীবন সাধারণ মানুষ ঠেকিয়ে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক খেলায় অবসন্ন বোধ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে সমতালে না ফেলে সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ধর্ম ব্যবহার করে ইসলামী জাতীয়তাবাদ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, যদি বলি প্রাগৈতিহাসিক হয়ে উঠেছে, তাহলে অসত্য বলা হবে না। ইউরোপও ধর্ম নিয়ে জাতীয়তাবাদী খেলায় আর উৎসাহ বোধ করছে না।
এই পরিসরে, বাংলাদেশের তিনটি রাজনৈতিক দল : জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম এবং বিএনপি ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতির খেলায় নেমেছে। তাদের ধারণা, এদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভীরু; সেজন্য ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে নির্বাচনে জেতা সহজ। তাই যদি হয় তাহলে অধিকাংশ মাওলানাই নির্বাচনে জয়লাভ করত। তা কি হয়? তা কি হচ্ছে? মানুষ, নির্বাচনকালে নিজের পছন্দের জনকেই ভোট দেয়। এ দেশে নারী ভোটার জনসমষ্টির অর্ধেক।
তারা স্বামীর হুকুমে, শ্বশুরের নির্দেশে, মাওলানাদের ওয়াজ শুনে ভোট দেয় না। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বেঁচে থাকার সংগ্রাম থেকে রোজই তৈরি হচ্ছে। পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের উজ্জ্বল উপস্থিতিই তার প্রমাণ। নারী শ্রমিকরা নিজেদের কেবল বাঁচিয়ে রাখছে না, বাঁচিয়ে রাখছে গ্রামের সংসার, শহরের সংসার। মালিকরা তাদের কম মজুরি দিয়ে ঠকাতে পারছে না। তারা লড়াকু, পুরুষ সহকর্মীদের পাশাপাশি লড়াকু। তারা বেঁচে থাকার দিক থেকে লড়াকু; এই লড়াকু জাতীয়তাবাদকে কেনা যায় না।
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি একাকার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অধিকার পৃথিবীর কোথাও নেই। বাংলাদেশে এই অধিকারের দাবিতে অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম এবং বিএনপি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অধিকার যেমন নেই, তেমনি যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন এবং রাজনীতিও নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশে এই তিনটি দল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার অধিকারের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের সংগঠন ও তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিরোধী। এখানেই বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের ধর্মভিত্তিক রাজনীতির তফাত। এই তফাতের সূত্র ধরে জামায়াত, বিএনপি এবং হেফাজত প্রচার করে চলেছে: আওয়ামী লীগ ধর্মকে নিষিদ্ধ করার চক্রান্ত করছে। সত্যি কি তাই? যুদ্ধাপরাধী কারা? জামায়াতে ইসলামীরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালÑ আইসিটি যেমন জামায়াতে ইসলামীদের যুদ্ধাপরাধী বলে বিচার করে চলেছে, তেমনি জামায়াতে ইসলামীর সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার নির্দেশনা দিয়েছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা মধ্যপ্রাচ্যেও বর্তমানে স্বীকৃতি লাভ করছে না। বরং মধ্যপ্রাচ্য এখন ধর্ম সম্বন্ধে অবসন্ন বোধ করছে। মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের ধর্ম নিয়ে রাজনীতি সেক্যুলার জনসমষ্টির বাধার মুখে পড়েছে। সিরিয়ায় ধর্ম নিয়ে রাজনীতি গৃহযুদ্ধের আকার ধারণ করেছে।
তুরস্কে ধর্ম নিয়ে রাজনীতির উজ্জীবন সাধারণ মানুষ ঠেকিয়ে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক খেলায় অবসন্ন বোধ করছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে সমতালে না ফেলে সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ধর্ম ব্যবহার করে ইসলামী জাতীয়তাবাদ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, যদি বলি প্রাগৈতিহাসিক হয়ে উঠেছে, তাহলে অসত্য বলা হবে না। ইউরোপও ধর্ম নিয়ে জাতীয়তাবাদী খেলায় আর উৎসাহ বোধ করছে না।
এই পরিসরে, বাংলাদেশের তিনটি রাজনৈতিক দল : জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম এবং বিএনপি ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতির খেলায় নেমেছে। তাদের ধারণা, এদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভীরু; সেজন্য ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে নির্বাচনে জেতা সহজ। তাই যদি হয় তাহলে অধিকাংশ মাওলানাই নির্বাচনে জয়লাভ করত। তা কি হয়? তা কি হচ্ছে? মানুষ, নির্বাচনকালে নিজের পছন্দের জনকেই ভোট দেয়। এ দেশে নারী ভোটার জনসমষ্টির অর্ধেক।
তারা স্বামীর হুকুমে, শ্বশুরের নির্দেশে, মাওলানাদের ওয়াজ শুনে ভোট দেয় না। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বেঁচে থাকার সংগ্রাম থেকে রোজই তৈরি হচ্ছে। পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের উজ্জ্বল উপস্থিতিই তার প্রমাণ। নারী শ্রমিকরা নিজেদের কেবল বাঁচিয়ে রাখছে না, বাঁচিয়ে রাখছে গ্রামের সংসার, শহরের সংসার। মালিকরা তাদের কম মজুরি দিয়ে ঠকাতে পারছে না। তারা লড়াকু, পুরুষ সহকর্মীদের পাশাপাশি লড়াকু। তারা বেঁচে থাকার দিক থেকে লড়াকু; এই লড়াকু জাতীয়তাবাদকে কেনা যায় না।
__._,_.___